সত্যজিৎ রায়ের চিত্রভাষা ছিল কলকাতা শহরের ভাষা। তাঁর গদ্যভাষাতেও শুধু কলকাতার বোল। যদিও তাঁর প্রথম ছবি গ্রাম নিয়ে, সেখানে গ্রাম্যতার লেশমাত্র ছিল না। তিনি ‘ডে ফর নাইট’-এ বিশ্বাস করেননি। মেঘ করার জন্য দিনের পর দিন, কাশফুল ফোটার জন্য মাসের পর মাস অপেক্ষা করেছেন। এই জন্যেই তাঁকে বলি, টুপি থেকে মোজা পর্যন্ত, এক খাঁটি মানুষ।
বিদেশীদের কাছে তিনি এক অপার রহস্যময় চলচ্চিত্রকার। তিনি এক মর্মরের মূর্তি — উঁচু বেদির উপর। তাঁর মাথা ছুঁয়ে আছে আকাশের মেঘ। কিন্তু আমাদের কাছে তিনি গড়পাড়ের ছেলে — কলকাতার লোক। তাঁর পায়চারি এই কলকাতার ‘পথের পাঁচালী’।
তিনি পৃথিবীর কে, তা জানি না। সম্পর্কের দিক থেকে ভারতবর্ষ বা এমনকি বাংলাদেশের তিনি কে, তা-ও জানা নেই। শুধু জানি, তাঁর মৃত্যুতে কলকাতার সিঁদুর মুছে গেছে। এবং আগামীকাল সে যাবে সহমরণে।
আমি তো তাঁর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ কখনো পাইনি। আমি তো কাছ থেকে তাঁকে কখনো দেখিনি। তাই এভাবে বললাম। তবে এটা আমার পক্ষে ভালোই হয়েছে। কেননা, কিছু জিনিশ আছে কাছ থেকে যা দেখার নয়। যেমন সাহারা। যেমন আটলান্টিক। যেমন এভারেস্ট।
যারা কাছ থেকে তাঁকে দেখেছে, বরং তারাই হয়তো দেখেনি কিছুই।
গানপারটীকা : এই ক্ষীণ গদ্যটা আমরা কালেক্ট করেছি ১৯৯৫-প্রিন্টেড একটা চটিপুস্তিকা থেকে। সেই পুস্তিকার নাম ‘চলচ্চিত্র চঞ্চরী’। ইন্ডিয়ার প্রাদেশিক শহর কলকাতা থেকে ছাপা। পাব্লিশিং হাউসের নাম ‘প্রতিক্ষণ পাবলিকেশনস্ প্রাইভেট লিমিটেড’। গদ্যটা পড়লেই বোঝা যায় এইটা রায়ের ইন্তেকালের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক লিখিত, সম্ভবত কোনো দৈনিক খবরকাগজের চিলতে কলামে প্রকাশিত, পরদিনই রায়ের দাহ/অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হবে। “তাঁর মৃত্যুতে কলকাতার সিঁদুর মুছে গেছে। এবং আগামীকাল সে যাবে সহমরণে।” — এই বাক্যজোড়া রায়ের শবাধারে-শায়িত অন্তিমযাত্রার আগের দিনটিকেই দেখায়। এইটা, এই ক্ষীণকায় ন্যানো গদ্যটা, আজও পড়তে বেশ লাগে বলেই এইখানে রিস্টোর করা হলো। পড়েন-নাই-অনেকেই নিশ্চয় এইটা আড়াই মিনিটের কম সময়ে পড়ে নিতে পেরে বিরক্ত হবেন না। — গানপার
… …
- লোককবি তাজউদ্দিন ও তাঁর গান || জফির সেতু - November 25, 2025
- শাহজালাল শাহপরান গ্রামবাঙলায় গাজির গান || তুহিন কান্তি দাস - November 22, 2025
- আমাদের গ্রামের নাম আমাদের নদীর || কাজল দাস - November 19, 2025

COMMENTS