কারো লেখা পড়তে পারা না-পারার মধ্যে যোগ্যতা-অযোগ্যতার কিছু নাই। জিনিশটা আর কিছু নয়, জিনিশটা যোগাযোগের, পারষ্পরিক সংযোগের। ধরা যাক, কারো লেখা পড়ে আপনি বিশেষ আনন্দ পেলেন না, বা মর্মোদ্ধার করতে ব্যর্থ হলেন, বা চাল্লু লিঙ্গুয়ায় আপনার খাড়াইল না, তার মানে কিন্তু এ নয় যে আপনি অযোগ্য কিংবা যিনি লিখলেন তিনি মহামহিম যোগ্য কোনোকিছু। পড়া আর লেখা ব্যাপারটা (হ্যাঁ, এ দুই জিনিশ নয়, একই জিনিশ সম্পন্ন হয় সেন্ডার ও রিসিভার এন্ডে যেমন দূরভাষে।) একটা সামবায়িক শিল্পোদ্যোগ। যতক্ষণ পর্যন্ত পাঠক না-পড়ছেন, ততক্ষণ লেখা স্রেফ এলোমেলো আঁকিবুকি। পড়ে যখন পাঠক খারাপ বলছেন অথবা প্রত্যাখ্যান করছেন ওই জিনিশটাকে, অ্যাট দ্য সেইম টাইম বহু অতর্কিত জায়গায় নিবিষ্ট হচ্ছেনও হয়তো, হচ্ছেন যাকে বলে এনগেইজডও, তখনই সেইটা লেখা হয়ে উঠছে, ওই মুহূর্তের তরে, এরপর ফের সেইটা হাইবার্নেশনে শীতনিদ্রায় যাচ্ছে চলে এবং পরবর্তী পাঠক এসে সেটাকে লেখা করে তোলার আগ পর্যন্ত অনির্দিষ্টকাল সেইটা মৃতই থাকছে। এই শিক্ষালাভ আমাদের হয়েছে। এখন, আপনি যদি নিয়মিত কারো লেখা পড়েন, ওই লেখক আলবৎ ভাগ্যবান, তো ওই লেখকের সমান স্তরের মনন ও আবেগের অধিকারী আপনি, সমযোগ্যতার। না-হলে লেখক-পাঠক হার্মোনি, তা যত স্বল্পকালীন ও সাময়িক হোক-না-কেন, ঘটত না। আবার এইটাও ঠিক, কোনো কোনো লেখক খুব জটিল অথবা তথাকথিত জটিল হওয়া সত্ত্বেও ওই লেখককে আমরা পরিত্যাগ করি না, উপরন্তু ঘুরেফিরে তার দ্বারেই যাই, এবং জীবনভর ওই রহস্যের খোসা ছাড়ানোর কাজটা করে চলি সানন্দ ঔৎসুক্যে, ঠাকুরের গান গাইতে গাইতে : “আমার বেলা যে যায় সাঁঝবেলাতে / তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে” … অতএব, আপনি অযথা ভাবছেন যোগ্যতা-অযোগ্যতা নিয়া, ব্যাপারটা সুরের, ব্যাপারটা সরস্বতীর, ব্যাপারটা নেভার এভার অফ আর্নল্ড শোয়ার্জিনিগার … ব্রুস লি সিলভেস্টার স্ট্যালোনগিরি রিডার-রাইটার উভয়ের ক্ষেত্রে সমভাবে পরিত্যাজ্য … (অট্টহাস্য) … রিডার হিশেবে বা পাঠকের ভূমিকায় আপনি যতটা যোগ্য, আপনার ভাষার লেখকও ততটাই যোগ্য, এবং ভাইস্-ভার্সা। আলগা ব্যাটাগিরি প্রদর্শনের সুযোগ লেখক-পাঠক সম্পর্কের কারোরই নাই, কেননা এই আওয়াজটাও পঠনলিখনতাত্ত্বিকেরা অলরেডি তুলেছেন যে পাঠকই লেখক অথবা অথার ইজ ডেড ইত্যাদি। আওয়াজগুলা ফাঁকা নয় বলেই জানি আমি। কিন্তু দেখুন, কত কথাই লিখি আমরা, পাঠ করি কত শুধু কথা আর কথা, আমরা বলি, শুনি, সবই কথা, দেখি, আঁকি, কথা, অঙ্ক ও বিজ্ঞান ও সমুদয় বেদ বাইবেল কোরান, শুধু কথায়। আজব লাগে না? আরও আজব শোনায় যখন কিনা আপনারেই নিকটবর্তী ক্রিটিকতির্যক কবিবন্ধুটি বিতং করে বোঝান কারে বলে কবিতা। আরেকটা হলো, যথার্থই বিজ্ঞজনোচিত গলায় ক্রিটিক কাম কবিবন্ধু বলেন, কথাসাহিত্য। মনে মনে বলি, ধরণী, দ্বিধা হও; অথবা আমারে শেখাও এরোডিনামিক্স, রকেটসাইন্স, হাওয়া বুঝিয়া লাইফ চালাইবার বাও। তবে এই নিবন্ধটা পাঠক-লেখক মিলেই তৈরি হলো, কথাটা আপাতত কবুল করেই আমায় বিদায় নিতে দাও।
অন লেখালেখি, ইনফর্ম্যাল
সমধর্মী বিভিন্ন রচনা
- স্বরচিত কবিতার অন্তর্গত অনুপ্রেরণা || হাসান শাহরিয়ার - January 24, 2025
- আর্কের হাসান ও নব্বইয়ের বাংলা গান - January 23, 2025
- শাহ আবদুল করিম : জন্মের শতক পেরিয়ে আরও একটা আস্ত দশক || ইলিয়াস কমল - January 20, 2025
COMMENTS