অন লেখালেখি, ইনফর্ম্যাল (চৌথা দাগ)

অন লেখালেখি, ইনফর্ম্যাল (চৌথা দাগ)

 

এক্সার্সাইজ খাতায় লেখালেখি করেন এমন লেখক তো দুনিয়া জুড়েই বিলুপ্ত প্রায়। বিলুপ্ত বলা না-যাইলেও বিরল তো বলাই যায়। এখন লোকে লেখে মেশিনে। লেখার জন্য কত প্রকারের আকারের ঝঙ্কারের গ্যাজেট যে বেরোচ্ছে! এই ডিভাইস সেই ডিভাইস, সেইসবের একেকটার ফজিলত একেক রকম। কলমের আর খাতার রঙবাহারি দিন উধাও। ঝর্ণাকলম বা ফাউন্টেন পেন তো বলপয়েন্ট পেন বা বলকলম এসে খেয়ে ফেলেছিল অনেক আগেই। আমরা বলতাম কালির কলম, যার সঙ্গে লেপ্টানো দোয়াত বা ইঙ্কপট। কিবোর্ড কম্পিউটার আসার আগে, মাঝখানে, টাইপরাইটার এসেছিল। যদিও টাইপরাইটার বাংলা ভাষার লেখকদের মধ্যে সেভাবে ব্যবহৃত হতে দেখা যায় নাই। কিন্তু টাইপরাইটার জিনিশটা লম্বা টাইম ধরে রেখেছিল, দুনিয়ার লেখকরা ব্যবহারও করেছেন দেদার, সম্পন্ন অবস্থাপন্ন লেখকদের মধ্যে অঙ্গুলিমেয় কয়েকজন ছাড়া টাইপরাইটার যন্ত্রটা বাংলার লেখকরা অ্যাফোর্ড করে উঠতে পারেন নাই।  সেই কয়েকজন ছাড়া বাকি লেখকেরা কাগজের একপিঠে দিস্তা দিস্তা লিখে ম্যানাস্ক্রিপ্ট পাঠাতেন প্রকাশকের বা সম্পাদকের দফতরে, সেখান থেকে লেটারপ্রেসের মেশিনে কম্পোজ ও অন্যান্য কর্মকাণ্ড সাধিত হতো। কম্পিউটার এসে যাবার কেউ কেউ ফ্লপি ডিস্কে লেখা পাঠাতেন, ইমেইল আসার আগে, খামের ভিতরে ফ্লপি ডিস্ক ভরে পাঠানো হতো সম্পাদকের দফতরে। ইমেইল এবং টেলিকম্যুনিক্যাশন সুলভ হবার পরে লেখালেখির হ্যাপা অনেক সহজ হয়ে এসেছে।

*
এলেও, অনেক হ্যাপা আজও পিছন ছাড়ে নাই। ল্যাপটপে বা ডেস্কটপে বা সেলফোনের কিপ্যাড চেপে লিখন চলাকালে বেখেয়ালে লেখাপত্রাদি ডিলিটেড হয়ে যাওয়া — এইটা তো খুব মনখারাপের ব্যাপার, ঘটেও আকছার। তবে এইরকম ঘটে বেখেয়ালি বিশেষত প্রযুক্তিনিরক্ষর লেখকদের বেলায় বেশি, ঘটে খেয়াল করেছি আমারও। তা, যতই সবজান্তা হোক একটা লোক, যন্ত্রের যন্ত্রণা থেকে নিস্তার নাই। কিংবা ক্র্যাশ করে গেলে কখনো যখন কোনো ড্রাইভের লেখাপত্র ফিরে পাওয়া যায় না আর, কতবারই তো হয়েছে এমন, অফিসের কাজের নোটপত্রাদিই মোস্টলি, মনখারাপ তো হয়ই, ক্রিয়া করে সেই খারাপলাগা বেশ লম্বা সময়। কিন্তু প্রোজ রাইটিংস হইলে তবু অবিকল না-হইলেও মোটামুটিভাবে ফের লিখে ফেলা যায় একটা আলাদা শেইপে সেই লেখাটা, অ্যানালিটিক্যাল লেখার ক্ষেত্রে এইটা সত্য অনেকখানি, কিন্তু পূর্বজ রচনার অনেক মোমেন্ট খোয়া যাইলেও গতিপথ ও অভিমুখ মোটামুটি ঠিক থাকে, এমনও তো হয় যে লেখাটা নতুন পর্যায়ে ব্রেইক-থ্রু পায়।

*
এইসব হয় কেবল যুক্তিবিস্তারী কিংবা আলোচনাধারক রচনার বেলায়। কিন্তু কবিতার বেলায় এসবের বিন্দুমাত্র আশা নাই। কিংবা খোদ কবিই যদি বলেন যে হারায়া যাবার পর স্মৃতি থেকে পুনর্লিখন করতে যেয়ে যেইটা পাওয়া যাইল সেইটা হারানোটার চেয়ে ঢের উন্নত হইল — বলতেই হবে যে তাহলে হারানোটা আদৌ কবিতাই হয়া উঠতে পারে নাই, হারায়ে যেয়ে বরং ভালোই হয়েছে। হারানো সুর কী ফেরানো যায় পুনরায়! এমনকি উত্তম-সুচিত্রা জুটির ‘হারানো সুর’ বুঝি আনিল কপুরের ছোটা-সা বাচ্চি সোনাম কপুর আর আমির খানের পেয়ারা ভাগ্না ইমরান খান দিয়া যাবে ফেরানো! অন্য সুর হবে, নেভার হারানো সুর। কাজেই কবিতাটা যেহেতু যুক্তিশৃঙ্খলহারা ব্যাপার, রিগেইন করা মুশকিল তার মিউজিক, অতএব কবিতাটা খাতায় ড্রাফ্ট করার অভ্যাস না-খোয়ানোই সুস্থায়ী সমাধান। এইরকম ক্ষেত্রে অবশ্য পেইজ থেকে বেরিয়ে না-যেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ctrl+z চেপে লেখা ফেরাই আমি, বহু ঠকে ও ঠেকে শিখেছি। কী করা, হায়, হারানো কবিতা তো কলেজবেলার প্রেমের মতো, ফেরে না আবার ছাড়েও তো না।

*
তা, আমি কিন্তু খাতায় ফিরবই, খাতায় ফেরা ছাড়া আমার উপায় নাই, খাতায় আমারে ফিরতেই হবে, বিশেষ একপ্রকারের লেখা আমি লক্ষ করেছি খাতায় একরকম আর কিবোর্ডে বিলকুল অন্যরকম হয়ে থাকে অ্যাট-লিস্ট আমার ক্ষেত্রে। সেই বিশেষ প্রকারের নাম না-হয় না বললাম এখানে, আক্কেলমান্দ বিধায় পাঠকসমীপে এইটুকু ইশারা প্রেরণ এনাফ মনে হইল। খতম, আপাতত।

জাহেদ আহমদ


অন লেখালেখি, ইনফর্ম্যাল (অন্যান্য পর্ব)

Support us with a click. Your click helps our cause. Thank you!

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you