পালোমা || উৎপলকুমার বসু

পালোমা || উৎপলকুমার বসু

পালোমা পিকাসো। বাবা পাবলো পিকাসো। মা ফ্রাঁসোয়া জিলো। বাবা নিঃসন্দেহে এই শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ দশ প্রতিভার একজন। মা-ও কম কেউকেটা নন। মারাত্মক সুন্দরী। ছবি আঁকার দক্ষ।

ছেলেবেলা থেকেই আমাদের হাতে কাগজ, রঙিন পেন্সিল, রঙ-তুলি ধরিয়ে দেওয়া হতো — পালোমা বলেছে।

চোদ্দ বছর বয়স অবধি শিল্পীদের মেয়ে হিসেবে বেশ মানিয়ে চলেছি। তারপরই বেঁকে বসলুম। আঠারো বছর পর্যন্ত তুমুল বিদ্রোহ। ছবি আঁকার বিরুদ্ধে। পিতৃপরিচয় দিতে ঘোর আপত্তি ছিল তখন। শেষকালে খুঁজে পেয়েছি নিজের স্টাইল।

পোশাক ডিজাইনার হিসেবে পালোমার এখন আন্তর্জাতিক খ্যাতি। আমি বেশি রঙ পছন্দ করি না — পালোমার উক্তি। কয়েকটি মাত্র চড়া রঙ — কিন্তু তাদের নাটকীয় সাজানো এবং মেশানোতেই আমার নতুন নতুন ডিজাইনের সৃষ্টি। প্রচলিত অর্থে পালোমা সুন্দরী নয়। সে বেঁটে। একটু মোটা। চুল কালো। চোখ বাদামী। নরম গোছের দেখতে, সিরিয়াস প্রকৃতির মেয়ে। অসাধারণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, সুরসিকা। নিজেকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করতে পারে। হাবেভাবে স্প্যানিশ।

প্যারিসের লেফট ব্যাঙ্কে তার অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকে বিস্মিত হতে হয়। শূন্য দেওয়াল। অয়েস্টার পিঙ্ক। একটাও ছবি নেই। চেয়ার-টেবিল ইতস্তত ছড়ানো। টেবিলের উপর, ঘরের কোণায়, গুটিকয়েক আদিবাসীদের ভাস্কর্য।

নিজের সম্বন্ধে পালোমার বক্তব্য স্ট্রেট-কাট। ধানাইপানাই নেই। আমি বেলা পর্যন্ত ঘুমাই। তারপর বাইরে বেরিয়ে গিয়ে পাড়ার কাফেতে ব্রেকফাস্ট খাই। ব্রেকফাস্ট মানে কফি আর পেস্ট্রি। লাঞ্চ খাই না। এমনিতেই দেরি করে উঠি। নিউইয়র্ক-লন্ডন-প্যারিস ছোটাছুটি করতে হয়। সেজন্য কোনো ধরাবাঁধা নিয়মে ডায়েটিং করতে পারি না।

রূপচর্চা নিয়ে পালোমার বিশেষ সমস্যা নেই। সপ্তাহে পাঁচদিনই নরম শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধোয়। পারফিউম, লোশন, তেল, সাবান কী-রকম বোতলে বা প্যাকেটে আসে — তা পালোমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সে নিজেকে খুব ‘ভিসুয়াল’ ভাবে। সুতরাং সুন্দর মোড়ক, আকর্ষণীয় নকশা ও রঙের অভিনব ব্যবহার তাকে মুগ্ধ করে। পালোমা ও তার স্বামী রাফায়েল বর্তমানে স্টেজ-ডিজাইন নিয়ে ব্যস্ত।

পিকাসো পরিবার, পালোমার মতে হার্ডওয়ার্কিং। সারাদিন ছোটাছুটির পর সে গরম তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে ফেলে। তাতেই শহরের তেল, ধুলোবালি উঠে যায়।

 

  • সংগ্রহ-উৎস : গদ্যসংগ্রহ ১ ।। উৎপলকুমার বসু ।। নান্দীমুখ সংসদ, কলকাতা, ২০০৫

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you