কবিসাহিত্যিক ও সোশ্যাল কোলাহল

কবিসাহিত্যিক ও সোশ্যাল কোলাহল

 

আহা উনি তো আমাদের একমাত্র সবজান্তা লেখক। দেখছেন না, প্রতিদিন কত বাণী দিচ্ছেন! সমাজ বিশ্ব রস গোয়া অর্থনীতি কাব্য সুখ অসুখ রাজনীতি মিডিয়া ভাষা … কিচ্ছুই তার অনায়ত্ত নাই। মুখ খুললেই ভক্‌ ভক্‌ করে খালি বাণী বা অন্যের সম্পর্কে কারুকার্যময় কটুক্তি বেরোচ্ছে … নিজের লেখার দিকে ফিরে তাকানোর অবসর নাই। শুধু কোথায় অন্যের ছিদ্র। সেই ছিদ্রে ব্যস্ত সারাদিন সারারাত দশটি তৈলাক্ত আঙুল। জ্যাক অব অল ট্রেড্‌স্, মাস্টার অব নান। আমাদের সর্বগুণধর ভাইজান।

অট্টহাসির হলেও সমস্যাটা রাইটলি পয়েন্টেড আউট উপরে শেয়ারকৃত মজনু শাহ্‌-র ক্রুশ্যাল কথিকায় … ভাইজানকবলিত সমাধানসঙ্কুল ও শতছিদ্রবহুল স্বদেশ ও স্বসাহিত্যগল্পকবিতা আমাদের … সমস্ত সমস্যার সম্মুখে এক নয় দুই নয় অসংখ্য সমাধান ভাইজানের দেড়-আংলা হাতে মওজুত, সমস্ত সমাধানের বিরুদ্ধে এক নয় দুই নয় একসহস্র সমস্যা আখাম্বা কায়দায় উত্থাপিতে ভাইজান সিদ্ধহস্ত … বড়োভাইজান, মেজোভাইজান আর ছোডোভাইজান … ভাইজানে ভাইজানে দুনিয়া ভাইজানময় … ইহাদের অস্তিত্ব ও অবস্থিতি ইরিটেইটিং হলেও অন্যদিক থেকে বেশ তো উপকারীও, অন্তত যারা কাজমগ্ন রহিবারে চান তাদিগের কাছে এরা আয়নার মতন, খোমাখান দেখেশুনে নিজেকে একটু অন-ট্র্যাক রাখা যায়, স্বীয় গণ্ডদেশের ব্রণ-মেছতা পরখিয়া পারিপাট্য-প্রসাধন সমাধা করা যায় শান্তিমতে-সুস্থিতচিত্তে, জেহাদি জোশ ও জজবাটারে একটু কন্ট্রোলে রেখে সত্যিকারের কাজকর্মের চেষ্টাটা জারি রাখা যায়, বিপ্লবপনা আর উপপ্লববৃত্তি পরিহার করে অ্যাথলেটিক্সের কসরতসমূহ তথা হাইজাম্প-লঙজাম্পের অনুশীলন সচল রাখা যায় … এমনিতেই প্রতিদিনের হাজারটা কাইজ্জাফ্যাসাদ নিয়া লিখতে লোভ গেলেও সংবরণ করে নেয়া যায় নিজেরে, এবং ভাবা যায় যে এইগুলার জন্য তো পঙ্গপাল রেডি আছে, এই তো ঝাঁপাইয়া পড়িল বলে … এইভাবে ভাবার কারণে একটা সেল্ফ-সিলেক্টিভ প্রোসেসের ভেতর দিয়া যাওয়া যায় … একটু হলেও গুটি বাঁধবার ফুরসত দেয়া যায় ফল-হইবার-তরে গাছের ফুলগুলারে, একটু হইলেও অনুমান-অনুপানগুলা দানা বাঁধতে পারে … এরা না-থাকিলে নিতিদিনকার পলিটিক্স নিয়া মুহুর্মুহু কথাবাণীবিপ্লব সাধন করিয়াই দিন কাটিত অবশিষ্ট অঙ্গুলিমেয় কয়জনারও, ফলে এরা আজারবাইজানের অধিবাসী নন যদিও কাজের ভাইজান তো বটেই … ইহারা আমাদের জীবনোক্ত ওইসমস্ত ‘সোনার পিত্তলমূর্তি’, ইহাদেরি কানে অনেক কবিতা-গান-গল্প ঢেলে চলে যেতে হয় যুবকের দলেরে  … কাজেই এরা কেমিস্ট্রি শাস্ত্রের ক্যাটালিস্টের ন্যায় বিক্রিয়াসহায়ক মনে হয় … জিনা হারাম হয় যদিও মাঝে মাঝে, মেওয়াচাষীরে তো সবুর করতেই হয় … অ্যানিওয়ে।

(মজনু শাহ-র, কবি মজনু শাহ-র) স্ট্যাটাস-কথিকাটার টার্গেট-অডিয়েন্স সম্পর্কে বিলকুল অন্ধকারে থেকেও মনে হলো এইটা আমাদের অনেকেরই জেনারালাইজড অভিজ্ঞতাসার, পীড়া দেয় ফের মজাও তো কম দেয় না, ফড়িঙের ফরফর দেখবার মজা, সো-ফার এইসব ওভার্ল্যুক করা শান্তিকর। নোবেল না-পাইলেও শান্তিতে একটি জীবন — গোটা একটা কাজকর্মমুখর জীবন — পুরস্কার পাবার সম্ভাবনা থাকে প্রোক্ত ওভার্ল্যুক প্রোপোজাল মনে রাখলে। একটি জিন্দিগি গুজার-নে-কে-লিয়ে বেশি কিছু দরকার হয় না যাদের, তারা জানেন যে জীবনে একটা সার্চ থাকে না যার, একটা ধ্যান থাকে না যার, হোক সেটা অর্থ-অনর্থ-টাকাকড়ি বা ছাইপাঁশ যে-কোনোকিছুর, তাহার ন্যায় নালায়েক-ইম্যাচিউর মনুষ্য — ওয়ার্থলেস্ বলাটা সৌজন্য-সভ্যতার বরখেলাপ বিধায় সেই শব্দোচ্চার হইতে বিরত রহা যাইল — দুনিয়ায় দ্বিতীয় খুঁজিয়া বার করা ভার। দুনিয়ার সবকিছুতে যার নোলা ছোঁকছোঁক করে, দুনিয়া তারে সেই মাফিক নোলার যোগান দিয়া বলে : যা, কত আর খাবি, খা গা। যা-কিছু ঘটমান, তা-কিছু নিয়া হাল্লাবোল করে ম্যান-ফেসবুকার প্রাইজটা তারা বগলদাবা করুক। ঝটপট ম্যাগি ইনস্ট্যান্ট নুডলস্ বানায়া তারা দুনিয়ার জন্য জঞ্জাল সৃজিয়া যাক, দুনিয়ার পয়ঃনিষ্কাশনপ্রণালি ইন-ফিউচার অনেক ডেভেলপ করবে এইটা আশা করাটা হাইপোথেটিক্যাল হবে না নিশ্চয়। চিন্তার কিছু তো নাই অতএব।

বলা হয়েছিল বিশল্যকরণী নিয়া আসতে, সে গিয়া গায়ের জোর দেখাইয়া পুরা গন্ধমাদন উপড়াইয়া নিয়া আসিল। ওই বীরেরেও তো দুনিয়া দেখেছে। কাজেই বিশল্যকরণীবৃক্ষ সনাক্তকারী বীরেরে দরকার দুনিয়ার, গন্ধমাদন স্কন্ধে নেবার ন্যায় পেহলোয়ান দিয়া আমরা কী করিবাম! রসটা আসলেই করুণ, দৃশ্যত বীররস মনে হইলেও প্রকৃত প্রস্তাবে করুণরস তথা সেই কিসিমের রেস্লারদিগের প্রতি দুনিয়ার করুণা-উদয়্কারী রস, যারা কিনা রেস্লিং রিঙ জুড়ে দাপিয়ে বেড়ায় একে-ওকে কণ্ঠরগ ফুলিয়ে হুমকিয়ে-ধামকিয়ে, একলা আছাড় মেরে তিনজনেরে রানের চিপায় ফেলে মহিষাসুরমর্দনকম্ম করে বেড়ায়, কী দুর্ধর্ষ সব টেক্নিক এস্তেমাল করে, এদিকে অডিয়েন্সের পেট ফাটায়া অট্টহাসি বাইরায় খালি। অডিয়েন্স মজা লয়। স্ক্রিনের সামনে থেকে গাত্রোত্থানের পরে কেউ রেস্লিং নিয়া ভাবে, এমন আদমসুরতের দেখা আমি আজতক লভি নাই। নিজে সেভেন-এইটে পড়ার সময় থেকেই রেস্লিংপোকা, কাজেই রেস্লিং সম্পর্কে প্রভূত নলেজের অধিকারী আমি/আমরা। হামারা মানোরাঞ্জান-কে-লিয়ে রেস্লারদিগের মজুদ নির্বিঘ্ন রহুক এইটা আমি নিশ্চয় করিয়া চাহি।

  • নিবন্ধগোড়ায় ব্যবহৃত উদ্ধৃতির উৎস ও পটভূমি নিয়ে একটু নোক্তা না-রাখলে এই নিবন্ধাংশ লোকেইট করা পাঠকের পক্ষে এমনকি নিজের পক্ষেও দুরূহ হবে। এইটা চালু কথায় যাকে বলে স্ট্যাটাস-আপডেট, তেমনই একটা স্ট্যাটাস দেগেছিলেন নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলে কবি মজনু শাহ; ওই স্ট্যাটাসের সূত্রে ইন্টারঅ্যাক্ট করতে যেয়ে এই নিবন্ধ। রম্য স্বর হলেও ওই টাইমের কিছু সমাজসাহিত্য ও তৎসঞ্জাত বাস্তবতার হলাহল রচনাটায় থাকল ধরা। টাইমের ধারণা দিতে কেবল বলি, এইটা ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসের; এবং, প্রসঙ্গের ইঙ্গিত, যদি দিতেই হয়, সেইসময় সাহিত্যপাড়ায় ব্যাপক হারে সিন্ডিক্যাশনের মাস্তানি চলছিল, তৎসঙ্গে লেজুড়ের মতো গ্রুপগুরুর বশ্য ও ভজনা। আর, এই নিবন্ধ পাঠকের কাছে পাচ্য করবার জন্যে এর চেয়ে বেশি ইঙ্গিত দেয়া বাহুল্য হয়; কেননা, আজ বছর দশ কিংবা কাল কুড়ি কুড়ি বছরের পার বাংলার কবিসাহিত্যিকদের আদবলেহাজ আমলখাসলত অত বৈপ্লবিক বদলায়া যাবার আশা আমরা কেউই নিশ্চয় করি না।

জাহেদ আহমদ

জাহেদ আহমদ
Latest posts by জাহেদ আহমদ (see all)

Support us with a click. Your click helps our cause. Thank you!

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you