এই সিনেমাটা কেন ভালো, তা নিয়া অল্পবিস্তর || আনম্য ফারহান

এই সিনেমাটা কেন ভালো, তা নিয়া অল্পবিস্তর || আনম্য ফারহান

১.
ভিম ভেন্ডার্সের সাথে যারা পরিচিত, তারা তো জানেনই উনার বিখ্যাত সিনেমা ‘উইংস অব ডিজায়ার’ (১৯৮৭)-এর কথা। আমাদের এইখানেও ‘উইংস অব ডিজায়ার’-এর কথাই সবাই বলেন। সম্ভবত রিলকের কবিতার অ্যাঞ্জেলিক ট্রিটমেন্ট বাস্তবায়ন করা হইছে জন্য। আমাদের এইখানে সাহিত্যঘেঁষা না হইলে কোনোকিছুকে ভালো বলার চল নাই। মানে ফ্যাশন হিসাবে তা খারাপ সেইটাও বইলা রাখলাম এই সুযোগে। (কবি-সাহিত্যিকদের কিছু হিসাব আছে এইসব বিষয়ে। তার বাইরে গিয়া আর্টকে তারা আর আর্ট হিসাবে স্বীকার করতেই রাজি না। আর তারাই যেহেতু কালচারাল ইন্ডাস্ট্রি ও ক্ষমতার জায়গায় মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করেন, তাই আমাদের এইখানে সব আর্টই সাহিত্যঘনিষ্ঠ হইতে চায়, হায়!) আর সিনেমাটার কারিগরি দিকগুলাও ওই সময়ের কন্টেক্সটে মিডিয়াম হিসাবে আগায়া থাকার জন্য রেফারেন্স। এবং বলতেই হয় যে, বার্লিন ওয়ালের কজ অ্যান্ড ইফেক্ট ও যুদ্ধপরবর্তী কালচার-শকের ভিতর দিয়া যাওয়ার কারণে এই ফিল্মটার এসেন্স জার্মান ভাষাভাষী অঞ্চলে এত রিলিভেন্ট হয়। পরে স্বাভাবিকভাবেই সারাবিশ্বে আদৃত হয়। ইভেন রাশিয়ায়, জাপানে। একই কারণে।

কিন্তু আমার ভালো লাগে হইল উনার ‘কিংস অব দ্য রোড’ (১৯৭৬) আর ‘প্যারিস, টেক্সাস’ (১৯৮৪), এই দুইটা সিনেমা। র কোনো আর্টিস্টের র অ্যান্ড রাফ কাজ দেখাটাই আমি প্রেফার করি।

২.
এইবার ‘পারফেক্ট ডেইজ’ (২০২৩) নিয়া উনি আসছেন ৫ বছর পর। উল্লেখযোগ্যভাবে কোভিডের পর—এইভাবেই এই সিনেমাটা দেখলে ভালো। উনি কেন গ্রেট আর্টিস্ট তা নিয়া না বইলা বরং ফিল্মটা নিয়া বলি।

আরও কিছু ফিল্মডিরেক্টরের মতোই ভিম ভেন্ডার্সের মিউজিক টেস্ট অসাধারণ। আমাদেরও প্রিয় যেইসব মিউজিক—দি অ্যানিম্যাল, ভ্যান মরিসন, রোলিং স্টোন, প্যাটি স্মিথ, দ্য ভেলভেট আন্ডারগ্রাউন্ড, নিনা সিমন ইত্যাদি ব্যবহার করছেন। মিড সিক্সটিজ টু সেভেন্টিজ, আর্লি এইটিজের সব। আর উনার বদৌলতেই আমি পাইছিলাম জার্মান ব্যান্ড ‘ইমপ্রুভড সাউন্ড লিমিটেড’-এর খোঁজ। ‘কিংস অব দ্য রোড’-এ কিছু ইন্সট্রুমেন্টাল আছে ওদের। অসাধারণ। সেই ২০০৭/২০০৮ সাল থেকে শুনি। তো মিউজিক সহ সব কিছু মিলায়ে ওনার ওই রান্না জিনিসটা বেশ।

৩.
এই সিনেমাটায় ব্যক্তির দুনিয়াকে আলাদা কইরা একটা মহত্তর, কিন্তু আরও বড় একটা দুনিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত দেখানো হয়। যা অত খারাপ কিছু না। আধুনিকতা পরবর্তী যুগে, পোস্ট-প্যান্ডেমিক যুগে, মানুষের এই নিজের সঙ্গে—অর্থাৎ বৃহত্তর নিজ, বর্তমানের আলোছায়া, প্যাশনেট কোনো কাজ, নিজেরই অতীত থেকে উৎসারিত স্বপ্ন, দুঃখ হাসি ইত্যাদির সঙ্গে সম্পৃক্ত দেখানো কালচারালি এবং পলিটিক্যলি ঠিকই আছে।

অভিমানী বালকদেরকে মোটেও সন্ন্যাসী হইতে বলে না। সেইটা পাঠ করলে আপনারা ভুল করবেন। তেমন কোনো অভিমান থাকলে, তুমি যেন জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন না হও; সেইটা বলে বরং। এইটা অনেকটা স্যাড কোনো একটা জিনিসকে সেলিব্রেশনের জায়গা থেকে আরও বৃহত্তর কোনো রূপ পাওয়াইয়া দেয়ার মতো একটা ঘটনা ঘটছে। যা আমরা অনেকেই খুব ভালো বুঝি। তাই এইভাবে বলতে পারতেছি। আর তাই ওইভাবেই সিনেমাটাও ইমোশনাল হয়, ভাঙে, ঈষৎ হাসে, প্রচণ্ড উষ্ণতা বোধসম্পন্ন হয়, সেন্সিটিভ হয়, কিছুই-করে-না-যেন হয়, আবার একটানা একই রুটিন পালন করতেই থাকে করতেই থাকেও হয়। হা হা।

৪.
এমনিতে ওয়াইড স্ক্রিন না হইয়া অ্যাকাডেমি রেফারেন্সের ওই আসপেক্ট রেশিও ১.৩৩:১ ব্যবহার করায় জিনিসটা প্রথাগতভাবে সিনেমাটিক থাকছে অনেক। এবং, আরও বেশ কিছু অনুষঙ্গ ‘বেসিক’ থাকায় জিনিসটা ফলাফল নিয়া আসছে। এই জিনিস আমাদের এইখানে যে-কোনো আর্ট মিডিয়ামের জন্যই লোকজনকে বোঝানো মুশকিল।

টোকিওর সিটিস্কেপ, সুদৃশ্য পাবলিক টয়লেট, সুদৃশ্য সাইকেল আর ফিল্মটার বাতাস, সুদূরের স্বপ্ন বা স্মৃতি—কিন্তু প্রতিদিনই অতি সন্নিকটে, লাইট, গাছ আর হাসি স্মরণার্হ।

সম্ভবত ঋত্বিক ঘটক বলছিলেন, ভারতবর্ষে আমি ছাড়া আর সত্যজিৎ রায় জানে ক্যামেরাটা ঠিক কোথায় ধরতে হবে। উল্টাটাও হইতে পারে, সত্যজিৎই হয়তো বলছিলেন ঋত্বিক সম্বন্ধে। কেউ জানলে ঠিক কইরা দিয়েন। এখন আর ঘাঁটতে ইচ্ছা করতেছে না। মাস্টার আর্টিস্টদের কিছু বেসিকস জীবনেরই কিছু অলিখিত নিয়মের মতো অতি সামান্য, আর তাই-ই সেইগুলা অসামান্য হয়।

—২৫/০৩/২০২৪


আনম্য ফারহান রচনারাশি
গানপার ম্যুভিরিভিয়্যু

COMMENTS

error: