ডেথ অফ অ্যা রকস্টার || মুনতাসির মামুন সজীব

ডেথ অফ অ্যা রকস্টার || মুনতাসির মামুন সজীব

২০০১ সালের পর থেকে অ্যাট-লিস্ট আমার কাছে জেমস্ একজন মৃত রকস্টার। অবশ্যই মৃত্যুকালে তিনি আমাদের মাঝে রেখে গেছেন দু-দুটো ব্যান্ড ‘ফিলিংস’ ও ‘নগরবাউল’-এর ৫টি অ্যালবাম এবং ৪টি একক/সলো অ্যালবাম। পরে জেমসের অ্যালবাম আরও বেরিয়েছে, ব্যান্ড ও সলো ছাড়াও প্রচুর মিক্সড এবং দ্বৈত/ত্রয়ী অ্যালবাম, খ্যাতি বাড়লেও কীর্তির দিক থেকে জেমস্ আটকে গেছেন ততদিনে।

এইটা আমি প্রথম বুঝতে পেরেছি দ্বিতীয় ফেজে যখন জেমসের গান শুনি তখন। ছোটবেলায় জেমসের গান শুনতাম, কেউ বাজালে কানে আসত। তখনই রিলিজ হয়েছিল সলো ‘পালাবে কোথায়’ এবং ব্যান্ড ফিলিংসের প্রোজেক্ট ‘জেল থেকে বলছি’। এরপরে একে একে নিবিড়ভাবে শুনলাম  ‘দুঃখিনী দুঃখ কোরো না’, তারপর ‘নগরবাউল’ নামে সেই ফিলিংসের অ্যালবাম (একই নামে তিনি ব্যান্ড ফর্ম করেছেন অবশ্য পরে) এবং সর্বশেষ ক্ল্যাসিক সলো ‘ঠিক আছে বন্ধু’ এবং ফিলিংসের লাস্ট অ্যালবাম ‘লেইস ফিতা লেইস’। এছাড়া ‘স্ক্রু ড্রাইভার’ এবং ‘ক্যাপ্সুল ৫০০ মিগ্রা’ নামের দুইটা অসাধারণ ব্যান্ডডুয়েট ছিল এলআরবি ও ফিলিংস-এর যৌথতায়।

জেমসের প্রথম অ্যালবাম  ‘অনন্যা’ সেভাবে জেমসের সিগ্নেচার গায়কী নয়, ‘স্টেশন রোড’ ফিলিংসের প্রথম অ্যালবাম হলেও গত শতকের আশির দশকের ফ্লেভার রেখে করা গানগুলোতে সেভাবে রকের উপস্থিতি ছিল না। জেমসের সলো আর ব্যান্ড অ্যালবামগুলোর মধ্যে পার্থক্য খুব কম। কারণ, সলোগুলোতে কাজ করতেন তার ব্যান্ডের মেম্বাররাই, স্পেশ্যালি ফান্টি। সব গানের কম্পোজিশন জেমসের নিজেরই। এছাড়া জেমস্ মিক্সড অ্যালবামে প্রিন্স মাহমুদ ও জুয়েল বাবু এই দুইজন প্রমিনেন্ট ব্যান্ড কম্পোজারের সাথে অনেক কাজ করেছেন।

কলেজে উঠার পরে যে-জেমসকে পাই সেই জেমস্ মনে হচ্ছিল অচেনা। আমার এতদিনের চেনা জেমসের কম্পোজিশন যেন আর পাচ্ছিলাম না। বাজারচাহিদায় মিক্সড অ্যালবামে কণ্ঠ দেয়া, যার তার কম্পোজিশনে কণ্ঠ দেয়া ইত্যাদি কারণে জেমস্ ক্রমশ তার স্বাতন্ত্র্য ও জোরের জায়গাটা হারাচ্ছিলেন। ক্রমে ফ্যাকাশে হয়ে আসছিল জেমসকণ্ঠে ধারণকৃত নিত্যনতুন গানগুলো, ফিকে হয়ে আসছিল জেমসের জাদু অন্তত আমার কাছে। স্পেশ্যালি শওকাত বা আরমান খান টাইপের বাজারী কম্পোজার গণ্ডায় গণ্ডায় জেমসের ডুয়েট-টেট্রা বের করত। এগুলোর বাজারচাহিদা ছিল ব্যাপক। গ্রামের বিশাল শ্রোতাশ্রেণীর কাছে পৌঁছেছিল এসব গান। ‘গুরু ঘর বানাইলা কি দিয়া’ টাইপের সেমিফোক সেই গানগুলো।

নবজন্মে জেমসের শ্রোতা বহরে বেড়েছে। দেশজুড়ে জেমসের চেহারা সাধারণ্যে পরিচিত হয়ে উঠেছে। এরপর কয়েকটা সলো : ‘আমি তোমাদেরই লোক’, ‘জনতা এক্সপ্রেস’, ‘কালযমুনা’ … এগুলোতে সেই নব্বইয়ের দশকের ফিলিংসের তুখোড় জেমসের ছায়াটাও নাই। পুরোপুরি বিলীন হয়ে গেল বলিউডে নাম লিখিয়ে জেমসের মৌলিক বাংলা কম্পোজিশনের নিশানা। আমরাও যারা জেমসের পিউর শ্রোতা ছিলাম তারা স্বাভাবিকভাবে একে একে খুঁজে নিলাম ‘অর্থহীন’, ‘আর্টসেল’, ‘শিরোনামহীন’, ‘ব্ল্যাক’, ‘মেঘদল’, অর্ণব সহ নতুন নতুন গানদল ও মেধাবী মিউজিশিয়্যানদেরে। ক্যাম্পাসলাইফটা পুরোটাই কেটেছে এদের দুর্দান্ত সমস্ত কম্পোজিশন শুনে।

কিন্তু একসময় জেমসেই ফিরলাম আবার। মনে হলো জেমসের গানগুলো টিকে গেছে। নতুন করে শুনতে লাগলাম সেই ভিন্টেজ সাইক্যাডেলিক রক গানগুলো। তখন উপলব্ধি হলো যে, জেমস তার সময়ের চেয়ে কত অগ্রবর্তী ছিলেন! ‘সুলতানা বিবিয়ানা’ গানটির কম্পোজিশন আমাকে এখনও অবাক করে। কেন? অবাক করে এই কারণে যে, সেই নব্বইয়ের দশকে বসে একজন জেমস্ হেভিমেটাল করে গিয়েছেন! জেমসের প্যাশন ছিল গানের প্রতি ওই সময়টাতেই তুঙ্গে। তার গীতিকারবৃন্দও সব কবি ও কবিতার সাথে ওতপ্রোত জড়িত। তাই গানগুলোর লিরিক্যাল ডেপ্থ ছিল। একটা ফিলোসোফিক্যাল অ্যাস্পেক্ট ছিল জেমসের সমস্ত কাজেই। ফিলিংস ভেঙে যাওয়ার পর আর কিছু নেই। এখনকার জেমস্ নব্বইয়ের দশকের জেমসের কঙ্কাল মাত্র। শুধু নামটাই আছে, আর আছে কিছু কালোত্তীর্ণ গান।

[এই গদ্যটা ড্রাফ্‌টকালে জেমস্ ও গোটা বাংলাদেশের রকসিন নিয়া আড্ডায় আলাপ উস্কে দিয়েছেন গৌতম কে. শুভ, যিনি মিউজিকসমুজদার এবং বিশেষভাবে ব্যান্ডসংগীত নিয়া ভাবনায় এবং লেখায় ক্রিয়াশীল, ‘রক রেভোল্যুশন’ নামে ফেসবুকে একটা গ্রুপ সঞ্চালনায় গৌতম কে. শুভ প্রশংসনীয় তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমান গদ্যটার এই দ্রুত খসড়া বানানোর ক্ষেত্রে ইন্সপায়ার করার জন্য গৌতম শুভ-র কাছে কৃতজ্ঞ। — লেখক]

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you