রথযাত্রা, রথমেলা || সুমনকুমার দাশ

রথযাত্রা, রথমেলা || সুমনকুমার দাশ

বসেছে আজ রথের তলায়
স্নানযাত্রার মেলা —
সকাল থেকে বাদল হলো
ফুরিয়ে এল বেলা।

আজকে দিনের মেলামেশা
যত খুশি যতই নেশা
সবার চেয়ে আনন্দময়
ওই মেয়েটির হাসি —
এক পয়সায় কিনেছে ও
তালপাতার এক বাঁশি।

বাজে বাঁশি পাতার বাঁশি
আনন্দস্বরে।
হাজার লোকের হর্ষধ্বনি
সবার উপরে।

শিলাইদহে রথযাত্রা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ওই কবিতাটি পড়ে নিলেই বাঙালির রথযাত্রা উৎসব সম্পর্কে একটা পরিচ্ছন্ন ধারণা পাওয়া যাবে। তবে বাঙালির কাছে রথ-উৎসব বোধহয় এরচেয়েও আরও বেশি প্রাণবন্ত, বৈচিত্র্যময় আর সাতরঙে রঙিন। সেই সত্যযুগ থেকে শুরু করে আজকের কলিযুগেও রথকেন্দ্রিক নানা উৎসব ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পালন করে আসছেন।

হিন্দু ধর্মীয় পুরাণের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ওই ধর্মের প্রায় জন্মকাল থেকেই রথের প্রচলন। এমনকী বিভিন্ন পুরাণে দেব-দেবীর রথযাত্রার পাশাপাশি শ্রীমদ্ভগবদগীতা, মহাভারত, রামায়ণ সহ হিন্দু ধর্মীয় বিভিন্ন আখ্যানে রথের ব্যাপক উপস্থিতি পাই। এর মধ্যে উদাহরণ হিসেবে পুষ্পক রথ, অর্জুনের রথ, কোনারকের রথ ও সূর্যের রথের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। তবে সচরাচর সনাতন ধর্মাবলম্বীরা যে-রথযাত্রা উৎসব ঘটা করে পালন করে থাকেন সেটা শ্রীশ্রীজগন্নাথের রথযাত্রা উৎসব নামে পরিচিত। প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে কৃষ্ণ অনুরাগীরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, তাঁর বড় ভাই বলরাম ও বোন সুভদ্রাকে কুরুক্ষেত্র থেকে বৃন্দাবনে একটি রথে চড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেই থেকে রথযাত্রা উৎসব রঙিন ও বর্ণিলভাবে মহা ধুমধামে পালিত হয়ে আসছে।

সেই শৈশবকাল, বয়স আট কি দশ। আমাদের গ্রামে রথের মেলা বসত। আর এই মেলাই আমাদের ওইটুকু বয়সে হাজারো রঙ ছড়িয়ে দিত। তখন আমাদের কাছে মেলা মানেই দলবেঁধে পটাশ (চিকন বাঁশের তৈরি খেলনা বন্দুক জাতীয় জিনিস, দেখতে অনেকটা বাঁশির মতো) কেনা। এসব পটাশ ঠাস ঠাস করে ফোটাতে গুলি হিসেবে প্রয়োজন পড়ত রাতা গাছের বিচি। বাম হাতে পটাশটি ধরে ডান হাত দিয়ে একটি ছোট লাঠি ছিদ্রসদৃশ জায়গায় ঠাস করে ঢুকালেই ঠাস ঠাস করে গুলির মতো বিকট শব্দ হতো। কার শব্দ কত বেশি হয় — তা নিয়ে চলত জোর প্রতিযোগিতা! এছাড়া মেলায় গিয়ে হাওয়াই মিঠাই, জিলাপি, উখড়া, ঢেপের খই, কটকটি, মনাক্কা, ঘি-চমচম না খেয়ে কি কখনও বাড়ি ফিরেছি?

রথমেলার এসব শৈশবস্মৃতি প্রায় সব ছেলেমেয়েদের কমবেশি রয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সবকটি জেলায় রথ উৎসব পালিত হয়ে আসছে। ভারতের মাহেশ, বাওয়ালি, আন্দুলমৌড়ী, মেদেনীপুর, বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, কৃষ্ণনগর, বাঁকুড়া, বীরভূম, উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, নদিয়া, শিলিগুড়ি, হুগলি, দশঘরা এবং বাংলাদেশের মানিকগঞ্জের ধামরাই, বেনিয়াজুড়ি, পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার, শাঁখারীবাজার, যশোহরের কেশবপুর, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর, হবিগঞ্জ এবং সিলেট অঞ্চলে উৎসবের উচ্ছ্বাসটা বোধহয় অন্য এলাকার চেয়ে একটু বেশিই। বাংলাদেশ-ভারত দুটি ভিন্ন দেশ হলেও রথ উদযাপনের চিত্রের কোনও ভিন্নতা নেই। এসব এলাকার অধিকাংশ স্থানেই মাইলের পর মাইল জায়গা জুড়ে মেলা বসে। তবে এখন অনেক মেলা ধীরে ধীরে নিষ্প্রাণ হচ্ছে, পরিসর কমছে। গত কয়েকবছরে বাংলাদেশে মেলাগুলোর আরও দৈন্যদশা হয়েছে।

অদিতি বসু রায় অনেকটা আফসোস করে এক লেখায় লিখেছিলেন, —

বড় শহরের সীমানার ওপারে, মফস্বলগুলোতে আজকাল রথের মেলায় তেমন ভিড় হয় না। […] তবু আজও বাংলা ক্যালেন্ডারে রথের দিনটি লাল রং দিয়ে লেখা হয়। আর কী আশ্চর্য, এখনও রথের দিন একপশলা বৃষ্টিও হয়ে যায়। বেলফুলের গন্ধ ভাসে ভেজা হাওয়ায়! খালি পাঁপড়ভাজার গন্ধটা কোথায় যেন টুকুস করে হারিয়ে গিয়েছে।

লেখকের অনুভূতির সূত্র ধরেই বলি, শুধু পাঁপড় কেন? হারিয়ে তো গেছে অনেককিছুই। ছোটবেলায় যা দেখেছিলাম সেসব কি এখন চোখে পড়ে? বরং সেসব হটিয়ে স্থান করে নিয়েছে নাগরিক বিভিন্ন উপকরণ। আগে যেখানে আমরা উখড়া, মনাক্কা আর ঢেপের খই মহা আনন্দে কিনে খেতাম, এখনকার বাচ্চারা রথের মেলায় গিয়ে তেমনি চটপটি, আইসক্রিম আর চিংড়ি ভাজা খাচ্ছে। আমাদের কাছে চরকি, বায়োস্কোপ ছিল স্বপ্নের মতো, কিন্তু এখনকার ছেলেমেয়েরা আস্ত ল্যাপটপ ও উন্নত প্রযুক্তির মুঠোফোন হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ওদের কী আর ওসবে রুচি আছে? এরপরও রথের মেলা আমাদের শৈশবে যেমন ছিল, হয়তো এখনকার ছেলেমেয়েদের মাঝেও সেই আমেজে ধরা দেয়।

রথমেলায় জিনিশপত্রের দামও বেশ সস্তা। এই দুর্মূল্যের বাজারে একটা বড় ভ্যানিটি ব্যাগের দাম মাত্র ত্রিশ টাকা। এছাড়াও খেলনাসামগ্রী, গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার্য জিনিশপত্র, কাপড়চোপড়, জুতা — কী নেই? তবে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, ইদানীং এসব মেলাগুলোতে আমাদের সময়কার ছোট ছেলেমেয়েদের অন্যতম আকর্ষণ বাঁশের বাঁশির বেচাকেনা আগের তুলনায় অনেক কম দেখা গেলেও তালপাতার বাঁশি আর দেখা যায় না। তবে কী এই প্রজন্মের কাছে এগুলোর আবেদন একেবারেই ফুরিয়ে গেছে? নাকি আমরা নতুন প্রজন্মকে আমাদের ঐতিহ্যের প্রতি দায়বদ্ধ করে তুলতে পারিনি? তা যা-ই হোক, এরপরও এই শহর-গ্রাম-গঞ্জে রথমেলা আষাঢ়ের ঘনকালো মেঘ সঙ্গী করে আসবে প্রতিবছর।


রথমেলার কথা উঠলেই একটা ঘটনার কথা আমার খুব মনে পড়ে। সন-তারিখ মনে না থাকলেও ঘটনাটি মনে বেশ দাগ কেটে আছে। এক পাখিবিক্রেতা খাঁচায় পুরে অনেকগুলো সারস পাখি বিক্রি করতে এনেছিলেন। এর মধ্যে একটি পাখি দেখলাম আমার দিকে অসহায় ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে। দেখে খুব মায়া হলো। ইচ্ছে হয়েছিল খাঁচা খুলে পাখিটিকে আকাশে ছেড়ে দিই। বাড়ি এসে বায়না ধরি, ওই পাখিটি আমায় কিনে দিতে হবে। আমার কান্নাকাটি বেশ কাজ দিয়েছে। অনেকটা বাধ্য হয়েই কাকু আমাকে মেলায় নিয়ে গিয়ে পাখিটি কিনে দিলেন। আমার খুশি দেখে কে! কিছুক্ষণ হাতে রেখে খাঁচার জানালা খুলে একসময় পাখিটিকে ছেড়ে দিই। এবার শুরু হলো কাকুর বকুনি। কিন্তু তাতে কি? শত বকুনি খেলেও আমার আনন্দ দেখে কে। সেদিনের ছোটবেলার সেই আনন্দ এখনও আমি চোখ বন্ধ করলেই অনুভব করি।

রথমেলার পাশাপাশি রথ উৎসবের আরেক আকর্ষণ রথটানা। শাস্ত্রে রয়েছে, ‘রথে চ বাম নং ছষ্টবা পুনর্জন্ম ন বিদ্যাতে’ — অর্থাৎ, রথে চড়ে বামন জগন্নাথকে দেখতে পেলে জীবের আর পুনর্জন্ম হয় না। এ কারণেই হয়তো রথযাত্রায় অংশ নিতে সকাল থেকে ভক্তরা ফুল, বেলপাতা, বাতাসা, নকুলদানা ও কাঁদি কাঁদি কলা নিয়ে উপস্থিত হন। পুরো দুপুর চলে মাধববিগ্রহ (মাধবের মূর্তি) নিয়ে রথে স্থাপন করার কাজ। এরপর বিকেলবেলা হাজার হাজার ভক্ত রথের রশি টেনে নিয়ে যান। এর আগে দৃষ্টিকাড়া সৌন্দর্যে রথশিল্পীরা রথ সাজাতেন। রথগুলোতে রঙ-বেরঙের ডোরাকাটা বাঘ, রমণী, পুতুল থেকে শুরু করে বিষয়বস্তুকেন্দ্রিক নানা ধরনের চিত্র আঁকা থাকত। এ নিয়ে পল্লিকবি জসীম উদদীনের একটি সুন্দর কবিতা রয়েছে। তিনি লিখেছিলেন, “তারপর এল নিপুন পটুয়া সূক্ষ তুলির ঘায়, / স্বর্গ হতে কত দেবদেবী আনিয়া রথের গায়, / রঙের রেখায় মায়ায় বাঁধিয়া চিরজনমের তরে, / মহাসান্ত্বনা গড়িয়া রেখেছে ভঙ্গুর ধরা ’পরে।” শুধু পটুয়াদের আঁকা চিত্রই নয়, অনেক রথ আবার রঙবেরঙের কাপড় দিয়ে আচ্ছাদিত করে সাজানো হয়। বিখ্যাত লোকসংগ্রাহক দীনেশচন্দ্র সেন বলেছিলেন, “কাষ্ঠগৃহের চূড়ান্ত শোভা বাংলার রথগুলোতে প্রদর্শিত হইত।”

রথটানা শুরুর আগেই আকাশে ঘন কালো মেঘ জমে। রথটানা শুরু মাত্রই আশ্চর্যভাবে অনেকটা ভারাক্রান্ত ও বেদনাচ্ছন্ন হয়ে এসব ঘন মেঘ দুঃখী দুঃখী ভাব নিয়ে মাটির পৃথিবীতে ঝরে পড়ে। সেই বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে নেচে-গেয়ে মাতোয়ারা হন সবাই। সেইসঙ্গে সমানতালে বাজতে থাকে ঘণ্টাবাদ্যি। একদিকে পুরুষেরা শঙ্খ, ঘণ্টা, কাঁসা, ঢাক, ঢোল বাজিয়ে পরিবেশ মুখর করে তোলেন অন্যদিকে নারীরা উলুধ্বনি ও মঙ্গলধ্বনির মাধ্যমে রথটানায় আনন্দচিত্তে সামিল হন। রথ থেকে রাস্তায় দাঁড়ানো দর্শনার্থীদের দিকে ছুঁড়ে দেওয়া হয় কলা আর ধানের খৈ। এভাবে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে রথটানা শেষ হয়। নয় দিন পর পুনরায় একাদশী তিথিতে উল্টোরথযাত্রা উৎসবের মধ্য দিয়ে একই স্থানে রথ টেনে নিয়ে আসা হয়।

কলকাতার সংবাদ প্রতিদিন পত্রিকায় দেবদত্ত গুপ্ত নামের এক লেখকের ‘রথচর্চা’ শিরোনামের একটি লেখা পড়েছিলাম বেশ আগে। এতে লেখক বাঙালির সুখ-দুঃখে রথযাত্রার মেলা অন্তরঙ্গভাবে মিশে রয়েছে উল্লেখ করে বলেছেন :

রথ নিয়ে বাঙালির উৎসাহের অন্ত থাকে না। আসলে রথ একটা চর্চা। রথ-চর্চার একটা সর্বভারতীয় চেহারা থাকলেও বাঙালির রথ-চর্চার সুরটা একটু অন্যরকম। রথ-সন্ধের জগন্নাথযাত্রার ভেঁপু আমাদের পৌঁছে দেয় সেই দিগন্তরেখায়, যেখানে কাশফুলের ফাঁক দিয়ে দেখা যায় ঢাকের বাদ্যি, কাঁসরঘণ্টা আর সানাইয়ের কবিতা-মাখা সুরে আসছেন আমাদের ‘মা দুগ্গা’। আসলে রথের দিনেই প্রতিমার কাঠামোয় মাটি পড়ে কি না। তাই রথের বাঁশির আড়ালেই তো বাজে আগমনীর সুর! তালপাতার ভেঁপু। কোনওটার চেহারা ওঠে তালপাতা পেঁচিয়ে-পেঁচিয়ে সুতলির বাঁধন দেওয়া নিয়ে, আবার কোনওটার গায়ে সাদা আর গোলাপি বালার মোড়ক। ঠোঁটে দেওয়ার পাতা দু’টোও সানাইয়ের মতো। এর সঙ্গে থাকে পাঁপড় সেঁকার কারবারি। জগন্নাথ, সুভদ্রা আর বলরাম চলেন দুলতে-দুলতে। শিঙা ফুঁকিয়ে আগে আগে ভক্তকুলদল। আর পাশে-পাশে এসে দড়ি ধরেন মনস্কামনা নিয়ে, প্রার্থীরা। রথের দড়িতে পুণ্যি অর্জন জোটে। গোটা বাংলা জুড়ে সেদিন রথ বেরোয়। আর সেইসঙ্গে চলতে থাকে পাওয়া/না-পাওয়ার এক সূক্ষ পাটিগণিতের হিসেব-নিকেশ। বৃষ্টি মাথায় করে রথ আসে। একটি রাঙা লাঠি কিংবা একটি পাতার বাঁশি বদলে দিতে পারে রথের দিনের চলমান ছবিটাকে।

শুধু তাই নয়, রথ নির্মাণের একটা সুন্দর বর্ণনাও পাই ওই লেখকের কাছ থেকে। তিনি লিখেছেন :

প্রতিবছর একেবারে নতুন রথ নির্মাণ করা হয় জগন্নাথ দেব, বলভদ্র এবং সুভদ্রার জন্য। নিয়ম মেনে বসন্তপঞ্চমী অর্থাৎ সরস্বতী পুজোর দিন এই কাঠ-সংগ্রহের এক ঝক্কি থাকে। […] বৈশাখ মাসের অক্ষয়-তৃতীয়ার দিন রথ-নির্মাণ শুরু হয়। আর নিয়ম বেঁধে, শেষ হয় আষাঢ়ের শুক্লা দ্বিতীয়া-র আগে। অর্থাৎ রথযাত্রার একদিন আগে রথের কাজ শেষ করতে হয়। সব থেকে মজার কথা হলো : এই রথ-নির্মাণের আগে স্বয়ং জগন্নাথ দেবের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। সেই অনুসারে তিনটি আজ্ঞামাল্য বহন করে নিয়ে আসেন তিনজন পান্ডা। ‘রথ-নির্মাণের কাজ শুরু হোক’ আজ্ঞামাল্যের মাধ্যমে এই নির্দেশ এসে পৌঁছয় পুজো-স্থলে। আর তারপর শুরু হয় রথ-নির্মাণের কাজ। তিন ঠাকুরের রথের তিন নাম। জগন্নাথ দেবের রথ ‘নন্দী ঘোষ’, বলভদ্রের রথ ‘তালধ্বজ’, আর সুভদ্রার রথের নাম ‘দেবদলন’। শুধু নামেই নয়, এই রথের মধ্যে রয়েছে আরও অনেকের অবস্থান। […] এইভাবেই পুরাণকাব্যের একটা গল্প যেন নেমে আসে রথের গা বেয়ে।

পাশাপাশি তিনি এও বলেছেন, “কোথায় যেন একটা ঐক্যের সুর বাজে। […] লোকজীবনে রথ, ধর্মের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে গিয়ে একটা ধর্মনিরপেক্ষ রেখা রচনা করে। যা একেবারে ধর্মীয় ভেদরেখাকে মেনে তৈরি হয় না।” দেবদত্ত গুপ্তের কথা যেন আমার কথা হয়েই ধরা দেয়। এমন কথা তো আমিও বলতে পারি। রথের রশি টানতে টানতে যেমন শাখা-সিন্দুরপরা সদ্যবিবাহিতা পাড়ার সবচেয়ে কোমল-সুন্দর মেয়েটি হেঁটে যাচ্ছেন, তেমনি অন্য সবার সঙ্গে বোরকাপরা মেয়েদেরও রথটানা উৎসবে অংশ নিতে দেখি! বাঙালির এ এক অপার বন্ধন। এখনও এ দৃশ্য বাংলাদেশে প্রতিবছরই দেখা যায়। সেটাই হলো আশার কথা। জনমানুষের মতামত উপেক্ষা করে বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম যা-ই রাখা হোক না কেন, যে-কোনও উৎসবপার্বণে হিন্দু-মুসলিম কিংবা অন্য সম্প্রদায়ের লোকেরা যে এক মিলনসূত্রে গাঁথা, সেটা বোঝার জন্য এই ছোট্ট উদাহরণটাই কি যথেষ্ট নয়?

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you