সুন্দর সাহিত্য, সুদৃশ্য শোকেস

সুন্দর সাহিত্য, সুদৃশ্য শোকেস

বিশেষ একটা সাইজের কাগুজে প্রকাশনা যা আজ থেকে দেড়-দুই দশক আগেও ছোটকাগজ বা বাংলায় লিটলম্যাগ নামে ডেকে এডিটার ও অথার সবাই মিলে সেলিব্রেইট করতেন, এডিটোরিয়ালে এবং আড্ডায় হাঙ্গামা মাচাতেন কোনটা লিটলম্যাগ হইসে আর কোনটা লিটলম্যাগের জাতও হয় নাই, লক্ষ করব যে একটা টাইমের পর থেকে কেউ আর ছোটকাগজ/লিটলম্যাগ বলে অ্যাড্রেস করেন না নিজের সম্পাদিত/লেখাটি-পত্রস্থ পত্রিকাটারে। এইটা খালি ডাকনামেরই চেইঞ্জ কি না, নাকি ভিতরঘরে এর চেয়েও অনেক বেশি কিছু, সার্চ করে দেখাটাও দরকার। মোদ্দা কথা, নাই, ভেদরেখা নাই কিছু বড়য়-ছোটয়। শিট তো শিটই, সেইটা হার্ড হোক বা সফট, ব্রড হোক বা লিট।

দুনিয়ার তাবতকিছুতে ভেদরেখা বা ভেদবিন্দু মুছে যাচ্ছে একটার লগে আরেকটার এবং অ্যাপ্রিশিয়েটেড হচ্ছে সর্বমহলে। কেবল যা-কিছু ভালো তার সঙ্গে প্রথম আলো বলা ছাড়া কাজেকামে খারাপেরই অর্শিপ করি আমরা এবং তার আগে ও পরে ফিলোসোফাইজ করি যে এই দুনিয়ায় খারাপ বলিয়া কিছু নাই। সব মায়া। আন্ধাইর বলিয়া কিছু নাই। সব আলো। ফকফকা। খালি ‘সিনেমায় গল্প বলার স্বাধীনতা’ পাইলেই দেশে মেশকে-আম্বরের খুশবু লুটাবো। আমাদের পিএম এবং কবি নবীরুল ইসলাম ও কামাল চৌ মিলে এই ইন্ডিপেন্ডেন্স এনে দেবেন এ-যাত্রা। আমরা আপাতত অধিক আব্দার না-করি। চৌত্রিশ টাকা বাড়ায়া পাঁচ টাকা কমাইবার স্ট্র্যাটেজি জয়যুক্ত হলো। গুমখুন দরকার আছে। টেক্নিক্যাল কারণে জামাতের লগে ঐতিহাসিক আঁতাতের স্মৃতি পিএম চাইলে ফেরাতে পারেন আরবার। আমরার আপত্তি নাই। দ্বিসহস্রদুইকুড়ি পর্যন্ত গণতন্ত্র সমুন্নত রাখি আব্দারে ঢেঁকুরে উদ্গারে।

অ্যানিওয়ে। উপরের দুইটা প্যারাগ্র্যাফে ব্যক্ত কথাগুলা আউট অফ ফান সিলেট টু মৌলভীবাজার যাত্রাপথে ভিয়েকলসিটে বসে লেখা। আমাদের পিএম ও প্রশাসনিক পদস্থ পদাবলিনির্মাতারা আশা করি মিসট্রাস্ট করবেন না আমারে। আমি তো উনাদেরই মিহি সমর্থক, আমরা আদ্যোপান্ত অভিন্ন দলের লোক। রাতের বেলায় ব্যালট বাকশো ভরে দেবার পথে বাগড়া দিসি আমি? কিংবা আমার ভাইবিরাদরির মধ্যে কেউ করসে কখনো টুঁ শব্দটি? ‘শিল্প-সাহিত্যের কাগজ’ স্লোগ্যানে বেরোনো ‘মনোজ’ পত্রিকাটা দুইহাঁটুর উপর মেলে রেখে কুঁজো হয়ে দেখতে দেখতে গন্তব্যে পৌঁছাবার আগে এক-সময় খিয়াল করি পড়া হয়ে গেসে সতেরোজন কবির কাজ, এর মধ্যে একজন বিদেশের কবির অনুবাদ ইনক্লুডেড। শুধু তা-ই নয়, প্রায় আট/নয়টা প্রাবন্ধিকী গদ্য পড়া হইসে বিভিন্ন বিভাগের খোপে। এছাড়া আছে একহালি গল্প। সবকিছু সুখপাঠ্য। সুদৃশ্য ও স্বচ্ছ স্ফটিকের মতো সবকিছু।

প্রথমত, পয়লা পাঠে এবং তারও আগে দরিশনে, মোটমাট সাড়ে-আট ফর্মা কলেবরের কাগজটারে আপনি বিউটিফ্যুল বলা ছাড়া আর কিছুই বলবেন না। তারপর, প্রথম প্রতিক্রিয়ার পরে একটু থুম ধরে ভেবে দেখতে যেয়ে মনে কেবল এই কথাটাই হবে যে অ্যাজ অ্যা ম্যাটার অফ ফ্যাক্ট বাংলাদেশ সত্যি বিউটিফ্যুল। সুকুমার চেতনার অনুরণনে পেলব ও মসৃণ। সুবাতাসময়। ডেভেলপমেন্টভরপুর। গদ্যে পদ্যে জ্ঞানগর্ভ ও গগনমুখর। কোথাও ক্রন্দন নাই। গুমখুন নাই। অপমান নাই। অবমাননা নাই। হিন্দুপীড়ন নাই। চিম্বুক পাহাড়ের চূড়ায় শিকদার গ্রুপের ইনভেইশন নাই। নিছক কবিতায় একটু অনুভূতিস্ফীত ক্রন্দন-হাহাকার ছাড়া বাংলাদেশ মোটামুটি স্মাইলিং। বাংলাদেশে নেত্রীর নির্দেশে চাঁদ ওঠে। চন্দ্রমল্লিকা ফোটে। জোছনা লোটে। গল্প বলার স্বাধীনতাও জোটে। বেরিয়ে-যাওয়া জামায়াতে ইসলাম, দেখা যাক, যায় কার করপুটে।

এমনিতে অনলাইন পোর্টালে লেখাপত্র পড়ে এক-দশকেরও বেশি হয়ে গেল অভ্যস্ত আমরা মাঝেমধ্যে একাধটা ম্যাগাজিন বা ছাপানো বইয়ের পাতায় বিশেষত কবিতা নামধেয় কারুপণ্য পড়তে পেলে হ্যাপি হই। কী-রকম যেন নস্ট্যালজিক হই। শিল্প-সাহিত্যের কাগজ ‘মনোজ’ পড়তে যেয়েও হইসি। ভীষণভাবেই প্রীত হইসি। প্রীত ও পর্যুদস্ত। পর্যুদস্ত, কেননা বাংলাদেশে একটা আস্ত মহামারী ও দুইয়ের অধিক ভয়াল বন্যা হয়ে গেসে এবং দফায় দফায় বাটপারি নির্বাচন ও লুটমার উন্নয়ন ইত্যাদির কোনো ছোঁয়া ম্যাগাজিনটায় বিছড়ায়া পাই নাই। একবার মনে হচ্ছিল এই পত্রিকা বোধহয় প্রি-প্যান্ডেমিক কিংবা আওয়ামীপূর্ব পুরানা আমলের ছাপানো। পরে এর প্রিন্টার্স লাইনে যেয়ে দেখি এইটা ছাপা ২০২২ সেপ্টেম্বরে। এডিটার ফয়জুর রহমান ফয়েজ। হাদিয়া হান্ড্রেড অ্যান্ড ফিফটি। ইন বিডিটি। এডিটোরিয়্যাল অ্যাড্রেসের জায়গায় ইংল্যান্ডের সংযোগতথ্য দেয়া। কাভারে ব্যবহৃত ছবির শিল্পী সত্যজিৎ রাজন।

পত্রিকা কোলে নিয়া যারা পড়তে ভালোবাসেন, তাদের কাছে ‘মনোজ’ সমাদৃত না-হবার কারণ নাই। সুসম্পাদিত বলে একটা টার্ম বাংলায় আছে, এই টার্মটা মনোজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সূচি দেখলেই বোঝা যায় গান থেকে শুরু করে গ্রন্থ নিয়া আলোচনা ইত্যাদি বিচিত্র দিকে-দিগন্তে এডিটার নজর রাখতে চাইসেন। আলোচ্য ভলিয়্যুমটা ফোর্থ, অর্থাৎ আগে আরও তিনটা সংখ্যা বারাইসে।

যেই কথাগুলা গোড়ায় এবং আগায় বলতেসিলাম সেইগুলা এই পত্রিকারই শর্টকামিং মনে করবার কারণ অল্প। বাংলাদেশের কোনো মিডিয়ায় কোনো কলামে কোনো কবিতায় কোনো কবিসাহিত্যিকে কোনো কথাসাহিত্যে কোনো গানে কোনো সিনেমায় কোনো মনুষ্যে কোনো প্রকাশ্য দিবালোকে গেল-দশকাধিক যা নাই তা মনোজেও নাই। কী নাই? গল্প বলার স্বাধীনতা? সেসব ‘মনোজ’ পত্রিকায় কেন, মনে আনাটাও দণ্ডনীয়। চুপ থাকেন, চাপ কমান, কবিতাসাহিত্য ও অন্যান্য আর্টকালচার করেন। জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু। জয় শেখ হাসিনা।

গানপারের বইরিভিয়্যু

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you