রিক্যুয়েম ফর রূপক

রিক্যুয়েম ফর রূপক

শেয়ার করুন:

বিরহে বিনত দিন বহি’ যায় ধীরে
বুঝি সে বসিয়া আছে অশ্রুনদীতীরে

যেয়ে ফের আসে ফিরে ঢেউ-পরে-ঢেউ
তরী শূন্য ভেসে যায় নাহি ওঠে কেউ

কারো তবু কাঁপি’ ওঠে পাখি-ওড়া প্রাণ
বেঁচেছিল, মরে গেছে, নিভেছে শ্মশান

 

***
রূপক মরেছে তবু রূপকের চোখ
মরে নাই; আর তার মন্থরিত মুখ

যেন-বা অসুখ এক অনঙ্গ অথির
রেখেছে জাগায়ে দিন বিষণ্ন বধির

ঢের হাঁটাহাঁটি হলো চোরাকাঁটাঘাসে
বিদায় রূপক, এবে চাঁদ দূরে ভাসে

 

***
চাঁদ দূরে ভাসে এবে কচুরিপানায়
স্মৃতি-আর্দ্র দিনগুলো ছায়া ফেলে যায়

দাপানো রোদের দিনে নিচে দেখে চিল
নিখিলের ভাই ডাকে, নিখিল…নিখিল…

নিখিল নিয়েছে ছুটি, সেই অবসরে
ভাই ডেকে ডেকে ভাই বৃষ্টি হয়ে ঝরে

 

***
চলে যেয়ে ফের যদি ফিরে আসে কেউ
তারে কি আবার নিয়ে নেবে বেনো ঢেউ?

পুনরপি যদি তার ফাঁদে-পড়া দশা
যদি ফের ঘেরে তারে ত্রিলোক-তমসা!

এ-ই ভালো তার চেয়ে, সহসা গমন
যে-দেশে উত্থান নাই অথবা পতন…

 

***
যা-কিছু নেবার তার নিয়ে গেছে তুলে
এখানে জীবন ফোটে করমচাফুলে

দাবি ও দরদ তার ডায়রি ও ডানা
মুছে যাবে নামটিও না-রবে নিশানা

এত যে বাগিচা এথা এত যে পাথার
চকখড়ি সত্য যদি—অধিক ডাস্টার

 

***
শ্মশানবন্ধুর ঋণ শোধ করে দিতে
রূপক ফিরিবে এই জেঁকে-আসা শীতে?

শীতে তার শরবনে ফুটে-ওঠা চোখ
নদীতীরে কাশফুল উলুকঝুলুক

অনেক হাঁটার দিন অনেক খোঁজার
ঢুপিপাখি-হাঁসডিম—তামাদি এবার

 

***
সাজানো হয়েছে চিতা, ভেঙে সারা হাড়
হয়নি এখনো তবু আগুন জোগাড়

অতএব দেখে লই মুখ আরবার
এ-যাত্রা অন্তিম, নাকি ফেরা আছে আর?

নাড়িতে নাড়িতে নাই যোগসুতো কোনো—
শূন্যলোকে-ঝুলে-থাকা, ও রূপক, শোনো!

 

***
যোগ নাই আমাদের, ছিল নাকি কভু?
যে-জীবন দোয়েলের…ফড়িঙের, তবু

আমরা যেপেছি সেই পলকা জীবন
যবক্ষেতে খুঁজিয়াছি মানুষীর মন

পাইনি…পেয়েছি আহা ঢের না-পাওয়া
সর্ষেফুলের থেকে উঠে-আসা হাওয়া

 

***
হাওয়ায় হাওয়ায় এই স্পর্শশ্বাস কার!
সে-ই জানে গূঢ় ব্যথা—হারায়েছে যার

যাহারে হারায়ে এই এত হাঁকাহাঁকি
তুলে তারে নিয়ে গেছে নিম তন্দ্রাপাখি

পাখিটা এমন তার নাই পূর্বাভাস
পাখসাট নাই তার নাই হাড়মাস

 

***
শীতরাতে হাড়ে তার পড়িয়াছে হিম
জুড়িয়া গিয়াছে যত বেদনা নিঃসীম

বেদনা বলিবামাত্র ভেসে ওঠে মুখ
পাখির নীড়ের মতো একজোড়া চোখ

ট্রামপথ শেষাবধি সবারেই ডাকে
নীড়খোঁজা পাখিচোখে মৃত্যু মাখা থাকে

 

***
এখানে তোমার মুখ রেখে দেয়া যাক
রুলটানা দিনপত্রী ভরে বর্ষারাগ

চাঁদের দখিনপাশে দগ্ধা দিনগুলো
এথা পাক স্নিগ্ধসুধা শান্ত রাত্রিধুলো

রাখছি তোমার চোখ স্কচটেপে সেঁটে
জোনাকিবিভায়, নাক্ষত্রিক নেমপ্লেটে

 

***
কথা ছিল আমাদের…ছিল কথা কোনো?
আমি যেন বলি আর তুমি যেন শোনো…

জীবিতেরা মৃতপ্রায় বক্তব্যের ভারে
মৃতেরাও ভোগে বুঝি স্মৃতির প্রহারে!

কথা দিয়ে কথা রেখে কথাক্লান্ত দিন
কথায় কথায় কীর্তি দিগন্তে বিলীন

 

***
লক্ষ অক্ষরে শোভিত বৃক্ষে প্রীতিপাতা
প্রাণবর্ণ পুচ্ছে মেখে পাখিটি বিধাতা

ঠুকরায়া পাতা পাড়ে, খায় ফলশাঁস
বিধাতাপাখির ত্রাসে ভীত ছানাহাঁস—

জিজ্ঞাসে পানার কাছে : ও কচুরিপানা!
ঘুমাবারে পাবো আমি কোথায় বিছানা?

 

***
ঈগলডানার ছায়া পাহাড়চূড়ায়
আকাশের সুর্মারঙ অন্ধকারে ছায়

পরক্ষণে সানুদেশ আলোকিত হলে
প্রজাপতি ক্রীড়া করে ঝর্ণাঝোরা জলে

পুনরপি যথাপূর্ব যাপিত জীবন
মানুষ ভুলিয়া যায় ঈগল, ইন্ধন…

 

***
এইভাবে সমাহিত ঘুমায়েছে পাখি
আলতো পাতার মতো এইভাবে আঁখি

মুদে রেখে এইভাবে অথর অধর
এইভাবে চাপা চোখে চুপটি ভ্রমর

ফুলের জলসা ফেলে পিছে এইভাবে
সব পাখি এইভাবে নীড়ে ফিরে যাবে

 

***
ফিরে তার হয়নিকো বাড়িখানি দেখা
সিদ্ধার্থসন্ন্যাসে তার যাত্রা হলো, একা…

একাকী যে-জন তার জ্যোৎস্নাচার ভুল
খেতে বসে অন্নে পায় মস্ত কালো চুল

আঙুলে পেঁচিয়ে চুল আনমন পথে
হেঁটে যায়, হেঁটে গেছে, একা দিব্যরথে

 

***
ফেরে না ফেরে না পাখি উড়ে চলে গেলে
সরু এ-বিস্ময় ভেদ ভারি গোলমেলে

কেনই-বা আসে আর কেন চলে যায়
গাছে ফল পাকে ক্রমে গাঢ় বেদনায়

বেদনাহৃদয়ে ঢুকে ভাবি নিরুপম
উড়ে-যাওয়া পাখি জানে কোথা উপশম

 

***
পৃথিবীর আলোজলবায়ুবর্ষাশীত
ফেরাতে পারিত যদি তার সম্বিৎ!—

চলে যে গিয়েছে ফেলে মায়াসংসার
আমাদের জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার

হেলায় পায়ের কাছে ঠেলে রেখে দিয়ে
দিগন্তে মুখটি তার নিয়েছে ঘুরিয়ে

 

***
আবার বারিষা এসে ভাসাবে নদীটি
পাবন-পুজোর দেশে শারদীয়া চিঠি

আবার ধানের শীষে হেমন্তহাওয়া
সন্ধ্যামাঠের মাথা কুয়াশায় ছাওয়া

আবার আমের গাছে আকুল কোকিল
ডানায় কারুণ্য লেপে কোথা গেলে, চিল!

 

***
সেথাকার কি-বা রঙ কেমন গড়ন—
যেখানে গিয়েছ তুমি একাকী অ-জন?

রয়েছে ক্রন্দন সেথা, উপহাসাহাসি?
সকালের ফুল সেথা সন্ধেবেলা বাসি?

একদিন আমিও তো বুঝে যাব ঠিক
জীবন ক্ষণায়ু যথা বিজুলিঝিলিক

 

***
তুলে তারে নিয়ে গেছে ব্রহ্মপ্রজাপতি
ভাদ্ররোদে ছায়া এসে এঁকে গেল যতি

ছিল সাধ দেখিবার অনেক অতুল
সন্ধেগোড়ায় ফোটা মালতীর ফুল

গিয়াছে অকালে তার ফুরায়ে প্রভাত
কিছুই দেখিতে তারে দিলে না হে নাথ!

 

***
লালঝুঁটি কাকাতুয়া, চিনিতে কি তারে?
চলে যে গিয়েছে দূরে…ভিন পারাবারে…

দেখেছিল তারে এই সব্জিঢালা শীত
বাকি পাঁচঋতু যার নিকট-সুহৃৎ

ছয়টি বোনের সনে সখ্য গড়ে শেষে
চলে গেল, চঙ্ক্রমান, চিরনিদ্রাদেশে…

 

***
অফেরা অরণ্যে তার উড়ে-যাওয়া এই—
অভিমান হেতু কোনো, নাকি হেতু নেই?

ঠিকানাহারানোজন জানে তাহা ভালো
কোন তারা কতটুকু দিতে পারে আলো

তালগাছতলে বসি’ তারামূর্খ লোক
নক্ষত্রপোকার সনে উদযাপিছে শোক

 

***
কোনো-এক খুশিদিবাগত রজনীতে
পাঁজরে ধরিল তারে শাশ্বত শীতে

শীত মানে সেই দেশ—স্তব্ধতার দ্বীপ
অরব আঁধারে আর্দ্র অন্ধ অন্তরীপ

আরাধনা নাই সেথা নাই আরোহন
ঘুমস্বাদ নাই…নাই অনিদ্রা মোহন

 

***
মন্দ্রস্বর তোপধ্বনি বিদায়যাত্রায়
হয়নি তোমার বেলা…হয়নিকো…হায়!

হাতে হাতে তবু তুমি গিয়েছিলে উঠে
যেন উড়ে পাখি গেছে খাঁচা থেকে ছুটে

অসীমার দেশে…যথা পাতাদের রূপে
হেমন্তবাতাসে পাতা ঝরে গেছে চুপে

 

***
চুপে তুমি জলখোঁজে উড়েছ চাতক
সুদূর মেঘের দেশে—বৃষ্টিগ্রাহক!

পূর্ণ করে নিও ঘড়া, যাও পেয়ে যদি
তোমার সুরমা এথা বহে নিরবধি—

বয়ে যাবে বুকে নিয়ে ভূমিব্যবসায়ী
সকলি ফুরায় ক্রমে…নদীও উদ্বায়ী

 

***
যথার্থ বিহঙ্গ ছিল, বিহঙ্গ না-হলে
ছিল মীন ভাসমান নীলভবজলে

অথবা নদীর ধারে ছিল কাশঝোপ
শরৎ ফুরাবামাত্র গত যার রূপ

গত তবু গত নয়, অনাগত কাল
পক্ষীরূপে মৎস্যরূপে রহিবে বহাল

 

***
এখানে এ ধানে-জলে ঘেরা গ্রামঘরে
কলা-কাঁঠালের ঘ্রাণে মন্দ্রিত অম্বরে

চিরধৃত র’লো তার ব্যথাহর্ষভাষ
রহিলেন সূর্যদেব, কুসুমসঙ্কাশ…

রয়ে গেল কিছু তার চরিতার্থ গান
ঝরাপাতাহৃদি ভরে আলতো প্রস্থান

 

***
ছাই হয়ে মিশেছ বাতাসে, ছাইপাখি!
আমরা তোমাকে আজি ছাই নামে ডাকি

মাটি হয়ে মিলেছ মাটিতে, মাটিপোকা!
ধুলোখেলা ফেলে এবে উঠে এসো খোকা—

কে শোনে কথাটি, বৃথা ডাকাডাকি, হায়!
মাটিপোকা ছাইপাখি ফেরে না কুলায়

 

***
আমরা তোমায় পুড়িয়ে এসেছি ঘাটে
শীতপ্রত্যুষে নদীতীরতল্লাটে

আমরা তোমাকে মরাটে মাঘের চাঁদে
ছড়িয়ে এসেছি হরিবোল পরমাদে

স্তোত্রগাথা রাখি নাই লিখে সমাধির প্রস্তরে
তোমার নিবাস চিরহেমন্তঘরে

 

***
সমাধিমন্দির কই, কোথা যায়া পাই
তোমার শেষের রেশ—স্মৃতি-ধরতাই?

কোথা গেলে পাবো তব দেহভস্মধুলো
শেষপ্রেম শেষরাগ শেষদিনগুলো?

সমাধিমন্দির নেই, কোথা যেয়ে খুঁজি
মুনিয়াপাখির ঘরে—শীতজলে বুঝি?

 

***
ভুলে-থাকা যাক তবে, বেঁচে-থাকা যাক
ছায়াদেশে থাকো তুমি স্মৃতিছত্রাক

মায়াউদ্ভিদ তুমি, মিয়োনো মশাল
পেছনে প্রেতের মতো অপসৃতা কাল—

আমরা বসেছি যারা আম্বরখানায়—
গোলসঙ্গ দিনগুলো ফুরাইলো, হায়!…

জাহেদ আহমদ নভেম্বর ২০০৬

রিক্যুয়েম ফর রূপক : নেপথ্যক্রমণিকা


রূপক দেব (১৯৭৮-২০০৬) আমাদের বন্ধু। মরে গেছে, এই দিনে, সেদিন ২৮ অক্টোবর গভীর রজনীতে। মরে গেছে, ভবজ্বালা জুড়িয়েছে, গেছে চুকে মোটামুটি। ঋতু ছিল শীতের। অথবা আরও স্পষ্টতই শীতের আগের শীতশীত হেমন্ত বোধয়। আকস্মিক সেই কৌতুককর ঘটনায় স্পৃষ্ট হয়ে, হাসির দমক সামলাবার গরজ থেকে, সেই সপ্তাহেই লিখিত হয়েছিল এই স্মৃতিনিবন্ধ। মুচকি হাসির এই রিপোর্টাইটেম রূপক-অন্তর্ধানের সাতবছর পূর্তিতে মহাশূন্যে ওড়ানো হলো, এমনি এমনি, দ্বিতীয় কোনো অভিপ্রায় নেই এর কেবল রূপকের মুচকি দৃষ্টি আকর্ষণ করবার প্রকাশ্য অভিসন্ধি ছাড়া। আমাদের সমবেত হাসাহাসি আর হাহাজারির এই নিষ্পলক জীবন!—জাআ ২৮ অক্টোবর ২০১৩ ফেসবুক মেমোরিস থেকে


অক্টোবরের আঠাইশ তারিখ ছিল রূপকের মৃত্যুদিন। মনে ছিল না, আঠাইশ দিবাগত রাইতের কোনো-এক সময় ইয়াদ হয়। এর পরের দিন বেলা দ্বিপ্রহরে ঝাঁঝালো রোদ্দুরের দিকে চোখ রেখে ফের মনে পড়ে, এমন কড়া সানলাইটে এমাথা-ওমাথা টাউন চক্কর দিয়ে বেড়িয়েছি রূপক আর আমি। ইকোনোমির অবস্থা তখন অতটা ভালো ছিল না আমাদের দুনোজনেরই। দেশেরও অত উন্নয়ন ঘটে নাই। ইকোনোমির গ্রোথ ঘটে রূপকের জীবনাবসানের পরে, দেশের জিডিপি এবং রিজার্ভ নিয়া দুনিয়া জুড়ে ধন্য ধন্য রব ওঠে, সিটি কর্পোরেশন অ্যারিয়ারই শতবর্ষজীবী কয়েকশ রেইনট্রি কেটে ফেলা হয় জিন্দাবাজার-আম্বরখানা-চৌহাট্টা রাস্তার দুইধার থেকে। এই কথাগুলা আঠাইশ অক্টোবর অন্তর্হিত হবার অব্যবহিত পরে মনে পড়ল। রূপক ইন্তেকাল করে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর কোনো-এক রোজাঈদের দিবাগত রাতে। এর আগের দুইদশকের রূপক আর রেইনট্রিতলায় টিস্টলভরা স্যাঁতস্যাঁতে মায়ার অন্ধকারখচিত সিলেট শহর আমার কাছে একাকার।—জাআ ২৯ অক্টোবর ২০২০ ফেসবুক মেমোরিস থেকে


ছয়ের অক্টোবরে রূপক মরে যাবার পরে এই গীতল গদ্যলহরিটি লিখতে একমাসাধিক টাইম লেগেছিল। পর থেকে পড়েই ছিল বোন্দাখাতার পাতায়। তেরোতে ফেইসবুকের আমলে ইউনিকোডে অভ্রে চুটিয়ে বাংলা লেখার সময় এইটা নোটের আকারে ছেপে রেখেছিলাম। কুড়িতে প্যান্ডেমিকের সময়টায় রিশেয়ার করি একবার। এর মাঝখানে ঢাকার একটা সাহিত্যপত্রে এর এক-পঞ্চমাংশ গ্রন্থিত হয়। সেই পত্রিকার নাম কবিতাপত্র, সম্পাদকের নাম হোসেন দেলোয়ার। এই ছাপারও পরে গত হয়ে গেছে একযুগের বেশি। যা-হোক। এর মধ্যে ফেইসবুকে এবং দেশদুনিয়ার আনন্দলোকে ঢের পরিবর্তন এসেছে। শেখ হাসিনা পালিয়েছে, এসে যে বসেছে সে এক টুন্ডা জগন্নাথ। মোটামুটি এখন সাড়ে-এগারোটা বাজে, রাত। বারোটা বাজতে কেমন দেরি আর? উত্তরটার আশায় দ্বারস্থ হব নাকি পাঞ্জেরী  কবিতার?

রোদন, মূলত, রচনাটির সর্বস্ব। রোদন। রিক্যুয়েম। ঠেকায়া রাখার চেষ্টা, প্রাণপণ, রোদন।

অতি ইমোশন্যালি ইনভলবড হয়ে গেলে যা হয়, রচনা খাড়া দাঁড়ায় না, ল্যাবগ্যাব করে, এই রচনায় তা আশঙ্কা করি তিরাশি ভাগ ট্রু। অতি ইমোশন্যালি ইনভলবড যেহেতু। তবু। রচনাটা বারবার প্রকাশ করবার চেষ্টা চালিয়ে গেছি ফেইসবুকযুগের আগে ও পরে। পূর্ণাঙ্গ। দুইহাজারএগারোয় কিয়দংশ কবিতাপত্র  ছেপেছিল। দুইহাজারতেরো অক্টোবরে এইটা আনকাট নিজের ফেইসবুকনোটে প্রকাশ করে রাখি। লিখেছি দ্বিসহস্রছয়ে। এইবার তার নয়া যাত্রা। আর কোথায়, গানপার  ছাড়া?

তা যা হোক। কবিসাহিত্যিক ছিল না রূপক। আঠাইশ বছরের যুবক। যখন মারা যায়, মানুষ, চলে যায় ম্যাথেমেটিক্সের বাইরেকার এক রহস্যময় মায়ায়। তার আর বয়স বাড়ে না। আয়ু ফুরায়। বায়ু তবু বয়। রয় রয়। ধিরিধিরি হাওয়া। যারা বেঁচে থাকে, পড়েপাওয়া বেঁচে-থাকা চোদ্দআনা, তারা জানে কারে বলে যাওয়া। চলে যাওয়া। রয়ে যাওয়া। আরও অসামান্যভাবে বেঁচে থাকা। ডাউন দ্য মেমোরিলেইন।

কবিসাহিত্যিক না হলেও, থ্যাঙ্ক গড রূপক কবিসাহিত্যিক ছিল না বলে, ছিল পাঠক। গোগ্রাসী রিডার। হুমায়ূন মিলন শওকত ওসমান সৈয়দ হক মান্নান সৈয়দ রাহমান মাহমুদ দুই আজাদ যথা আবিদ ও হুমায়ুন সুনীল শীর্ষেন্দু সমরেশ শঙ্খ শক্তি জয় আমরা হুল্লোড় করে পড়ে এসেছি একলগে। যেমন শুনেছি ফিলিংস ফিডব্যাক সোলস মাইলস নোভা ওয়ারফেজ এলআরবি মাকসুদ বাচ্চু জেমস্ শাফিন পার্থ ফজল মাহমুদ নাসিম আলি খান শেখ ইশতিয়াক শাকিলা জাফর সামিনা নবী বেবী নাজনীন ডলি সায়ন্তনী আজম খান সুবীর নন্দী কিরণচন্দ্র ও রথীন্দ্রনাথ আশিকুজ্জামান টুলু আর্ক হাসান চাইম খালিদ হাবিব ওয়াহিদ অর্ণব মেহরীন কফিল আহমেদ আরও আরও কত শত ব্যক্তি ও ব্যান্ড। সুমন অঞ্জন নচি শিলাজিৎ প্রতুল মৌসুমী চন্দ্রবিন্দু মহীনের ঘোড়াগুলি ফসিলস ক্যাকটাস ভূমি দোহার কালিকাপ্রসাদ রূপম ইসলাম। কত কত ম্যুভি, সিরিজ, সিনেমা। তার মধ্যে একটার নাম রিক্যুয়েম ফর গ্রানাডা। একটা হারানো নগরের জন্য শোক। গাথা। কান্না। মাতম। মর্সিয়া। হারানো সময়ের জন্যে একপ্রস্ত রোদন।

ওই পিরিয়ড অফ টাইমটার জন্যই রিক্যুয়েম। গোটা আঠাইশ বছরের জীবনের শেষ আঠারো বছরে সে এন্তার বই, ঈদসংখ্যা পূজাসংখ্যা আর ক্যাসেটের পর ক্যাসেট, জমিয়ে রেখে গিয়েছে। সেসব বই সেসব ঈদসংখ্যা পূজাসংখ্যা ক্যাসেট আমরা পালাক্রমে পড়েছি শুনেছি। জীবনের বহু অচরিতার্থতা নিয়ে রূপক চলে গিয়েছে ব্যর্থ সম্রাটের মতো, যুদ্ধাহত; অন্যদিকে, রয়ে গেছি আমরা, চরিতার্থতার চর্বিতচর্বণ হয়ে, বেখাপ্পা, সফল সঙের মতো। রয়ে যাওয়া আর চলে যাওয়া। হাতিঘোড়া পাওয়া বা না পাওয়া। ফারাক নাই।

ইল্যুশন থেকে জেগে উঠি, দেখি, বিকাল ফুরায়। নিখোঁজ গর্তের শোকে নেউলের কান্নার মতো কর্কশ সন্ধ্যা ঘনায়।

জাহেদ আহমদ ৩১ অক্টোবর ২০২৫


জাহেদ আহমদ রচনারাশি
গানপার কবিতার, কবিতার গানপার

শেয়ার করুন:

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you