সিডর
ক্রন্দনে বহিছে বেলা, দখিনা বাতাস—
এইদিকে রয়েছি আমরা বিকারবিহীন, ঠুঁটো
যেন কোনো দূরগ্রহে ঘটেছে হেন ঘূর্ণিদুর্গতি
ভেলা ভাসি’ যায় একা হাহাকার বয়ে
ভাসে কান্নাভর্তি দিবারাতি, বিরানায়…
আমি এথা বসে বসে ভজকট সাধি
চুল ছিঁড়ে আঁটি বাঁধি, খেলি প্রাণ লয়া ছিনিমিনি
মহাসমারোহে এসো ত্রাণক্রীড়া করি
ক্রন্দনে কাটিছে দিন, দিগন্ত দখিন
কাঁদিতে কাঁদিতে চক্ষু প্রস্তরপ্রতিম
উহাতে আমরা আদৌ বিচলিত নই—
আমরা তো পেশাদার উন্নয়নত্রাতা
আমরা বেড়াতে-আসা পর্যটক হই!
বিশ্বসুন্দরবন লয়ে খেলিছে তিন-চারটে ডেভেলপমেন্টদানো—
অতিকায়, কিম্ভূত, সুবেশ, সুশীল
যেন কিচ্ছুটি হয়নিকো, আচ্ছিতারা ঠিক হ্যায় যেন সবকুচ!
যেন ঝরিছে ধরামাঝে শান্তির(ও) বারি…

সিডর ও সঞ্জীব যোগসূত্র : উপর্যুক্ত গদ্যাংশের সনে সূত্রসম্পর্কছাড়া পাদটীকা
নভেম্বর মাসের পনেরো তারিখ সিডর আঘাত হানে সে-বছর, দুইহাজারসাত খ্রিস্টাব্দে, এ-দেশে। তিনুদ্দিনের—ইয়াজু-ফখরু-মইনু—তত্ত্বাবধায়ক গভমেন্ট তখন। মনে হয়েছিল সুন্দরবন সবুজায়ন টাইপের মহাপ্রকল্প বগলদাবা হবেই। কিন্তু হায়! ত্রাণকমার্স প্রকল্পযজ্ঞ পুরা মাঠে মারা যায়। একসময় সমস্ত ছকপ্ল্যান ভেস্তে দিয়ে এক-চতুর্থাংশ ঘূর্ণিঝড়ে-উপড়ানো সুন্দরবন নিজের ম্যাকানিজমে আপন মহিমায় কোমর খাড়া করে ফেলে, ধেই ধেই নাচতেও শুরু করে শীতের রৌদ্রালোকশোভায়। এই দৃশ্যেই হৃদয় বিদীর্ণ হয়ে যায় কিছু লোকের, কিছু রিলিফপ্ল্যানারের, এইটা আল্লা আমাদিগেরে দেখাইলেন। সুবহানাল্লা। যা-ই-হোক। ওই টাইমেই জিন্দেগির প্রথম অবাক হয়ে লক্ষ করি যে বাংলাদেশে একটা দারুণ পেশাজীবী গোষ্ঠী গজিয়ে গেছে এবং বিকাশের প্রায় পিক ছুঁয়ে ফেলেছে যারা নিজের পকেট থেকে নিজের রোজগারের একটা কানাপাইপয়সাও দুর্গত মানুষের হাতে দেয় না। উপরন্তু এইটা প্রায় প্রোহিবিটেড, প্রোফেশনের এথিক্সের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিধায় বিপর্যয়্কালে সেল্ফ-ইনিশিয়েটেড হেল্প ডিমোটিভেইট করা হয় নানান কৌশলে। এইসব দেখাদেখি ও বোঝাবুঝিগুলি দিয়ে সে-সময় একমাসে একটা আস্ত নোটবুক ভরে ফেলা গিয়েছিল আঙুল-কামড়ানো ও চুল-ছেঁড়ার জিল্লতি হইতে নিস্তার পেতে। পেছন ফিরে দেখে বিস্ময়ে তব্দা লেগে যাবার জোগাড়, মাই গড, তিনশপঁয়ষট্টিপৃষ্ঠা ইন থার্টি ডেইজ! ও হ্যাঁ, আরেকটা কথা, “তখন ছিল ভীষণ অন্ধকার / আকাশ ছিল কালো”…সঞ্জীব হুট করে সেই-রাতেই চিরতরে ব্যাকস্ট্যাজে গেলেন চলে, এইটা আজও ভুলি নাই। সিডর ও সঞ্জীবের কথা মনে পড়ে নভেম্বর এলেই। সিডর আঘাত হানার রাতেই মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে কোমায় যাওয়া সঞ্জীব দিনচারেক ক্লিনিক্যালাইজড থেকে শেষে উনিশ তারিখে মৃত্যুগ্রহণ করেন। সিডরের সেই ঝড়ের রাতে সঞ্জীবের জীবনপ্রদীপ নিভে গেলেও রয়ে গেল সঞ্জীবের চিরজীবিত কথাকাব্যের সুরসংক্রামক গানগুলি। স্মৃতি সততই সুখের। স্মৃতি, সততই, সুখের?
জাহেদ আহমদ নভেম্বর ২০১৪
গানপারে সঞ্জীব চৌধুরী
জাহেদ আহমদ রচনারাশি
- সঞ্জীব ও সিডর - November 22, 2025
- নীলুফার ও নজরুল - November 20, 2025
- নভেম্বর মনামর - November 20, 2025

COMMENTS