আজ ১ মে। মনীষী সরদার ফজলুল করিমের জন্মদিন। জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালে তিনি বলতেন — “আরে কিসের জন্মদিন? কৃষকের পোলার আবার জন্মদিন কী?”
কর্মে ও কথায় সত্য আত্মীয়তাই ছিল তাঁর জীবনদর্শন। দর্শনের মেধাবী ছাত্র এবং অধ্যাপক ছিলেন। কিন্তু শাসকগোষ্ঠীর চাপে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার আগে বলেছিলেন পাকিস্তান ভেঙে আবারও ফিরবেন তিনি।
স্বাধীনতার পর আবারও ফিরেছিলেন। এবার দর্শন নয়, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক তাঁকে বলেছিলেন, ‘সরদার, আমার রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছেলেমেয়েদের আপনি একটু দর্শন পড়াবেন।’ তারপর তিনি রুশোর সোশ্যাল কন্ট্র্যাক্ট অনুবাদ করেছেন, কনফেশনস-এরও একটা বড় অংশ অনুবাদ করেছিলেন ‘আমি রুশো বলছি’ নামে।
বরিশাল জিলা স্কুলে পড়ার সময় ইসলামিয়া ছাত্রাবাসে থাকতেন। রাত ১০টায় হোস্টেলের বাতি নিভিয়ে দেওয়া হতো। দেয়াল টপকে বই নিয়ে তিনি বেরিয়ে যেতেন, জাহাজঘাটায় স্ট্রিটল্যাম্পের নিচে বসে বই পড়তেন। ওখানেই এক বন্ধু তাঁকে গোপনে পড়তে দিয়েছিল শরৎচন্দ্রের উপন্যাস ‘পথের দাবি’। সেখান থেকেই রাজনীতির প্রতি আগ্রহ ও প্রবেশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন পড়তে পড়তে সাম্যবাদী ভাবাদর্শের একটা বৃক্ষ হয়েছেন। মায়াভরা একটা সাধারণ জীবনে তাঁর শ্রেষ্ঠ পরিচয় ছিল তিনি কৃষকের পোলা। সরদারের জীবন দেখে বোঝা যায়, আকাঙ্ক্ষা মানুষকে ছোট করে, পরিচয় মানুষকে বড় করে।
রাজনীতি এবং পার্টির জন্য ত্যাগ ছিল; তিনি ডিগ্রি-ফিগ্রি নেননি। মোটকথা, সরদারকে ভালো লাগে উনার সহজ ব্যক্তিত্বের জন্য। থিউরি না বাতলিয়ে রাজনীতি সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য খুব পরিষ্কার।
তিনি বলতেন, “কমিউনিস্ট পার্টি বলে আমার কাছে কোনো ব্যাপার নাই। পৃথিবীতে যত সৎ মানুষ আছে, মানুষের জন্য যার বুকে ভালোবাসা আছে, তাকেই আমি কমিউনিস্ট বলি।”
- সহজ সম্পন্ন সরদার || সরোজ মোস্তফা - May 1, 2025
- মালজোড়া গানের সনতারা বেগম || সরোজ মোস্তফা - April 13, 2025
- কবিতা নাই, ইতিহাস ও ঐতিহ্যপ্রধান গদ্য আছে - March 31, 2025
COMMENTS