মৌলভীবাজার শাহ মোস্তফার মেলা

মৌলভীবাজার শাহ মোস্তফার মেলা

হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফার উরস মুবারাক উপলক্ষে বেরি লেকের পারে বাবার মাজার শরিফ কেন্দ্রে রেখে যে-মেলাটা প্রতিবছর হয়, এইটাই শাহ মোস্তফার মেলা। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী লোকসম্মিলনী গ্রামীণ মেলাগুলোর মধ্যে এইটা বৃহত্তর কয়েকটার মধ্যে একটা। মৌলভীবাজার জেলাশহরে এই মেলাটি ঘিরে যে-লোককল্লোল দেখা যায় তা আলাদাভাবেই দৃষ্টিগ্রাহ্য।

অন্তত সাতশ বছরের ঐতিহ্যপরম্পরা টানছে এই প্রসিদ্ধ মৌলভীবাজারের মেলাটি। হিসাবমতে এইবার ৭৩৫তম উরস ও মেলাটা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। সহজেই আন্দাজ করা যায় এই উরস ও তজ্জনিত মেলা এই অঞ্চলের দীর্ঘ পরম্পরা বাঁচিয়ে রেখে চলেছে। একটা প্রাচীন ঐতিহ্যঋদ্ধ জনপদের মধ্যে এমন এক-দুইটা সাংস্কৃতিক চিহ্ন জনপদটির মানুষমানসের গভীরলগ্ন অগ্রসর অতীতের প্রমাণ হাজির রাখে।

এমন জনশ্রুতি আছে যে এখানে এই অঞ্চলে চন্দ্রসিংহ নামে এক সামন্তরাজা ছিলেন। রাজ্যের ভিতরে যত্রতত্র বাঘের আক্রমণদৌরাত্ম্যে লোকজন অতিষ্ঠ ও আতঙ্কিত হয়ে রয়েছিল। ওই সময়েই হযরত শাহজালাল (রা.)-র সফরসঙ্গী ৩৬০ আউলিয়ার একজন হযরত শাহ মোস্তফা (রহ.)-র আগমন ঘটে। এলাকায় বাঘের দাপট রুখে দেন বাবা শাহ মোস্তফা। বাঘের ব্যাটাগিরি স্বয়ং রাজা চন্দ্রসিংহও তার লোকলস্কর-পাইক-বরকন্দাজ দিয়া সামলাতে পারছিলেন না, শাহজালালের সহপরিব্রাজক বাবা শাহ মোস্তফা তা সামলেছিলেন কেমন করে? সেই গল্প বলছি নিচের প্যারাগ্র্যাফে।

এই রাজ্যে এসে হালহকিকত দেখে বাবা শাহ মোস্তফা আসীন হলেন বাঘের পিঠে। ব্যাঘ্রপৃষ্ঠে সওয়ার-হওয়া বাবার হাতে একটা সাপের চাবুক। সর্পচাবুক নিয়া বাবা ব্যাঘ্রপৃষ্ঠে ঘুরিয়া বেড়ান গোটা রাজ্য জুড়ে। এই কারণেই তার নামের সঙ্গে সেঁটে আছে ‘শের-সওয়ার চাবুকমার’ উপাধিটি। বীরব্যাঞ্জনাবাহী এহেন অভিধা।

রাজার কানে খবরটি বিনে-বিলম্ব পৌঁছে যায় যে এমন একজন মোজেজাধারী বীরের পদার্পণ ঘটেছে রাজ্যে, যিনি ব্যাঘ্রপৃষ্ঠাসীন হস্তে-চাবুক ঘুরে বেড়াতেছেন রাজ্যের জলে-জঙ্গলে আথারেপাথারে রাইতদিন একাকার করে। এবং বাবার ডরে বাঘমামা থাকে তেরোশ ক্রোশ ত্রিসীমানার দূরে। এই হিম্মতওয়ালা বাবার বশ্যতা মানলেন রাজা। রাজকন্যের সঙ্গে শাদি হয়ে গেল ফকির বাবা শাহ মোস্তফা (রাহ.)-র।

এইভাবে ব্যাঘ্রভয়ে থরহরিকম্প মৌলভীবাজার থেকে দূর হয় ব্যাঘ্রভীতি। জনমনে নিরাপত্তা আর স্বস্তি ফিরে আসে। প্রজারা নির্বিঘ্ন-নির্ভয় দিন কাটাইবার সুযোগ ফিরিয়া পায়। প্রত্যেক বছর পয়লা মাঘ বাবার উরস ও মেলা আরম্ভ হয়। মাজারের উরস উপলক্ষে হাজার-হাজার বেশুমার ভক্ত-আশিকানদের সমাগম ঘটে, ভক্তদের অন্তরে ভক্তিপয়দায় হেল্পফ্যুল হয়। নিবেদনের গান আর বাদ্যিবাজনা, ভাবোন্মাদের নৃত্য ও গীতিকা হয়। মেলা একপাক ঘুরে আসতেও মোটামুটি দিন নিয়া টান দেয়।

লেখা : সুবিনয় ইসলাম

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you