গ্রাসরুটসের গান, অনিয়মিত অসাহিত্যিক অবদমনাখ্যান ১১

গ্রাসরুটসের গান, অনিয়মিত অসাহিত্যিক অবদমনাখ্যান ১১

বাংলাদেশ এক অনিঃশেষ বাইনারির দেশ, যথা — শাদা-কালা, আলো-অন্ধকার, ভালো-খারাপ, আওয়ামীলীগ-অন্যান্য ইত্যাদি। রিসেন্ট সংযোজন ঘটতে দেখসি ডিভিশন্যাল কমিশনার আহূত বিভাগীয় সাহিত্যমেলাগুলায়। জাতীয় পর্যায়ের লেখক ও তৃণমূল পর্যায়ের লেখক। সম্বন্ধ অহিনকুল নয়, হরিহর, তা সত্ত্বেও অধিপতি-অধস্তন। হতে বাধ্য। অখুশি নয় তৃণমূল, মনে সাধ জাতীয়য় যাবে যেহেতু, সর্বান্তকরণে এন্ডোর্সড হয় আরেকটা হায়ারার্কিয়্যাল বর্গ। জয় হো! মগডাল-তৃণমূল যুগ্ম জয় হো! ঘটনার চক্করে সেই লোকটার মুখ মনে পড়ে যায় যারে আমরা শহরের কিনব্রিজকিনারায় সার্কিটহাউস প্রান্ত থেকে সারদাভবন পর্যন্ত অবিশ্রান্ত হণ্টন ও অনর্গল ভাষণ দিতে দেখি ইভনিং যখন শরীর এলায় সাউথ সুরমায়। পাগল বলে জানলেও লোকটাকে কেউ মুখের উপর পাগল বলতে যায় না। ফ্যাক্ট তার শার্টপ্যান্ট। ফ্যাক্ট তার কথাবার্তা। ফ্যাক্ট তার দৈনিকপত্রিকাবাহিত পলিটিকাল নলেজ। ফলে কেউ চুরট খাওয়ায়, কেউ অলটাইম বন দিয়া চা, ভাষণে তেজের সঞ্চার হয়। আমরা আশ্বস্ত হই, কিসু গর্বিতও, লোকটার বাকস্বাধীনতা আমরা নিশ্চিত করতেসি ভেবে। এত কথা কেউ বলতে পারে দেখে একটুখানি ঈর্ষাও হয়। একদা আমরাও তো অলটাইম বনছাড়া ভাষণই দিয়া যাইতাম কী চিত্তাকর্ষক প্রমিত তথা মানবাংলা ভাষায়!

*
ইয়াদ নাই
কিন্তু যদি ইয়াদ করতে চাই
নিশ্চয় ইয়াদ করতে পারি
ঠিক কোন জায়গায় রাখসিলাম সব্জিক্ষেতে-পানি-দিবার ঝারি
তিরিশ বছর আগে

এরপর তো রবিশঙ্করের রাগ-অনুরাগে
সেই পিচকারি আর পানির নহর খুঁজতে খুঁজতে এতকাল
চলে গেসে, চলে যায়, বাল!

অলটাইম ব্র্যান্ডের বন
লগে একপেয়ালা চা না-হয় না-ই দিলেন, মহাত্মন!
তবু বলি, শোনেন শোনেন, যথা —
সারমেয়মুখে একটি ক্ষীণ উপকথা

*
তুমি সিংহ, কুত্তা আমি। কিংবা আমাকে সংস্কৃতে ডাকে সারমেয়, কুক্কুরও বলত বটে কেউ কেউ তখনকার সেই সুসংস্কৃত সময়ে, সেই থেকেই এখনকার দিনের টেক্সটবুকগুলো কুকুর নামে আমাকে ফাইন টিউনিং করে নিয়েছে। কিন্তু কমন ক্রাউড আমাকে ডাকে কুত্তা নামে। খারাপ লাগে না শুনতে, শেষেরটাই আমি বলব বেশি ভালো লাগে আমার। মনে হয় যেন প্রেমিকা ডাকিল মোরে প্রিয় নাম ধরি। কিংবা আমার দাদিমাও মাঝে মাঝে আদরের আতিশয্যে এই নামে ডেকে উঠতেন তার প্রিয় নাতিকে। এই দেশে তেমন ভদ্রলোক সংখ্যায় ও শতকরা হারে খুব নগণ্য, যারা কুত্তার মর্ম ও মর্যাদা বুঝবে। যে-কারণে স্টেইটস ও অন্যান্য কিংডম ও কান্ট্রিগুলো দ্রুত উপরের দিকে উঠেছে এবং বিপরীতে এই ও অন্যান্য তৃতীয় দুনিয়ার দেশগুলো এলডিসি কিংবা তারচেয়েও বত্তর পজিশনে পড়ে রয়েছে। এটা আর কিছু নয়, কুত্তামর্ম বুঝতে না-পারার কাফফারা।তুমি সিংহ। ওয়াহ ওয়াহ! তুমি কী সত্যিই সিংহ? বটে! সিংহাসনে বসে থেকে তুমি সিংহের মর্যাদা কিনে নিচ্ছ, এর বেশি কিছু নয়। কিন্তু সিংহাসন চিরকালীন তো নয় জাঁহাপনা! যা উমর আপনার, কয়দিন বাদে তো এমনিতেই মুখ থুবড়াইবেন বাহে! একবার সিংহাসনের পায়ের কাছে ঢলে পড়লেই কেল্লাফতে আপনার উজির-নাজিরদের, তারা আপনার দেহমুবারকে এসে ছেটাইবে ঘেন্নার থুথু। উহারাও ঘেন্না করত আপনারে! অ্যাঁ! দিনরাত আপনার পায়ে হেগোরে হত্যে দিতে দেখিতাম যে! দেখা যা যায়, তা-ই তো শুধু দৃশ্য নয়! দেখা যা যায় না, প্রকৃত প্রস্তাবে, দৃশ্য তা-ই।আমি কুত্তা। আমি কি সত্যিই কুত্তা? আলবৎ! সিংহ তুমি হাড়ে হাড়ে জানো, কতটা খতরনক কুত্তা আমি! আমার সারমেয়ত্বের এভিডেন্স আমার লেজ। বাঁকানো, ত্যাড়া, স্পাইরাল ও কমপ্লেক্স। তোমার সিংহাসন বেচেও তুমি আমার লেজ সোজা করতে পারবা না চান্দু। কোনো সার্জিক্যাল কারিগরি দিয়েও না-মুনকিন। মনে রেখো, তুমি আমার চেয়ে ছোট এইখানে, এই আমার লেজত্বগুণ তুমি ইহজনমে যদি হাসিল করিতে পারিতায়, এই দেশের এবং এই দেশব্যাপী পিপীলিকা ও মশামাছি ও আমার মতো কুত্তাগুলোর এই হাল হতো না তাহলে। লেজব্যাঁকা কুত্তাদের কাছে এইখানে সিংহের হেঁটমুণ্ড, জগৎ জানে। আমি মরে গেলেও আমার লেজ বাঁকা। আমি গোঁয়ার। আমি না-মচকানো কুক্কুর। আমাকে তুমি সিংহাসন আর রসকদম্বের টোপ দেখিও না বাছাধন! তুমি সিংহাসনদখলকারী, কিন্তু কদাপি সিংহ তুমি নহ হে! একগাছা কেশর তোমার গোতেবংশে কখনোই দৃষ্ট হয় নাই, মিয়াঁউ-মিয়াঁউ ছাড়া তোমার বংশে কেউ হুঙ্কার দিয়াছে শোনা যায় নাই। মরে গেলে তুমি স্রেফ ছারপোকা, আর বেঁচে থেকেই তো তা-ই, চেয়ারপোকা। হায় সিংহ! লোলচর্ম! হায় সিংহাসন!

COMMENTS

error: