ঝোঁকের বশে শারুখের পোলার সিরিজের পয়লা এপিসোড দেখছি। দেখার পরই মনে হইছে, একঘণ্টা মোবাইলে গেম খেললেও তো ভালো হইতো। এই যে বলিউডি সিনেমার গল্প, এইটা দেখার দরকার আছে? সিরিজ শেষ হইলে লোকজন বলবে হয়তো জুনিয়র খান (আরিয়ান না আরহাম ভুলে গেছি) নিজে স্টারকিড হয়ে স্টারকিডদের সমালোচনা করছে, হ্যায় কুওব অনেস্ট!
এই যুক্তিতে মন গলাইলেই মারা। এই বয়সে মানে ২৮ বছর বয়সে বলিউডের কোনও ডিরেক্টর তার বাপের সহযোগিতা ছাড়া এত বড় প্রোডাকশনের প্রযোজকই ম্যানেজ করতে পারত না। আর যে পরিমাণ স্টার কাস্ট সে এখানে করছে, এইটা তো বাংলাদেশের মানুষকে গণতান্ত্রিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার চেয়ে বেশি কঠিন মাম্মা!
যা-ই হোক, যেই কথাটা বলতে চাইছিলাম। ভারত আসলে হলিউডের ভারতীয় ভার্শন। এইটা আমি আগেও বলছি, ইন্ডিসিনেমা বা অফট্র্যাকের সিনেমা ভারতে তেমন পাত্তা পায় না। বাণিজ্যের বেসাতির নিচে চাপা পড়ে যায় সিনেমার প্রতি প্রেম। তার দুইটা উদাহরণ দিয়ে কেটে পড়ব। এক. আপনাদের মনে আছে কি না জানি না, ‘পিপলি লাইভ’ নামে একটা সিনেমা হইছিলো ভারতে। আরও পনেরো বছর আগে। কিন্তু সেই সিনেমার পরিচালকের আর কোনও সিনেমা নাই। কেন নাই এইটা জানতে গেলে দেখবেন, ওই পরিচালক আদতে ভারতের মিডিয়া ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ওই সিনেমার মাধ্যমে ন্যাংটোপুটু করে দিয়েছিলেন। ফলে ওই পরিচালক যে যে-কোনও প্রযোজকের জন্য নিরাপদ হবেন তার কোনও ভরসা নাই। এইটা কমন অবজারর্ভেশন। আরও গভীরে গেলে জানা যায়, সে যেন আর সিনেমায় না আসতে পারে তার জন্য রাজনৈতিকভাবে দারুণ অ্যাক্টিভ ছিল বিভিন্ন পক্ষ। সে-আলোচনা করতে গেলে এইখানে ইনভেস্টিগেশন রিপোর্ট হইয়া যাবে।
এই রকম উদাহরণ আরও আছে। তবে সাম্প্রতিক উদাহরণ হলো, ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ‘হরিজন্স’ বিভাগের সেরা নির্মাতা বা ডিরেক্টর হয়েছেন, ৩১ বছর বয়সী বাঙালি এক নির্মাতা অনুপমা রায়। তার উইনিং স্পিচে ইযরায়েলের গণহত্যা নিয়ে বক্তব্য দেখে তার স্পিরিট দেখে আশ্চর্য হয়েছিলাম। সে যখন ওই বক্তব্য দেয় তখনও হলিউডের অনেক বড় তারকা গাজায় হামলা নিয়ে তেমন কেউ কিছু বলেনি। অথচ দেখেন প্রথম সিনেমা দিয়ে এত বড় অর্জন নিয়ে আসলেও ভারতের মিডিয়া তারে নিয়া আওয়াজ তোলেনি, তুলতেছে ব্যাডাস অফ বলিউড নিয়ে।
হলিউডেও এই সংস্কৃতি। কয়দিন আগে যে মারা গেল রবার্ট রেডফোর্ট, অ্যামেরিকান মূল ধারার মিডিয়া তুলনামূলক গুরুত্ব দিলেও তার যে ইম্প্যাক্ট, সেই তুলনায় কিছুই দেয় নাই। অথচ যদি কোনও কমার্শিয়াল নায়ক মরত, তাইলে বোধহয় আরও খুশি হইত তারা, ভালো কাভারেজ দেয়ার ক্ষেত্রে।
সিনেমার রাজনীতিটাও আজ অর্থের রাজনীতিতে রূপান্তরিত হয়ে গেছে ব্রো, আর কী বলা!
ইলিয়াস কমল রচনারাশি
- বাংলাদেশের সিনেমা নিয়া আমি লিখতে আগ্রহী || ইলিয়াস কমল - October 1, 2025
- সিনেমার চিরকুট ২৬ - September 24, 2025
- স্টারকিডের স্টারডম ও বলিউডের আগডুম বাগডুম || ইলিয়াস কমল - September 19, 2025
COMMENTS