মর্মমুরাকাবা ২ / সুফি কবি মাহসাতি গানজাভির কবিতা || মঈনুস সুলতান

মর্মমুরাকাবা ২ / সুফি কবি মাহসাতি গানজাভির কবিতা || মঈনুস সুলতান

ফার্সি ভাষাবাসী সমাজে ‘মহিলা দরবেশ’ হিসাবে পরিচিত সুফি কবি মাহসাতি গানজাভির (কোনো কোনো সূত্রানুযায়ী মাহসাতি গানজাইবাগানজেভি) জন্ম হয় ১০৮৯ সালে, হাল জামানার আজারবাইজান রাষ্ট্রের গানজা এলাকার আরান শহরে। রুবাইয়াতের রচয়িতা হিসাবে সুফিমার্গের এ মহিলা কবি পয়লা জীবনে তুর্কি সেলজুক বংশের সুলতান সানজারের দরবারে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন সম্মানের আসনে। তবে পরবর্তী জীবনে শাসক — বিশেষ করে পুরুষতন্ত্রনির্ধারিত ধর্মীয় অনুশাসন, কুসংস্কার ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে সাহসী অবস্থানের ফলে তিনি নিগৃহীত হন রাজদরবারে।

শোনা যায় যে কবি মাহসাতি গানজাভির যোগাযোগ ছিল কবি ওমর খৈয়াম (১০৮৮-১১৩২)-এর সঙ্গে। গানজা অঞ্চলের সুফি তরিকার যশস্বী কবি নিজামিও (১১৪১-১২০৯) অনুরাগী ছিলেন তাঁর কাব্যকলার। তাঁর কবিতাতে সে-আমলে বলিষ্ঠভাবে উচ্চারিত হয়েছিল কুসংস্কার, সামাজিক কপটতা ও পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। একই সাথে তিনি মহিমান্বিত করে তুলেছিলেন মানবিক ও আধ্যাত্মিক ভালোবাসাকে। তাঁর কাব্যকলার ব্যাপক অংশ সংরক্ষেণের অভাবে বিলুপ্ত হলেও‘নজহাত আল মাজালিস’নামে একটি গ্রন্থ কালের অবক্ষয়প্রবণ স্রোতের সাথে যুঝে টিকে আছে আজ অব্দি। কবি মাহসাতি গানজাভির মৃত্যু হয় ১১৫৯ সালে। ১৯৮০ সালে গানজা এলাকায় তাঁর ইয়াদগারিতে স্থাপিত হয় একটি স্মৃতিমিনার।

এখানে কবি মাহসাতি গানজাভির দুটি কবিতার ভাবতর্জমা উপস্থাপন করা হচ্ছে। প্রথম কবিতাটি ফার্সি থেকে ইংরেজিতে যৌথভাবে অনুবাদ করেছেন ডেভিড ও সাবরিনা ফিডেলার। দ্বিতীয় কবিতাটির ফার্সি থেকে  ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন এডওয়ার্ড জিব্রউন। পোয়েট্রি চায়খানা সহ কয়েকটি ওয়েবসাইট থেকে কবিতাগুলো ও কবির জীবনসংক্রান্ত তথ্য অনুবাদের জন্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

খুলে যায় সরণি অবশেষে
ভালোবাসার সাম্রাজ্যে আমার হৃদয় যখন তুলে নেয়
শাসনের গুরুভার,
মুক্ত হই আমি বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের নাগপাশ থেকে
স্পর্শ করি নীরবে নীলিমা অপার।

এ-যাত্রায় কেবলমাত্র আমিত্বের উপাসনায়
দেখি সমস্যা শতেক,
পরিত্যাগ করে জাগতিক ভেক,
যখন আমি আমাকে অতিক্রম করে
চলে যাই — আমা হতে বহু দূরে,
তখনই খুলে যায় সকল সরণি পরিশেষে
বাজে আমার ভেতরে মৌনতার রাগিনী সপ্তসুরে।

রত্নখনির ভালোবাসায় নিমগ্ন যারা
বর্ণালী পাথরের দ্যুতিতে দৃষ্টিহারা
মহার্ঘ রত্নখনির ভালোবাসায় নিমগ্ন যারা
বিপুল বিত্তের প্রহসনে নিঃস্ব,
তাদের জন্য সৃষ্টি হয়েছে অনিকেত এক বিশ্ব,
তবে চারণকবিরা নির্বাচন করেন ভিন্ন এক ভুবন
যার প্রেক্ষাপটে স্থাপিত হবে তাদের সিংহাসন।

যে-পাখি পান করেছে ভালোবাসার যাদুময় মদ
তার রাজ্য অনেক দূরে
কথিত বিশ্বরাজি অতিক্রম করে
ওখানে পৌঁছতে হয় অবজ্ঞা করে সকল সম্পদ;
সে বাস করে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক উপত্যকায়
ওখানে পৌঁছতে হয়
ছুঁড়ে ফেলে যশের কুশপুত্তলিকা পরিখায়।

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you