পুতুলদোস্তির ইতিকথা

পুতুলদোস্তির ইতিকথা

ফ্র্যাঞ্চাইজি সিরিজম্যুভি ‘টয় স্টোরি’। ইংরেজি ভাষায় নির্মিত এই ডিজনিসিনেমাটা আজ থেকে দুইযুগ আগে অ্যাপিয়ার করেছিল পয়লা। তারপরে একে একে এর একহালি এপিসোড রিলিজ পেয়েছে। এইবার ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে এল ম্যুভিটির চতুর্থ খণ্ড।  তার মানে এইভাবেও বলা যায় যে এই সিক্যুয়েলের ফার্স্ট পার্ট দেখে যে-দর্শক চব্বিশ বছর আগে তার শৈশব রাঙিয়েছিল, সময়ের আবর্তনে সে এখন ঝলমলা যৌবন। ফুটন্ত যৌবন। দুইযুগ আগের তার শৈশব কি সে একবারও চায় না ফিরে পেতে? একবার না, হাজারবার চায়। আর চায় বলেই টয় স্টোরি  নির্মিত হয় চারবারের মতো। হবে আবারও। হয় যেমন অন্যান্য শত শত অ্যানিমেটেড ম্যুভির সিক্যুয়েল।

ষোলো ইঞ্চি উচ্চতার এক কাউবয় আমাদের টয় স্টোরির নায়ক। উচ্চতা মাত্র ষোলো ইঞ্চি! এবং পুতুল মাত্র! তবু আবেগের কোন জায়গায়-না হিট করতে বাকি রাখে সে? একটা রুমাল নিয়া ল্যাপ্টপে বা আর-যে-কোনো স্ক্রিনে দেখতে বসবেন। রুমাল না-থাকলে একটা বা সম্ভব হলে একবক্স টিশ্যু। যদি আগের কোনো পর্বের লগে আপনার পরিচয় না-ও থাকে, এই চিকন সাইজের পুতুল আপনায় কাঁদায়া ছাড়বে। এই হ্যাটপরা কাউবয় টয়টির নাম উডি। খেলনাপুতুল উডি আর তার ইয়ারদোস্তদের কার্যকলাপ শুধু যে ছোটরাই পছন্দ করে তা নয়, বড়রাও হুমড়ি খেয়ে পড়ে একেকটা পার্ট যখনই রিলিজ হয়। আগের পার্টগুলোর মতো ফোর্থ পার্টও দুনিয়াব্যাপী দর্শক টেনেছে রিলিজের সঙ্গে সঙ্গেই।

ডিজনি  এবং পিক্সার  যৌথভাবে এই সিক্যুয়েলটা বানায়েছে এইবার। এর মধ্যে আপনি নিয়মিত টয় স্টোরি  সিরিয়্যালের দর্শকভোক্তা হলে দেখবেন যে এই পার্টেও বরাবরের মতো সমস্ত সিগ্নেচার প্রোপার্টি অনবদ্যভাবে রেখেও নতুনতা আনা হয়েছে। একদম টানটান গল্প, অসম্ভব মানবিক, বসে থাকবেন আঠালাগা স্ক্রিনের সামনে শেষ না-হওয়া পর্যন্ত। টয় স্টোরি  চতুর্থ পর্ব পরম্পরা বজায় রেখেও অনন্য। পূর্ববর্তী সিরিজের প্রতি কোনো অবিচার না-করেও তা আলাদা।

কাহিনি কি লিখে বলতে হবে? না বোধহয়, দেখার জন্য বলা যায় আপাতত। তবে এইটা তো বলার অপেক্ষা রাখে না যে মেইন গল্পটার ধারা বা ধরন কিন্তু অভিন্ন ও একই। পিচ্চিকাচ্চি তথা ছোটদের জগৎ কেমন করে বড়দের সিদ্ধান্তের আঘাতে পাল্টে যায়, পাল্টে-পাল্টে এগোতে থাকে অমোঘ বড়দেরই জগতের দিকে, উডি আর তার সহপুতুলদের সহায়তায় তা-ই নিখুঁতভাবে দেখানো হয়েছে এইখানে।

এর কাহিনিবয়ন, গল্পনির্মিতি, ঠিক জায়গায় ঠিকঠাক আবেগের পাঞ্চ মিলেমিশে দর্শকের ইমোশন উশকে দেয়। আগেই বলেছি টিশ্যু বা রুমাল লাগবে দেখতে বসে। এতটাই বিহ্বল করে তোলে এর গল্পাঙ্কন। গল্পের শুরুটা হয়, এই সিক্যুয়েলের গল্পের শুরু হয় তখনই যখন খেলনা-পুতুলগুলার ছোট্ট মালকিন বনি নাম্নী মেয়েটা ইশকুলে অ্যাডমিটেড হয়। এই ইশকুলঅ্যাডমিশন ঘটনাটা পাল্টে ফেলে উডি সহ পুতুলরাজ্যির সমস্ত খেলনাদের জীবন। তাদের দুনিয়ায় আগমন ঘটে এক নয়া মেহমানের, যার নাম ফর্কি, কিন্তু সে মেহমান না অনুপ্রবেশকারী? স্বাগত না অনাহূত? ফর্কিকে মেনে নেবে কি বাকিরা?

অ্যানিমেটেড যে-কোনো ম্যুভি দেখতে বসলেই জিনিশটা মাথায় খেলা করে যে আদতে রক্তেমাংশে প্রাণ থাকে না, প্রাণ থাকে গল্পে, প্রাণ থাকে কাহিনিতে। এত বড় বড় রক্তমাংশল সেলিব্রেটি হিরো-হিরোয়িনের দুনিয়ায় একদল পুতুল দিয়াই কিন্তু জয় করা যায় চিত্ত। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের একটা কবিতায় এমন পঙক্তি ছিল যে ‘আসলে কেউ বড় নয়, বড়র মতো দেখায়।’ কাজেই দেখাতে জানলে ষোলো ইঞ্চি হাইটের একটা পুতুল দিয়াই দেখানো যায়। এত জীবন্ত, এত কল্পনাঋদ্ধ, টয় স্টোরি  চিত্ত আপনার হরণ করবেই। আপনার সঙ্গী ছোট্ট সোনামণিদের তো করবেই। তারাই তো পুতুলগুলা।

টয় স্টোরি  ডিরেকশন দিয়েছেন জশ ক্যুলি। অভিনয়ে হলিউডের সেরা সমস্ত অভিনয়শিল্পীরা আছেন। টম হ্যাঙ্কস্, কিয়ানু রিভস্, টোনি হেল্, অ্যানি পটস্ প্রমুখ।

লেখা / মিল্টন মৃধা

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you