উইন্টার পেপার্স ২

উইন্টার পেপার্স ২

হয়তো দেখেছ চার-পাঁচ ফোঁটা জলে / চার সেকেন্ডে চড়ুই পাখির স্নান / আমিও এখন সেই পাখিটার দলে / শুনিয়ে দিলাম চার লাইনের গান
—কবীর সুমন

ওরা সবাই অসময়ের বন্ধু আমার, দুর্দিনের দোসর সক্কলে, এটা মনে রাখা আমার দরকার সবকিছুর পরেও, কখনোই না-ভুলি যেন। ওরা আমাকে নিজে থেকে না-ডাকলে এখন পর্যন্ত কয়েকটা যা গান গেয়েছি, নৃত্য পরিবেশন করেছি যে-গুটিকয় এবড়োখেবড়ো শরীরে এই নৃত্যলহরির দেশে, যে-ছাইপাঁশ গাদাগুচ্ছি লিখেছি,  কিছুই লিখতাম না, মানে লিখতে পারতাম না, যা গান গেয়েছি দুইয়েকটা তার কিছুই গাওয়া হতো না, নামাজ দুই-দেড় রাকাত যেটুকু তার কিছুই আদায় হইত না। আজকাল কে-আর বলো মরা মানুষ জাগায়া তুলিতে যায়, সেই ইন্দ্রপুরী নাই কিংবা সেই বেহুলাও, এরা আমাকে ভেলায় তুলে এইটুকু পথ নিয়ে এসেছে আর আমি নাচতে পারার গরিমা থেকে ভেলা ও বেহুলা ভুলে যাব! কুষ্ঠ হয় যেন, যদি অনেকের মতো আমিও বিপদের বন্ধুকে ভুলে অকৃতজ্ঞ হই কোনোদিন। তুমি অনেকটাই জানো, তবু কল্পনাও করতে পারবা না, ঘেন্না আর জাত্যাভিমান থেকে এতটাই না-ফেরার মতো অনড় দূরে সরে যেতে পারে সেই জাটিঙ্গার দলবাঁধা পাখি! কিন্তু ওদের কাছে, এই তিনজনের কাছে চারজনের কাছে পাঁচজনের কাছে, কিন্তু দশজনার কাছে না তাই-বলে, এই মার্ক জাকার্বার্গের কাছে, এই জীবনে প্রকাশ্যে ঋণ স্বীকার করা হবে না, তাতে লোকে ভাববে ফায়দা আদায়ের নয়া ফন্দি আঁটছি। ভাববে ব্যাটা নির্ঘাৎ পুরুরাজ্য পর্ষদের পুরস্কার বাগাইতে চায়, নিদেনপক্ষে কুরুক্ষেত্রকর্নেল কিংবা বাংলাবাজারকাপ্তান হইবারে চাহে। অথচ সরল স্বীকারোক্তি এ-ই যে এই শীতরাত্তিরে আমি চাই না সাপ চাই না ব্যাঙ চাই না বাটিঘটি-স্বর্ণদোয়াত-রৌপ্যকলম হইবারে। কিন্তু কোথাও বলে যেতে পারলে ভালো বোধ করব অন্তিমে, এই কারণেই তোমাকে বলা, হে বিপজ্জনক নিরাপত্তা আমার, এই কারণেই নিদারুণ স্বীকারোক্তি এই। নিতান্ত বড় কোনো মনান্তর না-ঘটলে এই কারণেই যেন ওদের অনেককিছুই সহজ চোখে দেখে যেতে পারি চিরদিন। ওদের হাজার হানাহানি, পিঠচুলকানি, ওদের পৃষ্ঠদেশে-ছুরি-মারা ফন্দিঋদ্ধ বন্ধুত্ব, যেন সহজ নজরে দেখে যেতে পারি চিরটাকাল, দোয়া দাও দোয়াময়ী ওগো! দুইদিনের দুনিয়া আমার, তারও আবার চির-অচির!

বড় দেরি হয়ে গেল, বড় বেশি বাগাড়ম্বর হলো শুধু, ফুরায়া আসিলো মধুরাতি!

জীবন, আমি বিশ্বাস করি, ঋণশোধের এক ধারাবাহিক নাট্যমঞ্চ। প্রতিদিন নতুন ঋণ, প্রতিদিন উদয়াস্ত শোধের কসরত, প্রতিদিন বরখেলাপ কথার ও কবিতার ও শিল্পের ও গল্পের ও প্রেমের। শোধ হয় না আসলে, তবে এই শোধচিন্তাই শিল্পচিন্তা বা প্রেমচিন্তা বা যা তুমি বলতে চাও, এই চিন্তাই মানুষকে মানুষ করে রাখে। এই কথাগুলো জরথুস্ত্র বলেছেন কি না জানি না, নিশ্চয়ই বলেছেন, বলা উচিত ছিল। বলেছেন কি না রবীন্দ্রনাথ, গ্যেটে, খবর রাখি না। অন্তত আমি এইরকম ভাবি, কিন্তু ভুলেও যাই ঠিক-সময়ে, এবং ভুল করি।

ভুলে থাকাই বেঁচে থাকা, তা পাতার একপৃষ্ঠ, আবার মনে পড়া … আবার ভুল … ঘুম ও স্বপ্নের মাঝখানে যে-মাছরাঙাপাখি, জীবন তো ওই স্মৃতিবিস্মৃতিরই নাম। এই শীত, এই ধূলিবিন্দুগুলো, এই খড়িমাটি-মিটোমিটো আঁকাআঁকি, হেন অপরূপ অব্লিভিয়ন!

কার গল্প যেন ওটা? কারা তোমার ব্যক্তিগত রেনেসাঁর দোসর? ভুলে যাওয়া কি সম্ভব, গল্পগুলোকে, এই জীবনে?

যাও তবে, একটু লেপতলাকার ওম পোয়াতে দেও এইবার দাবনাজোড়াকে, রেসের মাঠে কেলেঙ্কারি হলেই বাপু মরেছ, মনে রেখো। ঘোড়দৌড়ের এই জীবন, কুত্তা-হন্তদন্ত এই জিন্দেগি, ক্ষম দয়াময়! দোয়া কোরো, দিলশাদ, সহিসালামত সারাদিন!

জাহেদ আহমদ ২০১৩


উইন্টার পেপার্স

COMMENTS

error: