প্রসঙ্গকথা : ঋতুবৈচিত্র্যের এই বাংলাদেশে নানা জনগোষ্ঠীর বর্ণময় সম্মিলনে যে বহুভঙ্গিম সংস্কৃতির ধারা গড়ে উঠেছে তারই এক বর্ণিল অলঙ্কারকে অহঙ্কার করে আপন ঐতিহ্যের প্রাণদ প্রবাহে প্লুত যেসব ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী এদেশের মূল স্রোতোধারায় নিয়ত অবগাহন করেও এখনও স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল, তাদেরই অন্যতম মণিপুরী জাতি। বর্তমানে বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলেই শুধু মণিপুরীদের বাস। তবে একসময় ঢাকার তেজগাঁও ও মিরপুর অঞ্চল, নেত্রকোনার সুসং দুর্গাপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা ইত্যাদি অঞ্চলেও মণিপুরী বসতি ছিলো। মহাকালের অতলে ক্রমশ হারিয়ে গেছে এইসব মণিপুরী বসতি। মণিপুরী জাতির আদি বাসভূমি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুর। নৃতাত্ত্বিক উৎসের বিচারে মঙ্গোলীয় মহাজাতির তিব্বত-ব্রহ্ম শাখার কুকি-চীন গোষ্ঠীর অন্তর্গত বলে সাধারণভাবে পরিচিত মণিপুরীরা নানা রাজনৈতিক ও যুদ্ধবিগ্রহজনিত কারণে আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিনশত বৎসর আগে মণিপুর ছেড়ে পালিয়ে এসে বসতি স্থাপন করে বাংলার এই শ্যামল-কোমল প্রান্তরে। পরবর্তীতে ঊনবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকে মণিপুর যখন বার্মিজদের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে সাত বৎসরকাল পরাধীন থাকে তখন মণিপুরের রাজভ্রাতৃত্রয় চৌরজিৎ, মারজিৎ ও গম্ভীর সিংহ সদলবলে পালিয়ে এসে প্রথমে কাছাড় ও পরে সিলেটে আশ্রয় নেন। সিলেটে ব্যাপক মণিপুরী বসতিস্থাপনের ঘটনা সেই সময়কালেরই। সেই সময়েই সিলেট শহরের মির্জাজাঙ্গাল এলাকায় মণিপুরী রাজবাড়ি নির্মিত হয়। পরবর্তীতে ব্রিটিশদের সহায়তায় গম্ভীর সিংহ মণিপুরের সিংহাসন পুনরুদ্ধার করেন এবং ১৮২৬ সালে মণিপুর রাজসিংহাসনে অভিষিক্ত হন। মণিপুর পুনরুদ্ধারের পর মহারাজ গম্ভীর সিংহ সপারিষদ মণিপুর প্রত্যাবর্তন করলেও মণিপুরী প্রজাদের অনেকেই ততোদিনে এতদঞ্চলের জীবন ও প্রকৃতির সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছেন – প্রতিদিনকার যাপিত জীবনে ক্রমশ স্থিত হয়েছেন বিধায় মাটির টানে থেকে যান এই বাংলায়। পরবর্তীতেও মণিপুরী প্রজাদের বাংলার এই অঞ্চলে অভিবাসন বা প্রত্যাভিবাসন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে দীর্ঘকাল। ব্রিটিশদের নাগপাশ থেকে স্বাধীনতাপ্রাপ্তি এবং ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির পরই কেবল মণিপুরের সাথে বাংলার বিশেষত সিলেট অঞ্চলের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। ইতিহাসের স্মৃতিচিহ্ন হয়ে আজো সিলেট শহরের মির্জাজাঙ্গালে এবং মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলাধীন ভানুগাছের রাণীরবাজারে নির্মিত মণিপুরী রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ বিদ্যমান আছে। আর কালের সাক্ষী হয়ে সিলেট শহরের লামাবাজারে মদনমোহন কলেজের উল্টোদিকে রাজা গম্ভীর সিংহ নির্মিত তিনটি গম্বুজাকৃতির মন্দির এখনো দাঁড়িয়ে আছে। এগুলো মণিপুরীদের সনাতন ধর্ম গ্রহণ পূর্ববর্তী প্রাচীন ধর্মের তিন প্রধান দেব-দেবী লৈমরেন, ইমোইনু ও পাখংবার মন্দির হিসেবে নির্মিত হয়েছিলো। মন্দিরগাত্রে এখনো তার স্মারকচিহ্ন বিদ্যমান। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সিলেট শহরের মির্জাজাঙ্গাল এলাকায় অবস্থিত মণিপুরী রাজবাড়ি ১৮৯৭ সালে সংঘটিত শতাব্দীর ভয়াবহতম ভূমিকম্পে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়, যার সামান্য ধ্বংসাবশেষ কালের স্মৃতিচিহ্ন হয়ে এখনও বিদ্যমান (শেরাম : ১৯৯৬ : ২৪)।
সিলেটে বসতিস্থাপন : বাংলাদেশে মণিপুরী বসতিস্থাপনের সূচনা প্রায় সাড়ে তিনশত বৎসর আগে। তবে ব্যাপক বসতিস্থাপনের ঘটনা ঊনবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকে। মণিপুরের সাথে পার্শ্ববর্তী রাজ্যসমূহ বিশেষ করে বার্মার (বর্তমান মায়ানমার) যুদ্ধবিগ্রহের ঘটনা ছিল প্রায় নৈমিত্তিক। কখনো জয়ী হতো মণিপুর, আবার কখনোবা বার্মিজদের কাছে বরণ করে নিতে হতো পরাজয়। ১৮১৯ সালে তেমনই এক যুদ্ধে মণিপুরকে পরাজিত করে বার্মিজরা এবং পূর্বের পরাজয়ের শোধ নিতে ব্যাপক হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। বলা হয়, সে-সময় বার্মিজদের নিপীড়ন-নির্যাতনে মণিপুরের এক-তৃতীয়াংশ লোক মৃত্যুবরণ করে, আর এক-তৃতীয়াংশ লোক বার্মিজদের হাতে বন্দি হয়ে সেদেশে নীত হয়, নাহয় পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেয় কাছাড়, আসাম, ত্রিপুরাসহ পার্শ্ববর্তী রাজ্যসমূহে। মণিপুরের রাজা চৌরজিৎ, মারজিৎ ও তদীয় অনুজ যুবরাজ গম্ভীর সিংহ অনুগত বাহিনী ও প্রজাবৃন্দসহ পালিয়ে এসে প্রথমে কাছাড়ে আশ্রয় নেন। কিন্তু কয়েক বৎসর পর সেখানে অবস্থান করা অসম্ভব হয়ে উঠলে সিলেটে এসে ব্রিটিশদের কাছে আশ্রয় গ্রহণ করেন। সেই ঘটনা খুব সম্ভবত ১৮২৪ সালের। রাজভ্রাতৃত্রয় শহরের মির্জাজাঙ্গাল এলাকায় রাজবাড়ি নির্মাণ করে বসতি স্থাপন করেন। এলাকাটি পরে ‘মণিপুরী রাজবাড়ি’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। রাজার অনুগামী হয়ে আসা মণিপুরী প্রজাবৃন্দ সিলেট শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন এলাকা এবং সিলেট বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় পাড়া নির্মাণ করে বসতি গড়ে তোলেন। পরে গম্ভীর সিংহ ব্রিটিশদের সহায়তায় ‘মণিপুরী লেভি’ তৈরি করে ১৮২৬ সালে মণিপুর আক্রমণ করে মণিপুরের রাজসিংহাসন পুনরুদ্ধার করেন। ১৮১৯ থেকে ১৮২৫ সাল পর্যন্ত সাত বৎসরকাল বার্মিজরা মণিপুরী রাজপরিবারের কোনো না কোনো সদস্যকে রাজসিংহাসনে বসিয়ে পরোক্ষভাবে তারাই মণিপুর শাসন করে। এই সাত বৎসরকাল মণিপুরী ইতিহাসে ‘ধ্বংসযজ্ঞের কাল’ বলে এক কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এই সময়েই মণিপুরী রাজাদের অনুগামী হয়ে আসা মণিপুরী প্রজাবৃন্দ সিলেট শহরের মণিপুরী রাজবাড়ি, লামাবাজার, লালাদিঘিরপাড়, বাগবাড়ি, সাগরদিঘিরপাড়, কেওয়াপাড়া, সুবিদবাজার, আম্বরখানা, বড়বাজার, শিবগঞ্জ ও নয়াবাজার এবং শহরতলীর খাদিমনগরের দক্ষিণগাছ এলাকায় পাড়া নির্মাণ করে বসতি স্থাপন করে। সিলেট শহরের বাইরে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলা; হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলা এবং সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলায় মণিপুরীদের বসতি স্থাপিত হয়। মণিপুরী জনসংখ্যা নিয়ে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও সাধারণ এক জরিপ অনুযায়ী সিলেট বিভাগে বসবাসকারী মোট মণিপুরী জনসংখ্যা প্রায় চল্লিশ হাজার।
ধর্ম ও সমাজব্যবস্থা : মণিপুরী সমাজ সাধারণভাবে সুশৃঙ্খল, নীতিপরায়ন এবং অপরাধপ্রবণতা থেকে মুক্ত। ধর্মবিশ্বাসের দিক থেকে মণিপুরীরা প্রধানত সনাতন ধর্মের চৈতন্য প্রবর্তিত বৈষ্ণব ধর্মের অনুসারী। তবে মণিপুরীদের মধ্যে এখনও অনেকেই প্রাচীন ধর্ম অর্থাৎ ‘অপোকপা’ বা ‘সনামহী লাইনীং’ অনুসরণ করে থাকেন। আবার ইসলাম ধর্মাবলম্বীও অনেক আছেন। মণিপুরীরা গোষ্ঠীবদ্ধ জীবনে বিশ্বাসী। তবে মণিপুরী জনজীবনে একক এবং বংশানুক্রমিক কোনো গোষ্ঠীপ্রধানের অস্তিত্ব নেই। কয়েকটি পরিবার মিলে গড়ে তোলা হয় একটি পাড়া। প্রতিটি মণিপুরী পাড়াতেই কমপক্ষে একটি দেবমন্দির ও তৎসংলগ্ন মণ্ডপ থাকে। ঐ মন্দির ও মণ্ডপকে ঘিরে আবর্তিত হয় ঐ পাড়ার সকল ধর্মীয় ও সামাজিক কর্মকাণ্ড। দেবতার পূজার্চনা এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পরিচালনার জন্য প্রতিটি পাড়াতেই কমপক্ষে একটি ব্রাহ্মণ পরিবার থাকেন। তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব থাকে পাড়ার। তবে পাড়ার সকল সামাজিক বিষয়াদি দেখাশোনার জন্য জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে একজনকে নির্বাচিত করা হয় ‘খুল আহল’ বা পাড়া প্রধান। অনেকগুলো পাড়া মিলে গঠিত হয় ‘লৈপাকপনচায়’ বা ‘সমাজ’। সমাজ পরিচালনার জন্যে থাকেন একজন ‘পনচায়মকোক’ বা সমাজের প্রধান। তাকে সহযোগিতার জন্য থাকেন বিভিন্ন পদমর্যাদার নির্বাচিত কিছু ব্যক্তি। আবার ধর্মীয় বিষয়াদি দেখাশোনার জন্য থাকেন ব্রাহ্মণদের প্রধান, যিনি ‘লৈপাক পুরেন’ বা ‘ব্যবস্থাকারী’ নামে পরিচিত হন। মণিপুরী জীবনাচরণে ‘সমাজ’-এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি মণিপুরীই সমাজের অনুশাসন দ্বিধাহীন মেনে চলেন। যে কোনো মতবিরোধ বা সামাজিক মতদ্বৈধতা নিরসনে ‘সমাজ’-এর সিদ্ধান্ত থাকে চূড়ান্ত। আর সে কারণেই খুব কম সংখ্যক মণিপুরীকেই আইন-আদালতের আশ্রয় নিতে দেখা যায়।
অর্থনীতি ও পেশা : বাংলাদেশের মোট মণিপুরী জনসংখ্যার প্রায় আশি শতাংশই বাস করে গ্রামাঞ্চলে এবং তাদের প্রধান পেশা কৃষি। আর শহরের মণিপুরীদের প্রধান পেশা হলো স্বর্ণকার এবং মটর মেকানিক। শহরের অধিকাংশ মণিপুরী পরিবারেরই কোনো না কোনো সদস্য স্বর্ণশিল্পের সাথে জড়িত এবং একসময় অধিকাংশ পরিবারেরই নিজস্ব দোকান ছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতির অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। আধুনিক প্রযুক্তির নানা ব্যবহারের কারণে হাতে তৈরি সোনার গহনার প্রচলন অনেক কমে গেছে, তার স্থান দখল করেছে মেশিনে তৈরি রেডিমেইড গহনা। ফলে, অনেক মণিপুরী স্বর্ণশিল্পী পেশা হারিয়ে ফেলছে এবং তারা অনেক ক্ষেত্রে রেডিমেইড সোনার দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করছে। স্বর্ণশিল্পের পাশাপাশি মটর মেকানিকের কাজেও যুক্ত ছিলো অনেক মণিপুরী। মণিপুরী মালিকানাধীন ইঞ্জিনীয়ারিং ওয়ার্কশপের সংখ্যা ছিল উল্লেখ করার মতো। কিন্তু এখানেও আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। আর মণিপুরী মেকানিকরা শিক্ষায় এবং প্রযুক্তিগত জ্ঞানচর্চায় অনেক পিছিয়ে বলে প্রতিযোগিতায় পেরে উঠছে না। ফলে, এক্ষেত্রেও মণিপুরীরা পেশা হারাচ্ছে এবং ক্রমশ অন্য পেশার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। তবে একসময় সিলেট শহরে সোনার গহনা তৈরি এবং গাড়ী মেরামতের কাজে মণিপুরীদের যথেষ্ট নামডাক এবং একাধিপত্য ছিল প্রধানত মণিপুরী স্বর্ণকার এবং মটর মেকানিকদের কর্মনৈপুণ্য ও বিশ্বস্ততার কারণে। এখন যদিও পুরোনো সেই একাধিপত্য বহুলাংশেই খর্বিত হয়েছে, তথাপি এখনও স্থানীয় ও প্রবীণ অনেকেই এইসব কাজে মণিপুরী কর্মীদের উপরেই নির্ভর করে থাকেন। স্বর্ণকার এবং মটর মেকানিক ছাড়াও শহর ও গ্রামে অনেক মণিপুরীর পেশা কাঠমিস্ত্রি। কাঠের কাজে মণিপুরী মিস্ত্রিদের দক্ষতা ও নৈপুণ্যের যথেষ্ট সুনাম ছিল। প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় উদ্ধৃত করা যেতে পারে Sylhet District Gazzetteer থেকে B.C. Allen-এর একটি মন্তব্য : The best carpenters are Manipuris and they often enrich the boxes and bedsteads they turn out with a little carving.’ (Allen: 1905 : 157). শিক্ষাদীক্ষায় পিছিয়ে থাকার কারণে একসময় মণিপুরীদের মধ্যে চাকুরীজীবীর সংখ্যা ছিলো খুবই কম। মণিপুরীদের মধ্যে সাক্ষরতার হার আশি শতাংশের চেয়েও বেশি। তবে উচ্চশিক্ষিতের হার খুবই কম। উচ্চশিক্ষার হার ক্রমবৃদ্ধির কারণে এখন চাকুরীজীবীর সংখ্যাও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মণিপুরী চাকুরীজীবীরা এখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন বিভিন্ন পেশায়। মণিপুরীদের মধ্যে প্রশাসনের বেশ উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা যেমন আছেন, তেমনি আছেন ডাক্তার, ইঞ্জিনীয়ার, আইনজীবী, ব্যাংকার, অধ্যাপক, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বিপুল সংখ্যক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষক। এছাড়া এনজিওসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরতও আছেন অনেকে। বর্তমানে বাংলাদেশের মণিপুরীদের মধ্যে অনেক প্রবাসীও আছেন। ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন মণিপুরী প্রবাসীরা। তারা প্রবাস থেকে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। মণিপুরীদের মধ্যে অনেকে এখন ব্যবসা-বাণিজ্যের দিকেও ঝুঁকে পড়ছেন। স্বর্ণশিল্পের সাথে ঐতিহ্যগতভাবে জড়িত থাকার পাশাপাশি অনেকেই এখন ঐতিহ্যবাহী মণিপুরী হস্তশিল্পজাত পণ্যের বিপণনে নিজেদেরকে নিয়োজিত করছেন এবং তারা এক্ষেত্রে যথেষ্ট সফলতাও অর্জন করছেন।
সংস্কৃতি : মণিপুরীদের রয়েছে বর্ণাঢ্যতা ও ঋদ্ধতায় গরীয়ান এক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। মণিপুরী জীবনের জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি বিস্তৃত বিশাল উপত্যকার প্রতিটি পর্যায়ে অবধারিতভাবে যুক্ত থাকে সংগীত ও নৃত্যের ভূমিকা। মণিপুরী সংস্কৃতির সবচেয়ে সমৃদ্ধ শাখা হলো নৃত্যকলা। মণিপুরী নৃত্যধারাকে মূলত দু’টি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয় – লোকনৃত্য এবং শাস্ত্রীয় বা ধ্রুপদী নৃত্য। লোকনৃত্যের পর্যায়ে পড়ে লাইহারাওবা, খম্বা-থোইবী, মাইবী জাগোই, লৈমা জাগোই, লৈশেম জাগোই, থাবল চোংবী ইত্যাদি। আর রাসনৃত্য, গোষ্ঠলীলা, উদুখল, মৃদঙ্গ নৃত্য ইত্যাদি শাস্ত্রীয় নৃত্য পর্যায়ের। মণিপুরী নৃত্যের শ্রেষ্ঠতম নিদর্শন হলো রাসনৃত্য। এই রাসনৃত্য প্রধানত পাঁচ প্রকারের : মহারাস, কুঞ্জরাস, বসন্তরাস, নিত্যরাস ও দিবারাস। মৌলভীবাজার জেলার আদমপুরবাজার সংলগ্ন স্থানে প্রতি বছর এখনও কার্তিক পূর্ণিমাতে (সাধারণত নভেম্বর মাসে) সাড়ম্বরে মহারাস নৃত্য অনুষ্ঠিত হয়। সিলেটে এই পাঁচ প্রকারের রাসনৃত্যের বাইরে শ্রাবণ মাসে এক ধরনের রাসনৃত্য অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। একে ‘ঝুলন রাস’ বলা হয়। শ্রাবণ মাসের শুক্লা একাদশী থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত পাঁচদিন ব্যাপী এই ঝুলন রাস অনুষ্ঠিত হয়। মণিপুরী নৃত্যশৈলীর শ্রেষ্ঠ প্রকাশ এই রাসনৃত্যের প্রবর্তন করেন মহারাজ ভাগ্যচন্দ্র। ১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দের কার্তিক পূর্ণিমাতে মণিপুরে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয় রাসনৃত্য। ১৯১৯ সালের নভেম্বরে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সিলেট সফরে আসেন। তখন তিনি মাছিমপুরে মণিপুরী নৃত্য উপভোগ করেন এবং এর অন্তর্গত ভাবসম্পদ, কোমল আঙ্গিক, আত্মনিবেদনের বিনম্র ভঙ্গী ও অনুপম রূপৈশ্বর্য দেখে মুগ্ধ হন। পরে তিনি ত্রিপুরার মহারাজার সহায়তায় ত্রিপুরা থেকে মণিপুরী রাজকুমার বুদ্ধিমন্ত সিংহকে নিয়ে গিয়ে শান্তিনিকেতনে মণিপুরী নৃত্যশিক্ষা প্রবর্তন করেন (শেরাম : ২০১৭ : ২৮০)। আর এভাবেই এযুগের শ্রেষ্ঠ কলারসিক রবীন্দ্রনাথের হাত ধরে মণিপুরী নৃত্য দেশীয় পরিমন্ডল পেরিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলো বিশ্ব সংস্কৃতির বিশাল অঙ্গনে। নৃত্যের পাশাপাশি আমরা মণিপুরী বয়নশিল্পের কথাও উল্লেখ করতে পারি। বস্ত্রবয়নে মণিপুরী মেয়েদের দক্ষতা আজ বহুলবিদিত। মণিপুরী মেয়েরা তাদের ঐতিহ্যবাহী দেশী তাঁতে শুধু নিজেদের পরনের কাপড়ই বানায় না, বরং বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুত করে শাড়ি, গামছা, চাদর, স্কার্ফ, বিছানা চাদর, লশিং ফি, টেবিল ক্লথ ইত্যাদি। মণিপুরী শাড়ি, চাদর, লশিং ফি ইত্যাদির যথেষ্ট চাহিদা এবং কদরও আছে। সিলেট শহরের লামাবাজার এলাকায় মণিপুরী হস্তশিল্পজাত বস্ত্র বিপণনের জন্য প্রায় ৩০টি দোকান গড়ে উঠেছে। সিলেট সফরে রবীন্দ্রনাথ যে শুধুমাত্র মণিপুরী নৃত্য দেখে অভিভূত হয়েছিলেন তা নয়, মণিপুরী বয়নশিল্পও তাঁকে মুগ্ধ করেছিল। তাই তিনি শান্তিনিকেতনে রাজকুমার বুদ্ধিমন্ত সিংহকে নিয়ে গিয়ে মণিপুরী নৃত্যশিক্ষার প্রচলন করার পর মণিপুরী বস্ত্রবয়ন পদ্ধতি শিক্ষাদানেরও উদ্যোগ নেন। সেই লক্ষ্যে ত্রিপুরার রাজার সহযোগিতা কামনা করে তিনি ১৯ শে মাঘ ১৩২৬ সনে এক চিঠিতে ত্রিপুরার মহারাজাকে লিখেন: ‘আমাদের মেয়েরাও নাচ ও মণিপুরী শিল্পকার্য্য শিখিতে ঔৎসুক্য প্রকাশ করিতেছে। মহারাজ যদি বুদ্ধিমন্ত সিংহের স্ত্রীকে এখানে পাঠািইবার আদেশ দেন তবে আমাদের উদ্দেশ্য সাধিত হইবে। আমাদের দেশের ভদ্রঘরের মেয়েরা কাপড়বোনা প্রভৃতি কাজ নিজের হাতে করিতে অভ্যাস করে ইহাই আমাদের ইচ্ছা। এই জন্য আসাম হইতে একজন শিক্ষয়িত্রী এখানকার মেয়েদের তাঁতের কাজ শিখাইতেছে। কিন্তু সিলেটে আমি মণিপুরী মেয়েদের যে কাজ দেখিয়াছি তাহা ইহার চেয়ে ভাল।’ (রবীন্দ্রনাথ : ১৩৬৮ : ৩২৮)। আর সেকারণেই বলা হয়, মণিপুরী নৃত্য ও বস্ত্রবয়নশিল্পের প্রসারে সিলেটের মণিপুরীদের রয়েছে এক অবিস্মরণীয় অবদান।
ভাষা ও সাহিত্য : মণিপুরী ভাষা মণিপুর রাজ্যের প্রধান ভাষা এবং রাষ্ট্রভাষা। মণিপুরী ভাষা নিজেদের মধ্যে ‘মৈতৈ লোন’ বা ‘মৈতৈ ভাষা’ নামেও পরিচিত। ভারতে রাষ্ট্রভাষা ছাড়াও বেশ কিছু ভাষাকে সংবিধানের অষ্টম তপশীলে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ‘মণিপুরী ভাষা’ ঐ ভাষাগুলোর অন্যতম। ১৯৯২ সালের ২০ আগস্ট সংবিধানের অষ্টম তপশীলে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে মণিপুরী ভাষাকে ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। তাছাড়া, ১৯৭২ সালে মণিপুরী ভাষা ভারতের সাহিত্য একাডেমী কর্তৃক স্বীকৃতি লাভের পর ১৯৭৩ সাল থেকে শুরু হয় মণিপুরী কবি-সাহিত্যিকদের সাহিত্য একাডেমী এওয়ার্ড দিয়ে সম্মানিত করার পালা। তাছাড়া সাহিত্য-সংস্কৃতি ক্ষেত্রে ভারত সরকার প্রদত্ত ‘পদ্মশ্রী’ ও ‘পদ্মভূষণ’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন মণিপুরের অনেক লেখক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।
মণিপুরী ভাষা খুবই প্রাচীন। গবেষকদের মতে মণিপুরী ভাষার বয়স প্রায় সাড়ে তিন হাজার বৎসর। মণিপুরী ভাষার নিজস্ব লিপিপদ্ধতি আছে। মণিপুরী বর্ণমালার নাম ‘মৈতৈ ময়েক’। বলা হয়, ৩৩ খ্রিস্টাব্দে মণিপুর উপত্যকার কেন্দ্রস্থিত ইম্ফাল অঞ্চলে রাজত্বকারী মহারাজ পাখংবা প্রথম এই লিপির উদ্ভাবন করেন। পরে, উচ্চারণকে আরো প্রমিত করার লক্ষে আরও ৯টি লিপি যুক্ত করে মোট ২৭টি বর্ণ নিয়ে গঠিত হয় মণিপুরী বর্ণমালা। মণিপুরী লিপির উৎস নিয়েও বেশ বিতর্ক আছে। তবে সাধারণভাবে প্রচলিত মত হলো এই লিপি ব্রাহ্মী লিপি থেকে উদ্ভুত। মণিপুরী বর্ণমালার এক অনুপম বৈশিষ্ট্য হলো : এর প্রতিটি বর্ণমালার নামকরণ করা হয়েছে দেহের এক একটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নামানুসারে এবং এর গঠনও সংশ্লিষ্ট ঐ অঙ্গ বা প্রত্যঙ্গের গঠন-প্রকৃতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। যেমন, মণিপুরী বর্ণমালার প্রথম বর্ণ হলো ‘কোক’, যার অর্থ ‘মাথা’। এই বর্ণের বাংলা প্রতিবর্ণ হলো ‘ক’ এবং শব্দে যখন ব্যবহৃত হয় তখন এর উচ্চারণ হয় বাংলা ‘ক’ বর্ণের মতো। মণিপুরী বর্ণমালার দ্বিতীয় বর্ণ ‘সম’, যার অর্থ ‘চুল’; এর বাংলা প্রতিবর্ণ ‘স’ এবং শব্দে ব্যবহারের সময় এর উচ্চারণ হয় বাংলা ‘স’এর মতো। একইভাবে মণিপুরী বর্ণমালার পরবর্তী বর্ণগুলো হলো : ‘লাই’ অর্থাৎ ললাট, ‘মিৎ’ অর্থাৎ ‘চক্ষু’ ইত্যাদি। মানব দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নামানুসারে মণিপুরী বর্ণমালার নামকরণ এক অনন্য নিদর্শন এবং সম্ভবত পৃথিবীতে নজিরবিহীন। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে বাংলার প্রভাবে মণিপুরী ভাষা মণিপুরী লিপির পরিবর্তে বাংলা লিপিতে লেখা শুরু হয়। তবে, মণিপুরে ২০০৫ সাল থেকে শিক্ষা কার্যক্রমে মণিপুরী লিপি পুনরায় চালু করা হয়েছে এবং আগামী ১৫/২০ বৎসরের মধ্যে সেখানে মণিপুরী লিপি পুরোপুরিভাবে চালু হয়ে যাবে। তারই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশেও ‘মণিপুরী ভাষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা’র উদ্যোগে গ্রন্থ প্রণয়নসহ অনিয়মিত ৭টি স্কুল পরিচালনার মাধ্যমে মণিপুরী লিপি শিক্ষার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। ‘একডো’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থাও এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে।
মণিপুরী সাহিত্য অনেক প্রাচীন। মণিপুরী সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন হিসেবে বিবেচনা করা হয় ৩৩ খ্রিস্টাব্দে পাখংবা কর্তৃক সিংহাসনারোহণকালে দেবতার উদ্দেশে নিবেদিত ‘ঔগ্রী’কে। তবে প্রথম লিখিত সাহিত্য হলো তৃতীয় শতাব্দীতে রচিত বলে অনুমিত ‘পোইরৈতোন খুনথোকপা’ (Nilkanta : ১৯৮২ : ১০১)। এই গ্রন্থে প্রথম শতাব্দীতে রাজত্বকারী রাজা পাখংবার সময়ে মণিপুর উপত্যকার কেন্দ্রবিন্দুতে ক্ষমতার লড়াই সূচিত হলে পাখংবার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভুত একটি শক্তিশালী দলের প্রধান হিসেবে ‘পোইরৈতোন’-এর আগমন ও বসতিস্থাপনের কাহিনি বিবৃত হয়েছে। তারপর বিভিন্ন সময়ে মণিপুরী সাহিত্যের ভাণ্ডারে যুক্ত হয় মণিপুরী সাহিত্যের অনেক বিভান্বিত ফসল। এর মধ্যে দ্বাদশ থেকে চতুর্দশ শতাব্দীর মধ্যে রচিত নুমিৎ কাপ্পা, পান্থোইবী খোঙ্গুল, চৈথারোল কুম্বাবা, লোইয়ুম্বা শিনয়েন, পোম্বী লুওয়াউবা, হিজন হিরাও, চায়নরোল, খোংজোংনুবী নোঙ্গারোন, লৈরোন ইত্যাদির নাম বিশেষভাবে উল্লেখের দাবি রাখে। এখন পর্যন্ত মণিপুরী লিপিতে লিখা প্রাচীন হস্তলিখিত মণিপুরী সাহিত্যের প্রায় এক হাজার পা-ুলিপি আবিষ্কৃত হয়েছে। সপ্তদশ শতাব্দী থেকে শুরু হয় আধুনিক মৈতৈভাষার পথচলা। তবে, মণিপুরী সাহিত্যে প্রকৃত আধুনিকতার সূচনা বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে। চাউবা-কমল-অঙাংহল এই ত্রয়ী কবিপ্রতিভা হলেন মণিপুরী সাহিত্যের নবতর এই যাত্রাপথের প্রধান পথিকৃৎ। এই সময়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সাহিত্যসৃষ্টি হলো মোইরাং রাজকন্যা থোইবী ও দরিদ্র বীর খম্বার শাশ্বত প্রেমের কাহিনি নিয়ে হিজম অঙাংহল রচিত চৌত্রিশ হাজার পদ সম্বলিত মহাকাব্য ‘খম্বা-থোইবী শৈরেং’। অনুবাদের ক্ষেত্রেও মণিপুরী ভাষা ও সাহিত্য যথেষ্ট সমৃদ্ধি অর্জন করেছে। মণিপুরী ভাষায় অনূদিত হয়েছে রামায়ণ, মহাভারত-এর মতো কালজয়ী সাহিত্যকর্ম; মেঘদূত, ইলিয়াড, ওডেসীর মতো ক্লাসিক সাহিত্য; ঋগে¦দ, বিভিন্ন পুরাণ, শ্রীমদ্ভগবতগীতা, উজ্জ্বল নীলমনি, ভক্তি রসামৃত, মনু সংহিতা, বাইবেলসহ বিভিন্ন ধর্মের বিখ্যাত গ্রন্থাবলী; কালিদাস, ভাস, ভবভুতি, বাণভট্টসহ প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃত সাহিত্যিকবৃন্দ এবং রবীন্দ্রনাথ, শেক্সপীয়ার, টলস্টয়, হোমার, বার্নাড শ’, সোফোক্লিস, বঙ্কিম, শরৎসহ বিশ্ব-সাহিত্যের মহৎ রূপকারদের অনন্য সব সাহিত্যকর্ম। বঙ্কিমচন্দ্রের সকল উপন্যাস এবং শরৎচন্দ্রের প্রায় সমগ্র রচনাবলিই অনূদিত হয়েছে মণিপুরী ভাষায়। মণিপুরী সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য অনেক সৃষ্টিকর্মও আজ অনূদিত হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায়।
বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মণিপুরী সাহিত্য চর্চার সূত্রপাত হয় ১৯৭৫ সালে ‘বাংলাদেশ মণিপুরী সাহিত্য সংসদ’ গঠন এবং সংসদের মুখপত্র হিসেবে বাংলাদেশের প্রথম মণিপুরী সাহিত্য সংকলন ‘দীপান্বিতা’ প্রকাশের মধ্য দিয়ে। দীপান্বিতা এখন ‘মৈরা’ নাম নিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে। পরবর্তীতে জন্ম নেয় বিভিন্ন সংগঠন এবং প্রকাশিত হয় অনেক সংকলন ও সাহিত্যের গ্রন্থ। এ-যাবত বাংলাদেশে মণিপুরী ভাষায় প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৫০ টি। মণিপুরী থেকে বাংলায় অনূদিত হয়েও অনেক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
তথ্যপঞ্জি
১. শেরাম, এ. কে; বাংলাদেশের মণিপুরী ত্রয়ী সংস্কৃতির ত্রিবেণী সঙ্গমে; ঢাকা, ১৯৯৬
২. B.C. Allen, C.S.; Assam District Gazetteer; Vol-ii, Sylhet; ১৯০৫
৩. শেরাম, এ. কে; মণিপুরী মঞ্জুষা; ঢাকা ২০১৭
৪. রবীন্দ্রনাথ ও ত্রিপুরা (ত্রিপুরা আঞ্চলিক রবীন্দ্র শতবার্ষিকী সমিতি আগরতলা কর্তৃক প্রকাশিত রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী স্মারকগ্রন্থ); আশ্বিন, ১৩৬৮ (পুনর্মুদ্রণ ১৯৮৭ ০ ২০১১ খ্রি.)
৫. Nilkanta Singh, Elangbam; Aspects of Indian Culture; Imphal, ১৯৮২
… …
- সিলেটের মণিপুরী জাতি || এ কে শেরাম - October 2, 2018
COMMENTS