[‘শিরোনামহীন’ ব্যান্ডের এই ইন্টার্ভিয়্যু গুরুত্বপূর্ণ গণ্য হতে পারে বেশ-কয়েকটা কারণে; — এক, গড়পরতা সাক্ষাৎকারগুলোতে ব্যান্ডমিউজিশিয়্যানদের স্টার্ডোম মাথায় রেখে একপ্রকার ফিল্মি ফানমেইকিং ফায়শা আলাপ যেভাবে চালানো হয় এইটা তার বাইরে থাকতে চেয়েছে; দুই, শিল্পী হিশেবে ব্যান্ডমিউজিশিয়্যানদেরে এবং শিল্প হিশেবে ব্যান্ডমিউজিকটাকে যেভাবে একটা হাল্কাচালে দেখার প্রবণতা আমাদের মেইনস্ট্রিম প্রচারযন্ত্রে দেখতে পাই হামেশা, এইটা সেই বিটকেলে ব্যাপার শো করছে না; তিন, ব্যান্ডসংগীতে যেন ভাববার এবং ভাবাবার কোনো মোকদ্দমা নাই বিনোদনরঙঢঙ ছাড়া, এই ইন্টার্ভিয়্যুতে তেমন মূলধারা খাসলতের বদ নজির রাখেন নাই ইন্টার্ভিয়্যুয়াররা; চার, ব্যান্ডসংগীতের ধারার সঙ্গে অন্যান্য শিল্পপ্রকাশমাধ্যম যেমন কবিতা ইত্যাদির সংশ্রব এড়িয়ে ডেইলি নিউজপেপারের ফরমায়েশি ফিচার্ড ফোটোশ্যুটমার্কা সাক্ষাৎকারগুলো অবিরত হপ্তায়-হপ্তায় যেভাবে ব্যান্ডকর্মকাণ্ড হাজির করে থাকে সংগীতসমুজদারদের সামনে, এর ফলে যে ব্যান্ডসংগীতপ্রশ্নে এক চটুল অশ্রদ্ধা দানাদার হয়েছে দিনে দিনে, সেই স্বেচ্ছাচারের বাইরে যেতে চেয়েছে এই ইন্টার্ভিয়্যু; সর্বোপরি, ‘শিরোনামহীন’ তরফে এর উত্তরদাতারা যেভাবে হেভিমেটাল ইত্যাদি প্রশ্নে রেস্পোন্স দিয়েছেন তাতে এইটা ভালো ও অন্তর্দৃষ্টিবহ কথাচারিতার একটা দৃষ্টান্ত হিশেবে পাঠক গ্রহণ করবেন বলিয়া ‘গানপার’ থেকে আমরা মনে করছি।
ইন্টার্ভিয়্যুটা নেয়া হয়েছে মাইক্রোবাসে যেতে যেতে, সেইটা শিরোনামেই স্পষ্ট। ২০১৫ সনে এই ইন্টার্ভিয়্যু নিয়েছেন দুই তরুণ মেঘমল্লার বসু ও সাবিত মোনতাসির, দুজনেই মিউজিকপ্রেমী শিক্ষার্থী, প্রথম প্রকাশিত হয় রেমিয়েন্স ডিবেটিং সোসাইটি বিতর্ক উৎসব ২০১৫ স্মারকে। রেমিয়েন্স ডিবেটিং সোসাইটি, ইন-শর্ট আরডিএস, ঢাকা রেসিডেনশিয়্যাল মডেল কলেজের একটি নিয়মিত উদ্যোগ। উৎসবস্মারক ‘বাগ্মী’ নিয়মিত বছরান্তের আয়োজন হিশেবে প্রকাশিত হয়ে থাকে। এইটা, সাক্ষাৎকারটা, আরডিএস ষষ্ঠ জাতীয় বিতর্ক উৎসবের ‘বাগ্মী’ থেকে নেয়া হয়েছে। এই বছরের সংখ্যাসম্পাদক যুগ্মভাবে সাফওয়াত মোনতাসির ওর্ফে সাবিত মোনতাসির এবং আজমাঈন তূর হক। সাক্ষাৎকারপরিগ্রাহক দুইজনের মধ্যে একজন, মেঘমল্লার বসু, সোসাইটির ২০১৪-২০১৫ কার্যনির্বাহী পরিষদ সভাপতি। কি কন্টেন্ট কি প্রেজেন্টেশন অনেক বিবেচনাতেই ‘বাগ্মী’ সিক্সথ পাব্লিক্যাশন অ্যাপ্রিশিয়্যাবল্। সম্পাদনাভাষ্য থেকে একাংশ উদ্ধৃতি রেখে এখানে এই বিদ্যালয়কেন্দ্রী বিতর্কপ্রকাশনাটাকে আমরা সাধু-উদ্যোগের শিরোপা দিতে কার্পণ্য করছি না : “… প্রচলিত বিতর্ক ম্যাগাজিনের মতো বিতার্কিকদের বিতর্কসম্পর্কিত সুচিন্তিত মতামতের ওপর আলোকপাত না-করে বরং পুরো বাংলাদেশে এই মুহূর্তে যারা মুক্তবুদ্ধির চর্চা করছে তাদের কাজের ওপর এবং বাংলাদেশে এই বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার সামগ্রিক অবস্থার ওপর মোটামুটিভাবে আলোকপাত করার চেষ্টা করা হয়েছে।” হ্যাঁ, চেষ্টার ফলও আমরা পেয়েছি হাতেনাতে।
এই ইন্টার্ভিয়্যুরচনাটা আমরা ‘গানপার’ থেকে ফিচার করতে পেরে আনন্দিত। অমূলক হবে না আশা করাটা যে একটা বার্ষিকী কাগুজে মুদ্রণ থেকে এইখানে অ্যাভেইলেবল্ রাখার ফলে এই ইন্টার্ভিয়্যুটা আরও অধিকতর পাঠকের নেকনজরে আসবে এবং প্রয়োজনে এর নাগাল পাওয়া সাধ্যাতীত হবে না কারো পক্ষে। এই কাজটা ‘গানপার’ থেকে রেগ্যুলার করা হবে নতুনতর রচনাদি পাব্লিশের পাশাপাশি। মিউজিকের ইতিহাসে ব্যান্ডের, দেশী-বিদেশী সমস্ত রক ও নন-রক সংগীতধারার, তরফদারি ‘গানপার’ নিত্য করে যেতে চায়। আর্কাইভিং করতে চায় পাঁচদশকের বাংলাদেশজ সংগীতনিশানা এবং অনাগত ভবিষ্যতের বাংলা গানের ইশারাগুলোও টুকে যেতে চায় হামেশা। সাক্ষাৎকারটা রিপাব্লিশসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সম্মতি আদায়ে এই পাঠবস্তুর সংগ্রাহক প্রোক্ত প্রকাশনার সম্পাদকদ্বয়ের, আজমাঈন তূর হক এবং সাবিত মোনতাসির, মৌখিক অনাপত্তি পেয়েছেন বলিয়া আমাদেরে জানায়েছেন।
বাংলা ব্যান্ডসংগীতের সমুজদার, শিরোনামহীনঅনুরাগী এবং পাঠকক্রিটিক সকলের সুখ ও সুস্বাস্থ্য কামনা করি। — গানপার]
_________________
শিরোনামহীন সাক্ষাৎকার ২০১৫
শিরোনামহীনের সাথে মাইক্রোতে
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মেঘমল্লার বসু ও সাবিত মোনতাসির
________________
সাবিত : এইটা আমার একেবারেই ব্যক্তিগত অভিমত, আমি নিজে আসলে যে-কারণে শিরোনামহীন পছন্দ করা শুরু করেছিলাম তার কারণ হলো নিজস্ব স্টাইল। শিরোনামহীন হচ্ছে সবার থেকে আলাদা। শিরোনামহীন যেমন একটা ‘ভাইব্’ দ্যায় যা আসলে অন্য কেউ দিতে পারে না। সেটা গানের লিরিক্সে হোক, গানের শেষে গলার একটা বিশেষ টানে হোক বা গানের মাঝে গিটারের একটা সলোতে হোক — সবকিছু থেকেই বোঝা যায় যে শিরোনামহীন একেবারে আলাদা। এটা কি গান করতে করতে আলাদা হয়ে গিয়েছে নাকি আলাদা করার একটা ইন্টেনশন আপনাদের ছিল? মানে এমন একটা সচেতন চেষ্টা কি কাজ করত যে আমরা যেটা করব সেটা আলাদা হবে?
জিয়া : মূলত আমরা আলাদা করার জন্য কিছুই করিনি। যেটা চেষ্টা করছিলাম সেটা হলো আমাদের — আমরা পাঁচজনের — ব্যান্ডমিউজিকের ব্যাপারে যে রুচি বা টেইস্ট রয়েছে তা আমাদের সৃষ্টিতে একধরনরে প্রভাব ফেলার পরও যাতে আমাদের গানগুলো মৌলিক হয়। আমরা মৌলিক প্যাটার্নে কাজ করব। আমাদের সেই রুচিবোধের ভিন্নতার কারণে আবার একইসাথে আমাদের ক্রিয়েশনগুলোকে মৌলিক রাখার চেষ্টার কারণে একধরনের ভ্যারিয়েশন তৈরি হয়ে গেছে। সেটা আসলে ইন্টেনশনালিই হোক আর আনইন্টেনশনালিই হোক, আমরা পরে দেখলাম আমাদের ‘জঁরা’ কি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে উত্তর হবে আমাদের জঁরা শিরোনামহীন। আর ভিন্নতা কেউ ইম্পোজ করতে পারে না। আমরা আসলে যাদের গান শুনে বড় হয়েছি তাদের ক্ষেত্রেও এইটাই প্রযোজ্য যে আসলে সব বড় বড় শিল্পীরই চর্চা করতে করতে একধরনের নিজস্বতা আপনাআপনিই তৈরি হয়। আর আমাদের দেশে একটা জিনিশ হয় না যে, কেউ কোনো-একটা ব্যান্ডের গান শুনে বলল এদের গানগুলো মেটালিকার মতো বা এদের গানগুলো ড্রিমথিয়েটারের মতো, আমার খুব ইচ্ছা ছিল আমাদেরকে যাতে এইটা কেউ বলতে না পারে। মানে আমাদেরকে যেন অন্য কারো সাথে কেউ গুলিয়ে ফেলতে না-পারে সেই চেষ্টাটাই আমরা করতাম।
মেঘমল্লার : আপনাদের মিউজিক্যাল ইন্সপিরেশন কারা?
জিয়া : কাদের গান শুনতাম সেটা বলতে পারি। একটা বয়সে আমিও সবার মতো রকমিউজিক পছন্দ করতাম, এখনও করি। পরে যারা অল্টারনেটিভ প্যাটার্ন নিয়ে কাজ করেছে এরাও আমার খুব পছন্দের, যেমন ধরো নির্ভানা। ডায়ার স্ট্রেটস, পিঙ্ক ফ্লয়েডের প্রতি আমার অসম্ভব ঝোঁক আছে। ক্ল্যাসিক মিউজিক দ্বারা আমি আসলে অনেক প্রভাবিত। আমি প্রচুর পরিমাণে মোজার্ট শুনেছি। এই প্রভাবটা আসলে একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম হবে। যেমন তুহিনের ক্ষেত্রে বা সাফিনের ক্ষেত্রে সেটা আবার আলদা।
সাবিত (তুহিনের প্রতি) : অল্প কথায় যদি জিজ্ঞেস করি, আপনার মিউজিক্যাল ইন্সপিরেশন আসলে কার কাছে পাওয়া?
তুহিন : আমার প্রথম মিউজিক্যাল ইন্সপিরেশন হলো আমার মা। তিনি গান গাইতেন না, কিন্তু গান শেখানোর জন্য যা করণীয়, তা তিনি ছোটবেলা থেকেই করেছেন। আর পিঙ্ক ফ্লয়েড, লালন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, কলিম শরাফী, অজয় রায় — এরা সবাই আমার ইন্সপিরেশন। হেভিমেটাল বা থ্র্যাসমেটাল — এই জাতীয় জিনিশও আমি আসলে শুনতে পছন্দ করি। কিন্তু এইসব আমি শুনেছি অনেক পরে। এইসব ছাড়া ক্ল্যাসিক্যাল ইন্ডিয়ান মিউজিক বা লালন অথবা কিশোর কুমার, হেমন্ত, মান্না দে — এদের গান আমাকে অনেক আগে থেকেই ইনফ্লুয়েন্স করেছে।
সাবিত : শিরোনামহীনের এমন অনেক গান আছে যেগুলো শুনলে মনে হয়, গানগুলো বোধহয় কোনো বিশেষ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে লেখা। মনে হয় যে গানগুলো কোনো-একটা বিশেষ ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করতে চাচ্ছে। যেমন ‘অজস্র কবিতার জনসমাবেশ থেকে বুলেট কিংবা কবিতা’। একটা গল্প বলে নিলে আসলে প্রশ্নটা বুঝতে সুবিধা হবে। আমি যখন ক্লাস এইট-নাইনে পড়ি তখন এই গানটার লিরিক্স আসলে কি বোঝাতে চেয়েছে এ নিয়ে বন্ধুদের মধ্যে অনেক তর্ক-আলোচনা হতো। কিছু কিছু লাইন শুনে মনে হতো এইটা হচ্ছে স্বাধীনতা-আন্দোলন নিয়ে লেখা। কিন্তু লাইনগুলো থেকে তা আবার খুব স্পষ্টও না। তা এইরকম গানগুলো কি আপনাআপনিই চলে আসে, নাকি কোনো-একটা বিশেষ বিষয় নিয়ে গান লিখব — এই ভাবনা থেকে এই গানগুলো তৈরি হয়?
জিয়া : প্রথমত আমি যেটা বলতে চাই তা হলো, আমি তোমার কথায় খুব গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছি। একটা ক্লাস এইট-নাইনপড়–য়া ছেলে বুলেট কিংবা কবিতার মতো গানের লিরিক্স বোঝার চেষ্টা করছে এটা আমার জন্য খুবই অনুপ্রেরণার। আর হ্যাঁ, এই গানটা একেবারেই ইন্সিডেন্টাল। গানটা আসলে টিএসসিকে নিয়ে লেখা। টিএসসি হলো এমন একটা জায়গা, যেখান থেকে আমাদের ভাষা-আন্দোলন হয়েছে, আমাদের স্বাধীনতা-সংগ্রামের সূচনা হয়েছে, এইখান থেকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন হয়েছে। কাজেই টিএসসি একটা ক্যাম্পাস হলেও টিএসসি একটা বিশেষ কিছু। আর এখানে যারা পড়তে আসে সাধারণভাবে তাদের মধ্যে একটা ইন্টেলেকচুয়্যালিটি থাকে। তো এইটা একটা ইন্সিডেন্টাল গান, এইটা নিয়ে আমরা আসলে টিএসসিকে রিপ্রেজেন্ট করতে চেয়েছিলাম। মানে টিএসসির চেহারাটা যদি আমাদের সামনে ফুটে ওঠে তাহলে সেখানে আমরা বুলেট কিংবা কবিতা দুটোই লিটারেলি পাবো। তাই এই গানের লিরিসিস্ট বা গীতিকার হিসেবে আমার কাজ ছিল টিএসসিকে পোর্ট্রে করা। কারো ভালো-মন্দ নিয়ে বিচার করা না, স্রেফ টিএসসিকে পোর্ট্রে করা।
সাবিত : এই সময়ের একটি অসম্ভব জনপ্রিয় ব্যান্ড শিরোনামহীন। আপনারা যখন স্টেজে ওঠেন তখনই বুঝতে পারেন যে কী-পরিমাণ লোক আপনাদের গান শোনে। যখন একটা ব্যান্ড এই-রকম জনপ্রিয়তা লাভ করে তখন তাদের এই-রকম একটা দায় তৈরি হয় কি না, যেহেতু আমার গান অনেক মানুষ শোনে, সেহেতু দেশের বা সমাজের কোনো ক্রাইসিসে আমার সেই সমস্যা নিয়ে কথা বলা বা গান করা উচিত। মানে জনপ্রিয় শিল্পীর একধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে বলে শিরোনামহীন বিশ্বাস করে কি না।
জিয়া : আসলে কারো জনপ্রিয়তা যত বাড়ে, তার প্রতি মানুষের প্রত্যাশাও তত বাড়ে; ফলে দায়বদ্ধতাও তখন বাড়ে। যখন কেউ একশ শ্রোতার জন্য গান করে তখন তার যে-দায়বদ্ধতা আর যে দশহাজার শ্রোতার জন্য গান বানাচ্ছে দুজনের দায়টা একরকম হবে না। আর আমরা অনেক ক্ষেত্রেই গানকে ইন্সিডেন্টাল করার চেষ্টা করি। এই শহরের মানুষের স্ট্রাগল নিয়ে গান করা হয়েছে, অনেক ছোট টাইমস্প্যানকে নিয়ে গান করার অভিজ্ঞতা আছে। যেমন ধরা যাক ‘ক্যাফেটোরিয়া’, এইটা হলো একটা সেকেন্ড বা মুহূর্তকে নানা অ্যাস্পেক্ট থেকে নানান দিক থেকে বর্ণনা করা।
মেঘমল্লার : শিরোনামহীনের অনন্যতার আরেকটা বড় কারণ হলো শিরোনামহীনের গান সমসাময়িক অন্য ব্যান্ডগুলোর তুলনায় অনেক বেশি সমাজ ও রাজনীতিসচেতন। যেমন আজকেও এখানে আপনারা এসেছেন একটা সমাজসচেতনতার জায়গা থেকেই।
জিয়া : আসলে শিল্পের সঙ্গে অ্যাক্টিভিজমের একটা জায়গা আছে। আমরা বিশ্বে অনেক বড় শিল্পীকেই সমাজের নানান সংকটে দাঁড়িয়ে যেতে দেখেছি, যেমন ধরেন বব ডিলান। আজকের অবস্থাটা দেখেন, এখানে অসম্ভব নৃশংস একটা ঘটনা ঘটল। এবং এইটা খুব আনএক্সপেক্টেড। আমরা কোনোদিন ভাবি নাই যে আমাদেরকে যৌননিপীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে একটা কন্সার্টে গান গাইতে হবে। কিন্তু সেটাও আমাদের করতে হবে। এইটাই হলো মানুষের মানসিকতা। এই প্রসঙ্গে আমার একটা নির্দিষ্ট বক্তব্য আছে, এবং আমি চাই আপনারা এইটা ছাপান। ফেসবুকের দিকে যদি তাকাই তাহলে দেখতে পাবো কেউ-কেউ এইটাকে ধর্মীয় আঙ্গিক থেকে সমর্থন করার চেষ্টা করছেন। বলার চেষ্টাও করছেন যে মেয়েগুলো যদি এখানে হিজাব পরে আসত বা শালীন পোশাক পরত তাহলে এটা হতো না। এটার বিরুদ্ধে আসলে অনেক যুক্তি দেওয়া যায়। যেই মহিলা তার স্বামীর সাথে এখান দিয়ে রিকশা করে যাচ্ছিলেন তার শালীনতা নিয়ে বলার কিছুই নাই। আমার প্রশ্ন হলো, আপনার ধর্ম যা-ই-হোক-না-কেন এইটা কি কোনো ধর্মে লেখা আছে কেউ শালীন পোশাক না-পরলে তাকে রেপ করা জায়েজ? এই-রকম কোনো কথা কেউ রেফারেন্স সহ বলতে পারবে? কাজেই এই সমর্থনটা যারা দেয় তাদেরকে আমি জানোয়ার ছাড়া কিছুই বলতে পারব না। এবং সবচেয়ে আশ্চর্য হলো ফেসবুকে ঢুকলে দেখা যায় প্রায় আশি শতাংশ মানুষ এই জাতীয় কথাগুলোকে সমর্থন করছে। আমরা কি পুরো দেশটা জানোয়ারের পর্যায়ে চলে গেলাম? আসলে ধর্ষকের পক্ষে কথা বলার কোনোরকম কোনো ঠিক যুক্তিই কেউ আমাকে দেখাতে পারবে না। প্রত্যেকটা ধর্মই নারীকে সম্মান দিতেই বলেছে এবং এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতেই বলেছে। একজন যখন ধর্মকে ভিত্তি করে এই কাজকে সমর্থন দেয়ার চেষ্টা করে তখন সে তার ধর্মকে প্রচণ্ডরকম অপমান করে। কাজেই আমাদের এই লোকগুলোর বিরুদ্ধে সচেতন হতে হবে। যারা এই জাতীয় কথা তোলে তাদের বিরুদ্ধে সাথে সাথে দাঁড়িয়ে যেতে হবে।
সাবিত : আচ্ছা ভাইয়া, ব্যক্তিগত কৌতূহল থেকে একটা প্রশ্ন করি। আপনি কি সেইন্ট গ্রেগরি থেকে পড়েছেন?
জিয়া : হুঁ।
সাবিত : ‘জাহাজী’ গানটা শুনে আমাদের মনে হয়েছে। ‘জাহাজী’ গানটা নিয়ে নিজেও অনেক প্রশ্ন, অনেক প্রশংসা শুনেছেন নিশ্চয়।
জিয়া : হ্যাঁ, দুইটাই শোনা হয়েছে।
সাবিত : একটা টিপিক্যাল প্রশ্ন করি। শিরোনামহীনের গাওয়া গানগুলো মধ্যে আপনার সবচেয়ে পছন্দের গান কোনটা?
জিয়া : যেহেতু অনেক গানের লিরিক্সই আমার লেখা, অনেক গানের সুর করা, গ্রাফিক ডিজাইনও অনেক সময় আমার করা এমনকি সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিংও আমার করা, কাজেই এই গানগুলোর ক্রিয়েটিভ সাইডের সাথে আমি খুব বেশি করে যুক্ত। কাজেই এই প্রত্যেকটা গানই আমার সন্তান। কোনো বাবামায়ের কাছেই কিন্তু একটা সন্তান ভালো, একটা সন্তান খারাপ — এই-রকম ঘটে না। প্রতিটা গানই আমাদের ব্রেইনচাইল্ড, প্রতিটা গানই শিরোনামহীনের গান। তাই প্রতিটা গানের প্রতিই আমাদের ভালোবাসা আছে। কোনো গানের ক্ষেত্রে হয়তো একটু বেশি, কোনো গানের ক্ষেত্রে হয়তো একটু কম — এই-রকম থাকতে পারে। আবার অনেক সময় আমরা শ্রোতাদের দ্বারাও প্রভাবিত হই। যেই গানগুলো শ্রোতারা বেশি পছন্দ করেন সেইগুলো আমরা বেশি গাওয়ার চেষ্টা করি।
সাবিত : একটা হাইপোথেটিক্যাল প্রশ্ন করি। ধরুন কালকে বাংলাদেশে আকস্মিকভাবে ডেথমেটালের প্রচণ্ড জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করল। গোটা-দশেক ব্যান্ড ডেথমেটাল গাওয়া শুরু করল, এবং সাধারণ জনগণ ঐ জঁরার গানকে খুব ভালোভাবে গ্রহণ করল। একটা পর্যায়ে মানুষ ডেথমেটাল বাদে আর সবকিছু শোনা ছেড়ে দিলো। তখন কি শিরোনামহীন জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে স্বকীয়তা থেকে খানিকটা সরে ওর কাছাকাছি কিছু গাওয়ার চেষ্টা করবে নাকি কেউ শুনল কি শুনল না এই নিয়ে বিচলিত না হয়ে নিজেদের মতো করেই গান গেয়ে যাবে? মানে, শিরোনামহীনের জায়গাটা আসলে কোথায়? শিরোনামহীন কি মানুষ শুনবে বলে গান করে নাকি স্রেফ নিজেদের গান করতে ভালো লাগে বলে গান করে?
জিয়া : প্রথমে যেটা বলার সেটা হলো, নিজেদের স্বকীয়তা থেকে শিরোনামহীন কখনোই সরে যাবে না। আমাদের যে-নিজস্বতা সেই জায়গা থেকে মানুষেরা আমাদের গ্রহণ করেছে, আজকে যদি সেখান থেকে আমাদের ছুঁড়ে ফেলে দেয় তাহলে দেবে। কিন্তু আমরা তো এটাই পারি। আজকে ধরেন ডেথমেটালের প্র্যাক্টিস শুরু হলো, কালকে আবার পাঙ্ক রক গাওয়া শুরু হলো। এগুলোর সঙ্গে শিরোনামহীনকে গা ভাসাতে হবে বলে আমি মনে করি না। কারণ আমরা আসলে ঐটা পারি না। আমরা খুব ভালো করেই জানি আমাদেরকে মানুষ গ্রহণ করেছে আমাদের অরিজিন্যালিটির জায়গা থেকে। আমরা যদি কালকে মানুষকে আমাদের সঙ্গে সিঙ্ক করাতে না পারি তাহলে সেটা আমাদের ব্যর্থতা। আর শিরোনামহীন জনপ্রিয়তার জন্য গান গায় এমন না। আসলে মূলত মানুষকে ‘আমাদের’ গান শোনাতে ভালো লাগে বলে আমরা গাই।
মেঘমল্লার : গান লেখার সময় আপনারা ঠিক কি মাথায় রেখে লেখেন? বিষয়টা কি এই-রকম হয় যে, অনেকদিন ধরে কোনো অ্যালবাম বেরোচ্ছে না, কাজেই এবার গোটা-কয়েক গান লিখতে হবে — গানগুলো এই চিন্তা থেকে লেখা হয় নাকি একদিনেও মাথায় তিনটা গান আসতে পারে আবার ছয়মাসেও একটা গান না আসতে পারে সেইটাকে মেনে নিয়েই গান লেখা হয়? আর সেইক্ষেত্রে কন্টিন্যুয়িটি বা জনপ্রিয়তা কোনো চাপ হয়ে দাঁড়ায় কি না?
সাবিত : মানে, যদি এমন হয় যে একটা গানের জন্য যদি একটা অ্যালবাম প্রকাশ আটকে থাকে তাহলে জিয়া ভাই ঐদিনই বসে যে-করে-হোক একটা গান লিখে ফেলবে নাকি, বা যদি সেই গানটা ভেতর থেকে আসার জন্য তিনমাস সময় লাগে তবে তিনমাস অপেক্ষা করবে?
জিয়া : যেহেতু আমার উপরই গান লেখার মূল দায়িত্বটা, কাজেই আমি বলব এই ব্যাপারে আমার একটা ব্যর্থতা আছে। আমি ঐরকম বেঁধে-দেওয়া সময়ে গান লিখতে পারি না। আবার কোনো গান যদি হুট করে হয়ে যায় তাহলে বুঝে নিই ঐটা হওয়ার ছিল। যদি এই-রকম করে বলে দেওয়া হয় যে এই কয়দিনের মধ্যে একটা গান লিখতে হবে তাহলে আমি একদম ব্যর্থ। সেইজন্যই আমাদের গত অ্যালবামটা বের করতে সময় লেগেছে প্রায় আড়াই বছর। আমাদের দেশের অনেক ব্যান্ড আছে যারা ৪৮ ঘণ্টা বা ৭২ ঘণ্টায় একটা গোটা অ্যালবাম বের করে ফেলে। এই কাজটা আমরা পারি না। আমরা যখন গান সুর করি বা লিখি পুরো জিনিশটা শেষ হওয়ার পরও আমাদের সেই গানটা নিয়ে সমালোচনা করার এবং সেই অনুযায়ী গানটাকে পরিচর্যা করার মানসিকতা প্রচণ্ড। আমাদের সঙ্গে একটু আগেও গাড়িতে সাফিন বসে ছিল। এই ছেলেটার কাজই হল গানের খুঁত খুঁজে বের করা। এবং সেটা প্রায় বাড়াবাড়ি রকমের। তুহিনের অনেক জিনিশ নিয়ে অনেক আপত্তি, অনেক সমালোচনা থাকে। আমি নিজেও অনেক নাকসিঁটকানো একটা মানুষ। কাজেই আমরা খুব দ্রুত কোনো একটা জিনিশ করে ফেলতে পারি না। বা অর্ডারে কোনো কাজ করতে পারি না। এই জন্যই এখন পর্যন্ত আমরা মাত্র একটা চলচ্চিত্রের জন্য কাজ করতে পেরেছি।
সাবিত : বাংলা ব্যান্ডের গান এবং বাংলা আধুনিক কবিতা, — এই দুইটা নিয়েই মানুষের একটা খুব সাধারণ আপত্তির জায়গা হল — এই জায়গাগুলোতে অপ্রয়োজনে স্রেফ ইচ্ছে করে কঠিন শব্দ ব্যবহার করা হয়। অনেক সময় লেখক নিজেই তার মানে বোঝে না। তা আপনার বিরুদ্ধে যদি কেউ এমন অভিযোগ করে তাহলে আপনি কিভাবে তার উত্তর দিবেন?
জিয়া : ধরো, দুজন মানুষ ছবি আঁকছেন; — একজন শিল্পী, একজন শিল্পী নন। যিনি শিল্পী নন তিনি ছবি আঁকার চেষ্টা করলেও কিন্তু তিনি ঠিক শিল্পীর কাতারে পড়েন না। একইভাবে যিনি মানে না-বুঝে শব্দ ব্যবহার করছেন তিনি লিরিক্স লিখে ফেললেও তাকে আমি লিরিসিস্টের কাতারে রাখতে রাজি না। এবার আসি আসলে যারা লিরিসিস্ট তাদের কথায়। সে কিন্তু কঠিন শব্দের মানে খুব ভালো করেই বোঝে। কিন্তু তারপরও সে কতখানি ব্যবহার করবে আর কতখানি ব্যবহার করবে না এইটা কিন্তু তার নিজস্ব অভিরুচির ব্যাপার। আমার নিজের ক্ষেত্রে যেটা কাজ করে, সেটা হলো আমি মূলত খুব সহজ শব্দটাই আমার গানে ব্যবহার করতে চাই এবং সাধারণত আমি সেইটাই করি। আমার উপমা হয়তো বোঝা কঠিন হয়, কিন্তু শব্দগুলো মোটেও দুর্বোধ্য নয়। যেমন ধরো, ‘অসংখ্য এলোমেলো শব্দের ভিড়ে’ এখানে কোনো কঠিন শব্দ নেই। কিন্তু আমার মেটাফোরগুলো অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়।
সাবিত : ‘এই সন্ধ্যায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে কিছু স্বপ্ন বিক্রি করে যারা’ …
জিয়া : এক্সাক্টলি। স্বপ্নটা যে বিক্রি করা যায়, এই মেটাফোরটা ধরতে পারা কঠিন, কিন্তু দেখো এখানে কিন্তু দুর্বোধ্য কোনো শব্দ নাই। আমি আসলে এই জিনিশটাই চেষ্টা করি। সবার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একই রকম, আমি অবশ্য এমনও আশা করি না। তবে আমি মনে করি ব্যান্ডের গানের ক্ষেত্রে আমাদের দেশের যথেষ্ট অর্জন আছে। আর সেইটা একেবারেই ফেলে দেওয়ার মতো কিছু নয়। তবে আমাদের দেশে এখন কিছু চর্চা হচ্ছে যেগুলো খুব-একটা ভালো না। আমার কাছে মেটালগান বা রকগানের বিষয়বস্তু অনেকটা এই-রকম : মেগাডেথ গাইছে Countdown to Extinction; গানের বিষয় হলো শীতে পাখিগুলো মরে যাচ্ছে। মেটালিকার মতো একটা ব্যান্ড তারা ‘Wherever I may roam’-এর মতো লিখছে যেটা কিনা একটা ভবঘুরের জীবন নিয়ে লেখা। আমাদের দেশে মেটাল গানের আমি একটা সংকট খেয়াল করি। সেটা হলো হতাশা, দুরাশা, নিরাশা, কুয়াশা — এইগুলা ছাড়া এদের মেটাল গান হচ্ছে না। তা যারা মেটালশ্রোতা তারাই তো আজকের দিনে বাংলা মেটাল গান লিখছে। ওদের চোখে কি পড়ে না ওদের টপিক বা বিষয়বস্তু কত বেশি জীবনঘনিষ্ট আর আমরা হতাশা, দুরাশা, কুয়াশা ছাড়া কোনোকিছু নিয়ে গান লিখতে পারি না!
মেঘমল্লার : ব্যাপারটাকে কি এইভাবে ব্যাখ্যা করা যায়, আপনি যেসব সেরা ব্যান্ডের কথা বলছেন তারা অনেক বেশি সমাজের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিল? তাই দেশ ও সমাজের কষ্টগুলো তাদেরকে স্পর্শও করত বেশি, এবং সেগুলো তারা প্রকাশ করতেও পারত শিল্পে? পক্ষান্তরে আমাদের এই সময়ে বাংলা মেটালব্যান্ডগুলো অনেক বেশি সমাজবিচ্যুত এবং অ্যালিয়েনেটেড। তাই তাদের পক্ষে এই ক্রাইসিসগুলো বোঝাই সম্ভব না।
জিয়া : আসলে সেই সময়ের শিল্পীরা সমাজের সাথে অনেক বেশি যুক্ত ছিল, এখনকার শিল্পীরা সেইভাবে নাই, — এই কথার সাথে আমি একমত না। বরং আমার মনে হয় যাদের মধ্যে সেই পটেনশিয়াল বা যোগ্যতা ছিল তারা এই মেটাল মিউজিকে আসেনি। কেন আসেনি তার একটা ব্যাখ্যাও আমার কাছে আছে। আসলে ইউরোপিয়ানদের জন্য রক বা মেটাল একেবারে মজ্জাগত জিনিশ, আমাদের কাছে গানগুলো বাইরে থেকে আসা, এবং আমরা স্রেফ সেইগুলোকে অনুকরণ বা ইমিটেইট করার চেষ্টা করি। তাই যারা ঐরকম ভাবনাচিন্তা করার ক্ষমতা রাখে তারা এই গানগুলোর দিকে ঝোঁকেইনি।
মেঘমল্লার : আপনি যখন গানের লিরিক্স লিখছেন তখন তো আপনি একজন কবি, তাই না? তা, যে সারাজীবনে কবিতাই পড়েনি সে কি লিরিক্স লিখতে পারবে!
জিয়া : আমি নিজের কথা বলতে পারি যে আমি ভয়ঙ্করভাবে কবিতা পড়েছি, সেই স্কুলজীবন থেকে কবিতা পড়েছি। আমার সংগ্রহে না-হলেও দুইশ কবিতার বই আছে। এবং আমার ধারণা আমি যাদের কথা বললাম ভালো লিরিসিস্ট হিসেবে তারা সবাই কমবেশি কবিতা পড়তেন।
মেঘমল্লার : কবিতার কথা যখন উঠল তখন জিজ্ঞাসা করি, আপনার সবচেয়ে প্রিয় কবি কে?
জিয়া : প্রথমে বলব শক্তি চট্টোপাধ্যায়। আমাদের গানে কিন্তু শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার লাইনও ব্যবহার করা হয়েছে, ‘হয় না, এভাবে ঠিক হয় না’। তারপর বলব জয় গোস্বামী। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কথা বলব। সুনীল কিন্তু কবিতা খুব বেশি লেখেনি, কিন্তু যা লিখেছে তা খুব দারুণ। আমাদের এখানে আসলে ভালো কবির কোনো অভাব নাই। আমাদের হেলাল হাফিজ বা শামসুর রাহমান আছেন। তারপর আসাদ চৌধুরীর কথা বলি। ধরো, বারবারা বিডলারকে-র মতো কবিতাগুলো নিয়ে তো অনায়াসে গানও হতে পারে। ইন-ফ্যাক্ট শহরতলি তো সেটা করছেও, এটা অনেক ইতিবাচক একটা জিনিশ।
সাবিত : শিরোনামহীনকে অনেকে বলে নাগরিক কাব্যের লেখক। তা এই-যে আপনাদের গানগুলো এই নগরের কাব্য নিয়েই লেখা সেটা কি হয়ে গেছে না এই প্রসঙ্গগুলো নিয়েই লেখার আসলে ইচ্ছা ছিল?
জিয়া : আসলে আমরা প্রত্যেকেই শহরের ছেলে। আমাদের প্রত্যেকের বেড়ে-ওঠা শহরে। আমার তো শিরোনামহীনের হয়ে কন্সার্ট করার আগে ঢাকার বাইরে যাওয়ারই অভিজ্ঞতা ছিল না। কারণ আমার দেশের বাড়িও ঢাকাতেই। কাজেই আমরা তাই নিয়েই লিখব যা আমাদের দেখা। তুমি যা দেখো না তা তো আর আঁকতে পারবা না। এইজন্য আমরা দৈত্য আঁকলেও তার কান দেই, চোখ দেই। কারণ কান না-থাকাটা আমরা কখনো দেখিই নাই। কাজেই আমাদের সবটাই যেহেতু শহরে, কাজেই এই শহরের গল্পগুলোই আমাদের গানে ফিরে ফিরে আসে।
মেঘমল্লার : সেক্ষেত্রে কি একটা ক্রাইসিস থেকে যায় না? কারণ আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় অংশ মানুষ থাকে বড় বড় শহরের বাইরে। কিন্তু সমকালীন গায়কদের বড় অংশই উঠে এসেছে বড় বড় শহর থেকে। এবার আমি যখন ঐ প্রান্তিক মানুষগুলোর জীবনের গল্পকে আমার শিল্পে চাইব তখন তো তা বলার লোক পাওয়া যাবে না, অথবা তা দৈত্যের কান আঁকার মতোই হয়ে যাবে।
জিয়া : আমি একলাইনে একটা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি, ‘শহর মানেই গ্রামের গল্প’। আর আসলে আমি যাই নাই বলে যে অন্যরাও গ্রামে যাচ্ছে না তা কিন্তু না। তবে হ্যাঁ, একটা সংকটের জায়গা থেকেই যায়।
যা-ই হোক, অনেক ধন্যবাদ, তোমাদের প্রশ্নগুলো দারুণ ছিল। আমি খুব উপভোগ করেছি।
- ভোটবুথ, ভূতভোট, বজরঙবলি ও বেবুন - November 26, 2024
- ক্বারী আমীর উদ্দিন সান্নিধ্যে সেদিন || তারেক আমিন - November 20, 2024
- পোয়েট ও তার পার্টনার - October 19, 2024
COMMENTS