ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি খোলে সকাল নয়টা বা দশটায়। কিন্তু সকাল সাতটা থেকে বন্ধ দরজার সামনে লাইন শুরু হয়। এটা প্রথম যখন দেখি, আনন্দে আর বিস্ময়ে বোবা হয়া গেছিলাম। পরে এক বন্ধু আমার ভুল ভাঙাইলেন। বললেন, এটা বিসিএস পরীক্ষার্থীদের লাইন। গাইড বই পড়ার জন্য তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে আসছে। আরেক বন্ধু যোগ করলেন, এদের অধিকাংশই মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। প্রথম বা দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে। সেটা নামকাওয়াস্তে পড়া। আসলে তারা পড়ছে বিসিএস বই। এইটাই একমাত্র বই।
বহুল আলোচিত 12th Fail দেখার পর আমার প্রথমেই এই দৃশ্যটির কথা মনে পড়ল। আশা করি এই সিনেমা দেখার পর বিসিএস-অভিলাষী ঢাবি ভাইবোনেরা রাত্রে ঘুমানোর জন্য হলে ফিরবার প্রয়োজন আর বোধ করবে না! গাইড বইয়ের পাতা থেকে উঠে সরাসরি ক্যাডার সার্ভিসের চেয়ারে বসে পড়বে!
এই দেশে জীবন রাতারাতি বদলানোর জন্য বিসিএস-ভিন্ন আর কোনো বৈতরণী নাই। সত্য বটে, বিসিএস/আইসিএস/আইপিএস পরীক্ষাগুলো ধনীগরিবের জন্য সমান সুযোগ করে দিয়েছিল। কিন্তু সেটা খৃস্টপূর্ব আমলের কথা।
12th Fail দক্ষিণ এশিয়ার সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রেক্ষিতে তেমনি একটা খৃস্টপূর্ব আমলের ন্যারেটিভ। এই সিনেমা দেখলে মনেই হবে না যে, যোগ্য প্রার্থীকে শুধু গাইড বই মুখস্ত করলেই হয় না। বরং তার প্রপিতামহ কোন দলের সমর্থক ছিল, তারও অঙ্ক জানতে হয়। পরীক্ষা সংক্রান্ত দুর্নীতি ইত্যাদি বিষয়ের কথা নাইবা তুললাম। কিন্তু একজন মনোজ কুমার দিয়া পুরা সিভিল সার্ভিস বা পুলিশ সার্ভিস রিক্রুটমেন্ট সিস্টেমকে আইডিয়ালাইজ করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এই সিনেমা মনোজদের যে অধ্যবসায়কে গ্লোরিফাই করে, তাকে না-হয় প্রশংসা করা যায়। কিন্তু যে-আমলাতন্ত্রের দিকে এই ‘অধ্যবসায়’ ধাবমান, তাকে নিশ্চয়ই সবাই হাড়ে হাড়ে চেনেন!
সুমন রহমান রচনারাশি
গানপার ম্যুভিরিভিয়্যু
- ভোটবুথ, ভূতভোট, বজরঙবলি ও বেবুন - November 26, 2024
- ক্বারী আমীর উদ্দিন সান্নিধ্যে সেদিন || তারেক আমিন - November 20, 2024
- পোয়েট ও তার পার্টনার - October 19, 2024
COMMENTS