শামীম রেজা : কাব্যভাষ্যে দক্ষিণের জীবনমাধুর্য || সরোজ মোস্তফা

শামীম রেজা : কাব্যভাষ্যে দক্ষিণের জীবনমাধুর্য || সরোজ মোস্তফা

জগৎ ছোট ও নীরব। সে-জগতে দুপুরের একাকী পাখির মতো আমারা প্রিয়জনকে খুঁজি। প্রিয়জন মূলত নিজেরই প্রতিচ্ছায়া। আমার কাছে শামীমভাই এক অপার বিস্ময়! চিরসুন্দর, ইতিবাচকতার নকিব। সময় ও চারপাশে মহাকাব্যিক আয়োজন নিয়ে বিচরণ করছেন। জগৎ যে সুন্দর সেই সুন্দরের ধারণাটি প্রচার করছেন। বিরুদ্ধবাদীরা দূর থেকে নিন্দামন্দের চিয়ার্স করে। এসব কর্দম হৈচৈ থেকে দূরে শামীম রেজা কবিতার পৃথিবী রচনা করেন, শিক্ষকতার আশ্রম তৈরি করেন। তিনি সবাইকে নিয়ে ভালো থাকতে চান।

কীর্তনখোলার পলিমাখা রূপ নিয়ে বাংলা কবিতায় এসেছেন তিনি। তাঁর কাব্যভাষ্যে দক্ষিণের জীবনমাধুর্য। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, “কবিকে পাবে না তার জীবনচরিতে।” কিন্তু প্রত্যক্ষে-পরোক্ষে নিজের অভিজ্ঞান এবং দৃশ্যমালাকেই আমরা কবিতায় হাজির করি। আত্মার মাধুর্য নিয়ে প্রকাশিত হয় একেকটি কবিতা। কল্পনায় ও ব্যক্তিত্বে তিনি মূলত সাধনাকেই প্রচার করেন। জীবনের পরিসরে জীবনকে প্রচার করেন। বাংলার সারস্বত সমাজে কবি শামীম রেজা আপন আত্মার ধারণাকে, সাধনাকে ব্যক্ত করে যাচ্ছেন। কাব্যিক সৌরভে তাঁর সব আয়োজন বিদ্যাব্রতী মানুষের কল্যাণ করছে।

কবি শামীম রেজা মূলত সহিষ্ণু ও উদার। গাছগাছালির ভেতরে সবুজ একটা গানপাখি হয়ে সবাইকে ভালোবেসে যাচ্ছেন। বরুণপাতার মতো চকচকে উনার মন। সমকালীন সারস্বত সমাজে শামীমভাই ভালোবাসা দিতে জন্মেছেন। একটা বিপুলাকার, বিশুদ্ধ আত্মায় তিনি কবি ও কবিতার সহযাত্রী।

সুবর্ণনগরে আজ অনেক আনন্দ। আজ শামীমভাইয়ের জন্মদিন। কংসের বালুচরে ছোট ছোট করোলাফুলগুলো কবি শামীম রেজার নাম ধরে ডাকছে। ওরা রাত্রির নক্ষত্রের মতো, মোমের মতে জ্বলছে। ওরা শামীম রেজাকে সহোদর ভাবছে । ওরা, একটা ছোট উঠানের ভাইবোন হয়ে আজ ভালোবাসা জ্ঞাপন করছে। কবিকে ওরা ভাবে মেঘালয়-থেকে-নেমে-আসা বৃষ্টিভাই, সবুজ লাবণ্য। শামীমভাই হয়তো কোনোদিন কংসের জলে ভালোবাসার নাও ভাসিয়ে দিতে আসবেন। কংস শামীমভাইয়ের জন্যে অপেক্ষা করে। সাদা শাপলার মতো ভালোবাসা প্রত্যাশা করে।

ভালোবাসা জানবেন কবি, শুভ জন্মদিন!

শামীম রেজার জন্য কবিতা :: সরোজ মোস্তফা


নাম
পৃথিবীতে কিছু নাম মুখস্থ করেছি
কংস নদীটায় কিছু নাম ফেলে দিয়েছি।

মিষ্টি কুমড়ার বীজে
এই মন-মাটি জলের জাহাজে
জীবন মূলত দুই পাখি
আসা-যাওয়ায় পরমের মাখামাখি।

শুভ জন্মদিন শামীমভাই!
শিমুল ফুলের মায়া আর ভালোবাসা জানাই।
.
.
পঞ্চাশের ফুল
পথে পথে ভাঁটফুল চিরকাল ফুটে
একটা ঋতুর পরে হয়েছে তামাটে।

নতুন পাতাকে গাছ নিয়ে নেয় মনে
কবি শামীম রেজাকে রেখেছি যতনে।

কালের সুরমা নদী বয়ে চলে যায়
কবির অনার বোর্ডে কবি থেকে যায়।

বকুল ফুলের সাথে ঝরে মরে যাই
ভাষার মোহর কিছু আমিও কুড়াই।

মনের দ্বিতল পাখি যত দূরে উড়ে
বাসনায় থেকে থেকে একা যায় মরে।

কেউ কারো সাথি নয় নিজের আলাপ
পৃথিবীতে ফুটে থাকে অনেক গোলাপ।

কবির জানাজাপাঠে কবিরা থাকেন
ঈর্ষার সবুজ সর্প দূরেতে রাখেন।
.
.
হাতমুখ ধুয়ে
কোনো উপাধিতে থাকে না জমিন।

যেসব বিকাল ঢুকে গেছে কাচের বোতলে
হিংসুক বৃক্ষ তাদেরকেও নিন্দা করে।

পালঙ্কের দুইপাশে সাজানো একেক বয়সের মুখ
সোনার বালাতে সমর্পিত হয়ে
ইলিশমাছের মতো চুপ করে থাকে।
হাওরের কাদা-জলে গুতুমমাছের মতো
চুপ করে থাকে মেলায় পাওয়া সুখানুভূতি।

ধনুগাঙের ওপারে কিছুটা কার্তিক তবু থাকে।
হাহাকারগুলো শুষে নেয় বাউলগানের কলি।

মাটি গলনের পর
হিজলপাতায় হাতমুখ ধুয়ে
শেষ হয় বিসর্জনের প্রতিমা।


সরোজ মোস্তফা রচনারাশি
নব্বইয়ের কবি, নব্বইয়ের কবিতা

COMMENTS

error: