আমাদের চিন্তাচর্চার ইতিহাস

আমাদের চিন্তাচর্চার ইতিহাস

মৃত্যুর সময় আল্লাহ রূহ কবয করেন এবং যারা জীবিত তাদের রূহও কবয করেন ওরা যখন নিদ্রিত থাকে। অতঃপর যার জন্য মৃত্যু অবধারিত তিনি তার রূহ আটকে রাখেন এবং অন্যদের রূহ এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফিরিয়ে দেন। এতে নিদর্শন রয়েছে চিন্তাশীল সমপ্রদায়ের জন্য।
(সূরা আয-যুমার : আয়াত-৪২)

অতএব, চিন্তা করি। কিন্তু, হায়, সম্ভবত চিন্তা আমাদের গোতেবংশে নেই একেবারেই। কিংবা যারা আমরা চিন্তা করি, দি ডেইলি আমার দেশে বা খর্জুরবীথিকাব্যাকুল দূর্দিগন্তে ভেসে, তাদের নেই চর্চার বালাই বা থাকলেও বিপথগামী চিন্তাচর্চা সমস্তই। আর যারা আমরা চর্চা করি, কী আর বলি, চিন্তাহীনতার চূড়ায় থাকি বলেই এত চর্চার বান ডাকাতে পারি। একটাবারও থমকাই না, পাছার দিকে দেখি না, হাত-দুই দূরের সামনা দেখার বাইরে দূরদর্শী নই আমরা। যার ফলেই হয়তো চল্লিশ বছর যেতে না যেতেই বল্লম-সড়কির খোঁজ করতে হয় আমাদিগেরে। একবারেই, একডাকে, একউদ্যোগে, একবৈঠকে, একযাত্রায় একটা-কোনো রণকার্য সমাধা করতে পারে সেই জাতিই যাদের রয়েছে একটা জাতিগত চর্চাচিন্তার তথা সুষম চিন্তা ও চর্চার বনেদি ইতিহাস। অধিকন্তু, চর্চা যখন করি তখন পরচর্চাই করি, চিন্তা করার বেলায় চুটিয়ে করি কেবল পরচিন্তা বা পরশ্রিচিন্তা বা পরস্বপহরণচিন্তা, আমাদের চিন্তাচর্চার ইতিহাস সংক্ষেপে এ-ই। কিন্তু, করুণাময়, একটাবার আমরা যদি অপরচিন্তা/অপরচর্চা করতাম! পর আর অপর সম্পূর্ণ আলাদা দুই পদ। অপর, অর্থাৎ যা আমার পর নয়, তথা আমিই নিজে, মানে যা আমার। যদি পারতাম, ওই মুহূর্তেই মহরৎ হতো মাইল-মাইল শান্তিকল্যাণের, কয়েকটা শাদাকালো দৃশ্যে একখণ্ড রঙিন চলচ্চিত্র। ঘুম হইতে রোজ জাগি বিহানবেলা, জাগিবামাত্রই শুরু করি হানাহানি। কীচকের মতো কূটচক্রান্ত আর খানেদজ্জালের মতো হানাহানি করতে করতে একসময় ক্লান্ত হয়ে ঘুমাই। কিন্তু ঘুম আমাদের কাছে শান্তিতৃষ্ণার প্রতীক নয়, মৃত্যুর সুবিনীত সৌন্দর্য নয়, যেনবা দুই হানাহানিকাণ্ডের মধ্যবর্তী এক ঊষর অঞ্চলে অবস্থিত কোনো ফ্যুয়েল-স্টেশনের নাম ঘুম। হায়, এই নশ্বর নৃত্যায়োজন, এ মরজীবন! না পারলাম হাউশ মিটায়া ঘুমাইতে, না পারলাম জাগনা রইতে, বেলা তো গড়ায়ে গেল ভাটির দিকে হে! সবই দেখি, কৃপাসিন্ধু ওগো জগদীশ্বর, সবই দেখি তা-না-না-না…

জাহেদ আহমদ / মার্চ ০৫, ২০১৩

COMMENTS

error: