স্তালিন : সিএটি-র একটি মতিভ্রম প্রযোজনা || সিরাজুদ দাহার খান

স্তালিন : সিএটি-র একটি মতিভ্রম প্রযোজনা || সিরাজুদ দাহার খান

১. হঠাৎ আলোর ঝলকানি
সিএনজি থেকে যখন জাতীয় নাট্যশালার গেটে থামি, তখন তাকে প্রেসক্লাবের সামনের সড়ক বলে বিভ্রম হয়। কারণ ওখানে আমার জানা-অজানা বামপন্থীদের একটি প্রতিবাদ সভা চলছিল। উৎসুক মানুষের ভিড়ও ছিল। স্তালিনকে দেখতে উদগ্রীব আমার সদ্যস্নাতক ছেলে সাদমান আগে-থেকে-বুকড-করে-রাখা টিকেট কাটতে এগিয়ে যায়। ওখানেও বেশ ভিড় থাকায় ও কিছুটা সময় পায়। এই ফাঁকে প্রতিবাদী বন্ধুদের কিছু বক্তব্য ওর কানে আসে। প্রতিবাদ সংগঠকদের একজন আমার আপনজন — ফয়জুল হাকিম লালা। আমি নিজেও একসময় লালা এবং ওর বড়ভাই ইমানুল হাকিমের সাথে বাঙলাদেশ লেখক শিবিরের দীক্ষা নিয়েছি। লালাকে হ্যান্ডশেক করতে গিয়েও না-করে পাশ কাটিয়ে যাই। আমি সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে গিয়ে বেশ ক’জন পরিচিত নাট্য-সাংস্কৃতিক ও রাজনীতি-সচেতন মানুষের মুখোমুখি হই। একজন বললেন, বাইরে ‘স্তালিন’-এর বিরুদ্ধে বামপন্থীদের প্রতিবাদ চলছে সত্য বিকৃতির অভিযোগ এনে। ওদের অভিযোগ, এ নাটকে স্তালিনকে একজন নিষ্ঠুর ও যারপরনাই একনায়ক হিসেবে উপস্থাপন করো হয়েছে। এ তথ্য পেয়ে কিঞ্চিৎ বিব্রত ও বিরক্ত হই। ভাবি, এসব বামপন্থীদের খেয়েদেয়ে আর কোনো কাজ নাই! এরপর নাটকে আসলে কী দেখানো হচ্ছে — সেটার একটা আগাম বিবরণ ও ব্যাখ্যা পাই সিএটি-র একজন পুরনো কর্মী ক্ষমা মাহমুদের কাছ থেকে। ওঁর মেয়ে এ-নাটকে পিয়ানোবাদকের নেপথ্য কাজ করছে।

প্রবেশপথে এবং গোটা লবি জুড়ে লাল আলোর আভা আমার ছেলেকে আপ্লুত করে।
তোর কেমন লাগছে?
— অ..অ..সাধারণ!
বাইরে কীসের প্রতিবাদ সভা?
— এ নাটক বন্ধের দাবিতে।
কী কারণ?
— স্তালিনকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করার জন্য। কারণ এটি একজন আমেরিকান লেখকের টেক্সট থেকে অনুসরণ করে লেখা।

এর অল্প সময়ের ব্যবধানে নাটকের সূত্রপাত হয় বাইরের লবি থেকে দোতলায় ওঠার সিঁড়িতে। একজন নারী আর্তনাদ করতে করতে সিঁড়ি বেয়ে নামছেন আবার উঠছেন। আমার কাছে তখন মনে হয়, এটি অভিনবত্বের উদাহরণ সৃষ্টির চেষ্টা এবং পুরো নাটকের মর্মসুর — নিষ্ঠুরতার প্রতীকী উপস্থাপন।

২. মঞ্চের ভেতরে এবং দর্শকদের অনুভূতি
দর্শকে পরিপূর্ণ মিলনায়তনে প্রবেশ করে অভিভূত হই, আমি বাদে প্রায় সবার মাথায় লাল টুপি দেখে। রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষমাণ দর্শকরা দেখতে পান — মঞ্চের এক কোণায় একজনের পিঠে বন্দুক ঠেকিয়ে আরেকজন ঠায় দাঁড়িয়ে আছে, হয়তো-বা হুকুমের অপেক্ষায়।

কিছুক্ষণ পরেই স্তালিনের সচিব (আমার কাছে তা-ই মনে হয়েছে) সাশা টাইপরাইটার নিয়ে প্রবেশ করে। স্তালিন তার বিশেষ চেয়ারে এসে বসেন বিশেষ ভঙ্গিমায়। প্রথমদিকে একটু ম্লান মনে হলেও একটু পরেই তার আসল চেহারা ফুটে উঠতে থাকে। আর আমার চোখে বাইরের প্রতিবাদসভার দৃশ্য ও মুখগুলো ভেসে উঠতে থাকে। নাটক এগিয়ে চলে। স্তালিনের নিষ্ঠুরতা ফুটে উঠতে থাকে ডার্ক সার্কাজমে। মূলত সার্কাজম করতে গিয়ে পুরো নাটকটিকেই একটি হাস্যকর প্রযোজনা বানিয়ে তোলা হয়।

২০/২৫ বছর আগে এ নাটকের নির্দেশক ও ড্রামাটার্গ কামালউদ্দিন নীলুর নির্দেশনায় ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’-এর (বের্টল্ট ব্রেশটের নাট্যরূপ) একটি প্রযোজনা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। সে-আশায় ভর করে ‘স্তালিন’ দেখতে এসেছি। অভিনেতা, নির্দেশক হিসেবে তিনি বাংলাদেশের অগ্রগণ্যদের একজন।

নাটক এগিয়ে যায়; আমার এবং আমার ছেলের হতাশা বাড়তে থাকে। ও নাটকের মান নিয়েও প্রশ্ন তুলতে থাকে আমার পাশে নাটক দেখতে দেখতে। আমি এ নাটকের বিশেষ প্যাটার্ন সম্পর্কে সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু ওর যুক্তির কাছে পরাস্ত হতে থাকে আমার কণ্ঠস্বর। একসময় ও বলে ওঠে — বোরিং!

একই চিত্র প্রতিটি দৃশ্যে। একই রূপ। স্তালিনের ব্যক্তিত্বকে ফানি করা হচ্ছে; মনে হচ্ছে একজন জোকার। স্তালিন মশকরা করছেন তার পলিট ব্যুরোর সদস্যদের সাথে। ক্রুশ্চেভের মাথায় ডুগডুগি বাজাচ্ছেন। বন্দুক হাতে নিয়ে সবাইকে সন্ত্রস্ত করছেন। স্তালিন সভাকক্ষের বাইরে গেলে সবাই তাকে নিয়ে হাসাহাসি করছে। স্তালিনকে নানাভাবে খেলো চরিত্রে পরিণত করা হচ্ছে। আমার কাছেও একসময় নাটকটি নিম্নমানের এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং হাস্যরস সৃষ্টির ব্যর্থ প্রয়াস মনে হতে থাকে। কন্টেন্ট এবং আঙ্গিক — দু’দিক থেকেই। আর নাট্যশালার বাইরের প্রতিবাদকারীদের মুখগুলো ভেসে উঠতে থাকে আমার চোখে। প্রথমে বিরক্ত হলেও আমি মনে মনে বাহবা দেই ওদেরকে। নাটকের নামে শিল্পের স্বাধীনতার নামে যা-খুশি-তাই করার লাইসেন্স কে দিয়েছে সিএটি বা নির্দেশক কামালউদ্দীন নীলুকে!

৩. আমার অনুভূতি
একসময় বিদ্রুপাত্মক কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভাঁড়ামোপূর্ণ নাটকের যবনিকাপাত হয়! পাশে-বসে-থাকা দর্শক যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। পরক্ষণেই পর্দায় ভেসে ওঠে To be continued after ten minuutes. পাশ থেকে দর্শক হতাশ হয়ে বলে ওঠে —  ‘বিরতি! মানে আরও দেখতে হবে! ও মাই গড!’ মনে রাখা প্রয়োজন, এ মন্তব্যকারীই বাইরের আবহ দেখে বলে উঠেছিল — অ..অ..সাধারণ!!

‘দুনিয়া কাঁপানো দশদিন’ যারা পড়েছেন তারা জানেন কত ঘাত-প্রতিঘাত-সংঘাত আর উভয়পক্ষের রক্তপাতের বিনিমেয়ে সোভিয়েতবিপ্লব সাধিত হয়েছিল। এ বিপ্লবের মূল সুর ছিল : সোভিয়েতরাজ বা শ্রমিকশ্রেণির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। এর প্রধান রণনীতি বা রণকৌশল ছিল তৎকালীন শোষক শ্রেণিকে ধ্বংস করা। আপনি কাউকে হত্যা বা ধ্বংস না করে একটি বিপ্লব তো দূরের কথা তথাকথিত বুর্জোয়া সমাজও গড়ে তুলতে পারবেন? না, পারবেন না। আর অক্টোবর বিপ্লবের সাথে সাথেই সোভিয়েত সমাজ বদলে গিয়েছিল তাই-ই বা ভাববেন কীভাবে? আপনাকে তো প্রতিবিপ্লবীদেরকে ধ্বংস করতেই হবে। স্তালিনও তা-ই করেছেন। সাধারণ নিরীহ মানুষ বা গণহত্যা চালিয়েছিলেন এমন প্রমাণ কি আপনি হাজির করতে পারবেন? আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও তো আমরা পাকিস্তানি সৈন্য ও রাজাকারদের হত্যা করেছি। তাই বলে কি আপনি আমাদের মুক্তিযু্দ্ধকে নাজায়েজ ঘোষণা দিতে পারবেন? ৭১-এ আমাদের সশস্ত্র জনযুদ্ধের সময় শত্রুপক্ষকে ধ্বংস করার যেমন পক্ষে যুক্তি আমি তুলে ধরতে পারব, স্তালিনের শাসনামলে তার কিছু নির্বাচিত ধ্বংসকাণ্ডের পক্ষেও তেমনি যুক্তি আছে।

পরিপক্ক একজন নির্দেশক হিসেবে একপেশে চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন জন্যই সিএটি ও নির্দেশক নীলুর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছে। সামনে আরও হবে। স্তালিনকে একজন নিষ্ঠুর ভাঁড়ে পরিণত করেছেন। এটা তার নির্দেশনার দুর্বলতা নাকি স্বেচ্ছাবয়ন তা তিনিই ভালো জানেন। স্তালিনের ২১বছরের শাসনকালে কি কোনোই ভালো কাজ ছিল না দেশের জন্য! সোভিয়েত ইউনিয়ন কি সে-মসয় সাম্রাজ্যবাদী দুনিয়ার ভিত কাঁপিয়ে দেয়নি! মার্কিনিদের বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীকে তিনি ও তার পার্টি জাগ্রত করেননি! সে-সময় সোভিয়ত ইউনিয়নের বুকে লাল ঝান্ডা উড়িয়ে শিল্প-কৃষি, সাহিত্য-সংস্কৃতিতে কি যুগান্তকারী রূপান্তর ঘটেনি!

কামালউদ্দীন নীলু, আপনার ‘স্তালিন’-এ সেসবের ছিটেফোঁটাও নেই কেন? আপনি তো একজন প্রগতিশীল মানুষ বলেই জানতাম। নাকি আপনার অন্তর্জগতে রূপান্তর হয়েছে? না হলে এত স্থূলমানের একটি প্রযোজনা আপনার হাত থেকে সৃষ্টি হলো কীভাবে? নাকি আপনার মতিভ্রম হয়েছে? শুনেছি, সিএটি-র নেপথ্য অর্থদাতাও আছে; প্রণোদনাও আছে। আপনি কি জানেন, আপনার এ নাটক দেখে কত তরুণ শুধু স্তালিন না সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ সম্পর্কেই মতিভ্রমে পড়বে? আপনি যদি তা-ই চেয়ে থাকেন, তাহলে আপনি সফল হয়েছেন বলতে হবে। মুচকি মুচকি হাসতে পারেন। আর নির্মম ও নির্মোহ সত্য প্রকাশ করতে চাইলে বস্তুনিষ্ঠ তথা বস্তুবাদী ব্যাখ্যা উপস্থাপন করুন। স্তালিনআমলের ঝড়ঝাপটাময় দিনগুলোর মোকাবিলার কৌশলগুলো ব্যাখ্যা করুন। বিশ্বযুদ্ধে তার সুদৃঢ় যুদ্ধকৌশলগুলো তুলে ধরুন। আপনি যা করেছেন, তা মার্ক্সবাদ, সাম্যবাদ ও সমাজতান্ত্রিক মতবাদের ওপর পুঁজিবাদের জয়জয়কার হয়েছে; আর কিছুই এখান থেকে নেবার নেই। আপনি ক্যারিশমা দেখাতে গিয়ে নতুন ডিসকোর্সের নামে উদ্ভাবনের নামে উপহার দিয়েছেন সাম্যবাদী শাসনামলের ওপর একটি নির্মম কুঠারাঘাত ও প্রহসন! এ নাটকের মাধ্যমে আপনার অতীত কীর্তি ম্লান হয়ে গেছে; আপনি হয়েছেন শুধু স্তালিন নয় গোটা সমাজবাদী মতাদর্শের শত্রু।

৪. ‘স্তালিন’ সম্পর্কে কয়েকজন বামপন্থীর মন্তব্য
পরপর তিনজনের সংবেদনসঞ্জাত মন্তব্য ও প্রতিক্রিয়া এই রচনার সঙ্গে যুক্ত করে দিচ্ছি নিচে। এই তিনের একজন আইয়ুব হোসেন, পরের দুইজন ক্রমানুসারে বেলাল চৌধুরী ও ফয়জুল হাকিম। সর্বশেষোক্ত মন্তব্য-মূল্যায়নটা কাব্যের আঙ্গিকে এবং উপভোগ্য, যেমন গদ্যাঙ্গিকের অন্য দুইটাও।

স্তালিনের চরিত্রহনন ও অভিজ্ঞ মঞ্চনাট্যকারের মিথ্যাকাণ্ড
জোসেফ স্তালিন মহান অক্টোবর বিপ্লব ও সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠায় অসামান্য ত্যাগ ও অবদান সংযোজন করেছিলেন। ভ. ই. লেনিনের সার্বক্ষণিক সহযোদ্ধা হিসেবে আমরা ইতিহাসের পাতায় তাকে উদ্ধৃত হতে দেখি। লেনিন-উত্তর সোভিয়েত রাশিয়ায় স্তালিনই ছিলেন তার যোগ্য উত্তরসূরী। স্বভাবতই সোভিয়েতের হাল ধরতে হয় তাকেই৷ দায়িত্ব নেবার অল্প কিছুকাল পরে রাশিয়ার ককেশীয় অঞ্চলে ভয়ানক প্রতিবিপ্লবী তৎপরতা শুরু হয়। শাসক হিসেবে যেমন তেমনি গণযোদ্ধা হিসেবেও স্তালিন ছিলেন অদ্বিতীয়। বিশৃঙ্খলাকারী প্রতিবিপ্লবীদের কঠোর হাতে দমন করেছিলেন। এ-সময় সদ্য বিনির্মাণাধীন সোভিয়েত ইউনিয়নকে সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। এজন্য স্তালিনকে অনেকেই স্বৈরশাসক, নিষ্ঠুর বলে আখ্যায়িত করতে চেয়েছেন। যদিও তা ধোপে টেকেনি। সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটার (সিএটি বা ক্যাট) ‘স্তালিন’ শিরোনামে একটি নাটক নামিয়েছে। ২০১৯-এর ১০ জুন ঢাকার শিল্পকলা অ্যাকাডেমিতে এর প্রথম শো ছিল। প্রদর্শনী শেষে তুমুল হট্টগোল। কারণ, নাটকের কাহিনিতে স্তালিনকে লেনিনবিরোধী ও স্বৈরতন্ত্রী এবং নানা পন্থায় খাটো করে উপস্থাপন করা হয়েছে। সোভিয়েত এবং সমাজতন্ত্র আপাতত অপসারিত হলেও এখনো স্বপ্ন দেখা এবং হাল-না-ছাড়া মানুষ কম নেই। অভিজ্ঞ নাট্যকার ও নাট্যপরিচালক কামালউদ্দীন নীলু তা অনুধাবনে অক্ষম — এটা কেউই মানতে চাইবেন না। পরপর আরো দুটি শো প্রতিবাদকারীরা ঠেকাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
[আইয়ুব হোসেন, সম্পাদক, আরজ আলী মাতুব্বর রচনাসমগ্র]

নৈর্ব্যক্তিক ও অবিচল কমরেড স্ট্যালিন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান সেনাদের হাতে বন্দী হয়েছিলেন স্ট্যালিনের নিজের সন্তান ইয়াকভ, যিনি সোভিয়েত লাল ফৌজের লেফটেন্যান্ট পদমর্যাদার অফিসার ছিলেন। তাঁর মুক্তির বিনিময়ে লাল ফৌজের হাতে বন্দী জনৈক উচ্চপদস্থ জার্মান সেনা অফিসারের মুক্তির প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন হিটলার। মহান স্ট্যালিন সে-প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, যুদ্ধের সময় একজন লেফটেন্যান্টের মুক্তির বিনিময়ে প্রতিপক্ষের একজন উচ্চপদস্থ অফিসারের মুক্তি দেয়া যায় না। হিটলারের সর্বগ্রাসী আগ্রাসন থেকে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মানবজাতিকে রক্ষা করার মরণপণ যুদ্ধে স্ট্যালিনের কাছে নিজের সন্তান ছিলেন শুধুই একজন লেফটেন্যান্ট মাত্র। এর বেশি কিছু নয়। আদর্শের প্রশ্নে একজন কমিউনিস্ট কতটা নৈর্ব্যক্তিক ও অবিচল হতে পারেন, এ ঘটনা তারই অনন্য দৃষ্টান্ত।আদর্শনিষ্ঠার এ অসাধারণ ঘটনাকে স্ট্যালিনের নিষ্ঠুরতার প্রমাণ হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করেছে বুর্জোয়া ইতিহাস রচয়িতা ও সংবাদমাধ্যম।
[বেলাল চৌধুরী, সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী ও বিশ্লেষক]

ছদ্ম পুঁজিবাদ
প্রথমে চিনতে পারিনি
চেনাশোনা জানা লোক, কেন পারিনি চিনতে
সে-প্রশ্ন বড় গুরুতর।

ধোপদুরস্ত পোশাকআশাক,মুখে খোঁচাখোঁচা দাড়ি
পুরু লেন্সের চশমা ঝুলে আছে উঁচু নাকে
অনেকটা বুদ্ধিজীবী, অনেকটা গণতান্ত্রিক ঢঙে
ঝেড়ে কেশে বললেন তিনি —
ঠিক হয়নি
ঠিক হয়নি
প্রতিবাদ করাটা
ঠিক হয়নি!

মিথ্যার ঝুড়ি নিয়ে যে-মিথ্যাবিক্রেতা গেল আটদশক
তুলেছিল শোরগোল,
গতকাল দেখা গেল তাকে মিথ্যা বয়ানে
সেগুনবাগিচায়, বাড়ে তার পুঁজির
সুতীব্র ঘ্রাণ …
ভদ্রলোকদের মুখে ঝরে লালা আর শিল্পকলা
ছলাকলামাঝে চলে ইতিহাস হত্যালীলা।

উলঙ্গ উন্মাদ নয় কোনো, পুঁজিবাদের পোষ্য বিড়াল
উঁকি মারে এখন গৃ্হস্থের হেঁশেলে।
প্রথমে চিনতে পারিনি
এখন চিনেছি —
অনেকটা বুদ্ধিজীবী, অনেকটা গণতান্ত্রিক ঢঙে
ছদ্ম পুজিবাদ চলে দুই মুখে।
[ফয়জুল হাকিম। ১৪ জুন ২০১৯ ঢাকা]

পুনশ্চ
কামালউদ্দীন নীলু, আপনি এবং অন্যান্য নাট্যজন প্রতিবাদকারীদেরকে বলেছেন, ‘ওরা শিল্প ও নির্মাতার স্বাধীনতার ওপরে আঘাত করেছে।’ প্রকৃতপ্রস্তাবে সেটা করেছেন আপনি। আপনার নির্মিত ‘স্তালিন’ যেমন বলেছেন, আমি আমার স্ত্রীকে খুন করিনি; আমার স্ত্রীই আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ঠিক সেইভাবে আপনি শিল্প নিয়ে ছেলেখেলা করতে গিয়ে শিল্পকেই আঘাত করেছেন। শিল্পীর স্বাধীনতা মানে ইতিহাসকে একপেশেভাবে উপস্থাপন করা নয়। আমরা নিশ্চয়ই মঞ্চে মুক্তিযোদ্ধাদের নিষ্ঠুরভাবে উপস্থাপন করে পাকিস্তানকে এবং তার দোসরদেরকে জায়েজ করার অধিকার কাউকে দিতে পারি না।

(এ অভাজন একজন প্রাক্তনী। অনুশীলন নাট্যদল, সমকাল নাট্যচক্র, নাগরিক-এর প্রাক্তন কর্মী এবং পাবনার কয়েকটি নাট্যসংগঠনের অন্যতম প্রতষ্ঠাতা। এখনও সক্রিয় দর্শক। লেখাটি একজন দর্শক হিসেবে অনুভূতি প্রকাশ মাত্র; কোনো প্রথাগত ক্লাসিক্যাল নাট্যসমালোচনা নয়)

১৪.৬.২০১৯

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you