১.
আড়ং-এ যারা কেনাকাটা করতে যায় তাদের কাছে ৭৩০ টাকা ও ১৩০৭ টাকা সমান। পার্থক্য খুব সামান্য। এটা টাকার অঙ্ক দিয়ে ধরা যাবে না। কনজ্যুমারিস্ট, প্রোডাক্ট-ফেটিশ সমাজে পণ্যের দাম সাইকোলোজিক্যাল। মোরালিটি বা ইথিক্স দিয়ে দাম নির্ধারণ হবে না।
২.
পোশাকের দাম নির্ধারণ হয় ডিজাইনের চাহিদা অনুসারে। ৫০০ টাকার প্যান্টের দাম ২৫০০ ট্যাগ দিলাম। কেনা বা না-কেনা আপনার ব্যাপার। না কিনলে আপনার জীবন হুমকির মুখে পড়বে না। এটা চাল বা ঔষধ না। ফলে, যা ইচ্ছা দাম নির্ধারণ ঠিক আছে।
৩.
সকল পণ্যের দাম নির্ধারণের জন্য সরকার ডাকাডাকি করলে বুঝতে হবে সমাজের জনগণ নাদান। কোনো পণ্য বাজারমূল্য কত হওয়া উচিত তা যে জনগণ জানবে না , তাদের জন্য যে-কোনো দাম প্রাইসট্যাগে ঝুলানো ঠিক আছে। এখন ৪০৯ টাকার পাঞ্জাবি আপনি ২৪১১ টাকায় কিনতে প্রস্তুত থাকলে আপনার কাছে ১৮৩২ টাকা (ডিসকাউন্টের পর) বিক্রি করা হবে। আপনি কিনে জিতলেন একটা অনুভূতি নিয়ে বাসায় যাবেন। সমস্যা কার?
৪.
আড়ং বর্জন না করে সেই মাপের একটা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলুন। তাদের মনোপোলি ব্যবসার সুযোগ অন্যান্য অক্ষম ব্যবসায়ীরাই করে দিয়েছে।
৫.
ঈদের আগে কোনো প্রতিষ্ঠান ২৪ ঘণ্টা বন্ধ রাখা জায়েজ না। উপপরিচালকের বদলি হওয়ার কারণ মনে হয় যা আইনে নাই তা-ই প্রয়োগ করেছেন তিনি। একটা ব্র্যান্ডের সমূহ ক্ষতি করেছেন। মানে তিনি যেমন আইনের বলে চার লক্ষ ও ২৪ ঘণ্টা দোকান বন্ধের ফরমান জারি করছেন, একই পদ্ধতির আইনের আওতায় তিনি বদলি হয়েছেন মনে হয়। মানে, দুইটার কোনোটাই ঠিক নাই। বেআইনের প্রয়োগের বিচার বেআইনের হইলে তা ঠিক আছে কি না? এমন অপূর্ব আইনের শাসন যারা চালায় তাদের আইন প্রয়োগকে এত বিশ্বাস করতেছে কেন জনগণ?
৬.
মধ্যবিত্ত হলো দুনিয়ার বিশ্বছোটলোক ঘরানা। মধ্যবিত্ত একটা মানসিক দশা, আপনার পকেটে কয় টাকা আছে তার সাথে এর সম্পর্ক নাই। আড়ঙের লয়াল কাস্টমার হলো এই মধ্যবিত্তরা। যে-কোনো বিপ্লবই তাদের পক্ষে যাওয়ার মতো দেখা গেলে তারা তাতে সমর্থন দেয় কিছু না-বুঝেই।
৭.
আড়ং বিক্রিত পণ্যের কোয়ালিটি কেমন? তাদের পোশাক কতবার ধোয়া যায়? প্রথম ওয়াশের পর রং উঠে যায় কি? রোদে শুকালে ঝলসে যায় কি? শিশুপোশাকে সেফটি মানা হয়? তাদের শিশুপণ্যে পিন ব্যবহার করতে দেখেছি। বড় কথা তাদের পোশাকে যে ডাইস ক্যামিক্যাল, এক্সেসরিজ, ইলাস্টিক ইউজ হয় তাতে অ্যাজো, ফর্মালডিহাইড, লিড ইত্যাদি আছে কি না তা সরকারবাহাদুর টেস্ট করছেন কখনো? এগুলো টেস্টের ব্যবস্থা আছে। দেশীয় পোশাকের কোয়ালিটি নির্ধারণের সরকারি নীতিমালা কি? পণ্যের মান পণ্যের দাম না, তার কোয়ালিটি।
৮.
আপনি আড়ঙের যে সালোয়ার বা পাঞ্জাবিটি পরেন তা যারা উৎপাদন করেছে তারা কেমন পরিবেশে কাজ করে তা নিয়ে ভেবেছেন? যে-সমস্ত গৃহকারখানা থেকে আড়ং পণ্য আউটসোর্স করে সেখানে কম্প্লায়ান্স মানা হয়? দরিদ্র ওয়ার্কাররা ন্যায্য মজুরি পায়? তা নিয়ে নীতিমালা কী? তারা তাদের কতক্ষণ ছুটি দেয়? দুপুরে খেতে দেয়? শিশুশ্রম?
৯.
আড়ঙের এন্ড-কাস্টমার ৭৩০ টাকার জিনিস ছয়দিন পর ১৩০৭ টাকায় কিনলে তেমন কোনো সমস্যা না। তাদের ৬০০টাকা বেশি দামে পোশাক কেনা তেমন গুরুত্বপূর্ণ কোনোকিছু না। কিন্তু জনগণ এগুলো পছন্দ করে। অথচ, কথা বলা দরকার আড়ঙের সাপ্লাই চেইন ও কোয়ালিটি নিয়ে। ব্যাকওয়ার্ডের অন্য পাজেরগুলো ঠিক আছে নাকি তারা এগুলো চিন্তা করেন না।
১০.
দুনিয়া চলতেছে পপুলারিস্ট কায়দায়। মানে, কোনো ফ্যাক্টকে এমনভাবে উপস্থাপন করো যেন জনগণ বাহবা দেয় তোমার পদ্ধতি যা-ই হোক না কেন। আড়ং এমনই এক ঘটনা।
১১.
সরকারি কর্মকর্তা, প্রজাতন্ত্রের চাকরদের হিরো বানাবেন না। উপপরিচালক নিয়ে এত বাহবার কিছু নাই। তিনি তার কাজ দায়িত্বশীলভাবে করতে পারেন নাই বলে মনে হয় আমার। তিনি পপুলারিস্ট। পপুলারিস্টরা মূল জায়গায় যেতে পারে না বা যেতে চায় না। তিনি হিরো হতে চান, এটা সমস্যা।
১২.
উপপরিচালকের বদলির ভেতর দিয়ে দেশে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা পরিচালনার আস্থা পাবে। ফলে, মধ্যবিত্তের খারাপ লাগলেও, দীর্ঘমেয়াদী হিসাবে সরকারের সিদ্ধান্ত ঠিক আছে। যে-কোনো পপুলারিস্ট হতে-চাওয়া সরকারি কর্মকর্তাকে প্রতিরোধ এখনই করা না গেলে পরবর্তীতে বুঝবেন এরা কারা।
… …
- কায়মাসুদ : মাসুদ খানের জড়সাধনা || মৃদুল মাহবুব - February 15, 2020
- মুখোমুখি গুন্টার গ্রাস || মৃদুল মাহবুব - January 6, 2020
- হেমিংওয়ে, তোমার চিঠি এসেছে || মৃদুল মাহবুব - December 15, 2019
COMMENTS