কারে কয় সিনেমা, কারে-বা নাটক, কাব্য কাহারে বলে, এবং উপন্যাস ও ছোটগল্প, সম্যক অবহিত নই জিনিশগুলো নিয়া। ঠাকুরও বড় সখেদে বলেছিলেন, বড্ড যাতনাবশত, সখি সিনেমা কাহারে বলে, সখি নাটিকা কাহারে বলে, তোমরা যে বলো দিবস-রজনী সিনেমা-নাট্য-কবিতা, সখি সিনেমা কাহারে কয়, সে কী কেবলি নাটকময়? এইটুকু গৌরচন্দ্রিকা, ঠাকুর সমীপে একটা আরজ গোজার করিয়া রাখি এই সুযোগে, বা-আদাব রবিকিরণের কিয়দংশ উলটপালট করবার অধিকার শিশু ও উন্মাদ সকলেরই রয়েছে এমনকি রিয়্যাকশ্যন্যারি বেঙ্গলেও। তবে বেশি বিটলামো করতে যেও না বাবা, মাইর খাবা, মাইরের মধ্যকার ভাইট্যামিন্ সবাই ঠিক হজম করতে সমান পারঙ্গম নয়। আজ্ঞে, তথাস্তু।
কথা হচ্ছে, ছেলেবেলায় জ্যামিতিশিক্ষার সময় একটা বাইপাস্ আমরা সকলেই শিখে এসেছি পরীক্ষার পেপারে সম্পাদ্য-উপপাদ্য সুচারু অঙ্কনের জন্য। গণিতগুরুরা আমাদেরে এই চিকন কৌশলগুলো কখনোই শিখাইতে চান না, আমরা নিজেরাই নিজের গরজে ঠেকে শিখি। কী ছিল কৌশলমালা? ব্যাপারটা অ্যাজ্ সিম্পল্ অ্যাজ্ ব্যাঙের পরিপাকতন্ত্র। ওইটা কি সরলাঙ্কন? কৌশল জানলে হ্যাঁ, আদারোয়াইজ্ অ্যাজ্ কমপ্লেক্স অ্যাজ্ সরল অঙ্ক, প্যাঁচস্পাইরাল্ জট্টিল। প্রদত্ত কোণ ও অন্যান্য কন্ডিশনগুলো মূল সম্পাদ্য/উপপাদ্য অঙ্কনের পরে এঁকে সেই মোতাবেক বর্ণনাবিবরণী লিখিও। এন্ডপ্রোডাক্ট আগে, প্রোসেস্ ডক্যুমেন্টেশন্ পরে।
সেল্যুলয়েডের বই দেখার সময় সিনেমা কোনটা আর নাটক কোনটা ক্যাল্কুলেশন্ করতে যেয়ে সেই অ্যা-প্রায়োরি বিশেষ কাজে দ্যায় দেখেছি। নিদেনপক্ষে এইটা আমার ক্ষেত্রে সত্যি তো বটে। একটু সবিশদ বলি। জিনিশটা এই-রকম যে, একটা ম্যুভি, সিনেমা বলি এখানে, কিংবা ছায়াছবি বা বইও বলতে পারি, দেখার সময় হামেশা হিসাব করি যে এই জিনিশটা বাংলাদেশ টেলিভিশনের একটা কামরাবদ্ধ সেটে দেখানো/বানানো সম্ভব ছিল কি না। দেখিয়া-শুনিয়া কড়ে-আঙুলে গুণিয়া যদি মনে হয় যে হ্যাঁ এই জিনিশ অল্প জনবল অল্প অর্থলগ্নি অল্প পরিশ্রম অল্প উদ্যোগ ও অনায়াসে একটা নাটকেও সম্ভব হতো উন্নয়ন বা বাংলায় যাকে বলে ডেভেল্যপ্ করা, তাহলেই প্রাইমারি ডিসিশন্ মেইক্ করে ফেলি যে এইটা ছায়াছবি/সিনেমা হয় নাই। তিন পয়সার পালায় কিংবা আড়াই টাকার কবিতায় যে-জিনিশটা ভালো ফোটানো যাবে/যায় সেই জিনিশের জন্যে কেউ যদি মিলিয়ন ডলার তঙ্খা খর্চে লিনিয়ার/ননলিনিয়ার ন্যারেটিভের ম্যুভি বানায় তাইলে কেমন লাগে তখন বলেন দিকি?
বিবেচনাটা ন্যায্য হলো? নো, হলো না, বিবেচনাটা জাস্টিস্ হলো না। আমার ম্যুভিশিক্ষিত বন্ধুরা আইজেনস্টাইন্ বা জাঁ ল্যুক গ্যদার থেকে রেফ্রেন্স টেনে এনে বেজায় চেষ্টা করেছেন আমারে একাট্টু-অল্পবিস্তর সিনেমালিটারেইট করে তুলতে, একই পন্থায় নাটকশিক্ষিত বন্ধুরা স্তানিস্লাভস্কি ইত্যাদি থেকে ডেফিনিশন্ উগরে এই গোবেচারারে চেষ্টা চালিয়েছেন যৎকিঞ্চিৎ নাট্যাভিজ্ঞ করে তুলতে, এদের চেষ্টাগুলো খুলনাঞ্চলের বাদাবনে এখনও রোদন করে ফেরে ভাওয়ালঘন সন্ধ্যান্ধকারে। এ-জীবন কমনসেন্সের ঘাটতি নিয়াই নিঃশেষ হতে চলেছে, সেজন্য দুঃখেরও শুমারসীমা নাই অবশ্য, ভেবে লাভ নাই নিবারণ পণ্ডিতের ধাঁধাচার্য হবার নসিব থেকে কেন-বা আল্লা আমারে ডেপ্রাইভ করলেন। করার নাই কিছুই, নিঃস্ব ও তলাবিহীন ম্যুভিচিত্রের এমন দেশটি, নিদেনপক্ষে এই পৃথিবীর লাঞ্ছিত ভাগ্যবিড়ম্বিত দর্শকদের দেখা পাওয়া যাবে এই সিনেমাডাঙায়, এই বাংলায়, বলা বাহুল্য।
যদিও ২০০৩ সনের সিনেমা, ‘আধিয়ার’ (Adhiar) , আমার দেখতে দেখতে লেগে গেল ২০১৫ অন্তিম মান্থ পর্যন্ত। “কপাল আমার মন্দ তাতে সন্দেহ কি / চোখ বুজলেই প্রিয় শুধু তোমায় দেখি” — শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতালাইন্স। সংগত কতিপয় কারণে যে-সহজতায় হিন্দি/ইংরেজি সিনেমা লাভ করি বিভিন্ন সূত্রে, সেই সহজতায় বাংলা রাজেন্দ্রাণীর প্রাপ্যতা আজও সুনিশ্চিত করা যায় নাই। কিছুদিন আগে টেলিভিশনের কথানুষ্ঠানে এক নাট্যাভিনেতা-কাম্-ম্যুভিডিরেক্টর অত্যন্ত গুরুগম্ভীর যুক্তিবিস্তারণপূর্বক মন্দ্রসপ্তক-তারসপ্তক গলায় এস্তেমাল করে বলছিলেন বাংলাদেশের শিক্ষিত সক্কলে যেন ম্যুভিগৃহে যেয়ে একটা সাংস্কৃতিক বিপ্লবীর জোশ নিয়া বাংলাবই দেখেন, উনি যুক্তিবিজ্ঞ কথা চালাতে চালাতে এক-পর্যায়ে হ্যাংলার মতো সকরুণ অনুনয় জানাচ্ছিলেন টিকিট কাটিয়া তার বানানো ম্যুভিটা না-দেখলে নাকি বিকাশ ভেস্তে যাবে পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবির, শুনিয়া আমার নয়নে পানি এসে গেছিল।
ম্যুভিগৃহে যেয়ে বই দেখার বাইরেও বর্তমান আজব কলের জমানায় বিচিত্র ভার্চুয়্যাল্ বটতলা হাজির হয়েছে, তেলেসমাতি কাণ্ডকারবার, সেইসব স্কোপের সঙ্গে কোপ্-আপ্ করে নেবার চিন্তাটা বাংলারাণী কবে করবেন মৌলা মালুম। ম্যুভিপ্রেক্ষাকামরায় যেয়ে বই দেখার ব্যাপারটা ছাড়াও বর্তমানে নানান কায়দায় ক্যাপিট্যাল্ রিটার্নের বন্দোবস্ত রয়েছে। এইসব ভালো অবগত নই আমি, কিন্তু অলমোস্ট আন্দাজেও কতিপয় বিষয় ‘আইডিয়া’ করে নেয়া যায় নিশ্চয়। একটা ব্যাপার তো দেখতেই পাই চোখের সামনে যে, একটা আংরেজি/হিন্দি ইভেন্ তামিল্-তেলেগুও সম্প্রতি বক্সঅফিসে মুখ-থোবড়ানো ফ্লপ্ ম্যুভিটা থেকেও লগ্নি উঠিয়ে এনে একটা সার্টেন্ অ্যামাউন্ট অফ মানি মুনাফাও করে নেয় এবং পরবর্তী প্রোজেক্ট চক্-আউট করবার হিম্মৎ জুটিয়েও নেয় রীতিমতো। অবশ্য আমরাও পথ একটা চিনেছি ইদানীং, সিনেমা/নাটিকা বানায়ে ফেস্টে নিয়া যাওয়া পার্শ্ববর্তী বিদেশ হইতে বিদেশান্তরে। অ্যাফ্রেইড আমি এই ব্যাপারে যে কবে ফেস্টওয়ালারা বাংলাদেশী সিনেমার জন্য কড়াকড়ি আরোপের চিন্তা আরম্ভ করে দেয়। বালাই ষাট! আমাদের হুজুগই তো সম্বল।
ঘটনা হচ্ছে, একটা নাটক দেখেও অনেকসময় আমরা সাধারণতর দর্শকেরা বলাবলি করি যে, হ্যাঁ, এইটা ভাই সিনেমার মতো হয়েছে, এক্কেরে সিনেমাই হয়েছে! একইভাবে সিনেমা দেখেও বলিয়া থাকি হামেশা, আরে ধুর, নাটকের জিনিশপত্রও এরচেয়ে ভালো ব্যাটা! বালের পয়সাটা পানিতে গেল, ধুর! আমার মনে হয়, এই লাইনে একটা ভালো সুরাহা পাওয়া যাবে সিনেমা নিয়া রাবীন্দ্রিক তরিকার বা চিশ্তিয়া লাইনের মাথাব্যথার। উপশমের পথটাও জরুর মিলিবে এই রোডে। কে শোনে কার কথা, কে দেখে কারে, খালি টিভিনাট্যাভিনেতা-কাম্-পরিচালক অথবা কবি-কাম্-অভিনয়শিল্পীর এই দেশে দেখাদেখি-শোনাশুনির বেইল্ নাই মিয়াঁ! আজ্ঞে, হ্যাঁ, সেইটাই। কিন্তু, তবুও, ‘মন মানে না বৃষ্টি হলো খুব’ — উৎপলের লাইনের চিন্তা। খালি বিদেশী চিন্তা, তা-ও উন্নতিটা আমাদিগের কে যে আটকায়ে রাখে এত কঠিন কূটকৌশলে! তারে ধরতে পারলে, সাঁইজিরই ন্যায়, বেড়ি দিয়া বান্ধিয়া রাখিতাম তায়।
আসল আলাপে ফেরা যাক। নকল আলাপ নিপাত যাক। ‘আধিয়ার’ দেখে এইসব ‘ফালতু’ কথাবার্তা আমার মনে ভ্যারভ্যার করছিল কয়দিন ধরে (এই ‘ফালতু’ বঙ্গীয় কবিসাহিত্যিকদিগের সাম্প্রতিক চর্চার সিরিয়াসধারা ‘ফালতু’ না, লাইটার ‘ফালতু’ এইটা)। ভ্যারভ্যারির অল্পই বিবরণে ব্যক্ত, অধিকাংশ গুপ্ত রইল। সবকিছুই ভালো, ম্যুভিটার, তবুও কোন শয়তানের অসোয়াসায় এত নাটকের কথাবাত্রা মনে আ’লো! লো পোড়ারমুখো, তোর আর আক্কেল হলো না ঠাকুরজি! কিন্তু সত্যি, জ্যোক্স অ্যাপার্ট, সিনেমাটা/নাটকটা নানা দিক থেকেই সিগ্নিফিক্যান্ট কিছু করিৎকর্মাচার চোখের সামনে এনেছে। সেল্যুলয়েডে, বাংলাদেশে, টেক্নিকগুলো মুনশিয়ানার সঙ্গে হ্যান্ডল্ করা হয়েছে। এর বিবরণ, মম পর্যবেক্ষণের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা, আরেকদিন দেয়া যাবে। এমনিতে এর কাহিনিটা আমাদের অঞ্চলের ইতিহাসছাত্র থেকে শুরু করে মেছো-মুচিও অবগত গত শতকের মধ্যপর্ব থেকে। এবং ম্যুভি/টিভিপ্লেটা যেহেতু বক্তব্যধর্মী গল্প বয়ন করে গেছে আগাগোড়া, কাজেই জিনিশটা মাথায় ঘোঁট পাকায়েছে যে একটা জানা কাহিনির কোথাও কোনো নতুন উদ্ভাস না দেখিয়ে এত পয়সা খর্চে এই সিনেমাখ্যান না-ফাঁদলেই হতো না? আমরা তো অজয় ভট্টাচার্য প্রমুখের নানকার বিদ্রোহ প্রথম-দ্বিতীয়-তৃতীয়খণ্ড অথবা একই নামের লেখকের তেভাগা আন্দোলন নিয়া নানাবিধ দুর্বল বুনটের উপন্যাসে এই কিসিমের কাহিনি একই অভিন্ন বয়ানে সেই কিশোরকাল থেকেই পড়ে আসছি। হাজার তিরিশেক টাকা ব্যয় করে একটা সাড়ে-চারফর্মার কাগুজে বই লিখে একই জিনিশ হাজির করানো অসম্ভব ছিল না। বা, আরও অল্প খরচে, এমনকি নিখর্চায়, একটা সাতাশ লাইনের কবিতা লিখে ফেসবুকে ট্যাগ দিলেও অভিন্ন বস্তুই সৃষ্টি হতো।
বলতে চাইছি এই কথাটাই বিতং করে যে, সব ফুলে যেমন পূজাআচ্চা হয় না, সব কাহিনি দিয়া ছায়াছবিও হয় না। যা সম্ভব অনায়াসে আরও অধিকতর স্ট্রেন্থ নিয়া হাজির করানো অন্য কোনো স্বল্পব্যয়ী কিংবা ব্যয়সাশ্রয়ী মিডিয়ায়, এক্সপেন্সিভ-মিডিয়া ছায়াছবি মহারাণী যেন উহা প্রারম্ভেই পরিহার করতে শেখেন সত্বর, এ-ই আমাদের অন্তরের অন্তস্থল হইতে ব্যাকুল অনুরোধ। গোস্তাকি নিয়েন না, ছায়াছবি প্রিয়তমা! আমরা আপনার সর্বাঙ্গীন উন্নতি চাই এবং চাহি অনিন্দ্য সুন্দর সুরতে দেখিবারে আপনার উপস্থিতি বিশ্বময়দানে এবং স্বীয় কুটিরেও।
যদিও বলা হয় নাই, বিলম্বে হলেও বলি, সিনেমার স্ট্রং অনেকানেক দিক রয়েছে। এর অভিনয়, এর সংলাপ, এর আলো, এর অন্ধকার, এর শীত, এর সকাল-দুপুর-সন্ধে এবং বিশেষভাবেই এর রাত্রি ভীষণভাবেই প্রশংসা পাবে আমার কাছ থেকে। এর সাউন্ড সুশ্রাব্য। সংগীত যথেষ্ট প্লটানুগ, গল্পসময় এবং চরিত্রস্ফুটনের সঙ্গে বেশ সাযুজ্যপূর্ণ সংগীতাবহ। ক্যামেরার কাজ ভালো, দুর্দান্ত সিনেমাটোগ্র্যাফি — প্লিজ্ আপা, সাহিত্যিকদের সৃজনশীল সাংবাদিকতাবাহিত ম্যুভিক্রিটিক বনিয়া যাইতে বলবেন না আমারে, এইসব অসাধারণীকরণ আমারে দিয়া আর হইল না ইহকালে। শুধু কোনোভাবেই যা আমি মানতে পারব না, হাজার টাকা আশ্রফি দিলেও চুপ থাকব না, ব্যাপারটা গ্রামের লোকসংখ্যাজনিত সমস্যা। আমাকে বলতে দিন হুজুর! এত অল্প লোক লইয়া বাংলার গ্রাম, হাটবাজারেও সুশীল সমাজের বাতানুকূল ঘুঙুরপরা শান্তিস্নিগ্ধ চুপচাপ লোকজন, সভ্যতার আশ্চর্য নিদর্শন! ম্যুভির লোকেশনগুলো, সোজা বাংলায় বিস্তীর্ণ ধানফিল্ড বা প্যাডিক্ষেত, সত্যিই বিউটিফ্যুল্। তবে এগুলো অধিকতর জঙ্গমপূর্ণ হওয়াটা বাস্তবিকই ডিফিকাল্ট ছিল কি? বৃষ্টি কি হয়েছিল ম্যুভিতে? এইটা আসলেই ইয়াদ করে উঠতে পারছি না এখন। অসুবিধা নাই, বৃষ্টিবিহীন শস্য-ফলানো ম্যুভিও দুইয়েকটা থাকুক আমাদের।
এইবার একটা কাজের কথা পেড়েই বিদেয় হই। শিল্পী লিঙ্কন নামে একজন অভিনয়শিল্পী সিনেমাটায় নারী ক্যারেক্টারগুলোর মধ্যে লিডরোল্ করেছেন (যদিও বাংলাদেশের আধাখেঁচড়া আইএমডিবি/বিএমডিবি বা বাংলা ম্যুভি ডাটাবেইজের নামে একটা আজব পেইজ্ আছে, সেইখানে ‘আধিয়ার’ সংক্রান্ত তথ্যপত্রে বেচারির নামনিশানাও গরহাজির দেখা যায়)। এই মানুষটাকে সেই-সময়, নাইন্টিজের লাস্টের দিকে, টেলিভিশনে এবং পত্রপত্রিকার সাপ্তাহিক বিনোদনপাতায় বেশ ভালো ও উল্লেখযোগ্য নজরে পড়ত। উনি টিভিফিকশনে অ্যাক্টিং করতেন বেশ নিয়মিত। ২০০৩ সালে ‘আধিয়ার’ রিলিজের আগে একটি নিউজ্ হয় একদিন যে ইম্যার্জিং অভিনেত্রী শিল্পী লিঙ্কন নিখোঁজ। উনার স্বাভাবিক সাবলীল সরল অভিনয় বেশ লাগত বলে এরপর বছরখানেক খোঁজ রেখেছিলাম সংবাদের ফলোআপগুলো। অনেকদিন বিরতি দিয়ে এক-দুইটা নিউজ্ হয়েছিলও পত্রিকায় যে লিঙ্কনের কোনো হদিস পাওয়া যায় নাই মর্মে। এরপর অনেক বছর গড়ালেও সম্ভবত উনার খোঁজ আর পাওয়া যায়ই নাই। কিন্তু আমি ঠিক নিশ্চিত নই যে এই ব্যাপারটার সুরাহা হয়েছিল কি না পরবর্তীকালিক কোনো অনুসন্ধানী রিপোর্টে। এমন হওয়া বিচিত্র নয় যে বেচারিকে ভুলেই গিয়েছে সবাই। অন্তত এই জিনিশটা, এই নিবন্ধটা, ড্রাফট করার সময় সার্চ দিয়া তন্নতন্ন খুঁজেও ওই অভিনেত্রীর কোনো ফোটোগ্র্যাফ কোনো পুরনো প্রতিবেদনসূত্র পেলাম না; ‘আধিয়ার’ সিনেমার দুটো পোস্ট্যার ছাড়া আর কোথাও শিল্পী লিঙ্কন নামের অভিনয়শিল্পীটির কোনো উপস্থিতি নাই। বিষয়টা খানিক রহস্যপূর্ণ মনে হলো, তবে যেহেতু অনেকদিন/একযুগ আগের ঘটনা, আরও খোঁজ নিয়া ব্যাপারটা জানা যাবে নিশ্চয়। বিশেষত ওই সময়ের বিনোদনবিটের সাংবাদিকদের শরণাপন্ন হলে একটা আপডেট পাওয়া যাবে।
সে-না-হয় দেখা যাবে খন, পরে কখনো, বর্তমানে শেহনাই বাজিছে বিদায়ের, ডুলিরা হাঁক পাড়ছে এথা-ওথা, নিয়া যাবার পাল্কি এসে দাঁড়ায়েছে দুয়ারে, বেহারাদের হুহুম্না আওয়াজে ভারী জীবনের মধ্যযাম, যখন-তখন লাইফ দেখায়ে দেবে লালকার্ড তার, আচমকা যাইতে হবে পেনাল্টি কিকের মওকাটা না-নিয়াই জীবনের শোর-মাচানো ময়দান ছেড়ে। এদিকে যতটা আন্দাজ এবং হিসাবকিতাব, তাতে মনে হচ্ছে না বাংলাদেশের নয়া ছায়াছবিপ্রবাহ স্বচক্ষে হেরিয়া অ্যাডিয়্যু বলতে পারব। তবু মনে রেখো, মনে রেখো, ভরসা আমরা রেখে গেছি দিনের-পর-দিন মাসের-পর-মাস বছরের-পর-বছর এইসব ডুব-অজ্ঞাতনামা-হালদা-আধিয়ার নামে একাদিক্রমে বেরোনো বোকাবাকশের ফিকশনের ন্যায় সিনেমায়। দিন তো ফিরবেই, দিন যদ্দিন অভিধানে আছে তদ্দিন আশা তো মরছে না, আমি ফিরব না তাতে দুঃখ নাই, কিন্তু দিন যেন ফেরে। একদিন ফিরবেই দিন বাংলাদেশজ নয়া সিনেমার।
Film Title: Adhiar ।। Released Year: 2003 ।। Genre: Drama, History ।। Duration: 1 h 30 min ।। IMDb Score: 6.0/10 ।। Director: Saidul Anam Tutul ।। Stars: Litu Anam, Raisul Islam Asad, Pijush Bandyopadhyay, Champa, Ramendu Majumdar, Mamunur Rashid, Shahidul Alam Sachchu, A.T.M. Shamsuzzaman ।। Music Score: Alauddin Ali
রিভিয়্যুপ্রণেতা : জাহেদ আহমদ
… …
- ‘সাক্ষী ছিল শিরস্ত্রাণ’ : পড়ার পিপাসা - February 27, 2025
- প্রতুল স্মরণ - February 23, 2025
- বাত্তির রাইত - February 15, 2025
COMMENTS