আড়িয়াল খাঁ : আরবার পড়বার ইচ্ছা || সত্যজিৎ সিংহ

আড়িয়াল খাঁ : আরবার পড়বার ইচ্ছা || সত্যজিৎ সিংহ

পরপর দুইবার পড়লাম ‘আড়িয়াল খাঁ’। মাসরুর আরেফিনের উপন্যাস। তৃতীয়বারও পড়বার ইচ্ছা আছে, তবে এখন না, যাক আরো কিছুদিন। যা পড়েছি, তা নিয়েই কিছুদিন থাকি না কেন!

‘এইটা অদ্ভুত, ব্যতিক্রমী, ভিন্নধারার, ইতিহাসে এই প্রথম’ … ব্লা ব্লা ব্লা — এইগুলা ক্লান্তিকর। প্রচণ্ড বিরক্তিরও। আমার মনে পড়ে যায় সেলিম আল দীনের ‘কীর্তনখোলা’ পড়বার দিনের কথা। পড়তে পড়তে বারবার বলছিলাম, কেন এইটা নাটক হবে! এইটা উপন্যাস কেন নয় (তখন নাটককে উপন্যাস-গল্পের পরবর্তী ধাপে রাখতাম কিনা! হা হা হা! এখন আর এইসব মনে হয় না)… কী যে ঘোরলাগা সংলাপ আর গদ্য ছিল সেইটা! মনে আছে কয়বার পড়েছি এ পর্যন্ত? ৮ বার সম্ভবত। তবু ক্লান্তি নাই।

এখন যদি বলি ‘আড়িয়াল খাঁ’ — শুধু উপন্যাসে কেন আটকে থাকবে! কেন এইটা দীর্ঘ কবিতা হতে পারে না! বলবার সে-সাহস কী আমার আছে! মনে হয় আছে, সে-সাহস লেখক প্রতিষ্ঠা করেছেন। এখন যদি বলি কোনটা উপন্যাস আর কোনটা দীর্ঘ কবিতা — তার কি কোনো নিয়মাবলি আছে? আছে কোনো শর্তাবলি? এখন যদি বলি লেখক মনে করতেছেন, বাংলা উপন্যাস সাবালক হয় নাই। এইজন্য কী তিনি ১২ বছরের জাহেদকে দিয়ে বলাচ্ছেন, পৃথিবীতে সত্যমিথ্যা বলতে কিছু নাই! ইংল্যান্ডের এক হোয়াইট ছেলে যদি বলতে পারে পৃথিবী একান্ত তার, তখন বুরকিনা ফাসোর একটা লোক একই কথা কেন বলতে পারবে না ‘পৃথিবীটা তারও’? তার বোন পারভীন প্রেমিককে দিয়ে সেক্স করাবার জন্য যখন রাজা কনডম খোঁজে গঞ্জের দোকানে, কেন সেইটা জেনেও ১২ বছরের জাহেদ মনে করে তার বোনের কোনো দোষ নাই! কেন মনে করে!

শুধু গদ্যের ঠমকঠামক আর ভারী শব্দের অলঙ্কার দিয়ে কেবল উপন্যাস হয় না। ভারী অলঙ্কার আবর্জনাও হয়ে যেতে পারে। হয়েছেও। নজির তো কম নয়। মাসরুরের ‘আড়িয়াল খাঁ’ আসলেই আলাদা। আপনার চিন্তাভাবনা যদি আলগা এবং হোঁচট-খাওয়া না থাকে তাহলে এ-বই আপনার দরকার নাই।


সত্যজিৎ সিংহ রচনারাশি
গানপারে মাসরুর আরেফিন

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you