এবি দ্য ইরিপ্লেইসেবল || মৃদুল মাহবুব

এবি দ্য ইরিপ্লেইসেবল || মৃদুল মাহবুব

আইয়ুব বাচ্চুরা হলেন টেপরেকর্ডার আমলের শিল্পী। ৩৫ টাকায় গানের ফিতা পাওয়া যেত। বন্ধুদের হাত বদল হয়ে হয়ে এগুলো শোনা হতো। একই ক্যাসেট ফ্রেন্ডসার্কেলে একজন কিনত, ঘুরে ঘুরে চলত। দেখা যেত যে একজনের বাসায় ১২টা গানের একটা ফিতা টানা পাঁচ/সাত‌দিন চলত, এইভাবে একেকজনের বাসায় হাতফেরতা হতো একই ফিতা। গান শুনতে শুনতে মুখস্থ হওয়ার পরই এক বাসা থেকে বের হয়ে অন্য বাসায় ঢুক‌ত ফিতাটা। তারপর আবার আরেকজনের বাসায়। এমনই বহুব্যবহৃত হতো টেপগুলো।

এই-যে বারবার শোনার মধ্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যাপার আছে। আপ‌নি যার কণ্ঠ বারবার শুনবেন তার প্র‌তি আপনার এক্সট্রা প্রেম জাগ্রত হবে। বাচ্চু বা সমসাম‌য়িক ব্র্যান্ড শিল্পীরা তেমনই বহুশ্রুত। ফলে, তাদের ভুলতে হলে বাংলাগান থেকে আমাদের আগে-পরের একটা একটা মোট তিনটা প্রজন্মের ক্ষয় লাগবে। সে-হিসাবে আ‌মার মনে  হয় বাচ্চুর গানের অনুরণন অন্তত আরো পঞ্চাশ বছর থাকবে। এই প্রজন্ম যত‌দিন কানে শুনতে পারবে তত‌দিন আইয়ুব বাচ্চু বেঁচে থাকবে।

সাধারণত একই গান বারবার শোনার ফলে দুটো কাজ হয়েছে। এক, গানের বিচার থেকে প্রতিনিয়ত শোনার ফলে সব ধরনের গানের ব্যাপারে একটা অভ্যস্ততা তৈ‌রি হয়েছে আমাদের মাথায়। একটা অ্যালবামের সব গানই একটা পর্যায়ে ভালো লেগে যেত। দুই, গানগুলো মুখস্থ হয়ে যেত। ফলে, যার গানের কোনোরূপ শিক্ষাই নাই সেও ওই গানগুলো সহজেই গলায় তুলতে পারত। শুনতে শুনতে গায়েন। ফলে, বন্ধুমহলে গলা ছেড়ে যে-কেউই গাইতে পার‌ত তার গান।

বাচ্চু সেই ফিতাযুগের শিল্পী। ফলে, তার অ‌ধিকাংশ গান তরুণ প্রজন্মের কণ্ঠস্থ ছি‌ল নব্বইয়ের দশকে। কন্সার্টে কন্সার্টে গানগুলো গাওয়া হতো। সি‌ডির যুগে এসে তার কয়টা গান আপ‌নি মনে রেখেছেন? এখনকার কন্সার্টে তার কয়টা গানে মানুষ আর মনে করে গাইতে পারে? বারবার শোনার ব্যাপারটা তেমন আর নেই। লক্ষ লক্ষ অপশনের ভিড়ে আপ‌নি এখন আর বাচ্চু কয়বার শোনেন? তি‌নি মূলত আমাদের গানের স্মৃ‌তির মধ্যে বেঁচে আছেন।

কবে প্রথম আইয়ুব বাচ্চুর গান শু‌নি তা মনে নেই আমার। তার গান শুনতে শুনতে আমরা বড় হয়ে‌ছি। পপুলার ধারার প্রেম, দুঃখ ইত্যাদি তার মতো খুব সহজে কয়জন রকস্টার গাইতে পেরেছে? ঢাকা আর কলকাতার বাংলা রকগানে আইয়ুব বাচ্চু দ্বিতীয়টি নেই। গানের এই পপ সরলতা নেই কোথাও। ভ্যেরি সিম্পল তার গান। এরজন্য মনে থাকে।.

বাচ্চুর রকগা‌ন আ‌মি-তু‌মিময়। গানের যে নানাবিধ বিষয়ের অবতারণা তা মনে হয় তার গানে নাই। আবার সংগীতে রাজনী‌তি মিশ্রিত হলে তা গণসংগীতের মতো হাউকাউ বিষয়ে পরিণত হয়। গান খুবই অরাজনৈ‌তিক একটা বিষয়। এই-সমস্ত অরাজনৈ‌তিক প্রেম, হাহাকার, জন‌প্রিয়তা নিয়েই আইয়ুব বাচ্চু।

‌শিউ‌লি ফুল ঝরে গেলে আবার একই রূপে, রঙে, ঘ্রাণে নতুন শিউ‌লি ফুল ফোটে প্রতিদিন সকালে। অনন্তকাল গোলাপই ফুটতে থাকে গোলাপের বনে। মানুষও তেমন ফুলের মতো। মরে গেলে আবার জন্ম নেয়। জন্ম ও মৃত্যু অনন্ত। কিন্তু কিছু জীবন চলে গেলে আর ফেরে না। রিপ্লেইস্ হয় না। ফুলের বদলে ফুল, মানুষের বদলে একই মানুষ আর আসে না। আইয়ুব বাচ্চুর মতো বিরাট রকস্টার বাংলা গানে আবার কবে জন্ম নেবে! তি‌নি আর ফিরবেন না। ই‌উনিক হয়ে থাকবেন বাংলা রকগানে। বিদায় মায়েস্ত্রো!

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you