এমনিই লিখতে ধরা।
সন্ধ্যায়, কাজ থেকে হাঁইটা আসতেছিলাম; না হাঁটলেও হইত। বাট কিছুদূর হাঁটার চুক্তি করা গেছিল আর কি। কতগুলা স্টিলের ওয়ার্কশপের সামনে দিয়া একটু মোড়-টোড় আছে, এইরকম পথ। একটা ওয়ার্কশপে মোটামুটি ভালো সাউন্ডের রিদমিক মিউজিক হইতেছিল। ইংরেজি মিউজিক। তাদের কাজের ধরনে কোথাও কোনো ছেদ ছিল না। দেখলাম, পুরা শেডের নিচে একটু মেটাল ধোঁয়া-গন্ধ সব মিলায়ে কাজ করতেছিলেন যারা, তারা পুরা এই জিনিসটার ভিতরেই আঁটানো আছেন।
ড্রেন, ময়লা, মুত, ছেঁড়া কাঁথার পাইল, গরু পালার শেডের কাছে বাঁধাকপির ঈষৎ বাসি স্তূপ, চটের বস্তা — দেখি যে প্রচুর চা খাওয়া, বিড়ি খাওয়া লোকজন রাস্তায় মার্বেলের গড়াগড়ির মতন কোর্সে সেট হইয়া আছেন। শুধু মেয়েরা দেখলাম, একটু অন্যতর। কোর্সের বাইরেও একটা পেরিফেরি তাদের যেন আছেই। কোন সুদূরে চাইয়া থাকার মতন একজন কমলা কালারের শীতের হুডি নাকি শাল পরা, দেখছিলাম অত্যন্ত পরিশীলিত উপায়ে চোখাচোখি করছিলেন। আবার তাঁর ওই ‘সুদূর’ নামক অন্ধকার আমি যে দেখছি, তা বুইঝা নেওয়ার সাবালকত্ব আমরা ওই দৃষ্টিটুকুর মধ্যে পরিশোধ করছিলাম। ফলে, পৃথিবী কমলালেবুর মতো একদিকে চাপা বিধায়, আমি কয়েককদম বাঁকায়া আবার অন্যদিকের গোল অংশের সাথে আবিষ্কার করছিলাম নিজেরে। উনার জুতা, চোখ আর চুলের জিনিসগুলিই আমার মনে আছে। চুলের যত্ন নেন, আর একটা ইয়ে আছে এই সামলানোর ধরনে। সেইটা এক ঝলকের চোখ দিয়া দেখায় স্বস্তি আছে।
কয়েকটা ভাজাভুজির দোকান, চিতই পিঠা ও ভাপা পিঠার সম্মিলিত ভ্যান, সিদ্ধডিমের ঠেক দেখলাম কোর্সের ভিতর লিপিবদ্ধ। রিকশা যেমন সবগুলাই লাইন বাঁইধা, গুচ্ছে গুচ্ছে থাকে। ফার্নিচারের দোকানে মিনি মিনি ফার্নিচারের এখন প্রচুর আইডিয়া। আমারও পছন্দের জিনিস এইগুলা। দেখতে সবসময় আর টায়ার্ড লাগে না। কিভাবে বদল ঘটতেছে এইগুলার, তা দেখা আমার আরেক সাবকনশাস ভঙ্গি। প্রচুর ইয়াং কিডেরা এখন ফার্নিচারশপে কেনাকাটা করতে আসে। ঘুরে ঘুরে দেখে। প্রত্যেকেরই মতামতো নির্মিত হইতে থাকার বাসনা এবং সিদ্ধান্ত দেখা যায় একটু খেয়াল করলে। সমাজ তো এখন বাসাবাড়ি এবং পরিবারদিগের ধারণার মধ্যে, মতামতরে জায়গা দিতে যাইয়া আগের অবস্থায় আর নাই। তাই, মানুষ বাড়ার সাপেক্ষে কিন্তু আর্কিটেকচার বদলায় নাই অত, বরং ম্যাক্রোতে বিভক্ত হইয়া বসবাসের ধারণাটির জন্য যত। এবং প্রত্যেকের কোর্সের উপস্থিতি। মতামতই মূলত।
এই শীতেও জিলাপি ভাজার দোকানগুলা জিলাপি ভাজা ছাড়ে নাই। যে-রকম টিভি বিক্রির দোকানগুলি ডিসপ্লেতে অ্যানিমেল কিংডম, নিসর্গ আর খেলা দেখানো ছাড়ে নাই। যেন টিভি কিনে এইগুলা দেখা ছাড়া, পর্ন দেখার আড়ালের মধ্যে সেলসগার্লদের গরিব, বিষণ্ণ চেহারা ও কাপড়চোপড়ের কথা মনে আসবে না কারো।
এখন আবার জাতীয় নির্বাচনের অদ্ভুত অদ্ভুত সব মার্কা নির্ধারণ হইতেছে। সেইগুলার ইমেজ ও ভাষিক জিনিসপত্র মাথায় নিতে হয়। এই মার্কাগুলা ও পোস্টারের ক্ল্যাসিক সাদাকালোত্ব নিয়া কেউ কিছু ডকুমেন্টেড কাজ করলেও পারে। ইন্ট্রেস্টিং হবে। এইসব মাথায় যেহেতু নেয়াই লাগে, সময়ের ভিতর কুলকুল বয়ে চলার ধারাটা এবং গতিটা টের পাওয়ার একটা ভোঁতা জিনিস একত্রে মাথায় হইতে থাকে। যেন বর্তমানেই মানুষ শুধুমাত্র বসবাস করে আর কি। অথচ টাইম তো খুব অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতের একটা ইউনিফাইড এলগরিদম। কবি ডেভিড সজ্জন বিপ্লবের একটা লাইন মনে পড়ল — “কালকের কাম—ঘামশূন্য মনের মোকাম”।
এখন এসইউভি বাড়ছে রাস্তায়। বিগত ৫/৭ বছরে মিডলক্লাস ও হায়ার মিডলক্লাসের আওতায় গাড়িগুলা অ্যাভেইলেবল হইছে। আগের টয়োটার বাজেটেই এই সেমি-স্পোর্টস এবং সেডানের মাঝামাঝি ডিজাইনের এসইউভিগুলা পাওয়া যায়। অনেকেরই ডিজাইন ভালো। কোরিয়ানদেরগুলাও পাল্লা দিতেছে। ওদের কারখানাও নাকি বসবে জাপানিজদের পাশাপাশি। রাস্তায় একটু বিচিত্রতা আসায় আমার জার্নি বাই রিকশা সামান্য হইলেও আমোদিত হয়, অস্বীকার করার কিছু নাই।
ফুটওভার ব্রিজে কনডমের চামড়া, কনডম সহ ঘোলা বীর্যের মানুষের চামড়া — নবতর উচ্চতা সহ কারও কারও এরই উপরে দাঁড়াইয়া, গাড়ি ও মানুষের স্রোত থেকে আড়াল খুঁইজা গল্প করার জায়গা, আমিও ওইভাবেই দেখি। নবতর উচ্চতাই তো বলব, মানবসম্পর্কের এইগুলাই আসল ব্যাপার। উচ্চতাই বলতে হয়। আমি কি কাউরে চুমু খাইছিলাম কখনও ফুটওভার ব্রিজে? একজনের কথা অবশ্য জানি, উনি গল্প করছিলেন উনার বান্ধবীকে রাস্তা থেকে কোলে নিয়া ফুটওভার ব্রিজে চড়াইছিলেন। সুন্দর ব্যাপার। উনারা আর কী কী করবেন বা করছিলেন, সেইগুলা আমরা পাঠক হিসাবে আর না পইড়া কল্পনা কইরা নিতে রাজি থাকলাম শর্তে ফুটওভার ব্রিজ পর্ব এইখানে শেষ করলাম।
যেহেতু লেখা এমনিই লিখতে ধরা, তাই এমনিই বলতে হয়, যে, পরিচিত রাস্তা ও গলিগুলার মোচড়ে আসলে, আমি সময়ের অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ সহ একযোগে তাকাইবার সামর্থ্য অর্জন করছি বহু আগেই। বাট, ওই যে, মানবসম্পর্কের নবতর উচ্চতা যেহেতু কেমন কইরা যেন বর্তমানেই থাকে শুধুমাত্র, আফসোস হায়, কেন থাকে; তাই সময়ের ওই যুথবদ্ধতা সহই আমি একটা স্বাভাবিক ঝোঁকের মধ্যে থাইকা গিয়াই তাকাই। অবশ্যই সেইটা আমাকে কিছু সুবিধা দেয়। একইসাথে অসুবিধাও। যা স্বাভাবিকই বলতে হয়।
এই স্বাভাবিকতা আমার পোষায় কি না-পোষায়, সেইটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। আসলে, এই যে পোষানোর কথা বললাম, এইটা বলাই আমার ঠিক হয় নাই।
২৯/১২/২০২৩
আনম্য ফারহান রচনারাশি
বিচিত্র রচনার গানপার
- পোয়েট ও তার পার্টনার - October 19, 2024
- অন লেখালেখি, ইনফর্ম্যাল (তিস্রা দাগ) - October 11, 2024
- দুর্গাপূজার হালচাল : সেকাল একাল || সুমিত্রা সুমি - October 9, 2024
COMMENTS