বামবার বিজ্ঞপ্তিকাণ্ড || সৌমিত্র চক্রবর্ত্তী

বামবার বিজ্ঞপ্তিকাণ্ড || সৌমিত্র চক্রবর্ত্তী

বামবা  যে পচে গিয়েছে তা বুঝতে পারছিলাম সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনায়; — যেমন, ক-দিন আগে মাকসুদভাইয়ের বামবা  থেকে পদত্যাগ; কিন্তু আজ দেখলাম পচে গন্ধ বের হয়েছে। বামবার ফেইসবুকপেজে ২৫টি ব্যান্ড স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে যে তাদের গান অন্য মাধ্যমে এমনকি স্টেজেও লাইভ কভার করা যাবে না।

আমার যত সমস্যা স্টেজ লাইভ নিয়ে? এখন কি সবাইকে পাঁচটা অ্যালবাম করেই স্টেজে আসতে হবে? নতুন ব্যান্ডই-বা হবে কীভাবে? নতুন ব্যান্ডগুলোর ভবিষ্যৎ কঠিন হলে আমাদের ব্যান্ডমিউজিক তো পুরোই গোল্লায় যাবে।

এই বিজ্ঞপ্তিটা দেখে কিছু প্রশ্ন মনে এসেছে —

১. ব্যান্ড লালন  তো লালন সাঁইজির গান কভার করে, সেক্ষেত্রে কি লালন ব্যান্ডের লালন সাঁইজির গান কভার করতে কি লালনব্যান্ডের অনুমতি নিতে হবে?

২. বামবার মোট ৪১টি এনলিস্টেড ব্যান্ডের মধ্যে ২৫টি ব্যান্ড এই বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেছেন, বাকিরা কি দ্বিমত পোষণ করেছেন?

৩. যে-সমস্ত ব্যান্ড স্বাক্ষর করেছে তারা যখন GnR বা Metallica কভার করে নিজেদের শো সাজিয়েছিলেন তখন কি GnR বা Metallica-র অনুমতি নিয়েছিলেন? ভবিষ্যতে আপনাদের লাইভশো-তে GnR বা Metallica-র গানগুলো কি আপনারা কভার করবেন?

৪. আপনাদের গানগুলো স্টেজে লাইভ করে কিছু মানুষ জীবনযাপন করলে আপনারা কি ফকির হয়ে যেতেন? গ্রামীন-রবি এরা যে আপনাদের কোটি কোটি টাকা খেয়ে গেল তাদের পিছনে না লেগে স্টেজ-করা শিল্পীদের পিছনে লাগলেন কেন? নাকি গ্রামীনরবির স্পন্সর বন্ধ হয়ে গেলে তো অ্যালবাম বের করতে পারবেন না এই ভয়ে চুপসে গেছেন?

৫. আপনাদের গান কভার করতে করতে আরেকদল ভালো মিউজিশিয়্যান তৈরি হয়। এলআরবি  কভার করতে করতে আমি দেখেছি দারুণ লিডগিটারিস্ট বা বেজিস্ট তৈরি হতে। এই নতুন প্রজন্মের শিল্পীদেরও তো আপনারা সাপোর্ট করছেন না। শিল্পী হলে তো আরেকটু উদার হবার কথা। বাকি সব থাকলেও স্টেজশোটা ছেড়ে দিয়ে উদার হতে পারতেন। হাজার হাজার মিউজিশিয়্যানের গুরু হয়ে এহেন নিম্নশ্রেণির কার্য করলে কি গুরুর পদে থাকতে পারে কেউ?

৬. আপনাদের ২৫টা ব্যান্ডের গান কভার না করেও কিন্তু স্টেজশো হয়ে যাবে; কিন্তু ভেবে দেখেছেন কি উঠতি শিল্পীরা যদি আপনাদের গান স্টেজকভার করতে না পারেন তবে আপনাদের গান প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে কীভাবে থাকবে?

৭. ইউটিউব বা ফেসবুক কভার করার ক্ষেত্রে আমি নিজেও মনে করি অনুমতি নেওয়া উচিত; কিন্তু আপনারা স্টেজলাইভ কীভাবে বন্ধ করলেন? এই লিস্ট যাদের নাম আছে তারা প্রফেশনাল বা অ্যালবাম করার আগে কাদের গান গেয়ে স্টেজ মাতিয়েছিলেন এবং টাকা কামিয়েছিলেন বা লাইটে এসেছিলেন বলবেন কি? আপনারা একটা পর্যায়ে পৌঁছে অন্যদের রাস্তা কেটে দিলেন এটা কি পথিকৃতের লক্ষণ হতে পারে?

৮. আপনার গান ইউটিউবে আপলোড করে ইউনিক কন্টেন্ট আইডি করে নিন। এটা করলেই তো আপনার গান আর কারো পক্ষে মনিটাইজ করা সম্ভব হয় না। কিছু কিছু কভার মূল গানের চেয়েও শ্রুতিমধুর হয়ে যায়, এতে ভয় পেয়ে যান কি আপনারা?

৯. মিজানভাই (উনি স্টেজে যে-কারো সাথে উঠলেই আসলে কমলভাই বা টিপুভাইদের অভাব বোঝা যায় না) এই ধরনের শিল্পীদের থামাতেই কি এত লম্বা ফিরিস্তি করলেন?

নগরবাউল  (গুরু তো গুরুই) সহ স্বাক্ষর-না-করা অন্যান্য ব্যান্ডদের ধন্যবাদ জানাই এহেন নিচ-অশিল্পীসুলভ কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য। পরিশেষে পান্থ কানাই দাদার একটা লাইন দিয়ে শেষ করব —

মিউজিশিয়্যানের গুষ্টি কিলা
আগে ভালো মানুষ হ বেটা…

বামবা

পো স্ট স্ক্রি প্টা ম


১৫ জুলাই ২০২০ তারিখে বামবাসভাপতি স্বাক্ষরিত প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে যা বক্তব্য তা অবিকল নিম্নমুদ্রিত (সমুদয় বানানভ্রান্তি, অহেতু শব্দফাঁক এবং সম্পূর্ণ অস্থানে-ব্যবহৃত যতিচিহ্ন ও ব্যাকরণানুসারে-অসিদ্ধ বাক্য সমেত) :

আমাদের কাছে পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, সাম্প্রতিক কালে বামবা (বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ডস অ্যাসোসিয়েশন) এর সদস্য ব্যান্ড সমূহের অত্যন্ত জনপ্রিয় গানগুলি বিভিন্ন শিল্পী/ব্যান্ড বিভিন্ন কনসার্ট, টিভি প্রোগ্রাম, টিভি রিয়েলিটি শো এবং ইন্টারনেট ভিত্তিক অন্যান্য সম্প্রচার মাধ্যমে বানিজ্যিক ভিত্তিতে পরিবেশন করছেন, উল্লিখিত সদস্যভুক্ত প্রনেতা ব্যান্ড সমূহের বিনা অনুমতিতেই যা কিনা অনৈতিক ও বে-আইনি।

এহেন পরিস্থিতিতে বামবা (বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ডস অ্যাসোসিয়েশন) এর সকল সদস্য ব্যান্ড এই মর্মে ঘোষনা করছে যে, এই প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রচার এর দিন হতে ভবিষ্যতে যে কোনো সম্প্রচার মাধ্যমে তাদের (বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ডস অ্যাসোসিয়েশন এর সদস্যভুক্ত ব্যান্ড সমূহ) গান এর বানিজ্যিক পরিবেশন ও সম্প্রচারের পূর্বে লিখিত সম্মতি গ্রহন করা অত্যাবশ্যক হবে।

বামবা (বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ডস অ্যাসোসিয়েশন) আশা করে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি এর বৃহত্তর স্বার্থে এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলে এই উল্লিখিত সিদ্ধান্তের প্রতি পূর্ণ সম্মান প্রদর্শন করবেন।

সভাপতিসিগ্নেচারের পরে প্যাডের নিচের পরপর পঁচিশটা ব্যান্ডের নাম সংখ্যাতালিকায় দেয়া আছে : আর্বোভাইরাস, অর্থহীন, আর্টসেল, অ্যাভয়েডরাফা, ব্যান্ড লালন, ব্ল্যাক, বেদুঈন, ক্রিপটিক ফেইট, দলছুট, দৃক, ফিডব্যাক, এল আর বি, মেকানিক্স, মাইলস, নেমেসিস, অবসকিওর, পাওয়ারসার্জ, পেন্টাগন, রেনেসাঁ, শিরোনামহীন, শূন্য, সোলস, দ্যা ট্র্যাপ, ভাইকিংস, ওয়ারফেইজ।

পোস্টস্ক্রিপ্টাম শেষ। — গানপার

… …

সৌমিত্র চক্রবর্ত্তী
Latest posts by সৌমিত্র চক্রবর্ত্তী (see all)

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you