পপি

পপি

সিনেমায় অ্যাক্টরদের অ্যাপিল থাকে নানান পদের। এর মধ্যে একটা পদের অ্যাপিলই সবচেয়ে বেশি মার্কেট পায়, যেইটার চাল্লু ডাকনাম সেক্সঅ্যাপিল। তবে এমন হয়েছে যে অ্যাপিল বলতেই লোকে এখন যৌনাবেদনই বোঝে। এছাড়া আর-কোনো আবেদন-নিবেদনের ধার কি লোকে ধারে আদৌ? দুনিয়া জুড়েই জিনিশটার কদর, অন্যায্য নয় এমন কদরদারি। বিশেষভাবেই বলতে হয় সিনেমায় লিপ্ত যারা তাদের মধ্যে এই ফিচারের অনুপস্থিতি, নির্দিষ্টভাবে হিরোয়িনের মধ্যে এর অ্যাবসেন্স থাকলে, একটা খামতিরই ইঙ্গিত বহন করে। এবং যস্মিন দেশে যেমন আচারবিচার, এদেশে সেক্সঅ্যাপিল জিনিশটা ঢাকঢাক গুড়গুড়ের ন্যায় আছে আবার নাই কিসিমের একটা খামাখা লুকাছাপার ঘেরের ভিতরে থেকে গেছে সবসময়।

বাংলাদেশের সিনেমায় সেক্সঅ্যাপিলিং অ্যাক্ট্রেসের দেখা পাওয়া গিয়েছে কড়ে-গোনা, তা-ও পুরা অ্যাপিলের মুলাকাত নয়, আধাছাদা অ্যাপিল দিয়াই মোটামুটি পদ্মাপার জয় করা যায় এবং যাচ্ছেও। বলিউডে এখন এবং আগেও অনেক বোম্বশেলের দেখা মিলিলেও বঙ্গে এইটা প্রায় বিরল লভ্য। ববিতার মধ্যে একটুখানি ছিল, অলিভিয়া নামে এক আধানায়িকার কথাও স্মরণ হয় আবছা, কবরীর কিছু সিনেমায় অ্যাপিলিং প্রেজেন্স ছিল বলা যায় যেমন ‘সারেং বউ’ ইত্যাদি, জয়শ্রী কবীর ইয়াদ হয়, সুবর্ণা মুস্তাফার ওষ্ঠাধর ও চক্ষুজোড়া এবং এইভাবে অংশত অনেকেরেই স্বল্পকালীন অ্যাপিলিং অভিধায় আখ্যায়িত করা যাবে না তা নয়। কিন্তু সমস্ত শরীরে অ্যাপিল নিয়া ছায়াছবিস্ক্রিনে প্রেজেন্স প্রমাণ করতে যেয়ে বেশ অনেকক্ষণ ভাবতে হয়।

নাইন্টিসের ঢাকাই সিনেমায় আগত নতুন মুখের জোয়ারে একজনের দেখা পাওয়া গেল শরীরী বিভঙ্গে সেক্সঅ্যাপিলের বিস্ফোরক নিয়া হাজির হইতে। সেই হ্যাপিনেস অবশ্য খুব বেশিদিন সুস্থায়ী ছিল না ঢালিউড দর্শকদিগের কপালে। অচিরে এই নায়িকাকেও চৌবাচ্চার সাইজে বেঢপ হতে দেখা যেতে থাকে। বর্তনভরা ভাতের গুণে। এবং বাংলা দর্শকদের ইচ্ছাপূরণেও অনেকটা নায়িকাদেরে শেইপ প্রসারিয়া ক্রমশ ডিশেইপড-ডিসপ্রোপোর্শোনেইট হইতে দেখি আমরা। অ্যানিওয়ে। যে-নায়িকার কথা ভাবছি প্রসঙ্গত, উনার নাম পপি, পুরা নামখানা তার সাদিকা পারভীন পপি।

নিশ্চয় ইয়াদ হবে অনেকেরই যে ‘কুলি’ সিনেমায় মান্নার সঙ্গে জুটি বেঁধে এই নায়িকাকে ডেব্যু করতে দেখা যায়। এবং ‘কুলি’ হিট হয় মারকাটারি। বিশেষ একটা গানে, এই সিনেমায়, পপির পিঠ দেখানো হয় এবং বাংলার ভুখা আবেদনলোভী সিনেদর্শকেরা তারপর থেকে পপির সিনেমায় ভিড় জমাইতে থাকে এই পিঠসুধা পানের আশায়। এফডিসির মেঝেতে যেসব পরিচালক বছরভরা বাস করেন তাদের নজর বড় কড়া পাব্লিকের চাহিদার দিকে। এরা কালবিলম্ব না করে পপিপিঠের পুরা আদায়-উশুলে মেতে ওঠেন এবং সঙ্গে যুক্ত হয় নায়িকার সুপ্রশস্থ সেন্সুয়াস স্কন্ধ ও উরু।

পপি দিনে-দিনে ঘাড়ে ও গর্দানে বাড়তে থাকেন। শরীরের কাণ্ড ও ডালপালা ঘাড়গর্দানপৃষ্ঠের সনে পাল্লা দিয়া বাড়বাড়ন্ত হতে হতে একসময় খলিফার মাপজোখের মিটারে বেড় পায় না এমন দশায় উপনীত হয়। আর তার সঙ্গে আছে পরিচালকদের ক্যামেরাকাঁপানি হিস্টিরিয়া আচরণের প্রোজেকশন। ঢাকাই সিনেমায় যৌনাবেগের সিন এলেই ডিরেক্টরদের বোধহয় মাথায় পৃথিবী উঠে যায়, ডিওপিরও অবস্থা তথৈবচ। ফলে ক্যামেরা কাঁপে বেণুবনে ঝড়ের ন্যায়। সাদিকা পারভীন পপি দিনদিন নাভিশ্বাসের কারণ হয়ে ওঠেন দর্শকনিরীহদের কাছে।

এইবার শরীর ছেড়ে যদি অন্যান্য গুণপনার দিকে নজর দিই, তাইলে কেমন অবস্থা দেখব? পপি অভিনয়টা জানেন বলিয়া আদৌ মনে হয় নাই কোনোদিনই। প্রেমিক নায়কের উপস্থিতিতে প্রেমিকা নায়িকাজির ঠোঁট সুঁচালো করিয়া আমন্ত্রণ জানানো আর প্রেমিক নায়ক ছুঁয়ে দেবার আগেই মৃগী রোগীর ন্যায় কাতরানি স্টার্ট করা আর মুখে বেজায় শীৎকার করিয়া যাওয়াকেই পপি নিজের তুরুপের তাস ভেবে নিয়েছিলেন। ভুল করেছিলেন বলি কি করে, পাব্লিকে খেয়েছে যেহেতু। খুব বেশিদিন খায়ও নাই নিশ্চয়, বাজার পড়ে যেতে থাকে সেক্সসিম্বল পপিরও।

তবে পপির বাজার পড়তির দিকে যাবার কারণ অন্যত্রও খোঁজা যাইতে পারে। সেই সময়টায় হাঁড়িমুখা নায়ক শাকিল খানের সঙ্গে পপির সংগোপন শাদি সংক্রান্ত খবরে বেশ বাজারগরম দশা হাজির হয়েছিল। পপি বেমালুম অস্বীকার করেন। ওদিকে নাভির দেড়হাত উপরে বেল্টবাঁধা প্যান্টশার্ট-মাইঞ্জামারা শাকিল খান সমানে পপিকে তার কাগজকরা ইস্তিরি বলিয়া দাবি করে প্রেস কনফারেন্স কল্ করেন। চলতে থাকে বেশ কিছুদিন এইসব। দুইজনে এই ফাঁকতালে ক্যারিয়ারে পেরেকটাও ঠোকেন।

পপিকে এরপরেও কয়েকটা ছায়াছবিতে দেখা গেছে। শাকিল খানের দেখাসাক্ষাৎ নাই বিগত দশক অতিক্রান্ত। পপি রিসেন্টলি অনুদানের একটা জাতীয় পুরস্কার-অবধারিত চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছিলেন। অভিনয় তো রক্তে একফোঁটাও নাই। কিন্তু এপিলেপ্সি আছে। এবং আছে সেগুনকাঠের শতবর্ষী সুঠাম স্কন্ধগর্দান যথাসাধ্য ও সাধ্যাতীত গিয়েও প্রদর্শন। কণ্ঠস্বরটা খানিক সাপোর্ট করলে একটু সহনীয় হয়ে যেত হয়তো।

তবে এইটা স্বীকার করে বিদায় নিতে হবে যে এমন দুর্ধর্ষ ফিগার নিয়ে এসেছেন ঢাকাই সিনেমার ইন্ডাস্ট্রিতে একদম হাতেগোনা। শুরুর দিকে বেশ কিছু ছবিতে সেক্সঅ্যাপিল জিনিশটাকে পপি ডিসেন্ট উপায়ে ব্যবহার করতে চেষ্টাশীল ছিলেন মনে হয়েছিল। অচিরেই ভাল্গার হয়ে ওঠেন। হয়তো মুনমুন-ময়ূরীদের উপর্যুপরি ধুন্দুমার চাপে। একসময় যেমন প্রখরতা তার সৌন্দর্যে ছিল, ক্রমে সেইটা হারাইতে শুরু করে। ন্যাচারালি।

হিরোয়িন পরিগ্রহ করেন নাই আজোবধি বিবাহদুয়ার।

প্রতিবেদনকারী : মিল্টন মৃধা

… …

মিল্টন মৃধা
Latest posts by মিল্টন মৃধা (see all)

পরের পোষ্ট
আগের পোষ্ট

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you