অ্যামেরিকায় গিটারসেন্টারে এলআরবি

অ্যামেরিকায় গিটারসেন্টারে এলআরবি

অ্যামেরিকায় বাঙালি কমিউনিটির আমন্ত্রণে এলআরবি (LRB) প্রথমবারের মতো ট্যুরে যায় ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিলে। এইটাই ছিল জনপ্রিয় এই বাংলাদেশী ব্যান্ডের প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর। সেই সফরে তারা অ্যামেরিকার সাতটি সিটিতে শো করে। এপ্রিলের ২১ তারিখে দেশত্যাগ করে এলআরবি তাদের চার সদস্যের ব্যান্ড নিয়ে, পঁচিশ থেকে স্টেজ অ্যাপিয়্যারেন্স শুরু হয়। দেশে ফেরার পরে ব্যান্ডের সদস্যরা তাদের এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার করেন। তখনকার জনপ্রিয় বিনোদনপাক্ষিক ‘আনন্দভুবন’ ১ জুলাই ১৯৯৮ সংখ্যার ‘সারেগারে’ বিভাগে ‘গুড মর্নিং আমেরিকা’ শীর্ষক একটা পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন কাভার করে। সেই প্রতিবেদনে এলআরবিলিডার আইয়ুব বাচ্চু ছাড়াও টুটুল, স্বপন, রিয়াদ প্রমুখ সকলেই তাদের উচ্ছ্বাসমিশ্রিত অভিজ্ঞতা হাজির করেন। প্রতিবেদনের পুরোটুকু অনেক দীর্ঘ, আমরা আপাতত পুরো প্রতিবেদন পড়তে যাচ্ছি না, শুধু সেখানকার গিটারসেন্টারগুলোতে ঘোরাঘুরি নিয়া বাচ্চু, টুটুল ও স্বপন প্রতিবেদনে বেশকিছু অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছিলেন, সেইটুকুই নিচের তিনটে অংশে দেখতে পাবো। প্রথমেই দেখি গিটারসেন্টার নিয়ে এলআরবি-লিড আইয়ুব বাচ্চু কি বলেছিলেন :

আমার জীবনের বড় সাক্সেস্ গিটারের রাজ্যে হারিয়ে যাওয়া। প্রতিটি সিটিতেই আমি গিটারসেন্টারগুলোতে গিয়েছি। এ ছিল আমার জন্য তীর্থক্ষেত্র।

চমৎকার জায়গা। দশ/বারো হাজার গিটার। যে যার মতো বাজাচ্ছে। অসাধারণ দৃশ্য। আমিও বাজাতে পেরেছি। পছন্দের গিটার বেছে নিতে পেরেছি। ওয়াশবার্ন ও জ্যাকসন বদলে মিউজিকম্যান (ভ্যান হেলেন সিরিজ) আইবানেজের জিপিএম নিয়ে এসেছি। এ আমার স্বপ্নের গিটার। বাকি জীবনে আর গিটারের প্রয়োজন হবে না।

এছাড়াও ভালো লেগেছে ওদের মধ্যে মিউজিশিয়্যানদের প্রতি সম্মানবোধ দেখে। আমরাও সে-সম্মান থেকে বঞ্চিত হইনি। অধিকাংশ এয়ারপোর্টেই অনেকে আমাদের প্রশ্ন করেছে, তোমরা ট্যুর করছ? ওদের চোখ ছানাবড়া। কারণ সেখানে তারাই ট্যুর করে যাদের টিকিট বিক্রি হয়। তাদের আলাদা দাম আছে।

আমরা সবাইকে বলেছি যে আমরা আমাদের নিজেদের কমিউনিটির জন্য গান করছি। সাউন্ড-ইঞ্জিনিয়াররা আমাদের পার্ফোর্ম্যান্সে ভীষণ খুশি। প্রতিটি শোয়ের পরেই ওরা আমাদের বলেছে — তোমরা খুবই স্ট্রং। এটা সত্যি অবিশ্বাস্য। এ অনুভূতি প্রকাশ করার মতো নয়।

বাচ্চুর উচ্ছ্বাসের অনুবর্তীই ছিলেন অন্য দুই মিউজিশিয়্যান্স টুটুল ও স্বপন। টুটুল বর্তমানে এলআরবিতে নেই। নিজে একটা জায়গা করে নিয়েছিলেন এসআই টুটুল ব্যান্ড থেকে বেরিয়ে, বেশ কয়েক বছর হলো টুটুলের দেখা নাই মিউজিকসিনে। সেই ট্যুর থেকে ফিরে এসআই টুটুল গিটারসেন্টার বিষয়ে যে-কথাগুলো বলেছিলেন তা নিচে দেখে নেব :

ওখানকার গিটারসেন্টারগুলোতে গিয়ে খুবই ভালো লেগেছে। প্রতিদিন গিয়ে বাজালেও কেউ বলবে না একটা কেনেন। সাজানো সব ইন্সট্রুমেন্টস্ যে যার মতো বাজাচ্ছে।

এলআরবি-র দীর্ঘ পথযাত্রায় একজন সহযাত্রী স্বপন, রয়েছেন এখনও দলবর্তী, ছিলেন সেই ইউএসট্যুরেও। স্বপন একেবারেই গিটারমত্ত মানুষ, স্বর্গরাজ্যেই গিয়ে পড়েছিলেন যেন গিটারের, তার কথায় সেই নিরুপম উল্লাস আর সবিস্ময় চিৎকার গোপন থাকে নাই, শুনি :

যেসব গিটার প্লে করার স্বপ্ন দেখতাম, ওখানে সেগুলো দেখেছি, বাজিয়েছি। বিশ্বের নামকরা সব মিউজিশিয়্যানের ব্যবহৃত গিটার মায়ামি হার্ডরক ক্যাফেতে দেখেছি। নিজেকে চিমটি কেটে দেখেছি, এসব কি সত্যি! গিটার ওয়ার্কশপে মেকানিকদের সঙ্গে দেখা হয়, ওরা বিখ্যাত সব শিল্পীদের কাজ করে। আমার গিটার টপ অফ দ্য লাইন করে এনেছি। নামকরা কিছু ব্যান্ডের গিটারিস্ট ও ভোক্যালদের সঙ্গে দেখা হয়। সবকিছু মিলেমিশে স্বপ্নের মধ্যে কেটেছে।

ব্যান্ডের অপর মেম্বার রিয়াদ অবশ্য গিটারসেন্টার নিয়া আলাদা কিছু বলেন নাই রিপোর্টে। এই রিপোর্ট বা এই ফিচারটা ছাপা হয়েছিল প্রোক্ত পত্রিকার ১৭ আষাঢ় ১৪০৫ বঙ্গাব্দ ১ জুলাই ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দ ৩ বর্ষ ৪ সংখ্যায়। এইটা সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখনের কাজটি করেছিলেন আবিদা নাসরিন কলি ও কাজী উচ্ছ্বল।

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you