পরে যখন সাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়ে পুরোদস্তুর সাহিত্যিক হয়ে গেলাম, বশীরভাই খানিকটা কষ্ট পান। মাঝে মাঝে বলতেন, — কবিতার পাশাপাশি দুয়েকটা রিপোর্ট লিখলে কী এমন ক্ষতি হয়? কবিতা তো সাধারণ লোকে বোঝে না, কিন্তু রিপোর্ট বোঝে। আমি হাসতাম। বলতাম, — লিখব বশীরভাই। কিন্তু আর লেখা হয়নি।
বশীরভাই সে-সময়ের সবচে প্রভাবশালী দৈনিক সংবাদ-এর সংবাদদাতা ছিলেন। ভৈরব প্রেসক্লাবের সম্পাদক ছিলেন বহুবছর। তারপর একসময় সাংবাদিকতা ও প্রেসক্লাব দুইই ছেড়ে দেন। স্ট্রোক করে প্যারালাইজড হয়ে যান। অসুস্থ হবার পর তাঁর সাথে বারদুয়েক দেখা হয়েছে। আমাকে চিনতে তাঁর সমস্যা হয়নি। কি করছি, জিজ্ঞেস করেছেন। ঢোঁক গিলে মিনমিন করে বললাম, — একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা পড়াই। তিনি খুব খুশি হলেন। বললেন, — আমি জানতাম তুমি সাংবাদিকতায় ফিরে আসবে।
বশীরভাই মারা গেলেন গত রাতে। শোনার পর থেকে ‘পাক্ষিক গ্রামবাংলা’ পত্রিকার নিউজরুমটার কথা মনে পড়ছে। নিউজপ্রিন্টের ওপর বলপয়েন্ট দিয়ে লেখা আর ছিঁড়ে ফেলার দিনগুলো। প্রুফের তাড়া নিয়ে ব্যস্ত বশীরভাই। মোবারকভাই সাহিত্য সম্পাদক। রোমান্টিক কবিতা লিখে বাজার মাত করে দিচ্ছেন। আর আমরা সাহিত্য ও সাংবাদিকতার মাঝখানে নিজেদের জন্য একটা হাইব্রিড স্পেইস রচনা করছি।
চল্লিশ বছর আগের কথা।
- লোককবি তাজউদ্দিন ও তাঁর গান || জফির সেতু - November 25, 2025
- শাহজালাল শাহপরান গ্রামবাঙলায় গাজির গান || তুহিন কান্তি দাস - November 22, 2025
- আমাদের গ্রামের নাম আমাদের নদীর || কাজল দাস - November 19, 2025

COMMENTS