বিল নট অর্ধশতাধিক

বিল নট অর্ধশতাধিক

শেয়ার করুন:

বিল নট নিয়া নাতিদীর্ঘ ভূমিকা ড্রাফট করবার মানসে বসে দেখি বিশেষ লিখবার মতো অনুকূল পরিস্থিতিতে একদিন পৌঁছে একটা ডাঁটো ভূমিকা ড্রাফট করে ফেলবার অপেক্ষায় কালই কেবল ক্ষেপণ করা হয়। আর কিছু নয়। আসলে তেমন পরিস্থিতি একটা আস্ত অলীক জিনিশ। সবিশেষ লেখার বেলায় স্টেইটমেন্ট ট্রু। কূলের আগায় অনু অথবা প্রতি লাগায়া পরিস্থিতি ডিফাইন করা যায় না। কাজেই, লিখতে বসতে হয়। লিখতে লাগে বসা। খাড়ায়া বা লৌড়ায়া লেখা যায় না। তাই বলে এতদিন! ভূমিকাটি লিখব বলে শেখ হাসিনার হতভম্বকর হননযজ্ঞের শেষের তিনচাইর বছর ধরে তাওপ্যাঁচ করতেসি, ইন্টেরিমের ইঁচড়েপাকামিরও বছর গড়ায়, কিন্তু ভূমিকা আর আগায় না। অ্যারাব বেদুইনের ঘোড়ার মতো, ভূমিকা আমার, পরিস্থিতির আনুকূল্যাপেক্ষায় খাড়ায়া খাড়ায়া ঘুমায়।

বিল নট নিয়া লাস্ট কয় বছরে, একটানে অনধিক পঞ্চাশটা আইটেম বা পোয়েম ভাষান্তরের পরে, একটা ডাঁটোমতো ভূমিকা ফাঁদবার ফন্দি নিয়া আল্লার দুনিয়ার অনেককিছু পড়াশোনা জানাবোঝা মাশাল্লা হয়েছে এতদিনে। এন্তার মালমশলা আছে জেনারেল সোর্সগুলায়। বিল নট কোনোমতে লিখে সার্চ দিলে অ্যাভ্যাইল করা যায় হাজার স্কলার হাজার ক্রিটিক হাজার অ্যাপ্রিসিয়েশন। কবিনাম ইংরেজিতে লিখতে যেয়ে স্পেলিং উনিশবিশ হতে পারে, হোক, অ্যাআই চ্যাটজিপিটির যুগে গ্যুগলেরও বুদ্ধিশুদ্ধি আগের চেয়ে অনেক শার্প হয়েছে। এরপরও মনে রাখতে চাইলে বিলের শেষে ডাবল এল্ আর নটের শুরু কে এবং শেষ ডাবল টি দিয়ে। স্পেলিং ভুল হলে গ্যুগলই তা ঠিক করে নেবে। কাজেই, চিন্তা নাই। বিশেষ কোনো ভূমিকার জরুরৎ এখানে থোড়াই।

কিন্তু তর্জমা থামে নাই। সিন্স প্যান্ডেমিক টোয়েন্টিটোয়েন্টি অনুবাদ করা স্টার্ট হয়। তারপর থেমে থেমে এই তিনচাইর বছরে গোটা পঞ্চাশেক ওয়ার্ডফাইলেই ছিল, চব্বিশের হাসিনাতাণ্ডব চলাকালে নেটবন্ধ অবস্থায় হাফডান কাজগুলার ফাইল অফলাইনে একটা ড্রাইভে ট্র্যান্সফার করবার সময় বিল নট স্টুড বিফোর মি লাইক অ্যান এলিজিবল ওয়ান টু গেটিং ইন্টু ওয়েলডান স্যুন। অনেক দিনের পরে ব্যাকলগ ছাড়াতে যেয়ে একটা প্রাইমারি ইনার্শিয়া থাকে, সেইটা কাটাইতে লেগে বেশকিছু কবিতা আবার নতুন করে পড়তে হয়। এবং, এইভাবে, হপ্তাদিন পরে পরে একটা দুইটা করে সেভেন্টিফাইভে এসে ঠেকে। সেভেন্টিফাইভ, মনে হয়, ইজ অ্যা সিগ্নিফিক্যান্ট নাম্বার টু গেট ইট ডিক্লেয়ার্ড অ্যাজ ডান। নট কমপ্লিটলি, বিল নট আরেকগোছা ভাষান্তর পরে এক-সময় আর্কাইভ করা যাবে।

যে-পর্যন্ত হয়েছে, এর একটা হাজিরা সামনে এনে রেখে দেখা যাক এইগুলা কানেক্ট করে কি না পাঠক বোদ্ধা/সাধারণেরে। অ্যানিওয়ে। সেই রিডারের আশা আর করি না যে-রিডার রেস্পন্ড করবে। লেখালেখির বাংলা অ্যারেনায় রিডার্স রেস্পন্স আশা করা বাতুলতা। আবার অনলাইন অভিধান ক্লিক করতেসেন কেন হুদা হুদা? বাতুলতা মানে পাগলামি, এক্ষেত্রে বেক্কলামি। বিল নট অনুবাদ করতে যেয়ে এই জিনিশটা আকসার করেছি যে একটা ভারবহ শব্দের পাশে একটা পাতলা শব্দ অনায়াস বসিয়ে রেখেছি। ভারি এবং পাতলা যুগপৎ শব্দের ওজনে এবং অর্থে। তাতে একটা হাল্কা অ্যাটমোস্ফিয়ারে একটা ভারিক্কি ম্যুড আনা গেছে। এবং ভাইসভার্সাও হয়েছে। এই বিসদৃশ উপস্থাপন এবং এক লাগাতার বিসদৃশের সমাপতন বিলের মাস্টারি, বিলের মায়েস্ট্রো স্ট্রোক, বিশেষত তার ব্রিফ পোয়েমস বা শর্ট পোয়েমগুলায় এই কারণেই বিলেরে বেশি ইম্প্রেসিভ লাগে।

এই এক নোক্তা রাখি। ব্রিফ পোয়েমস। শর্ট পোয়েমস। সংক্ষিপ্ত কবিতা। খাটো পদ্য। সবিস্তার হবার আগে একবার গোড়ার কথাটা পাড়ি। বিলের লগে কেমন করে এবং কোথায় দেখাসাক্ষাৎ আমার। বিল নটের লগে এভার ফার্স্ট এনকাউন্টার। দুইহাজারচৌদ্দয়। তেরো অবসিত হয়েছে সবে এবং আমরা দেখতে শুরু করেছি মিডলক্লাসের গোটা সারস্বত সমাজের চূড়ান্ত ধস। দুইহাজারপঁচিশে এসে বুঝতে বাকি থাকে না যে এর আর খাড়ায় না, খাড়াবে না কোনোদিনও। ও গায়া। গায়রত হো গিয়া সারি হিম্মৎ। মিডলক্লাস, মধ্যবিত্ত, শিক্ষিৎ ও সারস্বত। উসকো ডক্টর কা মাকান দিখাও। গল্পটা বাংলাদেশের। আর বিল নট ইউএসএ সিটিজেন। অ্যামেরিকান পোয়েট।

সময়টার কথা বলতেসিলাম। আমাদের সাক্ষাতের। চৌদ্দয়। বিল সে-বছর মারা যাবেন, যদিও অঙ্ক মিলায়া আমি তা আবিষ্কার করব বছর-দুয়েক পরে, হন্যে হয়ে আমি তখন কপিলেফট পোয়েট্রি পাব্লিক্যাশন নিয়া সার্চ করতেসিলাম। তখন পাই। বিল নট কালেকশন অফ ব্রিফ পোয়েমস। ফ্রি পিডিএফ। তখন ডাউনলোড করে পড়তে হতো। অনলাইন পড়া চালু হয় নাই ফ্রিকোয়েন্সিকৃপণ আমাদের অঞ্চলে। এরপরে, ওভার দ্য টাইম, আমি এবং বিল উভয়েই ইভোল্ভ করেছি। ফ্রিকোয়েন্সিকৃপণতাও কমে এসছে দেশে ক্রমশই। ধীরে ধীরে আরও সংকলন পেয়েছি, ফ্রি, বিল নটের বিশাল আর্কাইভ সম্পূর্ণ উন্মুক্ত ও অত্যন্ত উদার ফ্রি পিডিএফ বিলানোয়। চিনপরিচয় এইভাবে বেড়ে একটা সময়ে দেখি বিল নট অর্ধশতাধিক গট রেডি টু বি পাব্লিশড ইন বাংলা।

আমি দেখি যে এই লোক তো মহা ঘাউড়া আছে! একের পরে এক বই প্রিন্ট হচ্ছে বড় প্রকাশনাবাড়ি থেকে, বেরোচ্ছে মাঝারি বাড়িগুলি থেকে, এরপরও লোকটা নিজের হাতে কাভার এঁকে একের পরে এক কবিতাপুস্তিকা বার করতেসে সেল্ফ-পাব্লিশিং প্রক্রিয়ায়! এই কারণে বিলের প্রকাশকরা খাপ্পা আছিলো উনার উপরে। বাঁধা পাব্লিশার হারিয়েছেন, এইসব কারণে, এই ননপ্রফিট পাগলামির কারণে, পেয়েছেনও অনেক অন্যদিকে এইসব কারণেই। বিল নট তার খাইসলত ছাড়েন নাই, টিল ডেথ, আমৃত্যু। অনলাইনের যুগে তার সমস্ত অরিজিন্যাল ওয়ার্ক্স ও তার পেইন্টিং আর্ট স্থিরচিত্র সবার জন্য অবারিত ও সহজলভ্য করে রেখে গেসেন নিজের হাতে। ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার, কবিক্যারিয়ার, তবু তিনি ছিঁটমুক্ত হতে পারেন নাই ছিঁটগ্রস্তই থেকে গেসেন আগাগোড়া। তার এত কবিতাবই, কী বিচিত্র বিন্যাসের সমস্ত সংগ্রহ, কত তার কবিতার বাহার ও বেশুমার তারা সংখ্যায়!

বিল নট অত্যন্ত প্রোলিফিক। বহুপ্রজ। উনার কবিতার আবহের সঙ্গে ব্যাপারটা, এই বহুপ্রজতা, মানায়া যায়। আর তার টোন ও কম্পোজিশন কমিক। উনি নিজেকে এই জায়গায় ট্র্যাজিকমিক বলতে প্রেফার করেন। মজাকমাস্তিগুলা আমেরিকান কবিতা থেকে যেন উবে যেতে লেগেছিল অনেক অনেক দিন ধরে। এইটা বিলও খুবই ফিল করতেসিলেন, আমেরিকার কবিতাকাণ্ড ক্রমশ হাস্যরসলুপ্ত, উনার গদ্যজবানি রিড করে গেলে এই ফিলিংস ঠার করা যায়। এইখানেই বিলের কন্টিনিউয়াস কন্ট্রিবিউশন। মোটামুটি বিলের পোয়েট-ক্যারিয়ার উনিশশষাইট থেকে দুইহাজার চৌদ্দ পর্যন্ত। মজাচ্ছলে যেন বলে ফেলা গেল, গলদঘর্ম হতে যদি হয় সেইটা পাঠকের দিককার কাণ্ড কবির তো নয়। কিন্তু, যতটা অনায়াস অটোম্যাটিক মনে হয় কেমিস্ট্রিকিমিয়াটা বাইরে থেকে, ততটা অনায়াসলব্ধ যে নয় ব্যাপারটা তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। ক্যামোফ্লাজে এই কিসিমের লিখনপ্রক্রিয়া রাজা। ক্যামোফ্লাজ আনমাস্ক করে এর ভিতরে যেতে পারলে কেবলই ফ্রি প্লে।

এখন যদি বিল নটের কন্টেম্পোরারি কবিদের সম্পর্কে একটু খোঁজতালাশ করা যায়, ইজি হবে বোঝা তার টাইম তার পোয়েটিক ট্র্যাডিশন কেমন ছিল। কারা ছিলেন তার সমসাময়িক কবি? রিপ্লাই, কে নয়! সিক্সটিজের অ্যামেরিকান ও ব্রিটিশ কবিতা আর তার পাড়াপ্রতিবেশী শিল্পকলা সম্পর্কে আমাদের জানতে বিশেষ বাকি নাই। বিটনিক কবি ও মিউজিশিয়্যানদের সম্পর্কে বাংলায় বিস্তর বইপত্তর আছে অলরেডি। লিভার্পুল ও অপরাপর নব নব স্বভাবিত নানান কাব্যিক ক্ল্যান নিয়া জানাশোনা বাংলাপাঠকদের ভিতর প্রতুল পরিমাণে বিদ্যমান। অসংখ্য কবির নাম সম্বলিত সমীকরণ না বানায়া আমরা বরং আর তিনজনের নাম বিল নটের সঙ্গে অ্যানাউন্স করে একটানে একটা টাইম ও অ্যাকশন সম্পর্কে আন্দাজ করে নেব। ওই তিনজনেও কবি। চার্লস বুকৌস্কি, অ্যালেন গিন্সবার্গ আর বব ডিলান। হ্যাঁ, শেষেরজন প্রোফাউন্ডলি মিউজিশিয়্যান। কবিও, উল্লেখযোগ্য, বটে। এদের মধ্যে বুকৌস্কি বয়সে সবার বড়। নাইন্টিনটোয়েন্টি বর্ন। গিন্সবার্গ ছয় বছর পরে, টোয়েন্টিসিক্স। বিল নট নাইন্টিনফোর্টি, ডিলান ফোর্টিওয়ান। জন্মসনক্রমানুসারে এই ইক্যুয়েশনে অ্যালেন গিন্সবার্গ ও চার্লস বুকৌস্কি পরবর্তী প্রায়-সমজন্মবর্ষ বব ও বিলের উপর ইনফ্লুয়েন্স রেখেছেন কি না, রাখলে কতটা, তা অবশ্য অন্য অনুসন্ধানসাপেক্ষ। তবে অগ্রবর্তী ঘটনা বা ফেনোমেনা মাথায় রাখলে পরবর্তী টাইম ও কোর্স অফ অ্যাকশন অনুধাবনে হেল্প হয়।

বিলের লাইফটা ট্র্যাজিক খুবই। মিশিগানের কার্সন সিটিতে জন্মের ছয় বছরের মাথায় মা মারা যান প্রসবকালীন জটিলতায়, পেশায় কসাই বাবা মারা যান বিষ খায়া। বাপের মৃত্যুর সময় বিল এগারো। অরফ্যানেইজে ছাড়া আর কোথায় আশ্রয় মিলবে এতিমের? সো, ইলিনয়ের একটা এতিমখানায় বিল অ্যাডমিট পান। অচিরে ব্রেইকডাউনের শিকার পয়লাবার। এই ব্রেইকডাউন পরবর্তী জীবনে তার লাইফে ফিরে ফিরে এসেছে এবং স্থায়ী একটা ছাপ রেখে গেছে বিলের লাইফে। এতিমখানায় এবং অ্যাসাইলামে একের পর এক ধারাবাহিক ব্যুলিয়িঙের শিকার বিল মানসিক বৈকল্যের কবলে পুরা তার কৈশোর তারুণ্য ও প্রারম্ভ যৌবন সাফার করেন। বৈকল্যমুক্ত হয়েছেন অবশ্য, কোটআনকোট বৈকল্যমুক্ত, প্রতিষ্ঠিতও হয়েছেন পেশায়। ইউনিটিচার ক্যারিয়ারটা তার অনেক বছরের দীর্ঘ। কবিতা লিখে গেছেন অবিরল। বই ছেপেছেন, তা-ও অবিরল। ছবি এঁকেছেন, নানা মাধ্যমে, ছবি তুলেছেন স্টিলক্যামেয়ায়। সেসব সমস্তই বিল নট আর্কাইভে অ্যাভ্যাইল করা যায়। ফ্রি।

কিন্তু অটোবায়োগ্র্যাফিক এইসব তথ্য তো আর বিলের কবিতা পাঠে হেল্প করে নাই আমারে। না, তা করে নাই ঠিকই, কিন্তু আবার করেছেও। তবে এইটা আনট্রু নয় যে সিক্সটিস বা লেইট সেভেন্টিসের আর্লি এইটিসের বিটি হিপি লাইফস্টাইলিশ ক্যারিশমা কার্দানি বিল নটের নাই, জিনিশটা প্রাথমিক বিল নট রিডিঙের এক পর্যায়ে রেফারেন্স রচনাদিতে দৃষ্টি দিলে মেহসুস হয়। এই জিনিশটা আকর্ষণ করে আমায়, বরাবর, একটা মানুষের মালমাত্তা থাকা সত্ত্বেও মুৎসুদ্দিদের মক্কেল হয় নাই। বিরল অভিজ্ঞতা, আমাদের শিল্পকলায়। বারো জায়গায় বিকি খাওয়া মাল সবগুলো। লোকাল ও ন্যাশনাল। বিকি খাওয়া মাকাল। বাংলা ভাষার বাইরে এমন অনেক কবির সঙ্গে চেনাজানা আমাদের রয়েছে যাদের প্রাইম পরিচয় তারা বিক্রয়যোগ্য নয়। বিকি খায় নাই তারা। আংরেজের যেই লিগ্যাসি যেই নসিব তা কী আর বাংলার হয়? অ্যাজ অ্যা রেজাল্ট, কবিরা সবাই কিলিঙের সময় গাইতেসিলো জয় রাজার যাবজ্জীবন ছলচাতুরি নিকেশনীতির জয়। ইহা আর কোত্থাও নয়, কেবল বাংলায় সুলভ হয়।

খিয়াল করবেন। ওই সময়েই, দুইহাজার তেরো চৌদ্দ পনেরো পরম্পরা টাইমটায়, বাংলাদেশ কী করতেসিলো, কোথায় কী চিরতরে এক্সটিঙ্কট হয়া যাচ্ছিল, ওভারনাইট, চউখের সামনে, দেশের লেখকদের বিশেষ করে কবিদের এইসব কোনোদিকে ভ্রুক্ষেপ ছিল না শাসকের সঙ্গে শাদিসাঙ্গায় যাওয়া আর সেল্ফি খিঁচায়া সামাজিক সংযোগ মাধ্যমে পার্ট লওয়া ছাড়া। তারা প্রত্যেকেই ছিল জমিজবরদখলকারীদের কট্টর কোলাবোরেটার। অতি বিকৃতভাবেই নির্বিকার কিম্ভূত নিরীহ জন্তু। ওই টাইমটায় এইসব দেখতেসিলাম আর খুঁজতেসিলাম বিকি-না-খাওয়া বাঁকা শিঙের কবি পৃথিবীতে আছে কি না অ্যাভ্যাইল্যাবল দুইচাইরটা। আগেই পঠিত বিট ও অন্যান্য অ্যান্টিপোয়েট্রি ম্যুভের মশহুর কবিদের বাদ দিয়া আমি চাইতেসিলাম একটু আন্ডারকারেন্ট অপরিচিত কবিদেরে পেতে। এইভাবে একসময় বিলের লগে দেখা। অ্যাট ফার্স্ট সাইট নয়, পিডিএফটায় টানা কয়েক মাস কাটানোর পরেই ডিসিশন লই বিল নট পড়ব।

অনুবাদ খুব যে সচেতন করেছি এমন নয়। এমন হলে সিলেকশনের একটা ধারা/প্রক্রিয়া থাকত। অনূদিত কবিতাগুলো দৈবচয়ন প্রক্রিয়ায় গৃহীত। শুধু পূর্বসিদ্ধান্ত ছিল সংক্ষিপ্ত কবিতাগুলি থেকে ট্র্যান্সলেইট করব। শর্ট, ব্রিফ, সংক্ষিপ্ত। নটের শুরুর সময়টায়, ষাইটে, অ্যামেরিকান কবিতায় ব্রিফ পোয়েমের একটা বাতাস এসেছিল ও অনেকদিন অবস্থানের পরে একসময় যেমন বিদায় নেয় আর-পাঁচটা কাব্যতরঙ্গ তেমনি বিদায় নিয়েছিল। শুধু বিল নট বিদায় জানান নাই ব্রিফ পোয়েমের প্রকরণটারে। এইটাই হয়ে ওঠে বিলের রিস্টমার্ক। লঙ পোয়েম প্রচুর লিখলেও লোকে তারে চেনে ব্রিফ পোয়েমের কবি হিশেবে। এতটাই সিগ্নেচার বিল নটের ক্ষেত্রে ব্রিফ পোয়েমস্। কবুলও করেছেন তিনি ইন্টার্ভিয়্যুয়ে যে এই কিসিমের ক্ষীণ কলেবরের লেখাগুলায় বিশেষ প্রাঞ্জল হতে পারেন তিনি। জীবনভর তিনি ব্রিফ পোয়েমস্ লিখে গেসেন, আনইউজুয়্যালি ব্রিফ, কখনও শুধুই শিরোনাম ও তলায় একটা মাত্র শব্দে সম্পূর্ণ কবিতা, প্রচুর ওয়ানলাইনার লিখেছেন, প্রচুর শিরোনামহীন ও একই শিরোনামে একাধিক অনেক কবিতা লিখে গেছেন তিনি।

প্রোলিফিক রাইটারদের ক্ষেত্রে এমন হয়। বিলের ক্ষেত্রেও লক্ষ করেছি তিনি একটি ছোট্ট কবিতা সামান্য শব্দবদল বা কাব্যচরণে শব্দের স্থানবদল ঘটিয়ে একটি ভিন্ন কবিতা আকারে অ্যান্থোলোজিতে রাখতেসেন। ঘটনাটা বারবার ঘটতেসে দেখে মনে হয় এইটা কবির অভিপ্রেত। প্রোলিফিকদের বেলায়, আমাদের বইপুস্তকের ভাষায় বহুপ্রজ/অতিপ্রজ বলে, এই রিপিটেইশন এই পুনরাবৃত্তি এই পৌনঃপুনিকতা থাকবেই। এই তর্জমাগোছায় ন্যারেইটেড পরিস্থিতির কিছু তো প্রমাণ রাখা হয়েছেই, রিডার মাত্রে টের পাবেন। কবিতাগুলার শিরোনাম অনুবাদ করা হয়েছে বাড়তি হিশেবে, মূলের ইংলিশ শীর্ষকগুলা অ্যাজ ইট ইজ অরিজিন্যালি ইন দি অ্যান্থোলোজিস্ রাখা হয়েছে বাংলা বানানে অ্যাট দ্য ফার্স্ট প্লেইস্। এইভাবে রেখে গেলে মূল কবিতার টেক্সট লোকেইট করা ইজি হবে আন্দাজ করেছি।

বিল তার কবিতায় একটা সোজাসাপ্টা সকালবেলার রইদের আলো দুমড়েমুচড়ে দিতে পারেন, তেমনি পারেন একটা গ্লুমি ফেইসেও ফোকলা দাঁতের হাসি ফোটাতে। এই দৃশ্যবদলগুলি বিলের বাঁ হাতের খেল মনে হয়। এতই সিদ্ধ তিনি স্বীয় তরিকার সামান সামলাইতে। সেজন্যে শব্দের স্কন্ধে চেপে বসতে হয় না তার কবিতারে, ওয়ার্ডজাগ্লার হতে হয় না তারে, তিনি ভর করেন দৃশ্যের উপর। যত কম শব্দে পারা যায় তিনি দৃশ্যটা আঁকেন, পাশে একটা বিসদৃশ্য, পাশে একটা, আরেকটা, এমন এক বিসদৃশ্যমালা আবিষ্কারের সূত্র আমরা পাই বিল নটের কবিতায়। ব্রিফ এবং লঙ উভয় কিসিমের কবিতায় তার নিজস্ব কয়েনেইজের টোন ঠার করা যায়। আইডেন্টিক্যাল। অস্বস্ত্বিকরভাবে ইন্ট্রেস্ট্রিং। উইকিশিক্ষক ক্রিটিক বীক্ষকদের বলা ক্যারেক্টারিস্টিক্সের বাইরে এই কথাগুলা রাফলি বলে রাখা যায় এই ভূমিকায়।

আর, উনার ক্রিটিক্যাল অ্যাপ্রিসিয়েশনগুলাও খুবই মিশ্র। অনেকেই উনারে ‘আনমিস্টেইক্যাব্লি জিনিয়াস’ যেমন বলেছেন, অনেকে আবার উনারে গোনাগ্রাহ্যিতে নিতে রাজি না, অনেকেই বিলকুল বোগাস ঠাউরেছেন। উনার প্রথম বইটা ফেনোমেনাল হয়ে উঠেছিল কবির স্যুইসাইডসংবাদের সুবাদে, যদিও পরে দেখা যায় দিব্যি জিন্দা আছেন কবি। কিন্তু বইটা পাদপ্রদীপের আলো লভেছিল। প্রথম বইয়ের কবিনাম ছিল সম্পূর্ণ অন্য, ওই নামের কবিটি দ্বিতীয় বই থেকে ফেরেন নাই বিলের মৃত্যু পর্যন্ত। একদিক থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদনায় বিজ্ঞাপিত মিথ্যা আত্মহননসংবাদ অসত্যও নয়। কিন্তু হকচকিয়ে দেয়ার এই অভ্যাস বিলের বইগুলায় দেখা যায় নানান ভঙ্গিমায়। বিজ্ঞপ্তি বিলির অভ্যাসটি বিল চালু রাখসেন উনার ফার্স্ট টু লাস্ট পাব্লিক্যাশনগুলায়। সিনেমার ডিসক্লেইমারের কায়দায় তার বইগুলার টাইটেল পেইজের পরের কয় পেইজে এসব সাবকন্টেন্ট ছাপানো। উয়্যার্ড মনে হলেও বইয়ের ভাবসাবের লগে বেশ বনে যায়। একইভাবে ব্যাককাভারেও কবি ক্রিটিকদের কড়া গালিগালাজগুলা পাব্লিশে পিছপা হন না। বিলের বই তিনচাইরটার পিডিএফ দেখলেই বোঝা যায় এই কবি বিপ্লবীও নন, ভাববিলাসীও নন, পুতুপুতু প্রেমিকও নন, পোঁদপাক্না পুঙটাও নন। তবে? এই কবি কিম্ভুত। উয়্যার্ড। অপিচ মায়াবী। অ্যাডোরেবল।

শর্ট ও কমন একটা বায়ো সর্বত্র সুলভ, যেখানে বিলের ট্রাবল্ড আর্লি লাইফ থেকে ফাইন আর্টসে মাস্টার্সধারী বিল পরবর্তীকালে পেশাজীবনে সুস্থায়ী ছিলেন বোঝা যায়। কি কি বিশ্ববিদ্যালয় পাশ দিসেন, পড়াইসেন কোথায়, কারা তাদের লেখাজোখায় বিল নটের ইনফ্লুয়েন্স স্বীকার করসেন সমস্ত গ্যুগল করলে মেলে। তেমনি বিলের কবিজীবনে লব্ধ রিকগ্নিশনগুলা, অ্যাওয়ার্ডগুলা, আরও অনুষঙ্গাবলি মিলবে গ্যুগলে। গেরিলা পোয়েট্রি দিয়া বিল তার কবিক্যারিয়ারটারে একটা অ্যান্টিক্যারিয়ার করে তুলতে যেন সচেষ্ট সবসময়, এইটা তার বইগুলার ভাবভঙ্গিমায় ঠাহর হয়। গেরিলা পোয়েট্রি জিনিশটা আনলক করি তিনলাইনে। ন্যাতানোপোঁতানো কবিতা, কাব্যজবজবা কবিতা, লেখেন নাই। তার কবিতায় কাব্য চোরাগোপ্তা। শাদামাটা কাটাকাটা লাইনগুলায় কাব্য গোপন করা থাকে, ডেলিবারেইটলি বিল যদিও কবিতা থেকে ঝেঁটায়া কাব্য দূর করবার পন্থী। তিনি তাতে সফল হইসিলেন।

আর, কী যেন রয়ে গেল বলবার, ও হ্যাঁ, বিলের শাদিসাঙ্গার খবরান্তর। আমি পাই নাই। ঠিক খুঁড়ে দেখিও নাই। বাচ্চাকাচ্চাও চোখে পড়ে নাই কোথাও। বলতে যেয়ে মনে পড়তেসে শিমুলপুরের বিনোদিনী কুঠির বিনয় মজুমদারের মুখটি। বিলের পয়লা কাব্যগ্রন্থ ‘নৌমি পোয়েমস : কর্প্স অ্যান্ড বিন্স’ প্রকাশ করসিলেন অদ্ভুত সেই আত্মনিহত কবির বিজ্ঞাপনপূর্বক কোনো এক সন্তের বকলমে, প্রচ্ছদে সেইন্ট ফার্স্টনেইমধারী সেই কাল্পনিক কবির জন্মসন উনিশশ চল্লিশ, যা বিলেরও, বলা বাহুল্য বইপ্রচ্ছদে সেইন্টের মৃত্যুসন উনিশশ ছেষট্টি ছিল বিলের কাব্যজগতে পদচারণ করবার গোড়ার দিককার বছর, পরবর্তীকালে এই বইটি বিলের নামেও প্রকাশিত হতে দেখসি আমরা, কাব্যগ্রন্থের নৌমি বিলের মিউজ ও সমকালীন মার্কিন নারীকবিদের মধ্যে অ্যাক্টিভ নৌমি লাজার্ড। পরে এদের ভিতর কোনো পরিণয় সাধিত হইসিলো বলিয়া খবর পাওয়া যায় না।

আর কিছু বলা বাকি আছে কি না, আদি থেকে এ অব্দি রিভাইজ দিয়া আসবার আগে একটা কথা মাত্র বলে যাই। ইংরেজি কিংবা বাংলা দুনো ভাষার কোনোটাতেই বিশেষ মাস্টারি মুনশিয়ানা আমার নাই। তাতে আক্ষেপও থোড়াই। কিন্তু বুঝি না-বুঝি ভাইব্রেইটেড হই সমানভাবেই দুনো ভাষায়। এক্সপ্রেশনগুলা দ্বারা তাড়িত হই। সিচুয়েশনগুলা কানেক্ট করি ইমেইজ ও অন্যান্য অলঙ্কারবাহিত। শব্দার্থসঞ্জাত অনুবাদ ফলে আমার দ্বারা নামুনকিন। সেই চেষ্টা আমায় করতেও হয় নাই। বিলের কবিতা আমায় তুড়িতেই বাজিয়েছে। যে-কবিতা আমায় তুড়িতেই বাজাইতে ব্যর্থ হয়েছে, সেই কবিতা আমি রিডআউট করে গেলেও অনুবাদ করি নাই। ইজি এই এক তরিকা আমি বলতে পারি ফলো করে গেসি অনুবাদকালে। এখন পাঠকেরে এই বাংলাগুলা বাজাইতে পারে কি না তুড়িতে, দেখবার আছে। দেখা যাক। নইলে অরিজিন্যাল তো লুকায়া রাখি নাই। লিঙ্ক দিয়া রাখতেসি। দিস ওয়ে অ্যারাউন্ড অর দ্যাট, কাম লেট’স্ গেট ভাইব্রেইটেড, লেট’স্ প্লে অন!

অনলাইন সোর্সগুলায় বিল নট চৌদ্দয় জীবনাবসানের আগ পর্যন্ত সশরীর সরচন হাজির ছিলেন। সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাক্টিভলি নিজেরে এনগেইজড রেখে গেসেন। দুষ্প্রাপ্য নয় আর-পাঁচ কবির ন্যায় তার কবিতাবলি। কিংবা পাব্লিশারের কাছে মালেবর্গায় নিজেরে মর্টগেজ রাখেন নাই তিনি। বিল অ্যাভ্যাইল্যাবল আগাগোড়াই। বিরল এই সুলভ থাকাটা। কাজেই, নিবন্ধমতো বর্তমান ভূমিকায় আমরা ট্রাই করেছি সার্চইঞ্জিনের কথাবার্তাগুলার বাইরেকার কথাবার্তা এক্সপ্লোর করবার। তাতে ছ্যাঁতরে গেছে লেখার অভিমুখ পথে পথে। যা গেছে তা গেছে। একভাবে গেলেই হলো। কোথায় যে যায় এত এত লোকগুলায়! কালের কীটে হেগে যায় আমাদের যাবতীয় লেখাজোখায়। কাঁঠালরঙা সামারে আবুল খায়ের গ্রুপের মুর্গা মার্কা ঢেউটিনের চালে একটা আম পড়ল। মালদই আম। পড়ন্ত দুপুর দমকা হাওয়ায় প্রায় বিকেলের দিকে নেমে গেল।

ভূমিকাটুকু মুড়ায়া আনতে হলো।


বিল নট অর্ধশতাধিক
ব্রিফ পোয়েমস্ বাই বিল নট
চয়ন, অনুবাদন ও ভূমিকা : জাহেদ আহমদ


ওয়াইজ স্যেয়িংস / অমৃত বচন
জঙ্গলে একটা জামগাছের ছায়ায় বসে থাকা
বা বাড়ির ভিতর, ঘরের মধ্যে, চেয়ারে, একা
কাণ্ডজ্ঞানীদের দামি দামি নিরুক্তিরা পাশ দিয়া বয়া যায়
কে শোনে কে শোনে না তা বুঝে ওঠা দায়
এত শত পদদলিত পুষ্পে এবং পাতায়।

 

ভিশন / দেখা
সুনন্দা চাঁদের আলো
সুধন্য হে সূর্যরশি

টিভিস্ক্রিনের অতিকায় কালো
হোক-না আর্টেমিস হোক উর্বশী

কিংবা রাত্রিদেবী নিদ্রার কোলে
এতিমের মতো অসহায় আমি বিছানায় পড়ি ঢলে

 

এক্সাম্পল / উদাহরণ
আমার চিন্তাভাবনারা সব একইরকম
দৈর্ঘ্যের — তারা পঙক্তিদীর্ঘ,
বাক্যদীর্ঘ নয় : আপনি চিল্লায়া উঠতে পারেন
যে লেখার পৃষ্ঠায় চিন্তাগুলারে কেমন অসমান দেখায়
ডিউরেশনের দিক থেকে,
কিন্তু কসম খায়া আপনাদেরে জানাই
হে অনিয়ন্ত্রিত গদ্যপাঠকেরা,
আমার মনের মাধ্যমে
এই চিন্তাগুলার উত্তরণে
সমপরিমাণ সময় লাগসে প্রত্যেকটায়।

 

মাই ফেব্রিট ওয়ার্ড / আমার প্রিয় শব্দ
‘মনোযোগমুহূর্ত’ শব্দটা আমার ভারি প্রিয়
কারণ আমি কখনো শেষ করে উঠতে পারি না
আস্ত শব্দটা আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত পড়ে।

 

রং / ভুল
চাই মিসান্ডার্স্টুড হতে;
মানে,
চাই আন্ডার্স্টুড হতে পাঠকের পার্সপেক্টিভ থেকে।

 

ফেইথ / বিশ্বাস
যারা নতজানু হয়
আমার সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে
তারাই আমার দোয়াদুরুদের উত্তর।

 

টু অ্যা ডেড ফ্রেন্ড / প্রয়াত বন্ধুকে
শোকপোশাক জীর্ণ
গোটানো বলেই ভিতরভাগটায়
শাদার বিচ্ছুরণ লক্ষ করা যায়
ঠিকঠাক থাকে যদি
বিপরীতে বিহার নিরবধি

বিরাজ করে এতটুকুও যদি সত্য
তুমি আমি নিতান্ত অনিত্য
হয়া যাব দুই, ভিন্ন
নিশ্চয় এক নয়
দেখতে যদিও অভিন্ন মনে হয়

 

অ্যাডভাইস ফ্রম দি এক্সপার্টস / বিশেষজ্ঞবৃন্দের উপদেশ
শুয়ে পড়লাম শূন্য সড়কে এবং গোছায়া রাখলাম
নর্দমার আবর্জনায় আমার পা
আবাসিক উঁচু ভবনগুলা থেকে একগোছা হাবা
কার্নিশের কিনারায় এসে চিল্লাইতেসে, দিও না, লাফ দিও না।

 

আন্টাইটল্ড / শিরোনামহীন
ভাল্লাগে যেভাবে গোরস্থানে
গোরবাসীরা পাহারা দ্যায় গর্দা ময়লা
যাতে না-ছড়ায় চারপাশে খোলা

মানুষের বীজগুলা। তারা বাঁচায়
বীজগুলারে, যেন নাগালে না-পায় চাষায়
মৃতরা না-লাগে যেন মনুষ্য-আহার যোগানে।

 

মেসেইজ / বাণী
বাণীবাহক আমারে পাঠানো হইসে এখানে এক্ষণে
সব্বার ভিতরকার প্রতিভা বাইর করবার মিশনে,
এই প্রতিভাই সত্যিকারের হকদার
যাহা আমি বহন করে আনসি তার —
প্রতিভাই পারে করতে পাঠোদ্ধার
এই চিরকুটে লেখা ভাষাভঙ্গিমার;
সকলেরই আছে এই প্রতিভা, আছে মেধা সক্কলের ঘটে
কেবল আমি ছাড়া, তাই তো আমি একা
রাখি তোমার পড়ার টেবিলে এই লেখা
আনি বয়ে সেই বাণী উদ্ঘাটনকল্পে তোমারই নিকটে।

 

ক্ল্যাস্প / করতালি
প্রেমিকপ্রেমিকার হাতজোড়া ক্যামিয়ো ভূমিকায়
হাতের তালু পরস্পরের মাপমতো মুখে বসায়
আঙুলে প্যাঁচায়া আঁকা মাংশখোদাই চিত্রল বন
মুঠা পাকালেই ইয়াদ হয় প্রেম ও প্রত্যাবর্তন

 

আন্টাইটল্ড / শিরোনামহীন
অভিনয়শিল্পীরা তাদের যার যার স্ক্রিপ্ট রাখে স্তূপাকার
স্টেইজের কিনারায় যাতে দেখা যায় স্ক্রিপ্টের পাহাড়
গড়ে ওঠে তাদিগের আর অডিয়েন্সের ভিতরে,
হন্তদন্ত ছোটে সবাই স্ক্রিপ্টরাইটারের ব্যাকস্টেইজের ঘরে
যেয়ে বলে স্ক্রিপ্টরাইটার মশাই
দেয়ালটা ঠায়ঠিক উঠাইতে আমাদের আরও আরও ইটসদৃশ স্ক্রিপ্টের যোগান চাই।
(থিয়েটার যবনিকা নামায় একটা পাৎলা কাপড়ের ত্যানা ধরে)

 

কন্ট্রিভ্যান্স / আবিষ্কার
প্রকৃত আর্টিস্ট তিনিই
যিনি অকাতরে মরতে পারেন
ক্রিটিকের হাতে।

 

নোট (নৌমি পোয়েম) / নোক্তা (নৌমিকাব্য)
ফেলে এলাম
ডাইন দিকেরটায় যেখানে স্তনের বোঁটায়
আদর কুড়ায় নীড়ের পাখির ন্যায়
কালো রঙের কাঁচুলিটারে
রেখে এলাম ঝোলানো তোমার গোসলখানার চৌবাচ্চার কিনারে

 

আন্টাইটল্ড / শিরোনামহীন
যেই ভাবা সেই কাজ
কম্পাসটা ফালাই দিলাম
অগ্নিগিরির মধ্যে
যাতে তার লাভা
রাস্তা পায় বারাইবার।

 

হিস্টোরি / ইতিহাস
আশা … হাঁসাহাঁসির বাসা।

 

অ্যাট দ্য ক্রসরোডস / চৌমোহনায়
বাতাস আমার পায়ের কাছে একটা কাগজের পাতা পাঠায়।

তুলে নিলাম হাতে।

আমার মৃত্যুপরোয়ানা লেখা নাই তাতে।

 

আই শ্যুড হোপ সো / আশা করা যায়
পরের বছর যখন আমার এই বই
মণ্ড হবে এবং সেই মণ্ড পুনরুৎপাদন প্রক্রিয়ায়
রূপ নেবে মুদ্রিত কবিতাসংগ্রহের ছাপানো বইয়ের পৃষ্ঠায়,
আমি কী তখনও জিন্দা থাকব তখনও কী লিখব এই এবং ওই?

 

মাইনর পোয়েম / কনিষ্ঠ কবিতা
সাড়া বলতে একটাই আছে
একটা বাচ্চার কবরের কাছে
যেয়ে শুয়ে পড়া আর মুর্দার ভান করা

 

ওয়ার্স / বিচ্ছিরি
আমার সারাজীবনে আমি কিসুই করি নাই
কিন্তু মনে একবিন্দু দ্বন্দ্ব না-রেখে স্ট্রেইট বলতে চাই
জীবনের একগাছা চুলও কাউরে বুঝায়া বলতে আমি নির্দ্বিধ অপারগতা জানাই।

 

পোয়েম / কবিতা
এমনকি নিরাই নিঝুম যখন সমস্ত পথঘাট,
এমনকি নিশুতি রাইতের বেলায়, রাস্তার নিয়নবাত্তি ডিজিটাল আর্ট
সকলেরই চোখেমুখে জ্বলজ্বল করে সত্য বলার ডাঁট।

 

পোয়েম / কবিতা
তোমার মরার পরে,
নৌমি, তোমার মাথাভরা কুকড়মুকড়া চুলগুলা পালিয়ে যেয়ে
একটা গুল্লুমুল্লু জন্তুতে রূপান্তরিত হবে, অনামা অচিন।

 

ওয়্যজ / এমন যদি হতো
বয়স যখন বিশ টু চল্লিশ
প্রতিদিন হাঁসফাঁস করতাম, ইশ
মরে যেতাম যদি!

ফোর্টি টু সিক্সটিফাইভ
রোজ গলা ফাটায়া চিল্লাই :
আই উইশ আই ওয়্যজ অ্যালাইভ …

পঁয়ষট্টি থেকে এর আর পর নাই
দিবানিশি নিজের লেখায় নিজেরে শোনায়া যাই
জীবন ও মৃত্যু : অভিপ্রেত নয় এই দুনোটার কোনোটাই

 

পোয়েম / কবিতা
শশশ্, আস্তে কথা কও, তুমি তো আমার বিছানার চাদরের দাগগুলার ঘুম ভাঙাই দিবা দেখতেসি।

 

ফ্রেইমপোয়েম / কাঠামকবিতা
ফার্স্ট কথা হচ্ছে, একটা হান্ড্রেডমিনিট ম্যুভি বানাও। তারপরে ওয়ান-মিলিয়ন-ফোরহান্ড্রেডফোর্টিফোর-থাউজ্যান্ড ফ্রেইম হাতে নাও, অথবা স্থিরচিত্রগুলা : আলোকচিত্রকল্পগুলার মাঝখান থেকে একে একে প্রত্যেক ফ্রেইম হাতে নাও, দুমড়াওমুচড়াও, প্রিন্ট করো, ওইটার চাইরদিক দিয়া আরেকটা ফ্রেইম স্থাপন করো, অতঃপর ওই ওয়ান-মিলিয়ন-ফোরহান্ড্রেডফোর্টিফোর-থাউজ্যান্ড দুমড়ানোমুচড়ানো ছবিরে একলগে ক্যামেরায় ধারণ করো, পরে একটা গ্যালারিতে লয়া গিয়া দাও ঝোলায়া, সারসুন্দর প্রণালিবদ্ধভাবে একলাইনে এমন করে ঝোলায়ো যাতে এই সিনেমার পয়লা ফ্রেইমটা টাইটেলদৃশ্যের দরোজার ভিতরকার হয় একইসঙ্গে প্রথম ও অন্তিম দৃশ্য, অন্তিম, সমাপ্তি দৃশ্য : বুইঝো ব্যাপারটা। তারপরে যে-কাজটা করবা, তা শোনো বলি, শোনো মন দিয়া, গ্যালারিতে এক-মিলিয়ন-চারশচল্লিশ-হাজার পিকচার দেখতে আসা পাব্লিকগুলারে ক্যামেরায় ক্যাপচার করো, যেন তারা এইভাবে একই অঙ্গে হয়ে উঠতে পারে দর্শক ও দৃশ্যবস্তুপ্রক্ষেপক

 

দি ফেইট / অদৃষ্ট
তরুণবেলার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে দেখসিলাম একটা তারাখসা
জানসিলাম তারাটি মিলিত হবে এবার তার মনের মানুষের সনে
কিন্তু ধূমকেতুটি পৃথিবীতে আছড়ে পড়ে ভীষণ জোরে এবং বেগে
বেশি নয় বেশ-খানিকটা কাত হয়ে ঢলে পড়ার সময় টের পাই
কাছেপিঠে কোথাও তার সঙ্গে মিলিত হবার চান্স আমার নাই।

 

আন্টাইটল্ড / শিরোনামহীন
হাতগণকের কাছে যাবার আগে আমি রীতিমতো লাগিয়ে ফেললাম
হাতের তালুতে একজোড়া আয়না, যাতে অপরিবর্তনীয়
পঙক্তিগুলা আর তার আকারপ্রকার যা আমার ভবিষ্যতের খবর বলে
সেইগুলা আসলে কেবলই কিছু পাঠকের চউখের রিফ্লেকশন মাত্র,
চউখের পাত্তি, অক্ষিগোলকের গড়বড় যা কিনা সময়মতো
অন্ধত্ব-অভিমুখে ধায় … এ-অব্দি লিখে আমি
আবৃত্ত কবিতাটার একটা পুনশ্চ অধ্যায় লিখতে শুরু করব ভাবতেসিলাম।
তোমার অভিমত কি, এ-বিষয়ে, হে ভবিষ্যৎবক্তা নারী, সিবিল?

 

এমটি / নিঃস্ব
আয়নায় এতটা না
ওয়ালেটে যেমনটা আমায়
নিঃস্ব দেখায়
কেননা আমার তো মনে মনে জানা
বাস্তবিক কপর্দকশূন্য ওয়ালেটখানা

 

থ্রি শর্ট ল্যভ পোয়েমস / তিনটি ক্ষীণ প্রণয়ের পদ্য
প্রেমিকার ঠোঁটে সবসময় সবুজ জ্বলে, ট্র্যাফিকলাইটের মতো লাল জ্বলে না।


তোমার নগ্নতা : আপেল যখন আধখানায় ভাগ করি তখনকার আওয়াজের মতো।


প্রেম প্রায় সবসময় শুরুর আগের ঝাপসা দশায় ফিরে ফিরে যেতে চায়।

 

অ্যানাদার কোল্ড ওয়ার পোয়েম / আরেকটা স্নায়ুযুদ্ধের কবিতা
কাজেই কী আসে যায় বাঁচো যদি
একমুহূর্ত বেশি
আমাদের তুলনায়
এমনিতেই তুমি আমাদের কাছে
একজন সার্ভাইভার হিশেবে বিবেচিত হবা সবসময়

 

আনস্পিকেবল / অবর্ণনীয়
কমা যতিটি নির্দেশ করে এমন থামা যা ছ্যাদা পাইলেই চোঁয়ায়।

 

সেভেন্টিন সিলেবল পোয়েম / সতেরো অক্ষরের কবিতা
পিঙ্ক বাবলটারে মনে হয়
আগের চেয়ে বেশি লাল প্রত্যেকবার ফুলাইবার সময়
আমার রক্তখাওরা বাবলগাম হৃদয়

 

অঁ পসঁ / প্রসঙ্গক্রমে
যখন ঘুরতেসিলাম কক্ষপথে
এই পৃথিবী
মিলিমিটার উচ্চতায়
দেখলাম তার সুড়সুড়ি।

 

ডেথ / মৃত্যু
ঘুমাবার সময় হাতজোড়া আড়াআড়ি ভাঁজ করে রাখি বুকের উপর।
অন্ত্যেষ্টিকালে এভাবেই তারা আমায় সাজায়া রাখব পরিপাটি।
দেখে যেন মনে হয় নিজের গহিনে উড়াল দিতেসি আমি।

 

পোয়েম / কবিতা
সারাটা লাইফ কিসুই ছিল না আমার,
ছিলাম অধিকতর নাচার,
বলব না টুঁ বাক্যটিও এ-ব্যাপারে আর।

 

পোয়েম / কবিতা
পরীক্ষা করি
নিজের গাত্রচর্ম
খুঁজে দেখি আছে কি না
ছিদ্র
শরীরে নির্দেশিত
প্রস্থানপথ

 

পার্ফেকশন
আঁখিপল্লব ভুলিয়া থাকবার অনিদ্রা আবিষ্কারকারী বিলিয়ার্ডের কিউবলগুলা   

 

মাইনর পোয়েম / ছোট পদ্য
সাড়া দিতে যায়া
একটা বাচ্চার কবরের সামনে খাড়ায়া
আমি চিন্তা ছাড়া তার পাশে শুয়া পড়ি
মৃতের অভিনয় করি

 

ডেথ / মৃত্যু
সুরভি খুলে দেয় চোখজোড়া তোমার।
হব তোমার কেশবিন্যাসের মেষপালক।
আমার শ্বাস নেয়া বাতাসে বানানো ভোর।

 

গ্যুডবাই / বিদায়
এই পদ্যটুকু পড়ার সময় বেঁচে থাকো যদি,
বন্ধ করে ফ্যালো তোমার চক্ষুজোড়া। আমি
আছি আঁখিপল্লবের তলায়, কালো ক্রমশ।

 

হোমওয়ার্ক / অনুশীলনী
প্রিয় পাঠক ভাইবইনবন্ধুগণ
অনুরোধ ভুলবেন না অনুশীলন
নিম্নরেখায় দাগিয়ে যেতে আমার শব্দগুলায়
মুছে ফেলার পরেও যেন শব্দগুলারে দেখতে পাওয়া যায়।

 

মিস্যানমায়োপিয়া / হতদৃষ্টিক্ষীণতা
বলা হয়ে থাকে প্রত্যেকবার পলক ফেলায়
আঙ্খিজোড়ারে ভেজায় এবং রাখে সুরক্ষিত —
কিন্তু মহাবিশ্বের মহাদৃষ্টি কী এমন পড়সে ঠেকায়
যে, আমার মামুলি জীবনের আঁখিপল্লব দিয়া করবে নিজেরে সুফলমণ্ডিত?

 

পোয়েম / পদ্য
এমনকি রাস্তাঘাট যখন শূন্য ও সুনসান,
এমনকি রাতের বেলায়, রাস্তাধারের স্টপসাইনগুলা
থামায় না তার সত্য কথা বলা।

 

পোয়েম / পদ্য
তোমার ঘরে ফেরার পথের পাশে একটানা গাছসারি, লজ্জায় আনত দিঠি
ছিদ্র করে ঢুকে যায় সেখানে পেরেকটি

 

পোয়েম / পদ্য
তোমার মরবার পরে,
নৌমি, তোমার চুলগুলা পালায়া যায়া হতে চাইবে
একটা গোলগাল অ্যানিম্যাল, অনামা।

 

নৌমি পোয়েম / নৌমিকাব্য
আমাদের হাতজোড়া থাকে যখন একা,
তারা জোড় খুলে মেলান হয়, যেমন মুখের রেখা।
কূল নাই কিনার নাই তার
যখন যেমন ইচ্ছা আমাদের হাত খুলিয়া যাবার।

 

পোয়েম / পদ্য
প্রিয় খোকাখুকুরা,
ভুলে যেয়ো না
আমার লেখা শব্দগুলা আন্ডার্লাইন করতে
তোমরা তাদেরে মুছে ফেলার পরে।

 

পোয়েম / পদ্য
দরোজাটা খোলা
কিন্তু ওই দেয়াল
খুলে দেয় যে দরোজাটা
থাকে অপেক্ষায়
কেউ ঢুকবে এসে

 

পোয়েম টু পোয়েট্রি / কাব্য লইয়া কবিতা
কবিতা,
আপনে একটা কারেন্টের তার,
একটা জাদুটোনা কারবার, একটা মাঠ — মহাশূন্যের ন্যায় বিস্তার
ঘুমন্তের পায়চারি করবার সময়কার অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মতো অনিশ্চিত অনুমিতা!

 

হেয়ার পোয়েম / কেশকাব্য
চুল জিনিশটা জান্নাতি জলের ফোয়ারা আমাদের চউখের সামনে দিয়ে বয়ে যায়
মেয়েরা হামেশা তাদের চুলের আচ্ছন্ন অন্ধকারে চেতনালুপ্ত ও অশব্দ ঘুমায়।

 

ক্যুয়িকি / চপলা
কবিতা
অনেকটাই
যেন
চোরাবালির
উপর
যৌনতা
কাজেই
শৃঙ্গার
হওয়া
দরকার
যথাসাধ্য
সংক্ষিপ্ত

 

স্লাম সিন / বস্তিদৃশ্য
গরিব পোলাপান খেলতেসে
একসেট ড্রাকুলার দাঁত নিয়া
হাত বদলে বদলে একেকজনে —
এখানে এমনকি মৃতরাও
দিন খায় দিন আনে

 

টু (ক্যাপিট্যাল) এক্স / এক্স (বড়হাতের) সমীপেষু  
তুমি অনেকটা কাঞ্চিকাটা
আইসক্রিমকাঠি যেন জানি না আমি
ইস্তফা দিব
না চাটতে থাকব

 

ডেইজ্ / দিনগুলা    
ছাদের ঘুলঘুলি ঈদপ্রভাতের মতো উৎসবমুখর
কিন্তু সন্ধ্যা এসে একেবারে মেঝেতে হুতায়া দ্যায়।

 

আইডিয়্যাল এস্থেটিক / আদর্শ শিল্পদৃষ্টি
কাউরে ডর দেখাইবার দরকারে আমি আমার গলাটা ব্যবহার করি

 

বেডিবাই / ঘুমুটাইম    
যখনই বিছানায় বডি নিবা পায়ের আঙুলগুলা দেখবা
— ফায়ারিং-স্কোয়াড

 

ইন্টেরাপ্টাস / বাধা
খাড়াও। কে তুমি।

আমি কবি। আমি সুইসাইডনোটের লাগি ফিলার লিখি। ধরেন :

আই ল্যভ ইউ।

ও আচ্ছা। ভালা। চালায়া যাও।

 

স্লিপ / ঘুম
আরেকটার গায়ে হাত বুলাই, অদৃশ্য চাঁদ।
সে আমাদেরে টেনে নেয় তার গুহায়।

 

স্লিপ / ঘুম
আমরা আরেকটা মাজাঘষা সাফসুতরা করি, দৃষ্টিগোচর নয় যেই চাঁদ।
বারায়া আসে এবড়োথেবড়ো গুহা আর আমাদেরে নিয়া যায় চাঁদের গুহায়।

 

ইন স্লিপ / ঘুমন্ত
আমরা তার চুল আঁচড়াই, অদৃশ্য চাঁদ।
তার গুহামুখগুলা বারায়া আসে এবং আমাদেরে তার ভিতরে নিয়া যায়।

 

আন্টাইটল্ড / শিরোনামহীন
হাতে হাত ধরি তারা হাঁটিয়া বেড়ায়।

 

প্রফেসি / গৈবিবাণী
যখন আমি টিভির দিকে এগিয়ে গেলাম
বেছে নেব কোনো-একটা চ্যানেলের নাম
তখনই স্লটমেশিনের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে বাণী
তুমি তো চলে যেতে লেগেছ বৎস্য বহু বহু দূরের মোকাম
যেতে চাও যাও শুধু রেখে যাও হাতের রিমোটখানি

 

ল্যভলেইড / প্রণয়প্রণালি
সাগর হচ্ছে অজস্র জাহাজের খোল বোঝাই একটা কার্গো অতিকায়
চান্দের আলোয় লেপ্টে রয় চিরকাল সূর্যের অনুপস্থিতি
আমার মুখাবয়বে তোমার আদরের চিহ্নগুলো সময়ের দরিয়ায়
আদায় করে নেবে একদিন তার মর্যাদা আর প্রীতি

 

স্যং / গান
ছায়া যবে ছেড়ে যায় কায়াটা আমার
চিল্লায়া বলি আমি, ‘এদ্দিনে গেলা!’
আমি যবে ফেলতে গেছি সঙ্গ ছায়ার
ছায়া চিল্লায়, বলে, ‘দেখব কয়দিন থাকতে পারো আমায় ছাড়া একেলা একেলা!’

তাই অবস্থাদৃষ্টে এমতো মনে হয় অনিবার্য
দুইজনের একজন
হয় যাইতেসি করে একের পর এক গলদ কার্য
নয় আমাদেরে করতেসে তারা বেঠিক সম্বোধন।

 

মাই এপিটাফ / আমার সমাধিলিপি
সমাধিপাথর
খোদাই করে
মোটা টাকা
আর্ন
করতে চান?
বিস্তারিত জানতে চাইলে নিচের নাম্বারে
হ্যালো করে জেনে নেন ফোনের ওইধারে :
সেভেন নাইন ওয়ান…

দ্রষ্টব্য :
দুর্ভাগ্যচক্রে টেলিফোনের নাম্বারগুলা পাঠোদ্ধারযোগ্য নয় আর
নাম্বারগুলার উপর দিয়া পার হয় হাজার হাজার রইদ বৃষ্টি বিপন্নকর তুষার।

 

হোয়ার / কোথায়
সেই তিরগুলা যারা
পালকের পরিবর্তে
ব্যান্ডেজ বহন করে
তাদের ধারালো অন্তে

 

ম্যেবি (টু ক্যাপিট্যাল এইচ) / হতে পারে (বড়হাতের এইচকে উৎসর্গিত)
একটা দাঁড়িচিহ্ন তটরেখায় বিস্তৃত
ফণীমনসায় আকীর্ণ সমুদ্র
খোঁচাখুঁচির জোখা নাই কাঁটাকণ্টকগুচ্ছ
হয়তো কিন্তু অথবা তাইলে এই সমস্ত তোৎলামো

এমনকি আমিও ধরি
কিসু বৈশিষ্ট্য
মনুষ্য সুরতের যখন
তোমার সঙ্গে থাকি।

 

মিস্টার রিভার / নদী মিয়া
মোহনায় পায়া যাবে এতটাই নিকটতর সমুদ্র
তবু উৎসবেদনায় সে পেছন ফিরা চায়, বেদনায়
জাগায় যে-বেদনা তারে, মাটিতে দাঁড় করায়।

 

সিকিউরিটি / নিরাপত্তা
থাকত যদি জাদুর গালিচা, ম্যাজিক কার্পেট
আমি সেইটা রাখতাম
সবসময় ভাসায়া
আমার সামনে
খাড়া, উল্লম্ব, দরোজার মতো।

 

আন্টাইটল্ড / শিরোনামহীন
যেভাবে হোক একভাবে
বা আরভাবে
রেস্ট নিই আমি চান্স পেলে।

 

আন্টাইটল্ড / শিরোনামহীন
মাথা রেখে একহাতে
অথবা পাল্টায়া আরহাতে মাথা
আমি বিশ্রাম লই।

 

আন্টাইটল্ড / শিরোনামহীন
ফিঙ্গারপ্রিন্টগুলা সাগরের ঢেউ
সময় ফেলিয়া যায় বিরামহীন
হস্তমুঠোয় একেকটা পাথরের নুড়ি।

 

আন্টাইটল্ড / শিরোনামহীন
একটা নাক
ভুলবেষ্টিত —
শোনা কানকথা। আদতে এইটা আমারই তো মুখমণ্ডল।

 

হাইকু / ত্রিপদ
স্বেদবিন্দু কপালে আমার
মনে হয় ব্রাইটার
যখন তা ডাইরেক্ট চক্ষের ওপর ঝরে।

 

দ্য ফাইন্যাল ওয়ার্ড / সমাপনী বক্তব্য
আমাদের সংবর্ধনাগুলার নাই বিদায়ের সম্ভবপরতা।

পোস্টস্ক্রিপ্ট : অ্যাটেনশন, প্লিজ! বিল নট শর্ট পোয়েমস্, বিল নট ব্রিফ পোয়েমস্, যে-নামেই ডাকেন অসুবিধা নাই, ‘বিল নট অর্ধশতাধিক’ লিডহেডের তলায় ধৃত পঁচাত্তর কবিতার একটা বাংলা সংকলন। লক্ষণীয়, মূল ভূমিকায় এমবেডেড কোনো লিঙ্ক নাই। ইচ্ছাকৃতই, লিঙ্ক প্রোভাইড না করাটা। তাতে অনেক সময় পাঠকেরে গাইডেড ওয়েতে মিসগাইডেডও করা হয়। পাঠকের স্বাধীন খোঁজ ও খুশি ইন্টেরাপ্টেড হয়। বিল নট লিখে গ্যুগল করলেই মহাকালের মুঠোফোনে এসে হাজির হবেন কবি। আর তার কবিতা। আর তার চিত্রকলা। আর তার পাড়াপ্রাতিবেশিক বিশ্ব। ব্লগস্পট, ওয়ার্ডপ্রেস ইত্যাদি ফ্রি সাইটগুলায় বিল নট অ্যাভ্যাইল্যাবল। সর্বোপরি বিলের নিজের আর্কাইভ্যাল ওয়েবসাইট। এই সাইটেরই পিডিএফ সেকশনে গেলে কেবল বই আর বই। বিলের নিজের হাতে এদের অনেকগুলা কাভার ডিজাইন করা। আর্টওয়ার্ক্স সেকশনে গেলে এক অন্য অনুধাবনীয় ভুবন। সূত্র অনেক, ব্যবহারকারীর অপেক্ষায়। রিসোর্সফ্যুল।—জাআ

বিল নট অর্ধশতাধিক
চয়ন, অনুবাদন ও ভূমিকা : জাহেদ আহমদ
গানপারপ্রকাশ : জুলাই ২০২৫


গানপারে অনুবাদ
গানপার কবিতার, কবিতার গানপার
জাহেদ আহমদ রচনারাশি

জাহেদ আহমদ
Latest posts by জাহেদ আহমদ (see all)
শেয়ার করুন:

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you