ববি রবসন। এই নাম ফুটবল নিয়া যারা একটু খোঁজখবর রাখেন তারা চিনবেন বলেই মনে হয়। ইপসিচ টাউন-এর মতো ক্লাবরে ইউরোপের সেরা বানাইছিলো। সাথে জিতছিলো এফএ কাপও। সেই ইপসিচ টাউন যারা কীনা এখন ইংল্যান্ডের লিগ ওয়ানে খেলে। প্রিমিয়ার লিগ তো দূরের কথা, চ্যাম্পিয়ন্সশিপও না। কী রকম ক্যারিশম্যাটিক হইলে ওই রকম একটা দলকে ইউরোপের সেরা বানানো যায় একটু চিন্তা করলেই বোঝা যাবে। এই ভদ্রলোক ইংল্যান্ড দলের কোচও ছিলেন। ম্যারাডোনার ঐতিহাসিক ‘হ্যান্ড অব গড’-এর গোলের ফলে তার দলের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিশ্বকাপযাত্রা শেষ হয়। বিশ্বকাপের পর সে হল্যান্ডের পিএসভির দায়িত্ব নেয়। ওইখানে পরপর দুইবার ডাচ লিগ জেতার পর ডাক পড়ে পর্তুগিজ ক্লাব স্পোর্টিং লিসবনে। সেখান থেকে শত্রুশিবির পর্তুতে। এই সময় স্পেন ও ইউরোপে ছিলো ইয়োহান ক্রুইফের বার্সেলোনার রাজত্ব। যাকে বলে বার্সেলোনার ঐতিহাসিক ড্রিম টিম। কিন্তু পরপর দুই বছর কোনও ট্রফি না জেতায় ইয়ুহান ক্রুইফেরও বিদায় নিতে হলো বার্সার ডাগআউট থেকে। তার স্থলাভিষিক্ত হলেন এই জাদুকরি ইংলিশ ববি রবসন। দুই বছরের চুক্তিতে। এসেই প্রথম সংবাদ সম্মেলনে যা বললেন তা রীতিমতো মুগ্ধকর। বললেন, আমি জানি ক্রুইফ কি ছিলেন। তার পরিবর্তে কাজ করা নিশ্চিতভাবেই চ্যালেঞ্জের। কিন্তু আমেরিকার প্রেসিডেন্ট যখন বিদায় নেয়, পরবর্তীকালে যিনি ক্ষমতায় আসেন তিনিও আমেরিকারই প্রেসিডেন্ট! সুতরাং চিন্তা করে ফুটবল দেখেন। ওই বছর ববির সাথে দু্ই বছরের চুক্তিতে অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে যোগ দেয় এখনকার স্পেশালওয়ান খ্যাত হোসে মরিনহো। বার্সেলোনা দলে তখন তারকায় ঠাসা। নামগুলো বলি। ফেনোমেনন রোনালদো, পেপ গার্দিওলা, লুইস ফিগো, লুইস এনরিকে, রিস্টো স্টইচকভ, লরেন্ট ব্লাঙ্ক। তারকায় একদম ঠাসা! প্রথম সিজনেই কোপা ডেল রে, স্প্যানিশ সুপার কাপ আর ইউয়েফা কাপ উইনার্স কাপ জিতলো (এই টুর্নামেন্টটা এখন আর নাই, সম্ভবত এইটাই বদলে ইউয়েফা সুপার কাপ হইছে।) তবে দুই পয়েন্টে লিগ খোয়াইলো রিয়াল মাদ্রিদের কাছে। কিন্তু এইটা একটা অজুহাত ছিলো। এই অজুহাতের চেয়ে বড় অজুহাত ছিলো যে দর্শকরা হোম গেমেও ব্যু দেয়। জিতলেও ব্যু দেয়। কারণ আসলে বোর্ডের বাজে রাজনীতি। একই পরিস্থিতির শিকার হয়ে ববিরও ক্লাব ছাড়তে হইলো। তার চুক্তি শেষ হওয়ার আগেই নিয়োগ পাইলেন লুইস ভ্যান গাল। বার্সেলোনার অফার পাওয়ার আগে একবার তিনি নিউক্যাসলেরও অফার পাইছিলেন। নিউক্যাসল ইউনাইটেড তার পরিবারের সাথে এত ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলো তবুও বার্সেলোনার মায়া ছাড়তে পারেননি। কিন্তু বোর্ডের রাজনীতির শিকার হয়ে তাকে বিদায় নিতে হয়। বার্সেলোনা ছাড়ার পর আবারো হল্যান্ডের পিএসভির দায়িত্ব নেন তিনি। ভালোই করছিলো ক্লাব। কিন্তু প্রিয় ক্লাব নিউক্যাসল ইউনাইটেডের বিপদের সময় আবার ডাক পড়লো তার। আইসা হাল ধরলেন ১৯৯৯ সালে। আর ছাড়লেন ২০০৪-এ। ততদিনে নিউক্যাসলের পুনর্জন্ম হইছে বলা যায়। ক্লাব লিজেন্ড অ্যালেন শিয়েরারের ভাষ্যে বলা যায়, “একটা ক্লাবকে তিনি আইসা পাইছিলেন রেলিগেশন জোনে, আর দিয়ে গেলেন ইউরোপিয়ান টুর্নামেন্টে। সাথে বাঁচাইলেন আমার ফুটবল ক্যারিয়ারও।” ববি রবসনের ফুটবল ম্যানেজেরিয়াল ক্যারিয়ার এতটাই রোমাঞ্চকর। রবসন যখন নিউক্যাসলের দায়িত্ব নেন তখন তার সাথে কাজ করতে (খেলতে ও শিখতে) এতটাই আগ্রহ ছিলো বার্সা লিজেন্ড পেপ গার্দিওলার যে, সে তখন তাকে মেইল করছিলো এই বলে, আমাকে নিউক্যাসলে নিয়ে যাও। আমি ইংল্যান্ডে ও তোমার সাথে খেলতে চাই। কিন্তু রবসন গার্দিওলারে নেয়নি। কেন নেয়নি সেটা বোধহয় অন্য প্রসঙ্গ। ববি রবসনের বর্ণিল জীবন নিয়ে ডকুমেন্টারিটা দেখলাম এক বসায়।
১৯ মে ২০২০
ইলিয়াস কমল রচনারাশি
গানপার স্পোর্টস
- সিনেমার চিরকুট ২১ - June 23, 2025
- ববি রবসন বায়োডকুমেন্টারি || ইলিয়াস কমল - June 16, 2025
- সিনেমার চিরকুট ২০ - May 20, 2025
COMMENTS