চন্দ্রাবতীর পুত্রগণ :: পর্ব ১৯ || শেখ লুৎফর

চন্দ্রাবতীর পুত্রগণ :: পর্ব ১৯ || শেখ লুৎফর

প্রতিবাদ, প্রতিশোধ


“শুনেছ কাশিদ, আজ চেমননগরের আকাশে দুর্ভাগ্যের ঘনঘটা। ষড়যন্ত্রের দাবানল হু হু করে এগিয়ে আসছে নিরীহ জনতার দিকে। কুখাবনগরের রাক্ষসপতি মানু মিয়া কাদু-কালুদের ভাগে জমি ছিনাইয়া নিয়াছে। তাই ডঙ্কা পিটিয়ে চেমননগরের ঘরে ঘরে দুঃসংবাদ পৌঁছে দাও। জানিয়ে দাও কাদু-কালুদের কসুর ছিল নৌকা মার্কার মিটিং।”

এইভাবে ডায়ালগ দিয়ে ঘাটুদলের যে যেখানে যাকে যখন পাচ্ছে সে তাকেই ক্রুদ্ধ গলায় এই গুরুতর সংবাদ দলের সকলকে জানিয়ে দিতেছে। পথে-ঘাটে-মাঠে একই রব, একই হাহাকার এবং এইভাবে বারুদের বিস্ফোরণের মতো খবরটা আজ সন্ধ্যায় মালেকের কাছে এসে পৌঁছেছে। সে শিকারি মানুষ ব্যস্ত থাকে শিকারে। কথাটা শোনামাত্র তার মগজে জ্বালা ধরে যায়।

মাছ শিকার থেকে মালেকের ফিরতে ফিরতে রাতটা প্রায় কাবার হয়ে গেছে। শীতে তার হাত-পা টুন্ডা। হি হি করতে করতে সে খড়ের বিছানাটা একবার ছুঁয়ে দেখে। বিষুরির থলির পানির মতো ঠাণ্ডা বিষ! শিথানের দিকের দেওয়ালে একটা বৃত্তাকার গর্ত আছে। গরমের সময় কালাই পাথারের বাতাস এটা দিয়ে হু হু করে ঢুকে ঘরের দড়িতে ঝোলানো গামছা-লুঙ্গি ছিটিয়েবিটিয়ে ফেলে দেয়। শীত আসতেই খড়ের বোন্দা দিয়ে সেই গর্তটা সে বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু চড়ুই পাখিরা সেই বোন্দার খড় একটা-দুইটা করে নিতে নিতে এককোণা খালি করে ফেলেছে। সেই ফাঁক দিয়ে এখন হিস্ হিস্ করে সাপের বিষের মতো ঠাণ্ডা বাতাস ঘরে ঢুকছে। মালেক খড়ের বিছানার খেতাটা তুলে কোণার দিক থেকে একমুঠি খড় নিয়ে ঠেসে ঠেসে খোন্দলের ফাঁকটা বন্ধ করে দেয়।

এতক্ষণ দাঁতে-কামড়ে-ধরে-রাখা আধপোড়া বিড়িটা মালেক ঘরের মেঝেয় ফেলে পা দিয়ে চেপে ধরে নিবিয়ে দেয়। তাবাদে সে লোভীর মতো বিছানাটাকে এক-নজর দেখে। গরমের সময়টা মালেক খুব আরামে কাটায়। খালি চৌকির ওপর বালিশটা নিয়ে পরতেই ঘুম। জীবনভর সে ঘুমের কষ্টে ভুগেছে। তার কাছে মাছের নেশা বেটিমানুষের নেশার চে কোনো অংশে কম না। শীতের লম্বা লম্বা রাতগুলা সে বিলের ডহরে ডহরে শুধু পেটের জন্য কাটায় না। বেশিরভাগ সময় সে বড়শি দিয়ে মাছ ধরে। তার বিচারে মাছ শিকারের সেরা পন্থা হলো ছিপ-বড়শি। শীতকালে বড়শি দিয়ে সে নদী কিংবা বড় বড় বিলের ডহর থেকে দশ-বিশ সের ওজনের আইড়-বোয়াল ধরে। সেই জীবন্ত মাছ শক্ত দড়ি দিয়ে ছিপডিঙির বাতায় বেঁধে সকাল সকাল গিয়ে সে হাজির হয় কাওরাইদ বাজারে। এপারে পাটের জন্য বিখ্যাত গয়েশপুর বাজার। নদীর দক্ষিণপারের বাজারটার নাম কাওরাইদ। সেখানে রেলস্টেশনও আছে। তাই সকাল-বিকাল হাট বসে। মাছের সখিনদার মানুষের সমাগম সেখানেই বেশি। তাই মালেক কাওরাইদ বাজারে মাছ বেচতে যায়।

মালেক মাছ ধরার চে মাছের তত্ত্বতালাশে সময় দেয় বেশি। বিল কিংবা নদীর ডহরে যেখানে পাশের জমির মালিকেরা ডালপালা পুঁতে মাছের আস্তানা করেছে সেদিকে তার চোখ। রাতের অন্ধকারে দুই-তিনদিন তক্কে তক্কে হাঁটবে। সুযোগমতো এক রাতে ট্যাঁটা কিংবা বড়শি হাতে বেরিয়ে পড়বে। শীতকালেই তার আয়-রোজগার বেশি। গত বছর রায়দের ডহর থেকে তিরিশ সের ওজনের একটা বোয়াল ধরেছিল। মনে অনেক দিনের আশা, একসাথে তিনশ টাকা জোগাড় হলে ফালানিকে সে একভরি সোনা দিয়ে গলার একটা চেইন বানিয়ে দিবে। তাবাদে কাওরাইদ বাজারের যোগেশ ডাক্তার আড়াই কুড়ি টাকায় সেই মাছটা কিনে নিয়েছিল।

কাঠের মতো শক্ত আর তেলচিটচিটে বালিশে শুয়ে পরত পরত করে রাখা নোংরা তিনটা খেতা গতরের ওপর টেনে দিতে দিতে মালেক শরীরভরতি হি হি শীত নিয়ে বিছানায় ডুব দেয়। পরক্ষণেই মনে উদয় হয় ভয়টা, কতক্ষণ সে ঘুমাতে পারবে? ঘুমটা ঠিকমত ধরতে না ধরতেই রোদ উঠে যাবে। মানু মিয়া তার খেতের বাতরে বাতরে ঘুরে জমিনটমিন দেখে, বাড়ি ফেরার পথে মালেকের ঘরের সামনে এসে খামাখা জোরে জোরে কয়টা ডাক মারবে, — খবর কী রে মালেক?

শিকারি মানুষ খুব টনক আর পাতলা ঘুমের হয়। তারা উজাই মাছের মতো একটু আওয়াজ পেলেই ঘুম থেকে লাফিয়ে ওঠে। সারারাত পাতা-কাগজের বিড়ি টানতে টানতে মালেকের মুখটা এখন তিতা-জহর। সে খেতার নিচ থেকে মুখটা একটু বের করে থুতু মেরে মানু মিয়াকে উদ্দেশ্য করে একটা গালি দেয়, — হালার পুত সেভেন্টিস্কয়ার কাদু-কালুর কাছ থাইক্যা জমিন নিছস্ গ্যায়া? এইবার টের পাইবে মালেক কী জিনিস।

মালেক লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে বসে। সাপের মতো ঠাণ্ডা শরীরটা সবেমাত্র গরম হতে শুরু করেছিল, তবু সে সব আলস্য ঝেড়ে ফেলে বিছানা থেকে নেমে পড়ে। এই জীবনে সে অনেক দেখেছে। তবু বুঝি দেখার শেষ নাই। তা না হলে এইসব কী? গরিবের বিনয়, ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার মূল্য মানু মিয়ারা আর কবে দিবে? মানুষে বলে, পিতা গুরু, মাতা গুরু, গুরু জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা। মানু মিয়াকে কী তারা চিরকাল গুরুর মতো মান্য করেনি?

কুপি বাতিটা না-ধরিয়েই ঘরের জমাট অন্ধকারে এইসব ভাবতে ভাবতে মালেক আরেকটা বিড়ি ধরায়। বিকাশবাবু বলে, — অন্ধকারের বিপরীতে যেমন আলো আছে তেমনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে রয়েছে প্রতিবাদের অসংখ্য পথ। অন্যায়ের প্রতিকার করতে চেষ্টা না করাটাই আরেকটা গুরুতর অন্যায়।

প্রতিকারের জন্য চাই প্রতিবাদ। এই মুহূর্তে ঘরের এই নিবিড় অন্ধকারে বিকাশবাবুর বুদ্ধিদীপ্ত চোখদুইটা মালেকের চোখের সামনে বারবার জ্বলে উঠছে। মানু মিয়ার মতো পাপিষ্ঠের বিরুদ্ধে সে কীভাবে প্রতিবাদ করবে? প্রতিবাদের জন্য শক্তি চাই, ভাষা চাই।

বিছানায় বসে বসে বিড়িতে ছোট্ট একটা টান দিয়ে ঘরের জমাট অন্ধকারেই মুখ নিচু করে মালেক ভাবতে থাকে। কষ্টকর জীবনের সব বাস্তব বোধ ও তিক্ত অভিজ্ঞতার কাঠি দিয়ে সে কীসব যেন উলট-পালট করে দেখতে দেখতেই হাতের আস্ত বিড়িটা ঘরের কোণার দিকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে বিছানা থেকে বিড়ির আগুনে পোড়া ছিদ্র ছিদ্র নোংরা চাদরটা তুলে লয়। খিড়কির মতো ছোট দরজার বাঁশের ঝাপটা হালকা হাতে সরিয়ে মালেক বাইরে এসে দাঁড়ায়। দুনিয়াটা শীত-কুয়াশা আর অন্ধকারে কোঁচের ঘা খাওয়া গজার মাছের মতো খাবি খাচ্ছে।

এমনিতেই নানান কারণে মালেক মানু মিয়াকে অপছন্দ করে। মনের গোপনে রি রি করা এক ধরনের ঘিন্নাও আছে লোকটার প্রতি। সবচে বেশি দুঃখ লাগে তার ঘুমের জন্য। একটা কুকুরেরও জান ভরে ঘুমের অধিকার আছে। অথচ মানু মিয়া রোজ রোজ এসে তার কাঁচা ঘুম ভেঙে দিয়ে সুখ পায়। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে ডাক দিয়ে মানু মিয়া তাকে মনে করিয়ে দিতে চায়, — তুমি আমার বিলের কান্দায় ঘর বানায়া থাকো, তুমি আমার জমিন শিথান দ্যায়া ঘুমাও। তাই তুমি আমার অধীনে আছ, তোমার ক্যান অত ঘুম?

দরজার চৌকাঠে বসে মালেক আরেকটা বিড়ি ধরায়। উত্তর থেকে হলহল করে ঠাণ্ডা বাতাস আসছে। উপরের আকাশ থেকে চুঁইয়ে চুঁইয়ে আসছে তারার আলো। মালেকের মনে হয়, বাঁচার জন্য খোদা-যে তাকে সারাজনম ধরে আলো দিলো, পানি দিলো, বাতাস দিলো কৈ বিধি তো তাকে একদিনও কষ্ট দিলো না। আর বিলের কান্দার এক-খাবলা পতিত জমিনে থাকতে দিয়ে রোজ রোজ এসে মানু মিয়া তাকে খোঁচা মেরে যায়।

ট্যাঁটা দিয়ে মাছ শিকারের সময় মালেক যেমন করে পা টিপে টিপে হাঁটে সে-মতো খুব হালকা-ছন্দে হাঁটতে হাঁটতে মানু মিয়ার বাড়ির উঠানে চলে আসে। তার সামনে মানু মিয়ার বড় ঘর। পশ্চিমে মানুর বড় বউয়ের ঘর। দক্ষিণে ধানের গোলা আর গোয়াল ঘর। উত্তরে পাকঘর। রান্নাঘরটা থেকে খাসির গোস্তের গন্ধ আসছে। স্বাদের এই গন্ধটা মালেককে ক্ষেপিয়ে তোলে। সারাজীবন বিল-বাঁদাড়ে ছুটতে ছুটতে পা দুইটা তার পচে গেছে। আর একটা মানুষ দিনমান রাক্ষসের মতো হা-করে বসে থাকে। আপনাআপনিই তার হা-করা মুখে এসে ঢোকে দুনিয়ার যত ভালো ভালো মাছ-মাংস আর সুন্দরী সুন্দরী মেয়েলোক।

মালেক আস্তে আস্তে কপাটের শিকলটা নামিয়ে পাকঘরে ঢুকে পড়ে। মাটির দেওয়ালের ছোট ঘরটা জমাট অন্ধকারে ডুবে আছে। গভীর অন্ধকারটা চোখসহা হওয়ার জন্য মালেক চোখদুইটা বন্ধ করে কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকে। কোণার দিক থেকে ভুরভুর করে ঝাল-মাংসের গন্ধ আসছে! খাওয়ার লোভ আর ঘন লালায় মালেকের মুখগহ্বর উপচে উঠছে। যতটা লোভ তাকে কাবু করতে চাইছে তারচে বহুগুণ সতর্ক হয়ে সে বসে পড়ে। তাবাদে সে আলতো করে হাতদুইটা সামনের অন্ধকারে মেলে ধরে বসে-বসেই তরকারির ডেকচির দিকে এগিয়ে যায়। গোস্তভরা পাত্রটা হাতে লাগতেই সে থেমে পড়ে। আলতো করে ঢাকনাটা সরিয়ে আল্লার নামে হাতটা ডেকচির ভিতর ঢুকিয়ে দেয়। ডেকচিটা গোস্তে বেশি-অর্ধে ভরা! আমুদে মালেক যেন হাতে আসমান পায়। চেখে দেখার জন্য ঠাণ্ডা পাত্থর গোস্তের একটা টুকরা মুখে দিয়ে কামড় বসায়। ঝাল মাংসের হিম-ঠাণ্ডা স্বাদে তালুটা ঝিনঝিন করে ওঠে। কম চিবিয়ে রাক্ষসের মতো গপাগপ তিন-চার টুকরা মাংস খাওয়ার পর ভাতের কথা মনে পড়ে। হাতড়ে হাতড়ে ভাগ্যগুণে ভাতের ডেকটাও পেয়ে যায়। পরিমাণে কিছু কম দেখে সে মাংসের ডেকচিতেই সবগুলা ভাত ঢেলে দিয়ে কচলাতে শুরু করে।

খাওয়া শেষ হলে মালেকের ইচ্ছা হয় এখানে পড়েই একটা ঘুম দিয়ে দেয়। কিন্তু তা তো হবার না। এখানে কী বিলপারে যেখানেই ঘুমাক না কেন সকালে মানু মিয়া তাকে ডাকবেই। মনের মাঝে একটা কালো জন্তুর মতো মালেকের রাগটা ফুঁসে উঠলে সে পাকঘরের দরজায় শিকল তুলে উঠানে নেমে আসে। মানু মিয়ার বাড়িটা হিম-কুয়াশার গজবে মরাখলার মতো নিঝুম। একইভাবে দুনিয়ার সব গরিব-দুঃক্কীদের সাথে প্রতাপশালী মানু মিয়া কী বেনু মিয়ারা সকলেই এই শীত ও অন্ধকারের কাছে এখন এক সমান। একটু পরে মালেকও ঘুমাবে। তাহলে মানু মিয়া কেন তাকে শুধু শুধু ডাকবে, — খবর কী রে মালেক?

মালেক মানু মিয়ার ঘরের ওপর লুটিয়ে-পড়া কুয়াশার আস্তরের দিকে তাকিয়ে মুখ ভ্যাটকায়, — খবর কী রে মানু?

মালেক নিজেই দাঁত কিরিমিরি করে মনে মনে জবাব দেয়, — খবর হইল তামাম পিরথিমির মানুষ এইবার নৌকা মার্কায় ভোট দিব। তারা তর চুদার পাকিস্তান চায় না। তারা তর বাপ ইয়াহিয়ারে চায় না। তামাম পিরথিমির মানুষ শেখ মুজিবরে চেমননগরের সিংহাসনে দ্যাখতে চায়। এতে তর কী? হ্যাঁহ্, তর কী রে চুদনার পুত সেভেন্টিস্কয়ার?

রাগে কাঁপতে কাঁপতে মালেক বিড়বিড় করে তার জানা সব অশ্লীল গালি খরচ করেও উঠানে দাঁড়িয়ে থাকে। মানু মিয়ার উঠান থেকে একটুও সরে যেতে ইচ্ছা করছে না। কড়া ঝাল-ঝোল-গোস্ত সহ অন্তত আড়াই সের কী তিন সের পরিমাণ সুখাদ্যের চাপে মালেকের শরীর ঘামে জবজবা হয়ে গেছে। বিড়ির আগুনের ফুরুঙ্গি পড়ে পোড়া ছিদ্র ছিদ্র চাদরটা আর গতরে রাখা যাচ্ছে না। সে চাদরটা খুলে কোমরে কশে বেঁধে নেয়। তাবাদে পরনের লুঙ্গিটা একটানে তুলে মানু মিয়ার উঠানের মাঝেই বসে ফড় ফড় শব্দে হাগতে শুরু করে।

হাগু দেওয়া শেষ হলে বারান্দায় বাঁশের আড় থেকে মানু মিয়ার গামছাটা এনে খুব মন দিয়ে ঘষে ঘষে পাছা পুছে উঠানেই ছুঁড়ে ফেলে দেয়। তবু মালেকের রাগ কমছে না দেখে সে উঠান থেকে নড়ে না। মানু মিয়ার উঠানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মনে করতে চেষ্টা করে কলুপাড়ার সেইসব মেয়েদের মুখ, যাদেরকে মানু নামমাত্র পয়সা খরচ করে ভোগ করেছে। পেট বাঁধিয়ে কলঙ্কিত করেছে। এইভাবে মানু মিয়া কলুপাড়ার বারো-তেরোটা মেয়েকে নষ্ট করেছে। আফসর কলুর মেয়েটা তো ছয়মাসের পেট নিয়ে বিষ খেয়ে জীবনটাই শেষ করেছিল। তাবাদে মানু মিয়া চোরের থাপদার (যে চুরির মাল নিজের কাছে হেফাজতে রাখে এবং সময়মতো চোরের কাছ থেকে নামমাত্র দামে কিনে নেয়)।

রাগে অন্ধ মালেক খপ করে নিজের গরম হাগুটাই বাঁ হাতে তুলে নিয়ে মানু মিয়ার দরজা বরাবর ছুটে যায়। লোকটা ঘরের ভেতর থেকে মহিষের মতো ঘেরৎ ঘেরৎ নাক ডাকছে। হাতের সবটুকু গু সে ঘষে ঘষে মানু মিয়ার সারা দরজায় লেপে দেয়। তারপর মালেকের মনে হয়, তার আরো গু চাই, আরো অনেক অনেক গু। মালেক বারান্দা থেকে টিনের বালতিটা তুলে নিয়ে বাড়ির পেছনদিকে চলে যায়। মানু মিয়ার কাঁচা টাট্টি থেকে বালতি বালতি গু এনে সবগুলা ঘরের দরজা-জানালা, বারিন্দা, পাকঘর সহ সারা উঠান গু দিয়ে সয়লাব করে ফেলে।

ফজরের আজানের আগে আগে শরীরভরতি গু, ঘুম আর ক্লান্তিতে টলতে টলতে মালেক বিলপারের কান্দায় ফিরে আসে। বিলের ঘাটে বসে ক্ষার দিয়ে লুঙ্গি-গামছা সহ নিজের শরীরটাও মনমতো সাফশুতরা করে। ধলপহরের সময় ঘরে এসে হাতে-পায়ে মাথায় বেশ করে সরিষার তেল ঘষেটষে একটা বিড়ি ধরায়। তাবাদে দরজার ঝাপটা টেনে বন্ধ করতে গিয়ে সে টের পায়, মানু মিয়ার বাড়ির দিক থেকে আসা গুয়ের গন্ধে আস্তা দেশ গয়রত হয়ে যাচ্ছে। গুয়ের গন্ধে মালেকের মনটা আনন্দে নেচে ওঠে। নেচে ওঠে এই ভেবে যে জীবনে এইটাই তার সেরা কাজ।


চন্দ্রাবতীর পুত্রগণ : আগের পর্ব
শেখ লুৎফর রচনারাশি

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you