পনেরো বছরের বিরতি নিয়া গানস্-ন্-রোজেস্, জিএনআর, ২০০৮/২০০৯ সন্ধিক্ষণে অ্যালবাম রিলিজ করে ব্যান্ডের পুরানা ফ্যানদের মধ্যে ফের প্রাণের সঞ্চার করে। এর আগে সর্বশেষ ১৯৯৩-রিলিজড ‘দ্য স্প্যাগেটি ইন্সিডেন্ট’ অ্যালবামের পরে এইটা, ‘চাইনিজ ডেমোক্রেসি’, ব্যান্ড হিশেবে তাদের শক্তিমত্তা আবারও প্রকাশ্য দিবালোকে এনেছিল। পূর্ববর্তী ফিফটিন ইয়ার্স যারা গানস্-ন্-রোজেসের ভক্ততালিকায় নিবন্ধিত হয়েছিলেন, নয়া অ্যালবাম বেরোনোর খবরটা তাদের কাছে ব্যাপক খুশখব্রিই ছিল বলতে হবে। কেননা, আগের দুইযুগে ডেভেল্যপড ফ্যানবেইস্ শুধুই কিংবদন্তি আর পুরানা অ্যালবামের কালেকশন শুনে বেড়ে উঠেছে। বেশ-কয়েকটি মিউজিকভিডিয়ো ও মঞ্চানুষ্ঠানের লাইভ রেকর্ড অ্যান্থোলোজিও অবদান রাখতে পেরেছিল অনুমান করি ভক্তবংশ বর্ধনে। এই অ্যালবাম দিয়াই, শিরোনাম যার ‘চাইনিজ ডেমোক্রেসি’, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরে সেই জিএনআরফ্যানরা তাদের প্রিয় ব্যান্ডের কাছ থেকে জ্যান্ত স্টুডিয়োসংকলন হাতে পেয়েছিল।
অ্যালবামটি রিভিজিট করার আগে একবারটি রিক্যাপ করে দেখি জিএনআর হিস্ট্রিটি। তিরানব্বই খ্রিস্টাব্দে বেরিয়েছিল স্প্যাগেটি ইন্সিডেন্ট, বলেছি আগেও, তখনও পুরনো সহস্রাব্দের পুরনো দশক চলছিল। সহস্রাব্দের অন্তিম শতক পেরোনোরও পাক্কা সাত বছর পরে অ্যালবাম আসে মার্কেটে। এই গ্যাপে দুনিয়াব্যাপী মিউজিকসিনেও বদল ঘটে গেছিল অনেক। ফলে আশঙ্কা অমূলক ছিল না অ্যালবামরেস্পোন্স নিয়া। আরেকটা ঘটনাও দরকার উল্লেখ রাখা। গানস্-ন্-রোজেসের মায়েস্ত্রো গিটারশিল্পী স্ল্যাশ ব্যান্ডত্যাগের পরে অ্যাক্সেল রোজ্ ব্যান্ডের রেগ্যুলার অ্যাক্টিভিটি দীর্ঘদিন মুলতবি রাখেন। স্ল্যাশের ব্যান্ডত্যাগের ঘটনাটি ছিয়ানব্বইয়ের দিককার সম্ভবত। পরে স্ল্যাশ যখন নয়া লাইনাপে নয়া ব্যান্ড ফর্ম করে মিউজিকে ফেরেন, অব্যবহিত অভিঘাতে অ্যাক্সেলও নয়া গানবাজনা বাঁধতে লাগেন জিএনআরের ব্যানারে। এতে একবিন্দু সন্দেহ হয় না যে ব্যান্ডের মাস্টার্মাইন্ড অ্যাক্সেল রোজই, কিন্তু দলভাঙার কন্সিক্যুয়েন্সেস্ তো খুব কম রকব্যান্ডই আটকাতে পেরেছে। অ্যাক্সেল অ্যাট-লিস্ট পয়লা ধাক্কাটা সামলাতে পেরেছেন বলেই লিস্নাররা রায় দিয়েছিল চৈনিক গণতন্ত্রের গগন বিহার করে। সেই সময়টায় জিএনআরম্যানিয়া আরেকবার আছড়ে পড়েছিল নয়া জামানার জেন-ওয়াই লিস্নারদিগের মধ্যে।
একটানা পনেরো বছরের বিরতিফোকরে একটা ছায়াছবিতে অ্যাক্সেলের গানের ব্যবহার আর স্ল্যাশবিহীন নয়া লাইনাপে ‘অ্যাপেটাইট ফর ডেস্ট্রাকশন’ রিরেকর্ড করা ছাড়া আস্ত সংকলন বা সিঙ্গেলস্ নজরে পড়ে না। গানস্-ন্-রোজেস্ এই সময়টায় হাইবার্নেশনেই ছিল পুরোদমে। এই কামব্যাক অ্যালবাম ‘চাইনিজ ডেমোক্রেসি’ দিয়া তাদের প্রত্যাবর্তন হলো রয়্যাল, ভক্তকুল ছাড়াও গানশ্রোতা সকলেই ইয়াদ করতে পারবেন এখনও, অত লম্বা কালবিলম্বের পরে অ্যাক্সেলের ভোয়েস্ ঠিকঠাক যুৎ হয় কি হয় না আশঙ্কায় পানি ছিটায়ে স্বস্তি দিয়েছিলেন অ্যাক্সেল রোজ্। পুরানা বাংলা বাগধারাটা প্রাসঙ্গিক হবে অ্যাক্সেলের এই অ্যালবামের কণ্ঠলগ্নি বিষয়ে : পুরানা চাউল ভাতে বাড়ে। অ্যাক্সেলের রেন্ডিশনগুলো সোজা বাংলায় গানস্-ন্-রোজেসের কিংবদন্তি বিনষ্ট হতে দেয় নাই।
অ্যালবামের টাইট্যল ট্র্যাকটা, চাইনিজ ডেমোক্রেসি, আরেকবার শুনে কেউ যদি জিএনআরের সেই অ্যাক্সেল আর এই অ্যাক্সেলের তুলনা করে দেখে তো মানতে বাধ্য যে এই অ্যাক্সেলের ভোক্যালস্টাইল এবং ভোয়েসকোয়ালিটি আগের তুলনায় ম্যাচিয়্যুর হয়েছে আরও। সিম্পলি হৃদয় প্রসারি মিউজিশিয়্যানের মর্ম যখন বিনিয়োগ করা হয় একটা-কোনো ওয়ার্কে, রেজাল্ট কি হয় সেই নিদর্শন এই অ্যালবামে অ্যাক্সেলের পার্ফোর্ম্যান্স। পয়লা নামগানেই থিতিয়ে-যাওয়া জিএনআরক্রেইজ আবারও তুঙ্গে।
অ্যালবামের সেকন্ড ট্র্যাক ‘ব্যেটার’, যেখানে রন্ বাম্বলফ্যুটের গিটারসোলোটা গানের মাইটোকন্ড্রিয়া হিশেবে কাজ করেছে। এই গিটারসোলোটাই গানটার প্রাণ যেন। অন্য একটা ট্র্যাক ‘ইফ দ্য ওয়ার্ল্ড’ সোজাসাপ্টা ক্ল্যাসিক ফাঙ্ক রক্। অনবদ্য। পরের দুইটা ‘ক্যাচার ইন দ্য রাই’ এবং ‘স্ক্র্যাপড’ গান হিশেবে অ্যাক্সেলের সিগ্নেচারট্র্যাক বললে অ্যাপ্ট বলা হয়। অ্যালবামের ‘স্যরি’ গানটা অ্যাক্যুস্টিক গিটারে করা। দারুণ শ্রাব্য। উল্লেখযোগ্য অন্য ট্র্যাকগুলোর মধ্যে ‘রিয়্যাড অ্যান্ড দ্য বেডুয়িন্স’, ‘ম্যাডাগ্যাস্কার’, ‘আইআরএস’, ‘প্রোস্টিট্যুট’, ‘দিস্ ল্যভ’ প্রভৃতি জিএনআরফ্যানদের প্রাণে এবং কানে হ্যাডফোনবাহিত বহুদিন বেজেছিল।
সব-কয়টা গানের কম্পোজিশন ও গায়কী ইত্যাদি মিলিয়ে ‘চাইনিজ ডেমোক্রেসি’ জিএনআরের এপিক অ্যালবাম একটা। গানস্-ন্-রোজেস্ প্যপসাম্রাজ্যে একটা ক্রান্তিযুগে এসে যেমন ঝড় তুলেছিল রক্-ন্-রলের ধক হৃৎপিণ্ডে নিয়ে, সেই ধকের শেষ ধাক্কাটা চাইনিজ গণতন্ত্রে এসেই কি নির্বাপিত হলো? গল্পটা আরেকদিনের জন্য রইল তোলা। চাইনিজ ডেমোক্রেসি শিরোনামে অ্যালবামরিলিজ নিয়াও তখন না-হয় বাংলাবাজারী ইনানোবিনানো গল্পও জোড়া যাবে। সেই সুযোগটা আসবে নেক্সট কোনো লম্বা আপিশছুটির অবকাশে। ব্লেস্ ইয়্যু, সংগীতলিস্নার্স!
… …
- শাহ আবদুল করিম : জন্মের শতক পেরিয়ে আরও একটা আস্ত দশক || ইলিয়াস কমল - January 20, 2025
- সিনেমার চিরকুট ৮ - January 19, 2025
- টুকটাক সদালাপ ২ - January 17, 2025
COMMENTS