চৌর্যবৃত্তি এবং বিকৃতির অভিযোগে ‘কোক স্টুডিও বাংলা’ নামের এই বিজ্ঞাপনী সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা হওয়া উচিত।
কোমল পানীয় বা কোকাকোলা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কি না সেদিকে যাব না, তবে গানের নামে বিজ্ঞাপনে বিকৃতি এবং চৌর্যবৃত্তি যে গ্রামবাংলার মৌলিক সংস্কৃতির জন্য আগ্রাসন হয়ে দাঁড়িয়েছে — এ-বিষয়টি স্পষ্ট।
বলছিলাম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারপ্রাপ্ত মালজোড়া গানের স্রষ্টা নেত্রকোনার বাউলসাধক রশিদ উদ্দিনের গানের বিকৃতি প্রসঙ্গে। রশিদ উদ্দিনের গানটি রচিত হয়েছে ১৯৩৫ সালে, আর সে-গানের অনুকরণে খালেক দেওয়ান গান রচনা করেছেন ১৯৫৪ সালে, আর সে-গান খালেক দেওয়ানের নামে এখন প্রচারিত হচ্ছে। এটা অন্যায়। আর সে-অন্যায় এবং নকলবাজিতে সঙ্গত দিচ্ছে কোক স্টুডিও বাংলা।
প্রতিবাদ ও বিতর্কের মধ্যে কোক স্টুডিও বাংলা বিবৃতি দিয়েছে। তারা বলছে, তাদের “প্রতিটি গান সতর্কতার সঙ্গে যাচাই করা হয়; ন্যায়সংগত শিল্পীকে প্রাপ্য কৃতিত্ব দেওয়া হয়। মা লো মা গানটি মো. খালেক দেওয়ানের লেখা। তাঁর বংশধর আরিফ দেওয়ান ও সাগর দেওয়ান এই গানে পারফর্ম করেছেন।”
কথা হচ্ছে, অপরের গান অনুকরণ করলে বা অন্যের লেখা গানে পারফর্ম করলেই সে-গান নিজের হয়ে যাবে?
কোক স্টুডিও বাংলা স্ববিরোধী কথা বলছে। তারা স্বীকার করেছে যে, “মাগো মা ঝিগো ঝি নামে এই গানের আরও একটি সংস্করণ আছে, যা বাউল রশিদ উদ্দিনের লেখা। গান দুটির মধ্যে বিভ্রান্তি এড়াতে ‘মা লো মা’ গানটি প্রকাশের সময়ই ইউটিউবে গানটির বর্ণনায় রশিদ উদ্দিনের নামও উল্লেখ করা হয়েছে।”
এ তো ভাওতাবাজি! কার গানটি গ্রহণযোগ্য হবে, যিনি ১৯৩৫ সালে লিখেছেন, নাকি যিনি ১৯৫৪ সালে লিখেছেন? তাছাড়া, গানটি কার লেখা এ-সিদ্ধান্ত দেওয়ার তারা কে? সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে এ-সিদ্ধান্ত দেবে কপিরাইট।
এই স্টুডিওর বিরুদ্ধে মামলা হওয়া উচিত। আমি দেশে থাকলে তা-ই করতাম। নেত্রকোনায় যারা প্রতিবাদ করছেন তাদের ন্যায্য আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বলছি, অন্যান্য উদ্যোগ ও প্রতিবাদের পাশাপাশি বিকৃতি, চৌর্যববৃত্তিতে সহযোগিতা এবং অবৈধ সম্প্রচারের অভিযোগে কোক স্টুডিওর বিরুদ্ধে মামলা করুন। পাশে আছি।
আসলাম আহমাদ খান, ৮ মে ২০২৪, নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র।
কার গান — রশিদ উদ্দিন না খালেক দেওয়ান : সরোজ মোস্তফা
গানপারে কোকস্টুডিয়ো
কোকস্টুডিয়ো কম্পোজিশনে আলোচ্য গান
- লোককবি তাজউদ্দিন ও তাঁর গান || জফির সেতু - November 25, 2025
- শাহজালাল শাহপরান গ্রামবাঙলায় গাজির গান || তুহিন কান্তি দাস - November 22, 2025
- আমাদের গ্রামের নাম আমাদের নদীর || কাজল দাস - November 19, 2025

COMMENTS