ফান্টিকে দেখা গেল বহুদিন বাদে জেমসের সঙ্গে স্টেজে।
ডেইলি নিউজপত্রিকাগুলো, অন-অফ উভয় তরফ, মহান যত কর্মকাণ্ড করে বেড়ায় দিবারাতি বিনিদ্র। বলিউডের বদুখাঁ আমলের স্কোরকার্ডও মুখস্থ বঙ্গের বিনোদনবার্তাজীবী মহোদয়দিগো। নগরবাউলের সঙ্গে এহসান এলাহী ফান্টি সিলেটে স্টেজে ছিলেন সেদিন ২০১৮ মধ্যমার্চের উত্তীর্ণ-সন্ধ্যায়, এই খবর কি আগাম কেউ বলল কোথাও? সংগীতের ফোটোওয়ালা মিনি-মিডি ফিচার তো হররোজ ছাপা হইতে দেখি নিউজপ্রিন্টে। অ্যাট-লিস্ট এইসব খবর কি নিউজপোর্টাল মৌহূর্তিকীগুলোর খোরাক হবার কথা না? বাছারা খালি চিরল চিরল পাত্ খায় আর ঝিমায়, কার্তিকের হরিদাভা প্রান্তরে জোছনায় ঘাসাস্বাদনের বেইল বইয়া যায়, ডেইলির ডানকি ও ঢোলকলমির ঢাউশ ঘোড়াগুলো …
বহুদিন বাদে জেমসের সঙ্গে স্টেজে এহসান এলাহী ফান্টিকে দেখে অ্যানশিয়েন্ট আরণ্য ধ্রিমিধ্রিমি ফিল্ হতেছিল ছত্রিশিঞ্চি সিনার বৃদ্ধ বক্ষে, এই তিতাস মলমবেচুয়া বাংলার লাঠিয়াল কন্সার্টরিভিয়্যুয়ার কলামিস্টের কলিজায় ড্রামস্প্রিং দুন্দুভিবসন্ত এসেছিল নেমে … এ ঘোর … এ শূন্য মন্দির(ও) মোর …
বহুদিন বাদে জেমস-ফান্টি যুগলবন্দী হলো। সন্দেহ হচ্ছিল, সন্দেহ যায়নি এখনও, হরহামেশা ফারুক মাহফুজ আনাম আর এহসান এলাহী ফান্টি শেয়ার করেন নাকি স্টেইজ ইদানীং? খবর পাই না তো! গোটা দশেরও অধিক গানে জেমসের/নগরবাউলের গোলপোস্ট সামলালেন ফান্টি, কীভাবে এবং কোন কায়দায়, নিউজপেপার এইসব খবর পাচার করবে পাঠকের দরবারে এতটা আশা করা বাংলাদেশী বিনোদনবিট-কাভার-করা আখবারওয়ালা কাণ্ডারিদিগের কাছে বেন্যায় হবে বুঝতেই পারি।
কিন্তু জেমসও মঞ্চে একবারও ঘটনাটা উল্লেখিলেন না পর্যন্ত! মহানদের নিকট কার্টসি এক্সপেক্ট করা হাবাদের কাণ্ড। হলাম না-হয় হাবা। ম্যাচসামারি হবে একটা? দানবের সঙ্গে একঘণ্টা নার্কোটিক্স নন্দনের স্মৃতি রোমন্থনের রাক্ষুসে এফোর্ট নিতে কেউ উদ্যোগী হবেন কি, ছিলেন যারা বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত ভুলবানানে ‘দূর্বার উন্নয়নের অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক কন্সার্টে প্রেজেন্ট সেই নিশীথিনী সিলেটের স্টেডিয়ামে? অ্যানিবডি ভলান্টিয়ার, প্লিজ! কন্সার্টসামারি, ইভেন্টরিপোর্ট, পার্সোন্যাল নোট … ইন অ্যানি ফর্ম অফ ফিচার রাইটিং … কাম আপ উয়িথ অ্যা মেমোয়ার অ্যাট-লিস্ট … অ্যানিথিং অফ ইয়োর স্ক্রিব্লিং উইল বি অ্যাপ্রিশিয়েটেড। অরণ্যে রোদন হচ্ছে, জেনেও, অ্যাপিলটা আদিগন্ত আজীবনের জন্য উন্মুক্ত রইল।
হতে পারে এমন যে, বেখেয়ালে ব্যাপারটা ঘটে গেছে। জেমস্ অবশ্য খুব-যে ম্যানার্স-এটিকেটের ধার ধারেন তা তো নয়, তা কোনোদিনই নয়। জেমসের ক্ষেত্রে ব্যত্যয় মেনে নেয়া আলবৎ যায়। এমনিতে জেমস্ কি ইন্সট্রুমেন্ট-আর্টিস্ট বা সহশিল্পীদের স্টেজে পরিচয় করিয়ে দেন? কখনো-কখনো দিতে দেখেছি বলিয়াই আবছা মনে পড়ে। বেশিরভাগ সময় দেন না। ২০১৭ ফেব্রুয়ারিতে সিলেটের শাহি-ঈদগা মাঠে দেন নাই ইয়াদ হয়। কিন্তু ওইবার, বা আগে কখনো, অতটা নোটিস করি নাই জিনিশটা। ফান্টি বলেই বিষয়টা আলাদাভাবে খেয়াল করলাম।
পরিচয় দিতেই হবে কেন ফান্টির? এই প্রশ্ন করবেন না তারা, যারা ফিলিংস থেকে নগরবাউল অব্দি জেমসের জয়যাত্রাপথ লক্ষ করে গেছেন অলক্ষ অভিনিবেশে। এছাড়া আরেকটা ব্যাপার এ-ই যে, এতদিন বাদে, ওভার টু ডিকেইডস্, একজন পুরনো ও বিশ্বস্ত কমরেডকে পেয়ে একটু উল্লেখও করবেন না মাজেজাটা, তা কেমনে হয়? হ্যাঁ, ফান্টির পরিচয় জেমস্ না-দিলেও হয়। একদা আমরা ফান্টির প্লীহা-চাবকানো গতিদৃপ্ত ও গনগনা ড্রামস্ আর জেমসের ক্লিন্নতা-অবসাদ-বিবিক্তি-বমনউগরানি গিটারে মজ্জমান হয়েই ছিলাম। মনে পড়ে। জেমসের হয়ে-ওঠার পেছনে অনেকখানি ফান্টি মিশিয়া আছেন বলতে দোষ হয় না।
তার মানে এমন কি হতে পারে যে, এখন থেকে জেমসের সঙ্গে রেগ্যুলার বাজাবেন ফান্টি? কিন্তু খবরান্তর তো পাই না খ্যাতাপোড়া এই মিউজিক-জিগিরের ইমোশনশাসিত ভানভণিতার মুল্লুকে। ক্যানাডায় থাকেন ফান্টি, যদ্দুর খোঁজপাত্তা ব্যক্তিগত অনুসন্ধান মারফতে জেনে রেখেছি, নিশ্চয় এখনও অনুশীলন করেন বিদেশবিভূঁইয়ের গাড়িগ্যারেজে। সেদিন কন্সার্টে তেমন ছন্দচ্যুতি তো ধরা পড়ে নাই কানে। অবশ্য সংগীতমূর্খের এই কানে বেশিকিছু ধরা পড়ার সুযোগও কম। ওইদিন জেমস্ তো ঝুম-কাওয়ালি ক্রিয়েইট করেছিলেন দুই নাম্বার গান থেকে এগারো নাম্বার পর্যন্ত। কর্ণমনোহর জেমস্ আগাগোড়া। আন্দাজ করি নিজেও ছিলেন দমাদম-মাস্তকলমদর দশায়, ফানাফিল্লায়, পিকে একদম। এইটাও হতে পারে একটা কারণ, কুড়ি কুড়ি বছর আগেকার একদিনের নিশানবর্দার সতীর্থটিরে স্টেজে রি-ইন্ট্রোডিউস না করার পেছনে। এমন তো হতেই পারে। এমন হতে পারে আরও কতকিছু! কন্সার্ট হয়েছিল অবিস্মরণীয়, মোদ্দা বাত এইটুকু। আপাতত।
বহুদিন বাদে স্টেজে জেমসের সঙ্গে এহসান এলাহী ফান্টি। মিডফিল্ডার, স্ট্রাইকার, রাইট-উয়িঙ্গার, লেফট-উয়িঙ্গার সক্কলের পেছনে একলা ড্রামস্-বারে এলাহী বিছিয়ে বসেছিলেন জাল তার। গ্যালারিপূর্ণ ময়দানের দানবীয় সুরশামিয়ানা আসমানতলে জেমসগিটার আর ফান্টিড্রামস্ …
চোখ রাখবেন না খামাখা, ফান্টি বিষয়ে বিশদ রচনা আপাতত সম্ভবপর হচ্ছে না, টাইম বড় কম দয়ালের দরবারে, কন্ট্রিবিউট করুন ইফ ইয়্যু ক্যান।
মোদ্দা কথা, ফান্টিকে দেখা গেল বহুদিন বাদে জেমসের সঙ্গে স্টেজে। যেন রজনীগন্ধাবনে উঠেছিল উয়িন্ড, ওয়াইল্ড, ওয়েসিস! সিমুম যেন, মায়াবী! নিশ্চয় এ-পৃথিবী একবার পেয়েছে তারে, ফের পাবে আরবার, যেন পায় ফিরিয়া বারবার … সেই রক্-অ্যা-রল্যা পাগলা নাইন্টিস্ …
ফান্টিকে দেখা গেল বহুদিন বাদে জেমসের সঙ্গে স্টেজে …
লেখা : বিদিতা গোমেজ
… …
- শৈলিন উডলির কথাগুলি (৭) - August 11, 2019
- কেইটের কথাবাত্রা (১০) - July 25, 2019
- টিল্ডা টোল্ড (২) - May 12, 2019
COMMENTS