বন্ধুরা, আমি অত্যন্ত বিনয় সহকারে আপনাদের কাছে জানতে চাই ‘বখাটে’ শব্দটা আপনাদের জানা কোনো বাংলা গানে কি এই অব্দি ব্যবহার হতে শুনেছেন? ‘বখাটে’ শব্দ আমরা নিজেরাই-বা দিনে ক’বার ব্যবহার করি? ১৯৮৮-তে গানটি লেখার সময় এই শব্দ ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছিলাম কারণ ভদ্র ভাষায় এই সকল কুলাঙ্গার দানবদের সনাক্ত করতে এরচেয়ে ‘শক্ত গালি’ আমার কাছে ছিল না। এই ‘গালি’ যারা হজম করতে পারছে না তারা এবং কিছু তথাকথিত নব্য ‘প্রগতিশীল’ নারীবাদীরা এই ফালতু ‘ক্যাম্পেইন’ করছে কেবলই আমাকে ‘পেইন’ দিতে; … তাতে কোনো লাভ নেই — আমি মোটেও বিচলিত নই; কারণ, আমার দেহে এরচেয়ে অনেক ‘শক্ত পেইনকিলার’ আছে এবং সবসময় থাকবে।
তবে হ্যাঁ, সব ‘ছেলে’ বখাটে না এবং ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে এরা (বখাটেরা) খুব বেশি হলে কয়েক হাজার। এদেরকে সরাসরি চিহ্নিত করাই ছিল আমার উদ্দেশ্য — এবং — ‘বখাটে’ অর্থ ‘দুষ্ট’ না। ‘দুষ্ট’ বলেও ২০১৫ দুঃখজনক ঘটনার পর এক মহল এদের ‘জায়েজ’ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। ‘রাজাকার’ শব্দ কর্তন করে যেমন রাজাকারবিরোধী আন্দোলন সম্ভব না — একইভাবে এই গানটির মেসেজ ‘বখাটে’ বাদ দিয়ে কেবল অনর্থই দাঁড়াবে।
খুব কষ্ট পেয়েছি এইযাত্রা বাঙালির সৃষ্টিশীলতার করুণ অবস্থা দেখে। ‘শব্দ/লাইন পরিবর্তন’-এর দাবি উঠেছে — কিন্তু এর পরিবর্তে কী শব্দ/লাইন হতে পারে তার অত্যন্ত দুর্বল নমুনা এসেছে বহু জায়গা থেকে — বহু ফোরাম থেকে। তাই আমার গানের লাইন অপরিবর্তিত রেখে একটা কাউন্টার ক্যাম্পেইন হতে পারে —
ললনাবা দৌড়ান দিলে বখাটেদের রেহাই নাই
তবে উপরের শব্দগুলা/লাইনটির সকল ‘মেধাসত্ত্ব অধিকার’ আর-কারো নয়, এই অধমের। 🙂
সবাইকে নববর্ষের অনেক শুভেচ্ছা।
সংযোজন ১ / প্রাসঙ্গিক গানপারভাষ্য
এই লেখাটা গানপারে প্রকাশকালে কেন এটি লিখেছিলেন এর লেখক, কোন প্রসঙ্গে প্রেক্ষাপটে এবং ঠিক কখন, বলে নিলে একটু সুবিধা হতে পারে লেখাটার প্রাসঙ্গিকতা ও পটভূমি ধরতে। হ্যাঁ, একটি বিশেষ ও অনেকটা আননেসেসারি প্রতিক্রিয়ার উত্তরে লেখক এটি লিখেছিলেন। ঘটনাটা খানিক পুনরুল্লেখ করলে মেইন রচনা পাঠের/পাঠোদ্ধারের সুবিধা। মাকসুদুল হক গত প্রায় পাঁচ দশকের বাংলাদেশে একজন প্রবাদপ্রতিম সৃজনসন্ধিৎসু সংগীতশিল্পী। ফিডব্যাক ব্যান্ডের মেম্বার ও লিডভোক্যাল থাকার সময় মাকসুদুল হকের কলমে এবং গলায় ‘মেলায় যাই রে’ গানকম্পোজিশনটা বাংলার জনগণান্বিত জলবায়ুমণ্ডলে যে-খ্যাতিশিখর ছুঁয়েছিল তা আজও অবাক বিস্ময়ে ভাবার মতো। উৎসবসংগীত হিশেবে ‘মেলায় যাই রে’ দেশের আর্বান-রুরাল সর্বত্র সমানভাবে গ্রাহ্য। জন্মসময়ের পর থেকে এই দুইহাজারবিশ অব্দি ফিডব্যাকের ‘মেলায় যাই রে’ তিন দশক পার করে এসেছে গানটার জনমান্যতা আদায়ের গ্র্যাফ উত্তরোত্তর বাড়িয়ে। এত জরুরি স্বতঃস্ফূর্ত জনগ্রাহ্যতা বাংলায় আর-কোনো গানের ক্ষেত্রে এর আগের পাঁচ দশকে সম্ভব হয়েছে বলা যাবে না। গানটা বাংলা নববর্ষকালে দিনভর মানুষের গলায় গলায় দেশবাতাস ছেয়ে রাখে। এই কিছুদিন আগে, ‘মেলায় যাই রে’ গান বৈশাখআবাহনী হিশেবে আসন পোক্ত করে নেবার বহু বছর বাদে, এই গানের লিরিক থেকে একটা লাইন পরিবর্তনের দাবিতে হঠাৎ করেই কিছু লোক সোচ্চার হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। যেমন হঠাৎ করেই উঠেছিল দাবিটা, ডাইডাউনও করে অচিরে। এমন একটা দাবির মুখে লেখক অভিযুক্ত পঙক্তিটির/লিরিকটির জন্মদাত্রী হিশেবে একটা আত্ম-অবস্থান স্পষ্টকরণধর্মী রিপ্লাই দিয়েছিলেন এই লেখাটার মাধ্যমে। লেখক ছোট্ট এই রচনাটা তার ফেসবুকস্পেসে নোটসম্ভারে রেখেছিলেন আপ্লোড করে। ফেসবুকনোটস্ থেকেই নিচ্ছি আমরা গানপারে এই লেখাটা, তার আগে লেখকের অনুমোদন ও অনুমতি আদায় করে নিতে পেরেছি অবশ্য। মূল লেখার শীর্ষ ‘প্রসঙ্গ : “বখাটে ছেলের ভিড়ে ললনাদের রেহাই নাই” লাইনটির এক মহলের পরিবর্তনের দাবি ’, শিরোনামে চেইঞ্জটা আমরা করেছি নিবন্ধমধ্য অন্য-একটা বাক্যাংশ চয়ন করে এনে। এইটা মাকসুদ আপ্লোড করেছেন বা লিখেছেন ২০১৬ এপ্রিলের ১৮ তারিখে, এর ঠিক চারদিন আগে গেছে ১৪ এপ্রিল তথা ফার্স্ট অফ বৈশাখ, এই সময়েরই ঠিক আগে দাবিদারেরা আওয়াজ তুলেছিলেন এবং আওয়াজের নমুনা হিশেবে একটা কাগজের প্রতিবেদন সংযোজিত হলো নিচে। এবং জেনে রাখা যাক যে অনলাইন-অফলাইন সমস্ত গণমিডিয়ায় এই সংক্রান্ত খবর-ফিচার কাভার করা হয়েছিল। — গানপার
সংযোজন ২ / ‘মেলায় যাই রে’ গানের কথা পরিবর্তনের দাবি : নিউজপেপারের প্রতিবেদন
নববর্ষ উদযাপনে যখন সবাই ব্যস্ত, তখন জাতীয় জাদুঘরের সামনে দেখা গেল একটি ভিন্ন দৃশ্য। চারজন তরুণ সেখানে তিনটি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন অন্যরকম একটি দাবি নিয়ে। তারা ফিডব্যাককে তাদের ‘মেলায় যাই রে’ গানটির আপত্তিজনক একটি চরণ পরিবর্তনের অনুরোধ করেছেন।
প্ল্যাকার্ডগুলোয় লেখা রয়েছে, ‘গান হোক উৎসবের শুদ্ধতার ধারক’, ‘ললনাদের ভিড়ে হেরে যাক বখাটেরা’, ‘ফিডব্যাক, আপত্তিকর লাইনটি পরিবর্তন করুন’।
দাবি তোলা তরুণদের একজন ডা সিরাজুম মনিরা বলেন, “আমরা ফিডব্যাকের মেলায় যাই রে গানটির ‘বখাটে ছেলের ভিড়ে ললনাদের রেহাই নাই’ চরণটির পরিবর্তন চাই।”
কেন এমনটি চান—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, এই চরণটি একটি ভুল মেসেজ দিয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর। ললনাদের রেহাই কেন থাকবে না? বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের অন্যতম প্রচারিত একটি গানে এমন একটি চরণ থাকুক, তা আমরা চাই না। এই চরণটি বর্ষবরণের চেতনার সঙ্গে যায় না।’
নমুনাপ্রতিবেদনের একটি লিঙ্ক :
… …
- Take a break folks and read this book - April 7, 2025
- Muchkund Dubey and Hindi translation of Fakir Lalon Shah’s work || Mac Haque - March 30, 2025
- Are we ready for Khilafa E Bangal? || Mac Haque - September 5, 2024
COMMENTS