রুদ্রের আপার বাসার পাশেই অনেকগুলো খালি প্লট। কিছু কলাগাছ। তিনতলা থেকে উঁকি দিয়ে দেখলাম সবজি বুনেছে কেউ। ডাঁটা শাক সহ আরো কিছু। লতানো লাউগাছ, মাচা বেয়ে খলবল করছে। একজনকে দেখলাম, ভেড়া নিয়ে ব্যস্ত। জানালা খোলা। কী যে সুমধুর বাতাস! বাতাসের রহস্য বুঝতে দুইবার বারান্দাতেও গেলাম। উত্তর দিকটা এখনো খোলা, যে-কারণে অবারিত বাতাসের আনাগোনা।
এক অমানবিক দানবীয় শহরে, এই যে প্রাণপ্রাচুর্য, এই যে শীতল অনুভূতি, এর আলাদা কোনো ডাকনাম নেই। রুদ্র বলে, এইখানে বড় বড় জাহাজ ভিড়ত এক সময়, তাই এলাকার নাম বোটঘাট।
এখান থেকে ৫ মিনিট গেলেই লেকসিটি। রুদ্র বলে, তারপরেই গ্রাম। তারো পুবে গেলে আমি জানি পূর্বাচল। কাঞ্চন ব্রিজ। থরে থরে নতুন প্লট। একটা গ্যাসকূপও আবিষ্কৃত হয়েছে এই রূপগঞ্জের মাটিতে।
কাঞ্চন ব্রিজে যে-রাস্তাটা গাজীপুর থেকে সিলেটের দিকে ছুটে গেছে এর নাম মেবি ঢাকা বাইপাস। ঢাকার লোকজন একটুখানি সবুজের ছোঁয়া পেতে ওখানে যায়। তিনশ ফিট ধরে, গাজীপুরের দিকে গেলে, মাটির ঘর। এক অসাধারণ রেস্তোরাঁ।
কাঞ্চন ব্রিজ পার হয়ে রূপগঞ্জের ভিতরেও গেছি আমি। মৌসুমী মেবি এদিকে মাঝেমধ্যে সাইকেল চালাতে যায়। মৌসুমী বলেছে, বিপ্লবের পরে, কবি হিসেবে আমাকে সমুদ্রের পাশে (আরো অনেক কবির সাথে) একটা ডুপ্লেক্স বরাদ্দ দেবে। আমার কাজ হবে তখন খালি কবিতা লেখা। ওকে বলি না, তখন আমি খালি জসীমউদ্দিন পড়ব। ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি পড়ব। আর হাফপ্যান্ট পরে ঘুরে বেড়াব। সিগ্রেট খাবো। মাঝেসাঝে রেড ওয়াইন।
মৃদুল বলেছে, আমাকে সে পল্লিকবি উপাধি দেবে। মৃদুল অবশ্য চিন্তিত, আমাদের বন্ধু আলতাফ শাহনেওয়াজ এটা মানবে কি না?
বিপ্লবের পর, আমি নিশ্চয়ই খালি কবিতা লিখব। প্রাচীন কবিরা তো রাজদরবারেই ছিল। এইসব আবোলতাবোল মনে পড়ে, ঢাকা শহরের এক সুতীব্র বৈশাখের দুপুরে, রুদ্র আরিফের পাশে বসে।
পুরাটা ঢাকাই একটা বস্তি। সে ধানমন্ডি বলো, আর নিকেতন। সে-তুলনায় গুলশান আর উত্তরা অনেক পরিপাটি। আর বাকিটা এক। কোনো প্ল্যান নাই৷ রাস্তাঘাটের বালাই নাই। সিংহভাগ গলি ধরেই দুইটা কার পাশাপাশি চলতে পারে না।
লিটন বলছিল একদিন, দাদা, ঢাকা নিয়ে এমন কোনো লেখা নাই যে প্রেম জন্মাবে। প্রেমের লেখা নাই। এত বড়ো শহর। এত মানুষ। এত জন্ম, মৃত্যু। কিন্তু প্রতিটা মানুষ, যে-গল্পটা বলবেন বলে বেঁচে থাকেন, তা কই? আমি ভাবি, কথা সত্য। আহা, প্রেম কিছুটা জাগে শহীদুল জহিরে। কিছুটা আখতারুজ্জামান ইলিয়াসে। পুরান ঢাকার জন্য। আর? আর কিছু নাই।
কতই-বা পরিধি হবে আর এই শহরটার। খুব অল্প। গ্রামগুলো ভাঙছে। শহর হচ্ছে। পুবে পূর্বাচল, পশ্চিমের দিকে সাভার বসিলা। উত্তরে কেরানীগঞ্জ। দক্ষিণে গাজীপুর। ওদিকে আশুলিয়া, বিরুলিয়া। সুলতানা কামাল ব্রিজের আগে ডেমরা। এখানে আমি ৮ মাস ছিলাম একসময়। যাত্রাবাড়ি থেকে মাত্র ১০ মিনিটের দূরত্ব। রাস্তার পাশেই ওয়াসার লেগুনা।
গ্রাম ভাঙছে। শহর বাড়ছে। কিন্তু চরিত্র সেই একই থেকে যাচ্ছে।
শাহবাগের মানুষগুলো কই যায় এখন? যাওয়ার জায়গা কই? চীনের মতো করা উচিত। মহল্লা ধরে ধরে নতুন করে ভেঙে ফেলা উচিত। তারপর কমিউনিটি বেইজড ডেভেলপমেন্ট করা উচিত। প্ল্যানের কেন্দ্রে একজন আর্কিটেক্ট থাকবে। রফিক আজম অথবা নির্ঝরদা। রাজধানীও সরানো যেতে পারে। আর রাস্তাগুলো ভেঙে ১০ লেন। দুইপাশ ধরে ফুলের বাগান। তারপরে সাইকেলের জন্য লেইন। আমাদের বাবা-চাচা মা-খালারা সাইকেল চালিয়ে এক মহল্লা থেকে আরেক মহল্লায় যাবে।
(অসম্পূর্ণ। মে ২০১৯)
- যেভাবে হয়ে ওঠে ‘এসো আমার শহরে’ || শিবু কুমার শীল - March 6, 2025
- Basudeb Dasgupta’s ‘Randhanshala’ The Cooking Place translated by Sourav Roy - March 4, 2025
- ভিক্টোরিয়া অ্যামেলিনা ও যুদ্ধদিনের ইউক্রেনীয় কবিতা || জয়দেব কর - February 17, 2025
COMMENTS