কলাবউ : নবমীর ভাবনা || মনোজ দাস

কলাবউ : নবমীর ভাবনা || মনোজ দাস

আমরা বাস্তুকে গুরুত্ব দেওয়ার ফাঁদে বস্তুই হারিয়ে ফেললাম। তাই তো পূজার অনেক বস্তুই এখন সহজলভ্য নয়। প্রকৃতি থেকে তারা উধাও হচ্ছে। প্রকৃতি রক্ষার ভাবনাটা বুদ্ধিজীবীদের কাতার থেকে জনমানুষের ভাবনায় পরিণত করতে পারলে হয়তো অনেককিছুই ধরে রাখা যেত।

দুর্গাপূজা অনেক খরুচে হওয়ার কারণে ধনাঢ্য পরিবার ব্যতীত বাকিরা সংঘ সৃষ্টি করে — তার মাধ্যমে চাঁদা তুলে ও স্বেচ্ছাশ্রমে উৎসব উদযাপন করে। এই পুরো প্রক্রিয়ায় শিশুকালে তেমন ভুমিকা না থাকলেও বয়স বাড়ার সাথে সংযুক্তি বাড়তে থাকে। আমার সংযুক্তি ফুল তোলা দিয়ে। সংঘের জন্য ফুল তুলতে কাকভোরে দলবেঁধে পাড়াপ্রতিবেশীর পাঁচিল টপকে ফুলবাগানে হানা দেওয়ার স্মৃতি এখনও বেশ টাটকা। তারপর পর্যায়ক্রমে নকুলদানা ও চরণামৃত বিতরণ, গেইট ধরা, সাজসজ্জা এবং সর্বশেষ চাঁদা তোলা। এই ধাপগুলো পার হতে হতে স্কুল-কলেজ শেষ হলো।

সবগুলো কাজই আনন্দময়, তবে সবচে উপভোগ্য চাঁদা সংগ্রহ। শহর, উপশহর, হাটবাজারে বিভিন্ন চরিত্রের মানুষের সাথে বিচিত্র বাক্যালাপ ছিল আমাদের ক্লান্ত শরীরে এনার্জি ড্রিংকের মতো। বহুদিন হলো বহু সংঘে কমিটির নীতিনির্ধারক পর্যায়ে কাজের সুযোগ পেয়েছি। দীর্ঘ এ যাত্রায় অনুধাবন করলাম আমরা মননে এখনও অন্ধকারমুখী। আমাদের সত্য জানার ও মানার চর্চা নিন্মমুখী। আমরা পড়ি না, শুধু শুনি। যা শুনি তা বিশ্বাস করি যাচাই ছাড়া।পরিবর্তন এসেছে শুধু প্রদর্শনে। প্রদর্শনবাদীদের বাজার জমজমাট। ছোট থেকে বড় সব মন্ডপের বাইরে ডিজিটাল ব্যানারের জঞ্জাল।

হিন্দুদের সমাজিক আচার স্থান ও কাল ভেদে নিত্য পরিবর্তনশীল। দুর্গাপূজায় কেউ আমিষ আবার কেউ নিরামিষ খাবার খান। আমার পরিবার নিরামিষবাদী। পূজার তিন দিন নিরামিষ, শুধু দশমীতে আমিষ। অন্য শিশুদের মতো আমারও নিরামিষে অনীহা থাকায় মা আমাদের দুই ভাইয়ের জন্য নানা পদের মিষ্টি খাবার ঘরে রাখতেন। আজও তা-ই থাকে; তবে আগে হাতের তৈরি পদ বেশি থাকত। তিনদিন অপেক্ষার পর দশমীর আমিষ — সে যেন অমৃতসম!


অষ্টমীর ভাবনা
মনোজ দাস রচনারাশি
গানপারে দুর্গাপূজা

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you