উত্তম-সুচিত্রার সিনেমা হিসেবে রীতিমতো সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো ‘সপ্তপদী’। এই সিনেমার আবার প্রযোজকও ছিলেন উত্তম কুমার নিজেই। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এই সিনেমার গল্পে কিছুটা পরিবর্তন আছে। উপন্যাসটা যেমন বিয়োগান্তক, কিন্তু বাঙালি দর্শক তো বিয়োগান্তক সিনেমা দেখা তখনও শেখেনি। তারা জানে, ‘অতঃপর তারা সুখে শান্তিতে দিন যাপন করিতে লাগলো’। বাঙালি দর্শকের এই চাহিদা বা রুচি যা-ই বলি না কেন, এর জন্য উত্তম কুমারকে সরাসরি তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে কথা বলতে হইছে। উত্তম কুমারের অনুরোধে ছবির শেষটা মিলনাত্মক করে চিত্রনাট্য লেখার অনুমতিও উনি দিছেন।
সপ্তপদীর মুক্তির আগে ১৯৫৭ সালে মুক্তি পাওয়া উত্তম-সুচিত্রা জুটির আরেক সুপারহিট সিনেমা ‘হারানো সুর’-এর সংগীতপরিচালক হিসেবে তো বাজিমাত করেছিলেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। এই ছবির জন্যেও তাকেই ঠিক করা হলো। এমনকি হারানো সুর সিনেমার সফলতার লোভেই, হেমন্ত কুমারের সাথে ডুয়েট গাওয়ার কথা ছিলো গীতা দত্তর। কিন্তু কোনো-একটা কারণে গীতা দত্ত গাইলেন না। এদিকে রেকর্ডিঙের দিন চলে এসেছে। রেকর্ডিঙের দিন দুপুরের পর সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনে গাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হলো। গাড়ি থেকে একজন নেমে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে বললেন,—হেমন্তদা (হেমন্ত মুখোপাধ্যায়) ডেকেছেন, এক্ষুনি যেতে হবে। তার কথা তো আর ফেলা যায় না। গেলেন।
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় স্টুডিয়োতে গিয়ে দেখেন, অনেকেই সেখানে বসে আছেন। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে দেখে হেমন্ত বললেন, একটা ডুয়েট গাইতে হবে। আমাদের গানে ঠোঁট মেলাবেন উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেন। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় শুনে বলেন,—এখন তো দুপুরের খাওয়া হয়ে গেছে। এখন কি করে গাইবো? মানে হলো, দুপুরের খাওয়ার পর শরীরে যে ক্লান্তি, আলস্য ভর করে তার প্রভাব তো গলায়ও থাকে। সেজন্যে গাইতে চাইছিলেন না। হেমন্ত কুমার বললেন,—আগে রিহার্সেল করো, তারপর দেখা যাবে। ওখানে বসেই গান গলায় তোলা হলো। আর রেকর্ডও হলো ওইদিনই। গানটার মাঝে কিছু সংলাপ আছে। প্রথমে কথা ছিলো সংলাপগুলো নায়ক-নায়িকারা নিজেরাই দিবে। কিন্তু নানা কারিগরি কারণে হয়নি। পরে ওই সংলাপগুলোও শিল্পীরাই দিলেন। আর সেই সিনেমা তো হিটই, গানটাও এখনও হিট।
সিনেমার চিরকুট প্রবাহ
ইলিয়াস কমল রচনারাশি
- ছত্তার পাগলার সন্ধানে আহমেদ স্বপন মাহমুদ ও সরোজ মোস্তফা - January 28, 2025
- সপ্তপদীর দুপুরবেলায় সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় || ইলিয়াস কমল - January 27, 2025
- স্বরচিত কবিতার অন্তর্গত অনুপ্রেরণা || হাসান শাহরিয়ার - January 24, 2025
COMMENTS