সিনেমাশিল্প শুরু হয়েছে এই সেদিনই বলতে গেলে। এর আগে হাজার হাজার বছর ধরে দুনিয়ায় নারীসৌন্দর্যের জয়গাথা গাওয়া হয়েছে সাহিত্যের মৌখিক ও লৈখিক নানাবিধ শাখায়। লিখিত সাহিত্য শুরুর আগে ফেইবল-প্যারাবল-ফোক্লোরের পাখনায় চেপে নারীর শরীরী বিউটির বিবরণ সঞ্চারিত হয়েছে এক সমাজ থেকে আরেক সমাজে। যেমন দুনিয়ায় নানা ল্যান্ডের পুরাণে এবং উপকথায়, গানে এবং লোককলায়, প্রাচীন গুহাচিত্র ইত্যাদির ভিতর দিয়া নারীর শরীরী বিভঙ্গের বিবরণী কীর্তিত হয়েছে। এইভাবে হেলেন অফ ট্রয়, ক্লিয়োপেট্রা প্রমুখ সুদর্শনার সঙ্গে আমাদের দেখা হয়েছে।
সেই পৌরাণিক দিন, বা প্রায়-পৌরাণিক সেই জমানা, আমরা পারায়ে এসেছি। বিউটির ধারণা পাল্টেছে এই অবসরে। একদিন মনুষ্য সভ্যতায় এসেছে চলচ্চিত্রশিল্প। দুনিয়া জুড়ে এখন নারীসৌন্দর্য মোটামুটি অভিন্ন বৈচিত্র্যের ভিতর দিয়াই বাহিত হইতে দেখি আমরা। ছায়াছবিতন্বীরা রাজ করেন সর্বত্র। উনিশ শতকের বড় অংশ জুড়ে প্রধানত পোর্ট্রেটশিল্পীরা নারীর সৌন্দর্য রঙতুলিক্যানভাসে এঁটে ছড়িয়েছেন দেশে দেশান্তরে। এসেছে সিনেমা মাত্র গত শতকে এবং আজকে ট্র্যাডিশন্যাল সিনেমাশিল্পের চেয়েও দ্রুতগতির মিডিয়া মানুষের দোরগোড়ায়। নারীবিউটি এই গ্লোব্যাল মার্কেটে একচেটিয়া স্ক্রিনবাহিত হয়েই বিস্তার লাভ করে। গ্রেটা গার্বো, সোফিয়া ল্যরেন, মেরিলিন মনরো, এলিজাবেথ টেইলর প্রমুখ গত শতকের অভিনয়শিল্পে একেকজন গ্রেইট আর্টিস্ট হয়েও শরীরী বিভঙ্গবল্লরীর কারণে এরা আলাদাভাবে রেকর্ডব্যুকে নোটেড হয়ে থাকেন লক্ষ করব।
সর্বকালের সেরা নারী অভিনয়শিল্পীদের একজন এলিজাবেথ টেইলরের অভিনয়জীবনের উল্লেখযোগ্য একটা গ্র্যাফ আমরা এই নিবন্ধে দেখে নেবার মওকা পাবো। শুধু বক্সঅফিস-হিট-করা ছায়াছবিগুলো এবং সেগুলোর মুক্তিবছর ও পরিচালক-সহশিল্পীদের নাম আমরা সংক্ষেপে দেখতে চেষ্টা করব।
এলিজাবেথ টেইলর নামটা আওড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই ক্লিয়োপেট্রা ক্যারেক্টারটার ক্ল্যাসিক রয়্যাল প্রেজেন্স আমাদের স্মৃতিচক্ষে ভেসে ওঠে। এবং মনে পড়ে এলিজাবেথ টেইলরের সহ-অভিনয়শিল্পী রিচার্ড বার্টন। শুধু সহশিল্পীই না, বার্টন-টেইলর যুগলের ব্যক্তিজৈবনিক কীর্তি কিংবদন্তির উপকথা হয়ে আছে এখনও দুনিয়ায়। সেইটা আলাদা কাহিনি।
লিজ টেইলর, যদিও তিনি এই নামে ডাকাডাকি পছন্দ করতেন না জানিয়েছেন বিভিন্ন জায়গায় ইন্টার্ভিয়্যুতে, তিনি চাইতেন এলিজাবেথ নামেই ডাকা হোক তাকে। একদম রানীর মতোই ছিল তার চলাফেরা। সার্বভৌম সম্রাজ্ঞী। লিজ নামে শর্টকাটে ডেকে সিনেসাংবাদিকরা বারকয়েক বিপাকেও পড়েছে। একদম ডিনামাইটের মতোই ছিল লিজের শরীরশোভা, বা এলিজাবেথের শরীরী সৌন্দর্য, রয়্যাল বিউটি। ডিভ্যাস্ট্যাইটিং। একইসঙ্গে এলিগ্যান্ট এবং ভোল্যাপ্চ্যুয়াস। লিজেন্ডারি বিউটি লিজ টেইলরের অভিনীত সিনেমাগ্র্যাফটা আমরা হাজির করছি নিচে। এই লিস্টে এলিজাবেথ অভিনীত ম্যুভির মুক্তিবছর অনুসারে ম্যুভিনাম, ডিরেক্টরনাম এবং প্রধান দুইয়েকজন অভিনয়শিল্পীর নাম লিপিবদ্ধ করা হয়েছে :
১৯৪৪ ।। ন্যাশন্যাল ভেলভেট ।। ক্ল্যারেন্স ব্রাউন ।। মিকি র্যুনি, অ্যান রিভার, অ্যাঞ্জেলা ল্যান্সব্যেরি
১৯৪৯ ।। লিটল উইমেন ।। মার্ভিন লিরয় ।। জ্যুন অ্যালিসন, পিটার লফোর্ড, হ্যারি ড্যাভেনপোর্ট
১৯৫০ ।। ফাদার অফ দ্য ব্রাইড ।। ভিন্সেন্ট মিল্যানি ।। স্পেন্সার ট্রেইসি, জ্যোয়্যন ব্যেনেট
১৯৫১ ।। অ্যা প্লেইস ইন দ্য সান ।। জর্জ স্টিভেন্স ।। মন্টগ্যম্যারি ক্লিফট, শেলি উইন্টার্স
১৯৫৬ ।। জায়ান্ট ।। জর্জ স্টিভেন্স ।। রক হাডসন, জেমস্ ডিন, ক্যারল ব্যেকার
১৯৫৭ ।। রেনট্রি কাউন্টি ।। অ্যাডোয়ার্ড ম্যেইট্রিক ।। মন্টগ্যম্যারি ক্লিফট, ইভা ম্যেরি সেইন্ট, লি মার্ভিন
১৯৫৮ ।। ক্যাট অন অ্যা হট টিনরুফ ।। রিচার্ড ব্রুক্স ।। প্যল নিউম্যান, বার্ল আইভস্
১৯৫৯ ।। সাডেনলি লাস্ট সামার ।। জোসেফ এল্. ম্যাক্নিউয়িক্স ।। ক্যাথ্রিন হেপবার্ন, মন্টগ্যম্যারি ক্লিফট
১৯৬০ ।। বাটারফিল্ড-৮ ।। ড্যানিয়্যাল মান্ ।। ল্যরেন্স হার্ভি, এডি ফিশার
১৯৬২ ।। ক্লিয়োপেট্রা ।। জোসেফ এল্. ম্যাক্নিউয়িক্স ।। রিচার্ড বার্টন, রেক্স হ্যারিসন, হিউম্ ক্রোনিন, রডি ম্যাকডায়াল
১৯৬৬ ।। হু’জ্ অ্যাফ্রেইড অফ ভার্জিনিয়া উল্ফ? ।। মাইক নিকোল্স ।। রিচার্ড বার্টন, জর্জ সেগাল, স্যান্ডি ড্যানিস
এই ফিল্মোগ্র্যাফি নিতান্ত সংক্ষিপ্ত, রয়েছে এর বাইরে আরও অনেক ম্যুভি যেগুলো অত্যন্ত ব্যবসাসফল হয়েছিল। প্রোক্ত তালিকার ম্যুভিগুলো কমবেশি সব-কয়টাই অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে কিংবা মনোনীত হয়েছে অ্যাওয়ার্ডের জন্য। অন্যান্য ম্যুভিরাশির মধ্যে যেমন রয়েছে ‘ল্যাসি কাম হোম’, ‘জেইন আয়ার’, ‘দ্য হোয়াইট ক্লিফস্ অফ ডোভার’, ‘কারেজ অফ ল্যাসি’, ‘সিন্থিয়া’, ‘লাইফ উইথ ফাদার’, ‘অ্যা ডেইট উইথ জুডি’, ‘কন্সপিরেটর’, ‘ক্যুয়ো ভাদিস্’, ‘আইভানহো’, ‘দ্য গার্ল হু হ্যাড এভৃথিং’, ‘দ্য লাস্ট টাইম আই স্য প্যারিস’, ‘সেন্ট অফ মিস্ট্রি’, ‘দ্য ভিআইপিস্’, ‘দ্য স্যান্ডপাইপার’, ‘দ্য টেইমিং অফ দ্য শ্রু’, ‘ডক্টর ফস্টাস’, ‘ব্যুম’, ‘সিক্রেট সেরিমোনি’, ‘দ্য অনলি গেইম ইন টাউন’, ‘আন্ডার মিল্কউড’, ‘জি অ্যান্ড কো.’, ‘দ্য ব্লু বার্ড’, ‘অ্যা লিটল নাইট মিউজিক’, ‘উইন্টার কিল্স’, ‘দ্য মিরর ক্র্যাকড’, ‘দ্য ফ্লিন্টস্টোন্স’ প্রভৃতি ছাড়াও অনেক অনেক সিনেমা এবং টিভিফিকশন্স। এলিজাবেথ টেইলর অভিনীত টেলিভিশনছবিগুলোর মধ্যে ‘ডিভোর্স হিজ্, ডিভোর্স হার্স’, ‘ভিক্টোরি অ্যান্ড এনটিবি’, ‘রিপিট পার্ফোর্ম্যান্স’, ‘বিটুয়িন ফ্রেন্ডস্’, ‘ম্যালিস্ ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’, ‘দ্যেয়ার মাস্ট বি অ্যা প্যনি’, ‘প্যোকার অ্যালিস্’, ‘স্যুয়িট বার্ড অফ ইয়্যুথ’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
প্রতিবেদনকারী : মিল্টন মৃধা
… …
- অন্তরঙ্গ কবিচিত্র - January 28, 2021
- সঞ্জীব চৌধুরী : জীবনতথ্য - November 19, 2019
- বাঁশি ও বিচ্ছেদী - November 16, 2019
COMMENTS