নিজের ফিউনেরালে এলিজাবেথ টেইলর

নিজের ফিউনেরালে এলিজাবেথ টেইলর

মোটামুটি বিরাশি/তিরাশি বছরের লম্বা হায়াত পেয়েছেন এলিজাবেথ টেইলর। উনি ইন্তেকাল করেন ২০১১ মার্চের শেষদিকটায়। জীবদ্দশায় যেমন উনি ছিলেন সময়নিষ্ঠার প্রতি বুড়া-আঙুল দেখিয়ে চলা মানুষ, শ্যুটিঙের স্পটে আসতেন সবাইকে অধৈর্য বানিয়ে দেরি করে, উনার মৃত্যুর পরেও দেখা গেল স্বভাব পাল্টায় নাই। নিজের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় এসেছেন সেই চিরাচরিত লিজের স্বভাব ধারণ করে, স্বরূপে, দেরির চূড়ান্ত ঘটিয়ে। ব্যাপারটা খানিক বিশদে বলা যাক।

পুরা নাম ডেইম এলিজাবেথ রোজমন্ড টেইলর ডিবিই। লিজ বলে কেউ ডাকলে এলিজাবেথ মাইন্ড করতেন, মুখঝামটায় তেড়ে আসতেন, উনার রানীর মতো চলাফেরার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণভাবে চাইতেন তাকে এলিজাবেথ নামেই ডাকুক সবাই। রিচার্ড বার্টনের জন্যই লিজ নামটুকু হয়তো অনুমোদিত ছিল, মর্মস্পর্শা ভালোবাসাবাসির সিনগুলায়, একান্ত পরস্পরের সান্নিধ্যে। অ্যানিওয়ে। এলিজাবেথ জন্মেছেন ইংল্যান্ডে, ক্যারিয়ার বিল্ডাপ করেছেন ব্রিটিশ-মার্কিন অভিনয়শিল্পী হিশেবে। এলিজাবেথের সৌন্দর্য অস্বীকার করে এমন বলদ কেউ দুনিয়াসীমায় আছে? যেমন ছিল অভিনয়নৈপুণ্য, শরীরী বিভা ও বিউটি, জীবনযাপনের প্রণালি বিবেচনায় এলিজাবেথ সবাইকে টেক্কা দিতে পারেন আজও।

প্রণয় এবং বিবাহ ইত্যাদি নিয়া কাহিনি তো কম নয় এলিজাবেথের জীবনে, একের পরে এক বিয়ে করেছেন, এবং বিয়াশাদি সাকুল্যে সম্ভবত ছয়-সাতবার। এর মধ্যে এক রিচার্ড বার্টনকেই বোধহয় তিনবার ডিভোর্স দিয়েছেন এবং হয়েছেন পুনর্বিবাহিত বার্টনেরই সঙ্গে। এমন আন্দাজ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে এলিজাবেথের জীবনে রিচার্ড বার্টনই ছিলেন পার্ফেক্ট ম্যাচ। তবু ধুন্দুমার সংঘাতের ভিতর দিয়ে এলিজাবেথ তার প্রেমিককে তটস্থ রেখে গেছেন সবসময়। রিচার্ড বার্টন অবশ্য এলিজাবেথের বহু আগেই ইন্তেকাল করেন।

বদনামের তো অন্ত ছিল না উনার ব্যক্তিগত যাপনপ্রণালির কারণে, যেমন অন্ত ছিল না সুনামেরও, সেসব সুনাম-বদনাম সিনেম্যাগাজিনগুলার মাধ্যমে ছড়িয়েছে দিকে দিকে গোটা বিশ্বে। সেসব বদনামের মধ্যে একটি ছিল যে এলিজাবেথ পাব্লিক অ্যাপিয়্যারেন্সগুলায় হাজির হন অত্যন্ত দেরি করে। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ২৭ ফেব্রুয়ারি লিজের জন্ম হয় এবং জীবনাবসান হয় ২০১১ সনের ২৩ মার্চে। এর মাঝখানে প্রায় ৫০ বছরের অ্যাক্টিভ ক্যারিয়ার। দিরং করা ছিল তার স্বভাবের সঙ্গে যুক্ত বৈশিষ্ট্য এক। এই স্বভাববৈশিষ্ট্য নিয়া তার পেরিফেরির মানুষেরা সারাজীবন ভোগান্তিতে কাটিয়েছেন। এলিজাবেথ তা জানতেন এবং সম্ভবত আমোদ পেতেন সবাইকে বিরক্ত করিয়ে।

এমনকি মৃত্যুর পরেও উনার স্বভাবের এই দিকটা সাক্সেসফ্যুলি তিনি বহাল রাখতে পেরেছেন। শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে এলিজাবেথের শববহনকারী কফিন পৌঁছায় নির্ধারিত সময় পারায়ে যাওয়ার পাক্কা পনেরো মিনিট পরে। এবং অবাক কাণ্ড হচ্ছে যে এই দিরং ঘটেছে এলিজাবেথেরই ইচ্ছায়। তিনি মৃত্যুর আগে একটা ইচ্ছাপত্রে এই জিনিশটা স্পষ্ট উল্লেখ করে যান যে তার কফিন যেন অন্ত্যেষ্টিপ্রেক্ষাগৃহে ১৫ মিনিট দেরিতে নেয়া হয়। এমনকি তিনি ইচ্ছাপত্রে এইটাও বলে গেছেন যেন কেউ-একজন কফিন উপস্থিত হবার পরে ঘোষণা করেন যে এলিজাবেথ তার শেষকৃত্যানুষ্ঠানেও দেরিতে এসেছেন! ঘোষক অক্ষরে অক্ষরে এলিজাবেথেরই ইচ্ছা বাস্তবায়ন করেছেন, বলা বাহুল্য।

রচনা : বিদিতা গোমেজ

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you