আমি বেড়ে উঠেছি ভীষণ বুদ্ধিদীপ্ত ফুর্তিবাজ একটা ফ্যামিলিতে। এই ফ্যামিলির মানুষগুলা সারাক্ষণ কঠিন সমস্ত বিষয়াশয় নিয়া স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ততায় ব্যস্ত রইতেন, রোগবালাই আর মৃত্যু ইত্যাদি নিয়াই ছিল ওঠবস তাদের। আমি এমনকিছু অসাধারণ মানুষের সাহচর্যে বেড়ে উঠেছি, লালিতপালিত হয়েছি এমনকিছু মানুষের হাতে, যারা এমনকি মুর্দা-দাফনের অনুষ্ঠানেও আশ্চর্য সহজিয়া হাসিতামাশা করতে পারতেন।
নিজেরে নিয়া আজকাল আমি আর অত সিরিয়াস্লি ভাবি না। আমারে নিয়া কার বিচারবিবেচনা কেমন তা নিয়াও আমি বিন্দুমাত্র ভাবি না আর। এইগুলা আমারে এখন আর মোটেও দুশ্চিন্তায় ফালায় না।
আপনি যদি আমার বয়স পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন, যদি হায়াতে কুলায় আপনার, তাইলে এদ্দিনে একাধিক হৃদযন্ত্রের ভাঙাচুরার শিকার হয়ে গেছেন সন্দেহ করা চলে না। কাজেই আমার জন্যে একটু শোক ও সমবেদনা আপনি বরাদ্দ রাখতেই পারেন।
দুনিয়ায় ধনী আর গরিবের মধ্যে এই-যে ব্যবধান এর জন্যে আমার তো কোনো কসুর নাই। এর পুরা দায় আমাদের সরকারের। আমি চাই বিশ্বটা আরও অন্যরকম হোক। এমন একটা দুনিয়া আমি চাই যেইখানে রোজ সকালে জেগে এমনটা ভাবতে হবে না যে, আহ্, কী সৌভাগ্য যে আমি আমার মেয়েটারে একটু পুষ্টিকর খাবার যোগাইতে পারলাম! এতটা হাভাতে দুনিয়া আমি দেখে মরব বলে তো জন্মাই নাই।
পৃথিবীটা ভাবতে গেলে এমন বেকুবের একটা জায়গা যে একজন ভুখা মানুষের মুখের উপর একটুকরা পাৎলা রুটি ছুঁড়ে দিয়া আমরা স্বর্গীয় সুখে ভরে উঠি।
গরিব হয়েছ বলে একদম উদয়াস্ত গতর-পানি-করা ঘামের পরিশ্রম করতে হবে এমনটা আমার মনে হয় না কেউ ভাবে। স্রেফ বেঁচে থাকবার জন্যে এতই কিমৎ চুকাবার কথা না। আমার মনে হয় সেই লোকটাই গরিব থাকবে যে সারাদিনে একটাও কুটো না সরায়ে স্রেফ শুয়েবসে সময় কাটায়। কিন্তু দুনিয়ায় আদ্যোপান্ত অলস ও মুর্গিঝিমানো লোকগুলাও তো দেখি বিস্তর ধনী হয়, ঘামরক্ত-জল-করা মানুষগুলা থাকে গরিব।
কথাটা বাজে শোনাবে আমি নিশ্চিত এবং এইভাবে না-বললেই ভালো লাগত আমার, তবু বলে ফেলছি যে, জীবনে অনেক যন্ত্রণা সয়ে বেড়ে উঠেছে যে-মানুষগুলা তাদেরেই বেশি ভালো লাগে আমার। খেয়াল করে দেখেছি যে এই মানুষগুলা দয়ালু হয়।
ছোট হোক বড় হোক ফ্যামিলির ভিতরে যে-কোনো সমস্যার শুরু যোগাযোগহীনতা থেকে। কেউ-একজন শুনছে না বলেই ক্রাইসিস ঘনীভূত হতে হতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
মেজাজ আমি পারতপক্ষে খারাপ করতে চাই না। আমি দেখেছি যে টেম্পার ল্যুজ করলে নিজেরে আমি মাফ করতে পারি না পরে। থেকে থেকেই মনে হয় হেরে গেছি আমি। মৃত্যু বা এইরকম বড় বেদনার ক্রাইসিসগুলাতে আমি নিজেরে শান্ত রাখতে পারি। হিস্টেরিক্যাল হই না কখনোই, চিলচিৎকার করি না বা মুষড়েও পড়ি না, চাক্ষুষ এই আচরণগুলো হয়তো আমারে আরও অনেক বেশি হিম্মতি প্রমাণ করত, তবু আমি উন্মত্ত হতে পারি না ক্রাইসিসমোমেন্টে।
এতগুলো বছর গড়ায়ে গিয়েছে পেছনে, এবং এই সময়ের মধ্যে চেহারায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে আমার। সবকিছু সত্ত্বেও আমি একজন নারী এবং চেহারাছিরির বিবর্তন হলেও আমার নারীসত্তা আজও অটুটই আছে।
চয়ন, সংকলন ও অনুবাদন : বিদিতা গোমেজ
… …
- শৈলিন উডলির কথাগুলি (৭) - August 11, 2019
- কেইটের কথাবাত্রা (১০) - July 25, 2019
- টিল্ডা টোল্ড (২) - May 12, 2019
COMMENTS