আমার ঈদ || সুমনকুমার দাশ

আমার ঈদ || সুমনকুমার দাশ

যে শৈশব ফেলে এসেছি, তা হুট করেই একদলা স্মৃতি হয়ে ভর করে মাথায়। ছোটবেলার কত কী স্মৃতি! ঈদের আগের সন্ধ্যায় মুসলিম সহপাঠী বন্ধুদের সঙ্গে দ্বিধাতুর মনে দ্বিধাতুর মনে আকাশের দিকে নিষ্পলক চেয়ে থাকতাম। চাঁদ উঠল কি উঠল না — এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে চলত হট্টগোল। এরই মধ্যে মসজিদের মাইকে ভেসে আসত আমাদেরই আরেক সহপাঠী রহমানের আব্বার কণ্ঠ — ‘আগামীকাল ঈদের নামাজ …’। এইভাবে যখন ঈদের দিনটি নিশ্চিত হয়ে যেত — ঠিক তখন থেকেই মূলত ঈদগাহ তৈরির প্রস্তুতি শুরু হয়ে যেত।

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার ঘুঙ্গিয়ারগাঁও নামক যে মফস্বল শহরটিতে আমার শৈশবের বসবাস ছিল, সেখানে তখন স্থায়ী কোনও ঈদগাহ ছিল না (এখনও সম্ভবত নেই)। তাই মসজিদের আঙিনাতেই ঈদের নামাজ আদায় করতেন মুসল্লিরা। আবার কোনও কোনও বছর মসজিদের পাশের শাহীদ আলী পাবলিক পাইলট দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে অস্থায়ী ঈদগাহ তৈরি করা হতো। মাঠের গর্তে নতুন মাটি ফেলে, বাঁশ পুঁতে শামিয়ানা টানিয়ে দীর্ঘ জায়গা জুড়ে নামাজ পড়বার স্থানটি তৈরি করা হতো। মাঠের এক স্থানে একটি লম্বা বাঁশ খাড়া করে দাঁড় করিয়ে সেটির আগা থেকে দড়ি টানিয়ে মাটিতে পুঁতে-রাখা ছোট খুঁটিতে বেঁধে রাখা হতো। আর টানানো সেই দড়িতে আঁটা দিয়ে লাগানো থাকত কাঁচি-দিয়ে-কাটা রঙবেরঙের ত্রিকোণাকৃতি পাতলা কাগজ। এসব কাজে মুসলিম বন্ধুদের সঙ্গে আমারও অংশগ্রহণ থাকত পাল্লা দিয়ে। শামিয়ানা টাঙানো থেকে রঙিন কাগজে আঁটা লাগানো — আহা, কতই-না মধুর ছিল ফেলে-আসা দিনগুলো!

খুব সকালেই ঈদের জামাত হয়ে যেত। এর আগে থেকে আমরা কয়েকজন হিন্দু বন্ধু পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে মাঠের পাশেই প্রস্তুত হয়ে থাকতাম। আমাদের মুসলিম বন্ধুদের নামাজ শেষ হয়ে গেলে তবেই সবাই মিলে মফস্বল শহরটির এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াতাম। এখানে-সেখানে দাওয়াত খেতে যেতাম। দাওয়াতের মূল পর্বটা থাকত সহপাঠী রুবেলদের বাসায়। চোখ বন্ধ করলে এখনও যেন নাকে আসে তার আম্মার তৈরি হরেক রকমের পিঠা আর সেমাইয়ের সুঘ্রাণ।

তবে ঈদগাহ তৈরির প্রস্তুতি, পিঠা-সেমাই ছাপিয়েও আমার মন পড়ে থাকত অন্যখানে, সেটা হলো বিটিভি। কারণ ওই বিটিভিতেই তো বাজত অন্য অনেকের মতো আমারও প্রিয় কাজী নজরুল ইসলামের লেখা সেই গানটি — ‘ও মন, রমজানের ওই রোজার শেষে এল খুশির ঈদ’।

সত্যিই তো, খুশির বার্তা ছড়িয়ে সেই ঈদ এখনও তো আমার কাছে শৈশবের ঘ্রাণ নিয়েই বারবার ফিরে আসে।

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you