সেই প্রাচীন কালের কথা। তখন ক্লাস টু-তে পড়ি। কুলাউড়া উপজেলা অফিসার্স কলোনিতে বসবাস। আমাদের উপরতলায় সায়েম-মুন্নিআপাদের বাসা। যতদূর মনে পড়ে আমার ঈদ শুরু সায়েমদের সাথে। কিছুকাল পরে সায়েমরা শায়েস্তাগঞ্জ বদলি হওয়ার পর তাদের ফ্ল্যাটে আসে বাবুমামা-পপিখালারা। আমার মা বাবুর আব্বাকে মামা ডাকতেন, সেই কারণে বাবু আমার সহপাঠী হওয়া সত্ত্বেও তাকে মামা ডাকতাম। বাবুদের সাথে ঈদ উদযাপন করেছি কয়েকবার, তারাও বদলি হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত।
এরপর যখন প্রাইমারি স্কুলে বড়ক্লাসে উঠলাম — তখন বন্ধুরা মিলে এর বাসা ওর বাসাতে ঈদ উদযাপন হতো দলবেঁধে।
আমার মায়ের বন্ধু রওনক জাহান খালার বাসায় ঈদের দিন সকালেই আমার ও আমার ছোটভাইয়ের যেতে হতো নামাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে। আমাদের বন্ধু আশেক-আরেফ যে খাবার নিয়ে বসে থাকে আমাদের সাথে উদযাপন করবে বলে। তাদের সাথে আমাদের এত মাখামাখি ছিল যে ঈদে আমরাও কাপড় কিনতাম, গিফ্ট পেতাম, দিতাম।
আশেকরা মৌলভীবাজার চলে যাওয়ার পর একই রুটিন অব্যাহত ছিল তারমিম-তানহিদদের সাথে। তারমিমের মা সালেহাখালা — তিনিও মায়ের বন্ধু; কিন্তু আমার আকর্ষণের জায়গা রহিমচাচা — তারমিমের আব্বা। চাচা বসে থাকতেন, আমি না-গেলে দুপুরের খাবার মুখে নিতেন না।
কলোনির বাসা ছেড়ে যখন ভাড়া বাসা নিলাম তখন নতুন আত্মীয়তা গড়ে উঠল হাসান-নোমান ও আলেয়াআপা-কয়সরভাইদের সঙ্গে। কয়সরভাই আমাকে ঈদের দিন বেড়াতে নিয়ে যেত তার বন্ধুদের সাথে।
ততদিনে আমরা বড় হয়েছি অনেক। আমার ভাই তার মতো করে তার বন্ধুদের সাথে ঈদ উদযাপন করত, আমি আমার মতো।
হাইস্কুলের প্রথম দিকে আমি, তারমিম, শহীদ, বকুল, মুন্না বিকালে নার্গিস-মুন্নি-শিউলিদের বাড়ি ঘুরতে যেতাম।
যত বড় হয়েছি আমরা নানা মতে ভাগ হয়েছি, আমাদের বিশ্বাস, আমাদের বোধ পাল্টেছে। একটু হয়তো দূরে সরেছি। কিন্তু এখনো ঈদ আসলে বুকের চিনচিনটা টের পাই। বোধ করি আমার বন্ধুরাও সেই টানটা টের পায়!
মৌলভীবাজার আসার পর নতুন জায়গা, নতুন বন্ধু। ঈদের সকালে মুন্নার ( ডা. বিবেক) নেতৃত্বে সাইফুল-সুমনদের বাসায় ঈদআড্ডা, খানাপিনা। জাফরভাইয়ের বাসায় না-গেলে সিনিয়র কমরেড অনেক মনখারাপ করতেন। না-গেলে পরের কিছুদিন মান-অভিমান নাটক।
গত ৪০ বছর নানাভাবেই ঈদ উদযাপন করেছি।
অনেককিছুই পাল্টাতে দেখেছি।
এখন আর কেউ ঈদ উদযাপনে ডাকে না!!!
প্রগতিশীল ও প্রতিক্রিয়াশীল সব বন্ধুরাই কোথায় যেন এক হয়ে গেল …
আজ এই ঈদের দিনে পরলোকগত খালা-চাচা-বন্ধুদের আত্মার শান্তি কামনা করছি।
সকল বন্ধুদের ডাকছি, — আয়, বুকে আয়!
মনোজ দাস। মঞ্চনাট্যকার ও সাংস্কৃতিক সংগঠক। নিবাস মৌলভীবাজার
… …
- লোককবি তাজউদ্দিন ও তাঁর গান || জফির সেতু - November 25, 2025
- শাহজালাল শাহপরান গ্রামবাঙলায় গাজির গান || তুহিন কান্তি দাস - November 22, 2025
- আমাদের গ্রামের নাম আমাদের নদীর || কাজল দাস - November 19, 2025

COMMENTS