কোভিডময় শীতের বিদায়বেলায় || ওলি মো. আব্দুল্লাহ চৌধুরী

কোভিডময় শীতের বিদায়বেলায় || ওলি মো. আব্দুল্লাহ চৌধুরী

ঋতুর পালাক্রমে শীতের পর বসন্ত আসে। এতে আবার নতুন কি? আশাবাদী রোমান্টিক কবির জন্য শীত বসন্তের বারতা নিয়ে আসে। দ্রোহের কবি শেলি রোমান্টিকও বটে। তাই তো তিনি লেখেন “ইফ উইন্টার কামস, ক্যান স্প্রিং বি ফার বিহাইন্ড?”

এবারকার শীত অবশ্য অন্যবারের মতো নয়। কোভিডের মধ্যে শীত এসেছিল আশঙ্কার ডঙ্কা নিয়ে। সরকারবাহাদুরও মাস্ক পরার ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপ করেন। বেশকিছু লোককে মাস্ক না পরায় জরিমানা করা হয় এবং  পত্রিকাগুলো অনেক জোশ নিয়ে নিউজ ও ছবি প্রচার করে। তারপর, সংক্রমণের রেট কমে, সতর্কতায়ও  ঢ়িলে পড়ে। নানা নিউজের মধ্যে মাস্ক পরার ব্যাপারটি হারিয়ে যায়।

বিমানপোতে বাসের আগমনে ভাবনায় ছেদ পড়ে। ওসমানীতে বাস দিয়ে যাত্রীদের নেওয়ার প্রচলন নেই; কিন্তু আমাদের বন্ধু উকিল সুদীপ্ত বলল, নিতে পারে। সুনামগঞ্চ রুটে বাতিলকৃত এক ধরনের বাস বিমানপোতে দেখিয়া মেজাজটা খিচড়াইয়া গেল। যখন বাসে উঠিলাম, তখন দেখলাম বাসটি কানায় কানায় পরিপূর্ণ। রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহীর ক্ষ্যাত্ মানসিকতা পুনশ্চ প্রতিভাত হইল।

নামিবার সময় লক্ষ করিলাম বলাকার রঙে যথারীতি মুড়ির টিনটি রাঙানো। তবে, উড়োজাহাজখানা দেখিয়া মনটা কিছু হইলেও জুড়াইল। ফেবুতে আয়ারল্যান্ড-থেকে-আগত মনজুরকে পাঠাইয়া দিলাম। তার কারণে বলাকা পরিবহনে আবার ওঠা।

কুয়াশার কারণে চেঙ্গেরখাল সংলগ্ন জলাভূমি দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। কুল্লে আধাঘণ্টার জার্নি। এর মধ্যে বালা আসিয়া ম্যাঙ্গোর শরবত দিয়া গেল। খেয়ে অর্গানিক বোধ হইল। কিছুদিন পূর্বে, স্বপ্ন থেকে অফারে ট্যাং ব্র্যান্ডের অরেঞ্জ অর্ডার করিয়া ম্যাঙ্গোর গুঁড়া পাইয়াছিলাম যার স্বাদ মোটেই ভালো ছিল না। বেটারহাফের অনুমান যে পরিবেশনকৃত জুসটা আসল পাল্প থেকে প্রস্তুতকৃত।

জানালার বাহিরে শুধু লালের দিগন্তরেখা দৃশ্যমান। নীল আকাশের কোনোকিছুই বোঝা যাচ্ছে না। মন চলে যায় বিলেতে। টেমস নদীর পারের লোকদের দশা খুবই খারাপ; উইন্টার মৃত্যুর মিছিলকে দীর্ঘায়িত করেছে। অলগেইট ইস্ট, হোয়াইটচ্যাপেল, স্টেপনিগ্রিন, মাইলএন্ড, বো হয়ে ওয়েস্টহ্যামে মৃত্যুর মিছিল। ফেবুতে লন্ডনে বসবাসরত বন্ধু সাজুর স্ট্যাটাস চোখে পড়ে যে লিখেছে :—

কতদিন দেখি না অফিসের মুখ,
ঘরে কী মিটে  অফিসের সুখ!
হোইটচ্যাপেলের পিঁয়াজুর স্বাদ
বউয়ের রান্নায় মিঠে সেই আস্বাদ
কিন্তু করোনার খবরে মন হয় ছারখার…

কিছুক্ষণ পর রাজধানীর কিছুটা দৃশ্যমান হইল। ডাস্ট ও মিস্টের সংমিশ্রণে স্কাইলাইনের বেহাল দশা। চাকা রানওয়ে স্পর্শ করার পূর্বেই শীতের বিদায়ে মনটা ভারী হইয়া উঠিল।

নতুন বছরের শুরূতেই অবশ্যই ফ্যাশনহাউসগুলো সেল লাগাইয়া শীতের বিদায়ঘণ্টা বাজাইয়া ছিল। ল্য রিভ  থেকে শুরু করে সেইলর, টেক্সমার্ট,  কেটস আই  পর্যন্ত।  সবাই ব্লেজারে বিশাল ছাড়ের মহাঘোষণা দেয়।

আমাদের নীতিনির্ধারকদের আশঙ্কা বাস্তবে পরিণত হয়নি। বিজ্ঞানী বিজনের ফোর্কাস্ট না-কি এরকমই ছিল যে আমাদের মতো দেশগুলোতে করোনা শীতে তেমন কাবু করতে পারবে না। টেমস নদীর পারের লোকদের উল্টা এই বদ্বীপের ব্যবসায়ীদের দশা; অনলাইনে শীতবস্ত্রবিক্রির মহাঘোষণা দিয়ে নেমে পড়া। বস্ত্রবিক্রেতারা ব্লেজার, সোয়েটার, স্যুট সহ শীতের কাপড়গুলি ইংরেজি বছরের শুরুতেই বিক্রি করে র‍্যাক/তাকিয়া খালি করতে চায়। তাদের যেন তর সইছে না!

কল্যাণপুরের খালের পারের বাহারি পাতার এই গাছটির নাম আমি জানি না। গাছের পাতায় ধুলোর পুরো আস্তরন। দেখে মনে হচ্ছে শীত পার করতে করতে কাহিল হয়ে গেছে। শেলির ভাষায়ই তাকে সান্ত্বনা দিতে চাই। আর কয়টা দিন, বসন্ত আসছে। শীতের পরই বসন্ত। শীতের শেষে বসন্ত না এসে কি উপায় আছে?

… …

ট্রেন টু আজমপুর || ওলি মো. আব্দুল্লাহ চৌধুরী

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you