আধ্যাত্মিক রাজধানী হিসেবে সিলেট বিশ্বময় পরিচিত। সিলেটের মাটির সাথে জড়িয়ে আছে হযরত শাহজালাল ও শ্রী চৈতন্যের স্মৃতি। আধ্যাত্মিকতার ধারাবাহিকতায় সিলেটে জন্ম নেন বিভিন্ন মরমী সাধক, সুফি, দার্শনিক লোককবিরা।
বাংলা লোকসংগীতের রাজধানী হিসেবে সিলেটকে কল্পনা করলে সেটা ভুল হবে না। কারণ লোকগানের সিংহভাগ মরমী সাধকদের জন্ম এই সিলেট ভূমিতে। সৈয়দ শাহনূর, শিতালং শাহ, আরকুম শাহ, ইব্রাহিম তশনা, বেলা শাহ, দীন ভবানন্দ, দীনহীন, কালা শাহ, হাছন রাজা, রাধারমণ, শাহ আবদুল করিম, দুর্বিন শাহ, কফিল উদ্দিন, ক্বারী আমির উদ্দিন প্রমুখ মরমী সাধকদের জন্ম এই সিলেট বিভাগে।
মরমীয়া সংগীতের রাজধানী হিসেবে খ্যাত সিলেটে যেমন মরমী সাধকদের জন্ম হয়েছে তেমনি তাদের সৃষ্টিকে ছড়িয়ে দিতে, প্রচার করতে সিলেটেই জন্ম নিয়েছেন অসংখ্য গুণী শিল্পী। এইসকল গুণী শিল্পীরাই মরমী সংগীতকে ধারণ করে তাদের কণ্ঠের মাধ্যমে আমাদের নিকট পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছেন। এইসকল গুণী শিল্পীদের মধ্যে নারী শিল্পীদের অবদান অবিস্মরণীয়। আজ আপনাদের সামনে লোকসংগীতে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছেন এমন কয়েকজন ক্ষণজন্মা নারী গুণী শিল্পীর ব্যাপারে লেখার চেষ্টা করতেছি। যতদিন বাংলা লোকসংগীত থাকবে ততদিন এই শিল্পীদের নাম ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ থাকবে। তারা ছিলেন বলেই সিলেটের তথা বাংলার লোকসংগীত আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে অবস্থান করতেছে।
প্রবীণ লোকসংগীতশিল্পী সুষমা দাস
একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রবীণ লোকসংগীতশিল্পী সুষমা দাস সিলেটি লোকগানের অবিস্মরণীয় একটি নাম। তিনিই সিলেটের প্রথম নারী কণ্ঠশিল্পী যিনি জনসম্মুখে স্টেইজে গান পরিবেশন করেছিলেন। তাঁর পূর্বে মেয়েরা মেয়েলি পরিবেশে গান গাইলেও জনসম্মুখে স্টেইজে গান করত না। সেই সময়ের সমাজব্যবস্থায় হিন্দু-মুসলিম উভয় সমাজে মেয়েদের জনসম্মুখে গান করা নিন্দনীয় বিষয় ছিল।
সুষমা দাস ১৯৩০ সালের ১ মে সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা থানার পুটকা গ্রামে স্বনামধন্য সংগীতপিপাসু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা লোকসংগীতশিল্পী রসিক লাল দাশ ও মাতা লোককবি দিব্যময়ী দাশ। পিতামাতা উভয়ই গান রচনা করতেন এবং গাইতেন। তাঁর বয়স যখন ৭ বছর তখন থেকেই সুষমা দাস গানের জগতে যুক্ত হয়ে যান। ধামাইল গানের মধ্য দিয়ে গানের জগতে যুক্ত হলেও পরবর্তীতে লোকসংগীতের অন্যান্য ধারায় তাঁর পদচারণা ঘটে। ছোটবেলা থেকেই পিতার সাথে কবি গানের আসরে যেতেন। পিতার আগ্রহেই তিনি সংগীতজগতে আসেন। কারণ তৎকালীন সমাজে মেয়েদের পক্ষে কোনো আসরে গান করার বিধান ছিল না। মেয়েরা যা-একটু টুকটাক ধামাইল গান গাইত সেটাও মেয়েলি আসরে, যেখানে পুরুষরা যেতে পারত না। কিন্তু সুষমা দাস সিলেট বিভাগের প্রথম শিল্পী যিনি মুক্ত আসরে গান পরিবেশন করেন। বিভিন্ন প্রতিকূলতার পরও গানের জগতের সাথে যুক্ত থাকেন।
প্রাচীন লোকগানের এক সুসমৃদ্ধ ভাণ্ডার হলেন সুষমা দাস। সিলেটের মরমী সাধকদের অসংখ্য হারিয়ে-যাওয়া গান তাঁর মাধ্যমে সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। আদি গানের মূল বাণী ও সুরের জন্য তিনিই যেন গবেষক ও শিল্পীদের শেষ আশ্রয়স্থল।
ধামাইল গান, কবি গান, বাউল গান, হরি জাগরণের গান, গোপিনী কীর্তন, বিয়ের গান সহ ভাটি অঞ্চলে প্রচলিত লোকজ ধারার সকল অঙ্গের গান গেয়ে নন্দিত শিল্পী হিশেবে খ্যাতি অর্জন করেন তিনি।
লোকসংগীতের গুরুত্বপূর্ণ শাখা বাউলগানে এই শিল্পীর যথেষ্ট অবদান রয়েছে। তিনি বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিম সাহেবের সাথে গান পরিবেশন করেছেন। শুরু থেকেই তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে দরাজ কণ্ঠে করিমগীতি পরিবেশন করে আসছেন। বয়স নব্বই পারায়েও তাঁর মনের বয়স যেন কুড়ি বছরের বেশি যায় নাই। এখনো তিনি সুর, তাল, লয় ঠিক রেখে বিভিন্ন আসরে গান পরিবেশন করেন।
সুষমা দাস শিতালং ফকিরের গান, কালাশাহের গান, রাধারমণ দত্তের গান, হাসন রাজার গান, বাউল শাহ আবদুল করিমের গান, দুর্বিন শাহের গান, গীতিকবি গিয়াস উদ্দিন আহমদের গান সহ বহু মরমী কবি ও সাধকের গান গেয়ে থাকেন। সংগীতে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার জন্য ২০১৭ সালে সুষমা দাসকে বাংলাদেশ সরকার একুশে পদকে ভূষিত করে। তাছাড়া তিনি লোকসংগীতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য দেশ ও বিদেশে বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হন ।
গানের পাখি চন্দ্রাবতী রায়বর্মণ
সিলেটের লোকসংগীতকে যেই-কয়জন ক্ষণজন্মা শিল্পী গ্রাম থেকে শহরে নিয়ে এসেছেন এবং শহর থেকে পুরো দেশে ছড়িয়ে দিয়েছেন তাদের অন্যতম এক মহাশিল্পী ছিলেন চন্দ্রাবতী রায়বর্মণ। লোকসংগীতশিল্পীদের কাছে তিনি ‘গানের পাখি’। তিনিই আবার সিলেটের সবার প্রিয় ‘মাসিমা’ ।
রাধারমণের গানের প্রকৃত সুর ও রাধারমণের গানকে জনপ্রিয় করার পিছনে যেই-সকল শিল্পীদের অবিস্মরণীয় অবদান রয়েছে তাদের অন্যতম হলেন চন্দ্রাবতী রায়বর্মণ। ৮৩ বছর বয়সেও চন্দ্রাবতী রায়বর্মণের কন্ঠে গান শুনলে মনে হতো কোনো তরুণীর কণ্ঠ। সবাই অবাক হতো, কী করে এই বৃদ্ধবয়সে এত সুরেলা কণ্ঠে গান করেন? মিডিয়া, খ্যাতি, অর্থের লোভ থেকে নিজেকে দূরে রেখে দীর্ঘ ৭৫ বছর যিনি লোকগান করে সিলেটি লোকসংগীতকে সমৃদ্ধ করেছিলেন তিনিই ক্ষণজন্মা গানের পাখি চন্দ্রাবতী রায়বর্মণ। লোকসংগীতশিল্পী সুষমা দাস ও চন্দ্রাবতী রায়বর্মণ ছিলেন একে অন্যের সই (বান্ধবী)। তবে কৌতূহলী মানুষ তাদের আপন দুই বোন হিসাবে জানত।
রাধারমণগানের কিংবদন্তি শিল্পী চন্দ্রাবতী রায়বর্মণ ১৯৩১ সালের ১০ মার্চ ১৩৩৮ বাংলার ২৬ শে ফাল্গুন সুনামগঞ্জের নদীঘেঁষা গ্রাম জগন্নাথপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সহদেব বর্মণ, মাতার নাম মুক্তা রানী বর্মণ। শৈশবে অনেক দুরন্ত ছিলেন তিনি। গান ভালোবাসতেন মন থেকে। ছোটবেলায় তাঁর দিদিমা রাজেশ্বরী বর্মণের কাছ থেকে তিনি গান শেখেন। তখন থেকেই পল্লিগীতি, পদ্মপুরাণ, সূর্যব্রতের গান, বাউল গান, ধামাইল গান গাইতেন। গ্রামে যখন কেউ গ্রামোফোন নিয়ে বেড়াতে আসতেন, বান্ধবীদের নিয়ে গ্রামোফোনের সঙ্গে গলা মেলাতেন, মন মেলাতেন। পাঠশালায় বাইরের পরিদর্শক এলে চন্দ্রাবতী বেণি দুলিয়ে পাঠশালার পক্ষ থেকে গান শুনিয়ে তাদের মুগ্ধ করতেন।
মাত্র ১৩ বছর বয়সে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময় তাঁর বিয়ে হয়ে যায়। বর সুনামগঞ্জের কালাগোজা গ্রামের সরকারি চাকরিজীবী ভারতচন্দ্র রায়বর্মণ। বিয়ের পর গানবাজনা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু নিজের অদম্য ইচ্ছার কারণে বাপের বাড়ি ‘নাইওর’ গেলে গান আর স্বামীর সহযোগিতায় মেট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন চন্দ্রাবতী। স্বামীর চাকরিসূত্রে সিলেট চলে আসেন একসময়। ১৯৬৯ সালে রেডিওতে অডিশন দেন চন্দ্রাবতী। মনোনীত হন রেডিওতে গান গাওয়ার জন্য।
কিন্তু নিজের মেধাকে ভালো করে আবিষ্কারের আগেই চলে আসে স্বাধীনতার সংগ্রাম। তখন ভারতে চলে যান তিনি। নয়মাস দেশছাড়া থাকার পরে দেশ স্বাধীনের সঙ্গে সঙ্গে দেশে ফেরেন। নতুন করে শুরু করেন যাত্রা। এরপর ধীরে ধীরে দেশ-বিদেশে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৯৪ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ টেলিভিশনে লোকসংগীত পরিবেশন করেন এই ‘গানের পাখি’। এরই মাঝে কলকাতার মৌসুমী ভৌমিক ভারত থেকে পুরনো দিনের গান খুঁজে খুঁজে একবার সিলেট এলেন আর তখনই অম্বরীষ দত্তের মাধ্যমে খোঁজ পেলেন চন্দ্রাবতী রায়বর্মণের । চন্দ্রাবতীর গান শুনে মুগ্ধ হয়ে তাঁর মনে হলো, এই মহিলার অবশ্যই সম্মাননা পাওয়া উচিত। তিনি তাঁকে কলকাতা বাউল উৎসবের আয়োজকদের মাধ্যমে আমন্ত্রণ জানালেন।
প্রায় ৭৫ বছর পর্যন্ত রেওয়াজ না করেই নিজের সুরেলা কণ্ঠে মুগ্ধ করে দেশে তো অনেক সম্মাননা পেয়েছেনই, কলকাতায় বাউল সম্মেলন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ও তাঁকে সম্মাননা জানিয়েছে। তিনি কলকাতার বাউল-ফকির উৎসব সম্মাননা (১৪১৬), নাট্যমঞ্চ সম্মাননা (২০০৩), রাধারমণ সম্মাননা (১৪১৪), শ্রুতি সম্মাননা (১৪১৫), সিলেট বিভাগীয় বাউল সম্মেলন সম্মাননা (২০০৬), গ্রামীণফোন অমর একুশে বইমেলা সিলেট সম্মাননা (২০০৮), সিলেট শিল্পকলা অ্যাকাডেমি সম্মাননা সহ (২০১৩) নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
২০১৪ সালের ১২ আগস্ট তাঁর দুটি গান রেকর্ড করে বাংলাদেশ বেতার সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয়। এর একদিন পরেই ১৩ আগস্ট বার্ধক্যজনিত ও মস্তিষ্কের জটিল সমস্যার কারণে রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। সেখান থেকে ৪ দিন চিকিৎসার পর নিয়ে আসা হয় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ২০১৪ সালের ২৭ আগস্ট সকাল ৬টায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮৩ বছর বয়সে ইহকাল ছেড়ে চলে যান সবার প্রিয় গানের পাখি ‘চন্দ্রাবতী মাসীমা’। সিলেটের লোকসংগীত যতদিন বেঁচে তাকবে ততদিন চন্দ্রাবতী রায়বর্মণ নামটি গৌরবের সাথে উচ্চারিত হবে।
ধামাইল গানের কিংবদন্তি শিল্পী ও সংগ্রাহক কুমকুম রাণী চন্দ
লোকসংগীতের রাজধানীখ্যাত সুনামগঞ্জ জেলা লোকগানের এক বিশাল ভাণ্ডার। এখানে যেমন জন্ম নিয়েছেন বিখ্যাত মরমী সাধক লোককবিগণ তেমনি তাদের উত্তরসূরি হয়ে জন্ম নিয়েছেন অনেক গুণী শিল্পী ও নিভৃতচারী গানের সাধক-সাধিকাগণ, যাদের অনেকেই রয়েছেন লোকচক্ষুর অন্তরালে। ওইরকম এক প্রচারবিমুখ শিল্পী হলেন কুমকুম রাণী চন্দ্র। তাঁর সংগীতসাধনা এবং সৃষ্টিশীলতা দিয়েই তিনি সুনামগঞ্জের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেছেন, কিন্তু সেই সমৃদ্ধির আলো গোপন থেকে গেছে সাধারণ মানুষের চোখে।
বাংলার লোকগানের এক অমৃত অধ্যায় রাধারমণের ধামাইল গান। বৈষ্ণব কবি রাধারমণের গানে জীবনজোড়া নিমগ্ন, লোকান্তরালে জীবন নির্বাহ করা ধামাইল গায়িকা ও সংগ্রাহক শিল্পী কুমকুম রাণী চন্দ ১৯৫২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর গৌরারঙ্গ ইউনিয়নের বেরিগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা প্রয়াত রূপচাঁন চন্দ এবং মাতা লক্ষ্মী রাণী চন্দ (প্রয়াত)। পরিবারে ৯ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সপ্তম। ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগ ছিল, বিশেষ করে রাধারমণের ধামাইল গানে। ছোটবেলায় তিনি তাঁর মায়ের সাথে বিয়ের অধিবাসে যেতেন এবং অধিবাসের গান শুনে বাসায় এসে গুনগুনিয়ে গাইতেন। এই করে করে নিজের ভেতরে ক্রমে ক্রমে ধামাইল গানের প্রতি সৃষ্টি হয় এক গভীর প্রীতি, তৈরি হয় এক দুর্নিবার আগ্রহ, এই আগ্রহই তাঁকে করে তোলে ধামাইল গানের এক নিভৃত সাধক। এবং কালের পরিক্রমায় তিনি নিজের অজান্তেই নিজের ভেতরে ভেতরে ধামাইল গানের শিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
মাত্র ১২ বছর বয়সে সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘর নিবাসী নরেশ চন্দের সাথে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর স্বামী নরেশ চন্দ (প্রয়াত) ছিলেন একজন উঁচুমানের কীর্তনীয়া। সুনামগঞ্জের বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবে তিনি কীর্তন পরিবেশন করতেন। বিশিষ্ট কীর্তনীয়া মুকুন্দ শীলের (প্রয়াত) সঙ্গে শ্রীশ্রীরাধামাধব সংঘ-র আয়োজনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি কীর্তন পরিবেশন করতেন। পরিবারিক সংগীতচর্চার পরিবেশই কুমকুম চন্দ-র সংগীতপ্রতিভা বিকাশের পথকে সুগম করে তোলে।
রাধারমণের ধামাইল গানের প্রসঙ্গে শিল্পী নিজেই বলেন, রাধারমণের ধামাইল ছাড়া হিন্দু বিয়ের অনুষ্ঠানগুলো কল্পনা করা যায় না। ধামাইল মানেই রাধারমণ। তিনি আরো বলেন, রাধারমণের ধামাইল গানে যে সাংগীতিক বৈশিষ্ট্য, রূপ, রস আছে তা অন্য কোনো গীতিকবির ধামাইল গানে নেই। রাধারমণের ধামাইল গানের রয়েছে বিভিন্ন প্রহরানুরূপ সাংগীতিক পর্যায়। হিন্দু বিয়ের অধিবাসে সন্ধ্যা থেকে শুরু করে ভোর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের ধামাইল গান গাওয়া হয়। একেক সময়ে রয়েছে একেক রকমের গান। প্রহর এবং অধিবাসের আনুষ্ঠানিক দিক বিবেচনা করে বা প্রহরের সঙ্গে মিল রেখে গাওয়া হয় ধামাইল গান। আর রাধারমণের ধামাইল গানে রয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিয়ের প্রতিটি পর্যায়ের সাংগীতিক প্রকাশ।
ধামাইল গান বিভিন্ন ধরনের হয়, যেমন বন্দনা, আসর, বাঁশি, জলভরা, জলধামাইল, গৌররূপ, শ্যামরূপ, বিচ্ছেদ, কুঞ্জসজ্জা, কুঞ্জবিচ্ছেদ, খেদবিচ্ছেদ, মান, মানভঞ্জন, সাক্ষাৎ (দুঃখপ্রকাশ), মিলন ও বিদায়। এছাড়াও আছে ঢোল আসার গান, জামাই এবং কনের মা সাজানো গান, কূলা সাজানো গান, আল্পনা আঁকার গান, সম্বন্ধমিথি, অধিবাসের টিকা দেয়ার গান, চুরপানি গান, জলে প্রদীপ ভাসানোর গান। ধামাইলের মধ্যে আছে কারিকা ধামাইল, বাঁশি কারিকা, বিচ্ছেদ কারিকা, জলভরা কারিকা।
কারিকা গানগুলো টপ্পা ছন্দে গাইতে হয়। উপরে ধামাইল গানের যে বর্ণনা দেয়া হলো তার সবগুলো পর্যায়ের গান তিনি জানেন এবং অধিবাসের অনুষ্ঠানে পরিবেশন করেন। এছাড়াও তিনি সূর্যব্রত, মঙ্গলারতি, কল্কিনারায়ণ সেবা সহ বিভিন্ন সনাতনধর্মীয় পূজার কীর্তন গেয়ে থাকেন। তাঁর কাছে প্রায় ৭০০ রাধারমণের ধামাইল গানের সংগ্রহ আছে। এই গানগুলো যদি বই আকারে প্রকাশ না করা হয় তবে একদিন হয়তো গানগুলো হারিয়ে যাবে।
তিনি প্রায় ৩ হাজারের অধিক বিয়ের আসরে ধামাইল গান পরিবেশন করেছেন। তিনি ঢাকা শিল্পকলা অ্যাকাডেমি, বাংলা অ্যাকাডেমি, টিএসসি সহ বাংলাদেশের অনেক স্থানে রাধারমণের গান পরিবেশন করেছেন। গুণী এই ধামাইলশিল্পীর কাছ থেকে বাংলাদেশের অনেক শিল্পী-সংগ্রাহক রাধারমণের গান সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে পণ্ডিত রামকানাই দাস (প্রয়াত), বিশ্বজিৎ রায় তাঁর কাছ থেকে রাধারমণের অনেক গান সংগ্রহ করে নিয়ে গেছেন। একবার কলকাতা থেকে এক গানসংগ্রাহক তাঁর কাছ থেকে এসে অনেকগুলো গান নিয়ে গেছেন। টিভিচ্যানেল এটিএন নিউজে জনপ্রিয় উপস্থাপিকা মুন্নী সাহা তাঁকে নিয়ে একটি অনুষ্ঠান করেন। তাঁর ছোটছেলে শিল্পী কানু সিলেট তথা বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে খুব জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠশিল্পী আরতি ধর
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের নারী শব্দসৈনিক শিল্পী আরতি ধর। তিনি একাধারে আধুনিক ও লোকগানের মহাশিল্পী হিসেবে নিজেকে তাঁর কর্মময় জীবনে প্রমাণ করতে স্বক্ষম হয়েছেন। সিলেটের লোকগানকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে আরতি ধরের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল অবদান।
শিল্পী আরতি ধর ১৯৪৫ সালে সিলেটে জন্মগ্রহন করেন৷ তাঁর পিতার নাম বনবিহারী ধর এবং মাতার নাম সুধারানী ধর৷ ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি প্রগাঢ় ঝোঁক ছিল তাঁর৷ বাবা-মার উৎসাহ এবং সহযোগিতায় ভারতে গিয়ে বড় বড় সংগীতগুরুর কাছে গান শেখার সুযোগ লাভ করেন আরতি ধর৷ পাশাপাশি লেখাপড়াও সমাপ্ত করেন ভারতে। লেখাপড়া শেষ করে দেশে ফিরেই গানের জগতে পুরোপুরি আত্মনিয়োগ করেন।
১৯৬২ সাল থেকে বাংলাদেশ বেতারের নিয়মিত শিল্পী হিসেবে গান গাওয়া শুরু করেন৷ এরপর ঢাকা থেকে টেলিভিশন সম্প্রচার শুরু হলে ১৯৬৬ সাল থেকে টেলিভিশনে গান গাইতেন আরতি ধর। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এই কণ্ঠশিল্পী স্বাধীনতার সংগ্রামী চেতনার গান পরিবেশন করে লাখো বাঙালির মনে স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রেরণা জাগিয়ে তোলেন৷ গণমুক্তি শিল্পীগোষ্ঠীর সাথেও সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন স্থানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করতেন তিনি৷
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ শুরু হলে আরতি ধরও ছিলেন পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসরদের কড়া নজরে৷ বেশ কয়েকবার তাঁর বাড়ির সামনেই পাকিস্তানি সেনাদের গাড়ি এসে থেমেছে৷ পাকিস্তানি সেনাকর্মকর্তারা এসে আরতি ধরের বাড়িতে তাঁর খোঁজ করেছে৷ তবে শেষ পর্যন্ত তাদের চোখে ধুলো দিয়ে কৌশলে রক্ষা পেয়ে যান আরতি ধর৷ পুনরায় ফিরে যান ভারতে। সেখানে গিয়ে আবার মিলিত হন তাঁর আগের শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্যদের সাথে৷ তাঁরা একসাথে আবার শিল্পীগোষ্ঠীর কাজ শুরু করেন৷ মুক্তিযুদ্ধের জন্য কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেন চার নম্বর সেক্টরে ফরিদ গাজীর নেতৃত্বে৷ বিভিন্ন এলাকায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে মুক্তিযুদ্ধের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছেন আরতি ধর এবং তাঁর সহকর্মীরা।
স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়ের উদ্দীপনামূলক গানগুলো সম্পর্কে আরতি ধর বলেন, ‘‘স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের গানগুলো গাইতাম আমরা৷ তখন তো সবার মুখে মুখে ছিল গানগুলো৷ যেমন ‘স্বাধীন স্বাধীন দিকে দিকে’, ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘শোনো একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি’, নোঙর তোলো তোলো সময় যে হলো হলো’ ইত্যাদি। সীমান্ত-এলাকায় গান পরিবেশন করতে গিয়ে একদিন বেশ রাত হয়ে যায়৷ হঠাৎ দলছুট হয়ে পড়ি৷ শেষ পর্যন্ত সেই রাতে আর শিবিরে ফিরতে পারিনি৷ একটা বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে রাত কাটাতে হয়েছে আমাকে এবং আমার বাবাকে৷
এইভাবে শত কষ্টে ৯ মাস অতিক্রম করি। অবশেষে সোনার বাংলা স্বাধীন হলো।”
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আরতি ধর আবারও বেতার এবং টেলিভিশনে নিয়মিত শিল্পী হিসেবে গান পরিবেশন শুরু করেন৷ সেই সময়ে বিশেষ করে সিলেটের আঞ্চলিক গান অধিক পরিবেশন করতেন তিনি। বাবা শাহজালালকে নিয়ে ভক্তিমূলক গান এবং হাসন রাজার গানে তাঁর রয়েছে বিশেষ খ্যাতি৷ লন্ডন, কাতার, আবুধাবি, দুবাই, বাহরাইন সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হাসন রাজার গান গাইতে গিয়েছেন তিনি৷
২০১০ সালের ডিসেম্বরে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের ২৮ জন শিল্পী ও শব্দসৈনিককে সম্মাননা জানানো হয়৷ সেখানে আরতি ধর সম্মাননা পদক গ্রহণ করেন। ‘সিলেট প্রথম আজানধ্বনি বাবায় দিয়েছেন’, ‘তুমি রহমতের নদীয়া’ ইত্যাদি আঞ্চলিক গান তাঁর কণ্ঠের মাধ্যমেই সারাদেশে জনপ্রিয়তা লাভ করে। তিনি এখনো মধুমাখা কণ্ঠে গান পরিবেশন করে যাচ্ছেন। শিল্পী আরতি ধর সিলেট বিভাগের প্রথম শিল্পী যার কণ্ঠ গ্রামোফোনে রেকর্ড হয়। দ্বিতীয় শিল্পী ছিলেন বাউলশিল্পী শফিকুন্নুর।
সিলেটি লোকগানের গুণী শিল্পী মোছাম্মৎ ইয়ারুন্নেছা খানম
সিলেট তথা বাংলা লোকসংগীতের কিংবদন্তী শিল্পী ইয়ারুন্নেছা খানম। সেই স্বাধীতার পূর্বে এবং স্বাধীনতার পরবর্তীতে সিলেটি গানগুলো বিশেষ করে মরমী গানগুলো যখন হারিয়ে যাওয়ার পথে সেইসময় যে-কয়জন শিল্পী এই গানগুলোকে আঁকড়ে ধরে বর্তমান প্রজন্ম পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন তাদের অন্যতম শিল্পী হলেন মোছাম্মতৎ ইয়ারুন্নেছা খানম।
কোনো-এক সময় হাসন রাজার গান মানেই ইয়ারুন্নেছার কণ্ঠ মানুষের কর্ণে গিয়ে পৌঁছত। মরমী কবি হাসন রাজার গানগুলো ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অপরিসীম। সেই সময় মহিলারা প্রকাশ্য মঞ্চে তেমন গানবাজনা করত না। শিল্পী আরতি ধর এবং শিল্পী ইয়ারুন্নেছা খানম ছিলেন সেই সময়ের নারী শিল্পী যারা বাংলাদেশ বেতারে নিয়মিত গান পরিবেশন করতেন।
আনুমানিক ১৯৪৮ সালে এই শিল্পী সিলেট শহরের টিলাগড় এলাকার বিখ্যাত বসুমল্লিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। অত্যন্ত মেধাবী এই শিল্পী ১৯৬৫ সালে মেট্রিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন। ১৯৬৭ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশ বেতারে গান পরিবেশন শুরু করেন। বাংলা লোকসাহিত্যকে দিয়েছেন অনেককিছু। বহুবার বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশী শিল্পী হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। গিয়েছেন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে।
অর্থ, বিত্ত, যশ ও প্রতিপত্তি কোনোকিছুর কমতি ছিল না তাঁর। উনাকে দেখার জন্য বাসার সামনে ( টিলাগড় বসু মঞ্জিলে) মানুষ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকত। রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, সৈয়দ আব্দুল হাদী সিলেট এলে এই শিল্পীর বাসায় উঠতেন। অথচ বর্তমানে সকলেই যেন ভুলে গেছেন উনাকে।
শিল্পী ইয়ারুন্নেছা খানম ছিলেন তৎকালীন নারী শিল্পীদের মধ্যে উচ্চশিক্ষিত। অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলতেন। এবং ছিলেন খুবই রাগী স্বভাবের। ওনার গানের সাথে সবাই বাজনা বাজানোর সাহস করত না। কারণ বাজনায় সামান্য তাল বা লয়ের ভুল হলেই ক্ষেপে যেতেন। তাই অভিজ্ঞতাসম্পন্ন লোকরাই ওনার সাথে বাজনায় যুক্ত থাকত।
যাদের বর্তমান বয়স ৫০-এর উপর তাদের কানে এখনো ভাসে ইয়ারুন্নেছা খানমের সুরেলা কণ্ঠ। গ্রামগঞ্জে যে-বাড়িতে রেডিও থাকত সেই বাড়িতে লোকের ভিড় পড়ে যেত ইয়ারুন্নেছা খানমের গান শোনার জন্য। তখন বেতারে আব্দুল আলীম, ফেরদৌসী রহমান সহ গুটিকয়েক শিল্পীর লোকগান প্রচার হতো এবং সেই গুটিকয়ের একজন ছিলেন ইয়ারুন্নেছা খানম।
বর্তমানে দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ এই গুণী শিল্পী গুরুতর অসুস্থ। তাঁর ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই আজ জনপ্রিয় গায়ক-গায়িকা, কিন্তু কেউই খোঁজখবর নেন না এই মহাশিল্পীর। সহশিল্পীদের অনেকেই পৃথিবীতে নেই, আর যারা বেঁচে আছেন তারাও যেন ভুলতে বসেছেন এই গুণী শিল্পীকে। তাঁর চোখে-মুখে রাগের ছাপ দেখা যায়। হয়তো মনে মনে ভাবেন এতকিছু দিলাম এই লোকসংগীতকে অথচ আমার খোঁজটা কেউ নেয়ার প্রয়োজন মনে করে না!
মরমী কবি গিয়াসউদ্দিন সাহেবের অসংখ্য গানের প্রথম শিল্পী হলেন ইয়ারুন্নেছা খানম। জীবনের এই শেষ প্রান্তে সিলেটের লোকগানের এই গুণী শিল্পীকে যেন সরকার মূল্যায়ন করে এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন তাঁর শুভানুধ্যায়ী সংগীতানুরাগীরা।
সংগীতশিল্পী লাভলী দেব
বর্তমান সময়ে বাংলা লোকসংগীতজগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হলেন শিল্পী লাভলী দেব। সিলেটের লোকগান এই গুণী শিল্পীর কণ্ঠে দেশবিদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
সদা হাস্যোজ্বল বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী লাভলী দেব ১৯৭০ সালের ১৮ অক্টোবর চুনারুঘাট উপজেলায় দেউন্দী চা-বাগান এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শৈলেন্দ্র চন্দ্র রায় এবং মাতার নাম স্মৃতিকণা রায়। লাভলী দেবের গানের হাতেখড়ি নিজ পিতা শৈলেন্দ্র চন্দ্রের কাছে। তাছাড়া মা স্মৃতিকণা রায়ের উৎসাহে গানের ভাষা বোঝার আগেই তিনি গান শুরু করেন।
ধর্মীয় কীর্তন গান গাওয়ার মধ্য দিয়ে তার সংগীতজীবনের শুরু। হবিগঞ্জের উস্তাদ বাবর আলী খানের কাছ থেকে গানের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেন তিনি। পরবর্তীতে আরো অনেক গুণী উস্তাদের কাছ থেকে গানের তালিম নিয়েছেন। রবীন্দ্র, নজরুল, লোকগান, আধুনিক, ধামাইল … এককথায় সংগীতের প্রায় প্রতিটি শাখায় তাঁর গৌরবোজ্জ্বল পদচারণা।
লাভলী দেব মনে করেন শাশুড়ি পারুল বালা দেব এবং তাঁর স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা দীপক দেবের উৎসাহ, সহযোগিতা এবং শ্রোতাভক্তবৃন্দদের ভালোবাসা তাঁকে সংগীতের এই পর্যায়ে আসতে মূল শক্তির যোগান দিয়েছে। ১৯৮৬ সালে সিলেট বেতারে এবং ২০০০ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে তালিকাভুক্ত শিল্পী হন লাভলী দেব। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের নিয়মিত কণ্ঠশিল্পী।
লাভলী দেবের একাধিক গানের অ্যালবাম বের হয়েছে। দেশের অনেক গুণী শিল্পীর সাথে মঞ্চে সংগীত পরিবেশন করেছেন তিনি। সরাসরি সান্নিধ্য লাভ করেছেন বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিম, সুষমা দাস, পণ্ডিত রামকানাই দাস, চন্দ্রাবতী রায়বর্মণ, ইয়ারুন্নেছা খানম সহ অগ্রজ গুণীজনদের।
সংগীতশিল্পী আব্বাস উদ্দিন, আব্দুল আলীম, ফিরোজা বেগম, ফরিদা পারভীন প্রমুখ শিল্পীরা তাঁর গানচর্চার আইকন ছিলেন। তাদের প্রত্যেকের প্রতি তাঁর রয়েছে অগাধ ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা। বেতার-টেলিভিশনের নিয়মিত শিল্পী, সিলেটের সংগীতজগতের প্রাণ, সিলেটবাসীর অহঙ্কার কোকিলকণ্ঠী শিল্পী লাভলী দেব বাংলাদেশের লোকসংগীতের এক স্মরণীয় অভিজ্ঞতা। আজও এই শিল্পী তাঁর তারুণ্যস্পদিত কণ্ঠস্বর দিয়ে দেশের লোকসংগীতপিপাসুদের চিত্ত হরণ করে চলেছেন প্রতিনিয়ত।
… …
- ভোটের গান রচনায় শাহ আবদুল করিম || আজিমুল রাজা চৌধুরী - December 29, 2018
- লোকগানে সিলেটের নারী কিংবদন্তিরা || আজিমুল রাজা চৌধুরী - December 12, 2018
- অন্তরঙ্গ আলাপচারিতায় বাউল আবদুর রহমান : প্রসঙ্গ শাহ আবদুল করিম || আজিমুল রাজা চৌধুরী - October 16, 2018
COMMENTS